Featured Post
কল্পগল্প ।। ভাসমান শহরে একদিন ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
[কল্পনার গল্পকথা
ইমাজিটাউনের উপকথা]
ভাসমান শহরে একদিন
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
দিদি তো বলেই খালাস তার বাড়িতে যাবার কথা। কিন্তু সদ্য গ্র্যাজুয়েট হওয়া দীপকের মাথার অবস্থা এখন সেই 'হর্নস অন এ ডিলেমা'র মত। সে এখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হবার জন্যে ইউনিভার্সিটিতে ঘুর ঘুর করবে নাকি চাকরির সন্ধানে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবে? এই সিদ্ধান্ত কিছুতেই নিতে পারছে না। মনের মধ্যে থেকে কেউ বলছে কেন তুই পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের জন্যে খামোকা দুটো বছর নষ্ট করবি? বুঝতেই তো পারছিস দেশের চাকরির অবস্থা। এই দুটো বছরে চাকরির বাজারে কত লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর পেছনে পড়ে যাবি বল তো?
সত্যিই তো সে এখন কোন দিকে যায়। জামাইবাবু অবশ্য অভয় দিয়েছে, শালাবাবু তুমি নির্ভয়ে এম-এস-সিটা কর। তারপর গবেষণা। দেশে চাকুরে অনেক পাবে কিন্তু বিজ্ঞানী পাওয়াটা খুব জরুরি। আর দেশের উন্নতিতে বিজ্ঞানীর অবদানের কথা তোমার মত বিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েট ছেলেকে বোঝাতে হবে না নিশ্চয়?
জামাইবাবু নিজে একজন বিজ্ঞানী। তাই সে চায় তার দলে লোক বাড়ুক। দীপকের নিজের ইচ্ছেও তো কম নয়। আবার একজন বলল, তোর ভাল রেজাল্ট আছে। তুই সিভিল সার্ভিসটা দিতে পারিস অনায়াসেই।
এই কনফিউশনের মধ্যেই আবার তার দিদির বাড়িতে আমন্ত্রণ। দিদি তো বটেই, জামাইবাবু পর্যন্ত তার শালাবাবুকে খুব ভালবাসে। সে গেলে তার সঙ্গে অনর্গল রঙ্গ রসিকতা করে। দীপকের লজ্জা করে কিন্তু কী আর করবে—সম্পর্কটা যে আবার শালা-ভগ্নিপতির।
এই বর্ষাকালটায় দিদির বাড়ি আসতে চায় না দীপক বা তার দিদি-জামাইবাবুর আদরের দীপু। চায় না তার কারণ তার দিদির পাড়া বেশ নিচু। একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। পায়ের জুতো হাতে করে হাঁটতে হয়। বাজারে কিছু পাওয়া যায় না। রোজ শুধু খিচুড়ি আর ডিমভাজা খেতে হয়।
তবু দিদির ভালবাসার ডাক উপেক্ষা করতে না পেরে গতকাল বিকেলে এসেছে দীপক। সে না এলে দিদি অভিমান করে বলে, ভাই আমাকে ভুলে গেলি? আমাকে পর করে দিলি?
জামাইবাবু মুচকি হেসে বলে, শালাবাবু আমাদের ভুলেছ কেন বাবু? তোমার কি মনে রাখার মত আর কেউ এসেছে নাকি?
দীপক লজ্জা পায়। কিন্তু দিদি হেসে বলে, কী যে বল। ওর এখন কি আর বয়েস। এই বয়েসে আর কার স্বপ্নে পাগল হবে আমার সোনা ভাইটি?
জামাইবাবু উত্তর না দিয়ে হঠাৎ মুচকি হেসে গান গেয়ে ওঠে, এখন আমার একুশ বছর ছোঁয়ায়/ তুমি বুঝি অষ্টাদশের কোঠায়। লজ্জা জড়ান---
লজ্জা জড়িয়ে ধরে দীপককে। সত্যি এই একুশ বছর বয়েসটা তো বেশ ভাল। আর জামাইবাবু আরো ভাল। সে দীপকের মনের কথা খুব বোঝে। এই বয়েসের রোমান্স বোধহয় সারা জীবনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই ওপরে ওপরে লজ্জা পেলেও মনে মনে সে খুব মজা পায়।
দিদির বাড়িতে বর্ষাকালে একেবারেই আসতে চায় না দীপক। বলে দূর তোদের শহরের যা দশা। আমাদের গ্রামই ভাল। ম্লান মুখে দিদি ভাবে ভাইটার কথা আর ভুল কি? কয়েক ঘন্টা বিষ্টি হলেই আমাদের রাস্তা আর পুকুর এক হয়ে যায়। আর সারারাত হলে তো আর কথাই নেই। সাত সাগর আর তের নদী পেরোতে হয় না। তারা নিজেরাই ঢুকে পড়ে একেবারে বাড়ির মধ্যে। মোচার ঘন্ট আর খাবে কি। রাতে ছাড়ান মোচার খোলাগুলো খাট থেকে মেঝেয় ফেলে দিঘার সমুদ্রে মাছধরা নৌকোর সারি দেখার আনন্দ অনুভব করে।
দীপুর অনুমান অলীক নয়। কাল সারারাত ধরে বৃষ্টি হয়েছে। ঘুমের মধ্যেই সে বৃষ্টির দাপট টের পেয়েছে। ঘুমের মধ্যেই যেন তার মনে হল দিদি সেই রবীন্দ্র সঙ্গীতটা গাইছেঃ ঝর ঝর বাদর মুখর দিনে।
সে অবাক হয়ে ভাবছে দিদিকে প্রতি বছর এই দুর্ভোগ ভুগতে হয় তাতে তার এমন গান বেরোচ্ছে কী করে। কিন্তু গানটা তার পুরো শোনা হল না। তার আগেই সে ঘুমিয়ে পড়ল। আর সেই ঘুম আবার ভাঙল ঝর ঝর বৃষ্টির তান্ডবের শব্দে।
ঘুম ভেঙ্গে সে কাঁপা কাঁপা বুকে ভাবতে শুরু করেছে এবার কী হবে? দিদির বাড়ির ভেতর তো জল ঢুকে যাবে নির্ঘাত। পা রাখা যাবে না। কোমর পর্যন্ত থাকবে জলের তলায়। বাইরের ড্রেনের জল তাদের একতলার ঘরগুলোয় ঢুকে ছল ছল কল কল নৃত্য করতে শুরু করবে।
সেই আন্দাজ করে পাঁচ বছর আগে থেকেই মেঝে থেকে খাটের উচ্চতা পাঁচফুট রেখেছে দিদি। বিশাল বড় একটা পলিথিনের গামলা কিনেছে নৌকোর সাইজে এ ঘর থেকে অন্য ঘরে যাবার জন্যে। বড় একটা ডেকরেটরের কাঠের খুন্তি রেখেছে দাঁড় হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে। ভেবেছিল গামলায় একটা স্টিয়ারিং ফিট করবে। যাওয়া আসায় ঘরের দেওয়ালে দেওয়ালে বা খটের কোণায় ধাক্কা খাবে না। বর্ষাকালে রোজ রাতে শোয়ার সময় সে গামলা নোঙর করা থাকে খাটের ছত্রির সংগে।
ঘুম ভেংগে চোখ খুলতে গিয়ে ব্রেক কষল দীপক। বাবা বরুণদেবের কৃপায় কাল সারারাত যা গেছে তাতে মেঝেয় পা ঠেকাবে নাকি গামলা-নৌকো খুঁজবে সেটা তো আগে ভেবে দেখতে হবে।
ভয়ে ভয়ে চোখ খুলতে গিয়েও আর খুলল না দীপক। বাইরে থেকে জামাইবাবু বলল, ঘুম বোধহয় ভাঙল শালাবাবুর। কাল কার স্বপ্ন দেখছিল তোমার ভাই যে এত দেরি হল উঠতে? ওকে জিজ্ঞেস কর তো?
দিদি মিচকি মিচকি হেসে বলল, ধুর তোমার যতসব। জিজ্ঞেস করতে হয় তুম কর।
দিদির মিচকি হাসির আওয়াজ এখান থেকে শুনতে পেল না। আর চোখ বুজে থাকার জন্যে দেখতেও পেল না। তবে দিদির হাসি তো সে জানে। তাই কল্পনাই করে নিল।
দিদি বাইরে থেকে উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করল, চা খাবি তো ভাই? আচ্ছা দাঁড়া তোকে আসতে হবে না আমি নিয়ে আসছি।
এই মরেছে তাহলে নিশ্চয় ঘরে জল জমেছে। দিদি নিশ্চয় আর একটা গামলায় চড়ে আসছে। জলের ঢেউয়ে বিছানা ভিজে যেতে পারে। সে প্রায় কুঁকড়ে গেল ভিজে যাওয়ার আশংকায়। একেই সারারাত বৃষ্টি হয়ে আবহাওয়া একেবারে ঠান্ডা মেরে গেছে তাতে আবার গায়ে জল লাগলে তো খুব কাঁপতে হবে।
--চোখ খোল ভাই। চা খা। কাল তোর জামাইবাবু দারুন একটা স্ন্যাক্স এনেছে। দারুন মুচমুচে। আর কী স্মেল!
জামাইবাবু নিশ্চয় বিষ্টিতে অফিস যেতে পারে নি। তাই বাড়িতেই রয়েছে। চোখ খোলেনি দীপক। এখুনি ছলাত ছলাত শব্দ করে দিদি আসবে। শাড়িটাড়ি সব ভিজে একসা। দিদিকে অমন অবস্থায় দেখতে পারবে না সে। দিদিটার দু;খও আর সইতে পারে না সে।
-নে নে ওঠ। আজ দুপুরে তোকে নিয়ে ইকো পার্কে যাবে জামাইবাবু। ছুটি নিয়েছে তার শালাবাবুর জন্যে। তুই তো যাস নি কখনও?
এই দারুন বিষ্টিতে ইকো পার্ক! এসব কী বলছে দিদি? বাদলে পাগল হয়ে গেল না তো বোনটা?
ঠক করে টেবিলে চায়ের কাপ রাখার শব্দ।
ভয়ে ভয়ে চোখ খুলল দীপক। আরে পলিথিনের গামলায় চড়ে নয়। দিদি তো দিব্বি হেঁটে হেঁটেই আসছে।
--কাল যে এত বিষ্টি হল? সারারাত ধরে?
--হল তো। এদিকে ফিরে মিষ্টি হাসল তার দিদি, কাল রাতে তোর জামাইবাবু খুব ভাল একটা চা এনেছে। দারুন ফ্লেভার। আর দারুন টেস্ট। খেয়ে দেখ।
উৎসাহ নেই দীপুর। তার চোখে-মুখে কৌতূহল ভাসছে।
--বাড়িতে জল ঢুকল না?
--ঢুকতে দিলে তো।
দিদির কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না দীপক। তবে কি সে স্বপ্ন দেখছে? টক করে উঠে গিয়ে টেবিল থেকে ঢক করে গরম চা টা মুখে দিয়ে জিভ পুড়িয়ে বুঝল এটা স্বপ্ন নয়। একেবারে বাস্তব।
-মানে?
--চা খেয়ে বাইরে আয় ভাই মানে বোঝাচ্ছি তোকে।
আর দেরি সয়? বিস্কুট ছেড়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দৌড়ে বাইরে এল দীপক। বাইরে বারান্দার রেলিং ধরে রাস্তা দেখছে তখন স্মিতা। আর দীপক তো অবাক। সে শুয়েছিল একতলাতেই। তার দিদির বাড়ি তো একতলাই। কিন্তু এটা দোতলায় উঠে এল কী করে?
আবার গরম চা টা গলায় ঢেলে গলার ভেতরটা পুড়িয়ে দিয়ে বুঝল এটা স্বপ্ন নয় ঘোর বাস্তব।
-দিদি এসব কী হচ্ছে আমার সঙ্গে?
-কী হচ্ছে ভাই?
-কাল তো শুলুম একতলায় আজ ওপরে উঠে পড়লুম কী করে? তুই আর জামাইবাবু কি তবে—
কিছু না বলে মুচকি হাসিটা হেসেই গেল স্মিতা।
-কিন্তু তোদের কষ্ট হয় নি আমাকে বইতে? আমাকে ডাকলে কি ক্ষতি হত শুনি? আমি কি এতই গভীর ঘুমিয়ে ছিলুম যে আমি ডাকতেও উঠি নি?
স্মিতা জবাব না দিয়ে মিটি মিটি হাসছে শুধু। দিদি আর জামাইবাবু নিশ্চয় ওকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে ওপরে গেছে। আহা কী কষ্ট হয়েছে ওদের। তবু ভাই বলে তার এই বোঝা হাসিমুখে বয়েছে দিদি। আবার এখনও দিব্বি হাসিমুখেই রয়েছে।
--আরে বোকা ছেলে। আমাদের আবার দোতলাটা তুই দেখলি কবে? তোর জামাইবাবুর এত পয়সা কই যে দোতলা করবে?
ঝট করে রেলিঙ্-এর পাশে চলে এল দীপু। রাস্তাটাও তো দিব্বি আছে কিন্তু সে রাস্তার নিচে হু হু করে জল বইছে। শুধু জলের ঢেউ। বড় বড় যেন সাগরের মত।
--এখন বিষ্টির জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িগুলো সব ভেসে ওঠে জলের ওপর। এমন কী রাস্তাগুলোও। স্মিতা বলল, বুঝলি রে হাঁদা?
তাই তো। সব বাড়ি উঠে গেছে জলের ওপরে। বাড়ির উঠোন জলে ডুবে আছে বটে তবে বাড়িগুলো উঠে গেছে জলের লেভেলের অনেক ওপরে। যেন কারা জ্যাক দিয়ে বাড়িগুলোকে তুলে দিয়েছে। খারাপ চাকা পাল্টাবার সময় গাড়িকে যেমন জ্যাক দিয়ে তুলে রাখে তেমন।
-এখন থেকে আমাদের এই বাড়িগুলোতে জল আর ঢুকবে না। কারণ এরা সর্বদাই জলের ওপরে থাকবে।
-শুধু বাড়ি কেন? বাজার হাট অফিস সব। বুঝলে শালাবাবু? একমুখ হাসি ফুটিয়ে জামাইবাবু এসে হাজির, এটা এখন ফ্লোটিং টাউন। মানে ভাসমান শহর। এখন সব হাইড্রোলিক সিস্টেম হয়ে গেছে।
হাইড্রোলিক সিস্টেম! সায়েন্সের ছেলে হিসেবে এ শব্দ খুব ভালভাবেই জানা আছে দীপকের। কিন্তু তাই বলে এই সিস্টেমে একটা বাড়ি দিব্বি উঠে যেতে পারে রাস্তার ওপর? আর শুধু বাড়ি নয় রাস্তা পর্যন্ত। জামাইবাবুর কথায় সারা শহর এখন জলের ওপরে দিব্বি ভাসছে আর নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির নদী।
-কিন্তু ইকো পার্ক? মানে যেখানে যাবার কথা?
-সেটাও ভেসে আছে। জল কমলে আবার নেমে যাবে। যেমন যেমন জল উঠবে ঠিক তেমন তেমন তেমন সব কিছু উঠবে। জল নেমে গেলে আবার সব নেমে যাবে। জামাইবাবু হেসে বলল, ওরে পাগলা আমাদের বিজ্ঞান এখন অনেক এগিয়ে গেছে। বাড়িগুলো এমন মডেলে তৈরি করা হয়েছে যে বৃষ্টি যত বাড়বে আর জল যত জমতে থাকবে তত বাড়বে জলের চাপ বা হাইড্রোলিক প্রেসার আর সেই প্রেসারে বাড়ি উঠতে থাকবে। আবার যত জল কমবে হাইড্রোলিক প্রেসার তত কম হবার কারণে বাড়িগুলো আবার নামতে থাকবে। সঙ্গে রাস্তাও। এক কথায় সারা শহরটা।
-কিন্তু সেখানে যাবে কী করে? নৌকোয় করে? রাস্তা তো ডুবে? ভয়ে ভয়ে বলল দীপক।
-তা ডুবে বটে। আমাদের এই ছোট ছোট রাস্তার প্রোগ্রাম বাড়িগুলোর সঙ্গে করা বলে সেগুলো বাড়ি উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে যায় কিন্তু বড় রাস্তা বা হাইওয়ে এখনও তেমন প্রোগ্রামিং করা যায় নি। এই যে সব বাড়ি বা রাস্তা উঠে যাওয়া এগুলো সব কম্পিউটারের একটা সেন্ট্রাল প্রোগ্রামিং-এর মাধ্যমে হয়। ম্যানুয়াল নয় মানে কেউ এসে করে দিয়ে যায় না। আশা করি হাইওয়েগুলোর প্রোগ্রামিং আগামী বর্ষার আগেই হয়ে যাবে। প্রীতম বলল।
খাওয়া দাওয়া করে বেলা দশটার মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল প্রীতম, স্মিতা আর দীপক। উদ্দেশ্য ইকো পার্কে যাওয়া। দীপকের বেশ মজা লাগছে এখন। এমন হবে সে ভাবতেই পারছে না। বৃষ্টিতে শহরে নদী ধেয়ে এলেও শহর এখন আর ডোবে না দিব্বি ভেসে থাকে। ভাবে মানুষের বিজ্ঞান তবে কতদূর এগিয়ে গেছে। প্রকৃতির কামড় এখন আর তার কাছে পীড়াদায়ক নয়।
ফ্লোটিং রাস্তায় দিব্বি অটো, টোটো, রিক্সা, বাইক চলছে। রাস্তার নিচে দিয়ে হুহু করে জল বয়ে যাচ্ছে। তবে রাস্তার দু'পাশে জবরদস্ত রেলিং-এর ব্যবস্থা করতে হয়েছে গার্ড দেবার জন্যে।
জামাইবাবুর নিজের গাড়ি নেই। একটা টোটোয় করে বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বড় রাস্তার মোড়ে এল আর অবাক হয়ে দেখল ওরে বাবা কী বড় বড় ঢেউ বইছে।
--এখানে রাস্তা কই জামাইবাবু? বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠল প্রীতমের। তার ভয় হল এই জলে যদি সে পড়ে যায়।
--বড় রাস্তাটাকে এখনও ফ্লোটিং করতে পারে নি আমাদের বিজ্ঞানীরা কিন্তু ওই দেখ-
রাস্তা বলে যেখানে ছিল তা জলে ডুবে এখন দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সেখান দিয়েই চলছে বাস।
-এটা বাস নাকি স্টিমার?
-হাঃ হাঃ হাঃ। এটা বাসই বটে শালাবাবু। তবে প্রয়োজনে এটা স্টিমার হয়ে যায়। যে ইঞ্জিন চাকা ঘোরায় সেটাই এখন স্টিমারের পাখা ঘোরায়। একই ইঞ্জিন একই পেট্রল একই ড্রাইভার সব কিছু এক। শুধু টেকনোলজিটাই একটু আলাদা। মানে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। বিজ্ঞান কি না পারে বল?
হাঁ করে তাকিয়ে রইল দীপক। শুধু বাসই নয় ট্রাক, মোটর আর মোটর সাইকেল সব কিছু দিব্বি যাচ্ছে জল কেটে কেটে। জামাইবাবু তার পিঠে হাত দিয়ে চাপড় মেরে বলল, আসলে গরজ বড় বালাই। প্রয়োজন মত রূপ শুধু বদলে যাও আর কী। বিজ্ঞান কেনই বা প্রকৃতির পায়ে আত্মনিবেদন করবে বল? চল শালাবাবু আমাদের আবার যেতে হবে। ওই দেখ আমাদের বাস আসছে।
একটা বিরাট ভলভো বাস এল। একটু আগে সিগন্যাল বাটন অন করা ছিল। এখন বাসকে কেউ হাত দেখিয়ে দাঁড় করায় না। একটা বাটন টিপলেই হবে। শুধু গন্তব্যের লেখা বাটন টিপলেই হবে। লিফটের মত। অটোমেটিক বাস এসে দাঁড়াবে। তার দরজা খুলে যাবে আর একটা রেলিং দেওয়া রাস্তা বেরিয়ে আসবে।
যখন দরজা খুলবে তখন খালি সিটের সংখ্যা চলে আসবে গেটের মাথায় বড় বড় করে। তার চেয়ে বেশি লোক ঢুকতে চাইলে একটা অদৃশ্য জাল তার পথ রোধ করবে। লাইনের প্রথমে ছিল প্রীতম, স্মিতা আর দীপককে নিয়ে পাঁচ জন। খালি সিট ছিল চারটে। একেবারে শেষ ব্যক্তি আর ঢুকতে পারল না। বাসের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। বাস চলতে লাগল। তবে ইঞ্জিন রাস্তা কাটার বদলে জল কাটতে লাগল।
বাড়ি ফিরে গেছে দীপক। তার এম-এস-সি পড়ার সিদ্ধান্তই বহাল আছে।
====================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
Darun majar kalpanar galpokatha.
উত্তরমুছুন