google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re কবি আর্যতীর্থর কবিতাগুচ্ছ - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কবি আর্যতীর্থর কবিতাগুচ্ছ

।  একুশে।


আমার ভাষাতে শহুরে পালিশ, তোমার ভাষায় ঘাসের গন্ধ
তোমার মননে লালন ফকির, আমার পঠনে জীবনানন্দ, 
আসলে আমরা দুই সৈনিক, পরণে বাংলা ভাষার উর্দি,
গান লিখে যাই মায়ের ভাষাতে, যতই ভিন্ন ভিন্ন সুর দি।

আজন্মকাল বিদেশে থেকেও, কারোর বাংলা এখনও শুদ্ধ,
কারোর বাংলা কথাদের মাঝে ভিনভাষাদের প্রবল যুদ্ধ,
গ্রাম থেকে আসা উড়োখই লোক, মুখে অন্ত্যজ শব্দ অচেনা 
বইছে সবাই একটা পতাকা, সক্কলে এরা বাংলার সেনা।

শেকড় গেড়েছে বুকের ভেতর, ভাষার হয়না জাত বা ধর্ম,
ভাষার সেনারা ঘরে ঘরে আছে, বাংলার নামে পরেছে বর্ম,
অতীতে ছিলাম, এখনো রয়েছি, আমরা থাকবো  ভবিষ্যতে
প্রয়োজন হলে কোটি কোটি হাতে মশাল জ্বলবে একুশের পথে।




 । শাক মাছ।


(শুনলাম কিছু লোকে ধর্মের বেড়া টানে রবি নজরুলে....)

কাঠকুটো দাও, জ্বালবো আগুন, পুড়বো ধিকি ধিকি,
জ্বলুক কলম, আগুন দিয়ে ভাষার  দলিল লিখি।

ভেজা মনের গা শুকাবো, গনগনে আঁচ চাই,
শাক লিখেছে অনেক কলম, এইবারে মাছ চাই।
মাছ খুঁজতে বাজার গেলাম, ভরা কবির হাট,
আগুন দেখেই হুট করে সব বন্ধ দোকানপাট।

এক হাটুরে ফিসফিসিয়ে বললো আমায় ডেকে,
পঙ্গপালে আসবে ছুটে অমন আগুন দেখে।
আগুন নেভাও,  বাড়ি গিয়ে হিসেবী চুল বাঁধো,
মাছ বাদ দাও, পদ্যে তোমার শাকের ঘন্ট রাঁধো।

আমি বলি, ও হাটুরে, আগুন সবাই নিভিয়ে দিলে,
ভাষার ডাকে মশাল জ্বেলে কেমন করে যাই মিছিলে?
সাহিত্যকে  ধর্ম এখন মারছে ধরছে যেমনভাবে,
যে কোনোদিন ভাষা আবার শহীদ হতে ডাক পাঠাবে।

শাকের ক্ষেতে আগুন দিয়ে মাছ রেখেছি ঘরে পুষে,
রান্নাবাড়া ঝালিয়ে নেবো নতুন করে ফেব একুশে।



। মায়ের ভাষা।


তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফেলেছো, দেশে  থাকা বড় দায়
কপালফেরে অবশেষে পেলে ছেড়ে যাবার উপায়
যেখানেই যাও খুব ভালো থেকো, মাথা করে থেকো উঁচু
মায়ের ভাষাটি সঙ্গী হয়েছে, দেশ থেকে নেয়  পিছু।

অথবা বেঁধেছো বোঁচকাবুচকি, এবারে পালাতে হবে
ভাগ্য তোমায় চাবুক মেরেছে, দেশ ছেড়ে চলে যাবে।
অন্যের দেশে শরণ নিয়েছো, ত্রানের দয়াতে বাঁচো
মায়ের ভাষাটি লেপ্টেছো বুকে, ঠিক তাকে ধরে আছো।

সন্তান পড়ে  অন্য ভাষাতে, সেখানে সুযোগ বেশী
সে ভাষার সাথে মায়ের ভাষার ঠিক নেই মেশামেশি
রাতে বাড়ি ফিরে খাবার টেবিলে কিছুটা সময় খরচা
শিশুমনে বীজ, বেঁচে যাবে ঠিক  মায়ের ভাষার চর্চা।

বাড়ি ছেড়ে একা রয়েছো বিভুঁইয়ে পেটের ভাতের স্বার্থে
দেশে পরিবার আছে বড় সুখে তোমার পাঠানো অর্থে
দুধের অভাব মিটবে কি ঘোলে সুযোগ সেখানে কই
রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমানোর আগে মায়ের ভাষার বই।

অথবা এসব কিছু নও তুমি, কাজ নিয়ে রোজ ব্যস্ত
ভাষা নিয়ে নেই চিন্তা বিশেষ, লেখাটেখা দূর অস্ত।
তবু মুঠোফোনে মায়ের ভাষাতে লেখার উপায় খোঁজো
এভাষার বাসা বুকের ভেতরে, রোজ লিখে সেটা বোঝো।

তোমরা সকলে জেনে বা না জেনে মায়ের ভাষার সৈনিক
মায়ের ভাষার টিমটিমে দীপে সলতে ধরাও দৈনিক।
শিকড় তোমার এ ভাষায় গাঁথা,যেখানে বাঁধো না বাড়ি
মায়ের ভাষাকে প্রণাম জানায় একুশে ফেব্রুয়ারি।

=================================


কবি আর্যতীর্থ, কলকাতা