দি ওয়াল- রাহুল দ্রাবিড়
আনন্দ বক্সী
ঠান্ডা মাথা, সরল হাসি, ভদ্র আচরণ
যাঁর ব্যাটিং দক্ষতায় মজে সবার মন,
ধৈর্য আর একাগ্রতার যিনি নিদর্শন
ভারতবাসীগণের তিনি অতি আপনজন,
ইন্দোরে জন্ম হলেও কর্নাটকে বাস
ক্রিকেট খেলে ছড়িয়ে দেন ধরাধামে সুবাস,
শরদ দ্রাবিড় পিতা তাঁর পেশায় কারবারি
মাতা পুষ্পা,গৃহবধূর ছেলে সে দরকারি,
যাঁর ব্যাটিং দেখতে মাঠে জমতো সে কী ভিড়
ক্রিকেটপ্রেমী জনের প্রিয়, সে রাহুল দ্রাবিড়।
বারো বছর বয়সে তাঁর ক্রিকেটে হাতেখড়ি
স্কুলের হয়ে ভাসান প্রথম তাঁর ক্রিকেট তরি।
বিশ্বনাথ ও তারাপোরে দেন ক্রিকেট-দীক্ষা
সঙ্গী হলো জীবনে তাঁর তাদের সে শিক্ষা।
কর্নাটকের হয়ে তিনি ঘরোয়া খেলা খেলে
নির্বাচকের সামনে প্রতিভা ধরেন মেলে।
ওয়ানডের জাতীয়দলে পেলেন তিনি ডাক
কিন্তু যেন কোথায় একটা থেকেই গেল ফাঁক।
শুরুটা তাঁর হলোনা ভাল শ্রীলঙ্কার সাথে
বাড়ালেন সময় আরও নিজের কসরতে।
ইংল্যান্ডে ঘটল তাঁর টেস্ট-অভিষেক
এমন খেলা খেললেন যে পেলনা কেউ ঠেক।
লর্ডস মাতিয়ে দিলেন তিনি দুর্দান্ত খেলে
আউট হয়ে ফিরে এলেন সেঞ্চুরিটা ফেলে।
ক্রিকেটপ্রেমী বুঝেই গেল নয় সে এলেবেলে
অনেকদিন থাকতে মাঠে এসেছেন এ ছেলে।
তাঁর ব্যাটিং ফোটাল মাঠে রানের ফুলঝুরি
হৃদয় দিয়ে ক্রিকেট খেলে করেন মনচুরি।
শতরান ও দ্বিশতরানে ভরালো তাঁর সাজি
বিদেশভূমে তিনি ছিলেন দলের সেরা বাজি।
প্রতিপক্ষ শক্ত হলে খুলতো তাঁর খেলা
চূর্ণ করে দিতেন তিনি বিপক্ষের র্যালা।
জ্বলে উঠতেন তিনি বেশি অস্ট্রেলিয়া-সাথে
লাইনচ্যূত হতেন তাঁরা, তাঁর সে ধাক্কাতে।
এরম এক টেস্ট ম্যাচে দুই হাজার একে
লক্ষণকে সঙ্গে নিয়ে নিলেন তিনি দেখে।
এমন ব্যাট করেন তাঁরা ফলো অনের পরে
অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা গেলেন যেন ঝরে।
তাঁদের জুড়ি মেললো ডানা চতুর্থ দিবসে
সারাদিন ব্যাট করলেন এলেন না যে বশে।
স্টিভ ওয়ার কাঁধে চাপান বড় রানের বোঝা
সেই রানকে টপকানোটা হলো না অত সোজা।
হুড়মুড়িয়ে ভাঙলো তাঁরা ভাজ্জির সে স্পিনে
রুদ্ধশ্বাস জয় দেখলো ইডেন শেষ দিনে।
ইতিহাসে জায়গা পেল সেদিনের সে জয়
সৌরভের সে নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়।
রক্ষণটা ছিল যে তাঁর এতোই মজবুত
বোলাররা কিছুতেই আর পেতে না খুঁজে খুঁত।
তাঁর ব্যাটের শাসন থেকে কেউ পায়নি পার
বোলারদের হয়রানিতে তুলনা নেই তাঁর।
বানচালই করে দিতেন তাঁদের সব চাল
বোলারদের নিকট তিনি ছিলেন- 'দি ওয়াল'।
ক্রিকেটকে নিয়ে গেলেন অতি উচ্চ স্থানে
'মিস্টার ডিপেন্ডেবেল' হলেন ডাকনামে।
ওয়ানডেতে যখন তাঁর জায়গা টলমলে
কিপিং-গ্লাভস পরে নিয়ে থেকে গেলেন দলে।
প্রমাণ কলে দিলেন তাঁর খেলার প্রতি টান
দেশের হয়ে লড়তে সদা মাঠে থাকতে চান।
স্লিপ-ফিল্ডার রূপেও যে চেনান তাঁর জাত
মন মাতানো ক্যাচ পাকড়ে করে দিতেন মাত।
সাহস আর দৃঢ়তা ছিল দেখবার মতন
ক্রিকেট মাঠের তিনি এক অমূল্য রতন।
============================
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন