বর্ষবরণ
এস এম মঈনুল হক
অতীতকে ভুলে যাওয়া মানেই ভবিষ্যতকে কবর দেওয়া। তাই বলে এই নয় যে অতীতের আবর্জনা, অমলিন দৃশ্য, অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন ও অপরিশ্রুত জঞ্জালকেও আমাদের মনে রাখতে হবে। তাপস নিঃশ্বাস বায়ে / মূমূর্ষূরে সুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা / দূর হয়ে যাক যাক....। সারা বছরের পুরনো আবর্জনাকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। স্মৃতির পাতায় যা অপরিচ্ছন্ন অমলিন তা পরিহার করতে হবে। আমরা অনেক কিছুই পালন করি। তার মধ্যে পয়লা জানুয়ারিও। ৩১ শে ডিসেম্বরের রাত্রি ১২টা ছুঁই ছুঁই মুহূর্তটা দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি। যেমন আমরা রাত্রি ১১টা৪৯ মিনিট থেকে চা খেতে শুরু করি এবং রাত্রি বারোটার পরে শেষ করি। বাইরে এসে দিনের বেলায় বলি যে আমরা দু'বছর ধরে চা খেয়েছি। কিন্তু সত্য কথা বলতে কি, পয়লা জানুয়ারি বাঙ্গালীদের কোন উৎসবই নয়। ধর্মীয় দিক থেকে দেখতে গেলে এটা শুধুমাত্রই খ্রিস্টানদের অনুষ্ঠান। কেননা, ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সব কিছুই শুধুমাত্র খ্রিস্টানদের জন্য। সুতরাং বাঙালিদের এ নিয়ে এতটা উদগ্রীব হবার কিছুই নেই। তবু আমরা করি বা করতে হবে। কেননা আমাদের সবকিছুই তো ইংরেজি ক্যালেন্ডার এর সঙ্গে যুক্ত। এসো হে বৈশাখ এসো এসো- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে বর্ষবরণ করেছিলেন, আদৌ কিন্তু আমরা তা করি না। পরের কথা আর কি বলব, আমি নিজেই বাংলা তারিখ অনেক সময় বলতে পারিনা। অনেককে জিজ্ঞেস করে দেখেছি আজকে বাংলা মাসের কত তারিখ? উত্তর দিয়েছেন জানিনা ভাই। অনেককে এভাবে বলতে শুনেছি বাংলা কোন মাস চলছে সেটাই জানিনা। এটা ধ্রুব সত্য। এর জন্য দায়ী কিন্তু আমরাই। কেননা আমরা আমাদের বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যগুলোকে নষ্ট করে ফেলতে বসেছি। অনুসরণ করা তো দূরের কথা মনেও রাখিনা। যেসব টিকিধারী এবং দাড়ি ধারণকারী ব্যাক্তিরা ইংরেজ আমলে একসময় ইংরেজি শিক্ষাকে পাপের শিক্ষা বলেছিল এবং ইংরেজি শিখতে বাধা দিয়েছিল, এখন তারাই বেশি করে ইংরেজি স্কুল খুলে বেড়ায়। জিজ্ঞেস করলে বলে, ওরে বাবা ইংরেজি ছাড়া কিছু নেই। ছেলে যদি ইংরেজিতে কথা না বলে তাহলে কি আর ভালোভাবে পরিবেশ তৈরি করা যায়? আমি নিজেও অফিস আদালতে গিয়ে দেখেছি যখন সাধারণ বাংলায় কথা বলেছি, বেশিরভাগই অফিসারেরা পাত্তা দেন না। যেমনি একটু ইংরেজি বলতে শুরু করেছি তখনই অফিসারেরা বলেছেন, বসুন দেখি কি করা যায়। তার মানে আমার কাজটা কিছুটা হলেও হয়ে গেছে বা অফিসারেরা কিছুটা হলেও আমাকে পাত্তা দিয়েছেন। কেউ যদি এটাকে মিথ্যা মনে করেন তাহলে আমি তার সঙ্গে এইসব পরিস্থিতিতে বসতে রাজি আছি। ইংরেজরা থাকাকালীন যদি ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রতি কোন বাধা না আসতো তাহলে ভারতবর্ষের সকল মানুষই ইংরেজিতে কথা বলতেও পারতো, পড়াশোনাও করতে পারত। এর জন্য নতুন করে ইংরেজি স্কুল খোঁজার কোনও প্রয়োজনই হত না। এর জন্য দায়ী ঐ সময়ের ঐ উল্লিখিত ব্যক্তিরা। কোনও ধর্মই ভাষা শিক্ষার জন্য কোন বাধা সৃষ্টি করেনা। ওটা ছিল ওদের মূর্খামী। এর জন্য আমরা পৃথিবীর ম্যাপে অনেকটাই ইংরেজি ভাষা শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে আছি। আসুন আমরা এইভাবে বর্ষবরণ করি যেভাবে কবিগুরু করেছিলেন। আজি নূতন রতনে,
ভূষণে যতনে,
প্রকৃতি সতীরে
সাজিয়ে দাও। নূতন বছরের প্রাক্কালে প্রকৃতিকে এভাবেই সাজাতে হবে। রবী ঠাকুর বলেছিলেন- হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!
ধূলায় ধূসর রুক্ষ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল
তপঃ ক্লিষ্ট তপ্ত তনু মুখে তুলি বিষান ভয়াল!!
কারে দাও ডাক হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ!
বাঙ্গালীদের মনে নতুন বছরের উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগাতে হলে পয়লা বৈশাখ দিনটিকে বিভিন্ন উৎসব ও উদ্দীপনার মাঝে কাটাতে হবে। আমরা এভাবেও নতুনের আগমনকে স্মরণ করতে পারি। আমার লেখনীতে বর্ষবরণ।
বর্ষবরণ
পুরনো আবর্জনা মুছে
তোমাকে করব মহিয়ান
গর্ভে ভরাবো মন প্রাণ।
মুছিয়া ফেলিবো মনের কালি
নতুনের করবো জয়ধ্বনি
মানবো দেশের সংবিধান।।
সাম্প্রদায়িকতার বীজ করব শেষ
মিলেমিশে গড়বো নতুন দেশ
থাকবে না ভেদাভেদ জাতিগত।
হে নতুন তোমার আগমণে
তাকাবো না কভু পিছন ফিরে
হব সাদা আনন্দে আপ্লুত।।
এই নিয়ে করছি মোরা পণ
করলাম তোমাকে বরণ
বর্ষবরণ বর্ষবরণ।
এক হোক কোরআন পুরাণ
বাইবেল ত্রিপিটক আর সব
হোক এক জাতি এক প্রাণ।।
বর্ষবরণ বর্ষবরণ।
===== (সমাপ্ত) =====
এস এম মঈনুল হক
ফুলশহরী, রমনা সেখদিঘী, মুর্শিদাবাদ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন