Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রবন্ধ ।। ঈশ্বর ও বিজ্ঞান ।। মৃণাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়


ঈশ্বর ও বিজ্ঞান

মৃণাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়



ঈশ্বরের ধ‍্যান ধারণার উৎপত্তির বহু বহু বছর আগে এবং আমাদের সৌরমন্ডলের, এমনকি আমাদের ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে গ‍্যালাক্সির উৎপত্তিরও প্রায় আনুমানিক 12 বিলিয়ন কোটি বছর আগে বেশীর ভাগ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী একটি বিন্দু অবস্থান (point of singularity) থেকে আজ থেকে প্রায় 13.8 বিলিয়ন কোটি বছর পূর্বে আমাদের এই বতর্মান বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি। যার মহাজাগতিক নাম "বিগ ব্যাং" বা মহা বিস্ফোরণ। সৃষ্টির আগের মুহূর্তে সেই আদি বিন্দুর মধ‍্যে শক্তি ও তাপমাত্রার পরিমাণ ছিল বিজ্ঞানের ভাষায় "অসীম"। এবং শুরুর তাৎক্ষণিক মুহূর্তে কোনো কণা বা পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না। সবটাই ছিল শুধুমাত্র শক্তি। এবং ঐ মুহূর্তেও স্বাভাবিকভাবেই আর পাঁচটা বিস্ফোরণের মতোই উৎপন্ন শক্তি বিপুল বেগে সম্মুখে ক্রম সম্প্রসারণ লাভ করে এবং পরবর্তী কয়েক মিলি সেকেন্ডের  ব‍্যবধানে প্রথম মৌল কণা, অর্থাৎ হাইড্রোজেনের উৎপত্তি ঘটে। এবং পরবর্তী বেশ কয়েকশো কোটি বছর ধরে এই বিশ্বের ক্রম সম্প্রসারণের মধ‍্য দিয়ে এই বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে এবং পাশাপাশি দুটি প্রথম স্বাধীন হাইড্রোজেন  পরমাণু উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথেই মহাকর্ষ বলের (gravitational force) কার্যকারিতা শুরু হয় এবং হাইড্রোজেন পরমাণু গুলি মহাকর্ষ বলের দরুন সঙ্গবদ্ধ হয়ে বিশালাকার হাইড্রোজেনের মেঘ তৈরি করতে শুরু করে। কিন্তু সেই মুহূর্তে পারমাণবিক সংযুক্তি করণের (nuclear fusion) উপযুক্ত তাপমাত্রার অধিক তাপমাত্রা থাকার জন‍্যে পারস্পরিক ভাবে মিলিত হয়ে পরবর্তী ভারী মৌল,অর্থাৎ হিলিয়াম উৎপত্তি হতে পারছিল না।এইভাবে মাঝে আরও বেশ কয়েকশো কোটি বছরের স্থিতাবস্থার পর উপযুক্ত তাপমাত্রার উপস্থিতিতে পারমাণবিক সংযুক্তি করণের মাধ্যমে হাইড্রোজেনের মেঘের মধ্যে প্রথম নক্ষত্রের উৎপত্তি ঘটে অর্থাৎ প্রথম বারের মতো অসীম শূন‍্যে অন্ধকারের মাঝে আলোর বিরল উপস্থিতির সূচনা হয়। যেখানে চারটি সাধারণ হাইড্রোজেন পরমাণু পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু, একটি উপপারমাণবিক (sub atomic) কণা নিউট্রন (যার শুধু ভর আছে, কোনো আধান নেই)এবং প্রায় 17.59 mev  তাপ উৎপন্ন হয়। এবং এই বিপুল পরিমাণ তাপই প্রতিটি নক্ষত্রের মধ‍্যেকার অফুরন্ত তাপ ও আলোর মূল উৎস। এই প্রক্রিয়ায় মহান বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্র , E = mc^2 অনুযায়ী, যেখানে m- হচ্ছে  বস্তুর ভর এবং c- হচ্ছে আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে; পাশাপাশি সম পরিমাণ বস্তুর বিনাশ ঘটে। পরবর্তী সময়ে একাধিক নক্ষত্র ও মহাজাগতিক বস্তু কণার মধ্যে পারস্পরিক মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পরস্পর একত্রিত হয়ে অগণিত গ‍্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গার উৎপত্তি ঘটেছে যাদের প্রত‍্যেকের কেন্দ্রে মূল ধারক শক্তি হিসেবে একটি বিপুল ভরের কৃষ্ণ গহ্বরের (Black hole) উপস্থিতি বতর্মানে প্রমাণিত সত্য।এবং এই ধরনেরই একটি মাঝারি আকারের আকাশগঙ্গা যায় নাম মিল্কিওয়ে, তারই একটি বাইরের প্রলম্বিত বাহুতে উপস্থিত বৃহৎ আকৃতির হাইড্রোজেন পরমাণু এবং ধুলিকণার মেঘ থেকে আজ থেকে প্রায় 500 কোটি বছর আগে আমাদের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী নক্ষত্র সূর্যের উৎপত্তি এবং সেখানেই প্রায় 450 কোটি বছর পূর্বে সৌরমন্ডল তথা গ্রহ, উপগ্রহ ও গ্রহাণু পুঞ্জের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সৌর পরিবারের উৎপত্তি।
প্রথম দিকে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী আমাদের সূর্য একটি যমজ (binary) তারা। অর্থাৎ দুটি তারা পরস্পরকে পরস্পর ভেদী দুটি বলয় বা রিং-এর মতো প্রদক্ষিণ করছে।এবং প্রায় 450 কোটি বছর পূর্বে যখন সূর্য ও তার যমজ তারা তাদের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরস্পরের সর্বাপেক্ষা নিকটে উপস্থিত হয় তখন পারস্পরিক প্রবল অভিকর্ষ বলের আকর্ষণে দুজনের আগ্নেয় গলন্ত শরীর থেকে বিক্ষিপ্ত পদার্থরাশি পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দূরত্বে একত্রিত হয়ে নিকটবর্তী নক্ষত্রের চারপাশে উপবৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করা শুরু করে এবং সময়ের সাথে নিজেদের  অভিকেন্দ্রিক বলের প্রভাবে গোলাকার আকার প্রাপ্ত হয় এবং গ্রহ ও উপগ্রহের উৎপত্তি ঘটে। আবার কিছু বড় অংশ ঘূর্ণনের সময় পারস্পরিক সংঘর্ষের দরুন তুলনামূলকভাবে আকারে ছোটবড় গ্রহাণুর আকার ধারণ করে এবং সূর্যের চারপাশে বেল্ট বা রিং-এর আকারে (oort cloud, kuiper belt) নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমণ করতে শুরু করে। আমাদের পৃথিবী এবং অন‍্যান‍্য গ্রহ বা উপগ্রহের আবহমন্ডলে প্রতিনিয়ত যেসব উল্কাপিন্ড (asteroid) প্রবেশ করে সেগুলির বেশিরভাগই এই ধরনের গ্রহাণু পুঞ্জের দ্বারা উৎপন্ন বেল্ট বা রিং-এর থেকেই গ্রহ বা উপগ্রহ গুলির আকর্ষণ বলের দরুন ছিটকে বেরিয়ে আসা গ্রহাণু পুঞ্জ।
সৌরমন্ডলের বতর্মান ব‍্যাখ‍্যা অনুযায়ী মোট আটটি গ্রহের মধ্যে সূর্যের থেকে দূরত্বের বিচারে প্রথম চারটি গ্রহ, অর্থাৎ বুধ, শুক্র (সব থেকে উষ্ণ), পৃথিবী ও মঙ্গল আকারে ছোট এবং পাথুরে।অর্থাৎ শক্ত ভুমি বিশিষ্ট। আবার পরবর্তী চারটি গ্রহ, অর্থাৎ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন আকারে বড় ও গ‍্যাসীয়। আবার এদের প্রত‍্যেকের চারপাশে (ব‍্যাতিক্রম বুধ) এক বা একাধিক উপগ্রহ আছে।এবং এত কিছুর মধ্যে শুধুমাত্র পৃথিবীতেই বিগত প্রায় 350 কোটি বছর আগে ঐ সময়কার উপযুক্ত পরিবেশে উপস্থিত জটিল জৈব অণুর (কার্বন সমৃদ্ধ) থেকে প্রথম আনুবিক্ষনিক জীবের সৃষ্টি, এমন একটা অপ্রমাণিত সিদ্ধান্তে আপাতত জীব বিঞ্জানীরা সহমতের দ্বারা  উপনিত হয়েছেন। তবে অনেকের মতে (যেমন, এরিক পল ভন ডেনিকেন) বাইরের কোনো নক্ষত্র জগত থেকে, যেখানে আমাদের থেকেও উন্নত প্রাণি সভ‍্যতা রয়েছে বা হতে পারে ছিল (ভিন গ্রহি বা aliens ), সেখান থেকে বিভিন্ন সময়ে আমাদের পৃথিবীতে আগত উন্নত শ্রেণীর প্রাণীদের দ্বারাই আমাদের পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের বীজ রোপিত হয়। তবে এই বিষয়ে সঠিকভাবে আলোকপাতের উদ্দেশ্যে পর্যাপ্ত গবেষণা চলছে পৃথিবীর কমবেশি প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত সব দেশেই এবং সেইভাবে উপযুক্ত কোনও প্রমাণের অভাবে এখনো পযর্ন্ত কোনো তত্ত্বই আপাতত  স্বীকৃত সত‍্য নয়। কারণ বাইরের জগত থেকে গ্রহাণু বা উপগ্রহের (artificial satellite) মাধ‍্যমে প্রাণ এসে থাকলে সেক্ষেত্রে আমাদের সবরকম অত‍্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা ও অনুসন্ধান লাগাতার চালিয়ে যাওয়া সত্বেও আজ অবধি আমাদের জ্ঞানের পরিধির মধ্যে কোনো পাশ্ববর্তী নক্ষত্র পুঞ্জে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি বা অন্য কোনো জগত থেকে উন্নত সভ‍্যতার দ্বারা পাঠানো সিগন্যাল বা তরঙ্গ আমাদের কাছে আজ অবধি এসে পৌঁছায়নি। যার থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া সম্ভব যে আমাদের নিকটবর্তী জগতে পৃথিবী ব‍্যতিত অন‍্যান‍্য গ্রহে এখনো পযর্ন্ত প্রাণের বিকাশ লাভ ঘটেনি। বা ঘটলেও যোগাযোগ রক্ষা করার মত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়নি সেখানকার জীব জগত। আবার কোনও প্রাণীর পক্ষে তার জীবদ্দশায় কোনও অত‍্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুটি মহাজাগতিক বস্তুর মধ‍্যবর্তী দূরত্বকে অতিক্রম করে স্থানান্তরে পরিভ্রমণ করা এই মুহূর্তে অলীক কল্পনা ব‍্যতিরেকে আর কিছুই নয়। কারণ, আমাদের জানা জগতে আলোর গতির থেকে বেশি গতিতে পরিভ্রমণ করার সম্ভাবনা গাণিতিক ভাবে একেবারেই সম্ভব নয়। এটা সম্ভব করতে গেলে বস্তুর ভর হয়ে যাবে শূন্য অর্থাৎ তার অস্তিত্বই থাকবে না।
আর এই অক্ষমতাকে আড়াল করার জন‍্যে কিছু মানুষ এই বিশ্বে যা কিছু ঘটেছে তার সবকিছুতেই ঈশ্বর নামক এক কাল্পনিক চরিত্র কে প্রাধান্য দিয়ে সমস্ত না জানা প্রশ্নের উত্তর বা যা কিছু ভালো মন্দ ঘটনার দায়ভার ঈশ্বরের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে স্বঘোষিত "ঈশ্বর পুত্র", এই আখ‍্যায় ভুষিত করে বিভিন্ন ধরনের মুখ নিঃসৃত বাণী প্রচার করেছেন এবং পরবর্তীতে সেইসব কিছুই মানুষের মুখে মুখে বা লিপিবদ্ধ আকারে ধর্মগ্রন্থ রূপে স্বীকৃতি লাভ করে।
প্রথম দিকে প্রায় সমস্ত ধর্মেরই উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সত‍্যের বা ন‍্যায়ের পথ দেখিয়ে তাদের আভ্যন্তরীণ শক্তিকে - যা আমাদের শরীর রূপী একটি আধারকে পরিচালনা করে, যেটি হিন্দু ধর্মে আত্মা নামে পরিচিত এবং যেটি বিভিন্ন ধর্মিয় বিশ্বাসে পরমাত্মা বা বিশ্ব আত্মার একটি ক্ষুদ্র অংশ এবং যেটির উপস্থিতি শরীর রূপী আধারে থাকার অর্থ জড়বৎ শরীরে চালনা শক্তি বা প্রাণের উপস্থিতি যা  যন্ত্রে  থাকা  ব‍্যাটারির  মতো এবং না থাকার অর্থ জড় ও জীবের মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকা; ভালো কর্মের দ্বারা বিভিন্ন জন্মান্তরে পরিশুদ্ধি ও পরিমার্জন ঘটিয়ে এই পৃথিবীর বন্ধন থেকে চিরমুক্তি লাভের মধ্য দিয়ে পরমাত্মা বা বিশ্ব আত্মায় বিলীন হয়ে যাওয়া।
এই পর্যন্ত তাও মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতির হাত ধরে সভ‍্যতার ক্রম অগ্রগতির পাশাপাশি কিছু স্বার্থান্বেষী চতুর ও সুযোগ সন্ধানী মানুষ ধর্মকে তাদের মত করে বিকৃত রূপ দান করে আমাদের মোট জনসংখ্যার অন্তত শতকরা 85 ভাগ মানুষকে তাদের অজ্ঞতা ও ভয় ভীতির সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত তাদেরকে ভুল পথে চালিত করছে। আমাদেরকে ধর্মের নামে ভুল ব‍্যাখ‍্যা দিয়ে একে অপরের সাথে লড়িয়ে দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
তাই সময় হয়েছে মানুষের মনের ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে তাদেরকে সঠিক পথ বা আলোর দিশা দেখিয়ে তাদের কাছে সঠিক সত‍্যটা, যেটা একমাত্র বিজ্ঞান শিক্ষার দ্বারা সঠিক প্রমাণ সহ উপস্থাপন করা সম্ভব; তুলে ধরা আরও বৃহত্তর ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পূর্বেই।প্রথমত এই ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা দরকার যে, যা কিছু আজ পর্যন্ত ঘটে এসেছে বা যা কিছু আজকে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ঘটে চলেছে এবং আগামীতে যা কিছু ঘটবে তার পেছনে কোনো কাল্পনিক বা মন গড়া শক্তির হাত নেই। সবকিছুই সুশৃঙ্খলভাবে চালিত হচ্ছে একটিমাত্র 'জ্ঞানের' দ্বারা এবং সেটি হচ্ছে 'বিজ্ঞান'।
আমরা জানি, বিজ্ঞানের প্রধান চারটি শাখা আছে, যেগুলি হলো- পদার্থবিদ‍্যা, রসায়ন, জীববিদ‍্যা এবং গনিত (mathematics)।
হিন্দু ধর্মে প্রধান যে তিন দেবতার কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর; কিংবা ত্রিনয়ন- এরা আসলে বিজ্ঞানের প্রধান তিনটি শাখারই ধর্মিয় রূপ। এবং এদের মধ‍্যে মূল সমন্বয় বা তাল মিল বজায় রাখছে গনিত তথা mathematics। এটি এমন একটি চেতনা (consciousness) যা বাকি তিনটি বিজ্ঞানের শাখাকে একসুত্রে বেঁধে রেখেছে।
আমরা এই বিশ্বটাকে যত জটিল বলে মনে করি না কেন, এই বিশ্বটা মোটেও ততটা জটিল নয়। মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট সংখ্যা (mathematical numbers) দ্বারা এই বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। এবং সেখানে কোনো রকম সামান্যতম বিচ‍্যুতিও গ্রাহ‍্য নয়। প্রচন্ড নিখুঁত ভাবে সবকিছুই নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ। আর এই  নির্দিষ্ট নিয়মগুলোকে খুঁজে বার করতে পারাটাই এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র ধ‍্যান, জ্ঞান বা লক্ষ্য হওয়া উচিত বাকি অযৌক্তিক সবকিছুকে চিরতরে বর্জন করে। কারণ যে কোনো ধর্মের ব‍্যাখ‍্যা অনুযায়ী ঈশ্বর বলতে যে ধারণা পোষণ করা হয়েছে তাতে করে এই সমগ্র বিশ্বই যেহেতু ঈশ্বর কর্তৃক  সৃষ্ট তাই শুধুমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের আবির্ভাব ঘটবে এবং বহাল তবিয়তে  এখনো পযর্ন্ত প্রায় তিনশ বছর ধরে শুধুমাত্র টিকেই নেই বরং প্রতিনিয়ত পরিবেশের সাথে অসম লড়াইয়ের মধ‍্য দিয়ে খাপ খাইয়ে নিজেদেরকেই  আরও উন্নততর করে তুলছে এবং ক্ষমতার দম্ভে নয় বরং দার্শনিক চিন্তাভাবনা এবং বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিমত্তার সুচারু প্রয়োগ শৈলীতে নিজেদেরকেই প্রায় ঈশ্বর তুল‍্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এবং পৃথিবীর অন‍্যান‍্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে বলতে দ্বিধা নেই যে, আক্ষরিক অর্থে মানুষই ঈশ্বর। এইসব ইতর প্রাণীদের বৃদ্ধি বা টিকে থাকা প্রায় সবটাই মানুষের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। 
প্রাগৈতিহাসিক যুগে ক্রম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যখন বানর শ্রেণীর জীব থেকে ( জীববিদ‍্যার সর্বশেষ ব‍্যাখ‍্যা অনুযায়ী ) মানব ইতিহাসের যাত্রাপথের শুভ সূচনার শুরু সেই সময় থেকেই প্রকৃতির বিপুল শক্তির কাছে অসম লড়াইয়ে নিত‍্য পর্যুদস্ত প্রথম মানুষ প্রকৃতির শক্তির কাছে আত্মসমর্পণের পন্থা বেছে নেয় এবং প্রাকৃতিক শক্তি গুলোকেই, যেমন- জল (বরুণ),বজ্র (ইন্দ্র), বাতাস(পবন), আগুন(অগ্নিদেব),সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, শনি, বৃহস্পতি  প্রভৃতিকেই কল্পনায় ঈশ্বর রূপে মান‍্যতা দেওয়া শুরু করে।পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশের সাথে সাথে ক্রমেই মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করা শুরু করে এবং অন‍্যান‍্য জীব বৈচিত্র্যকে নিজের মতো করে শাসন ও লালন পালন করা শুরু করে নিজের স্বার্থে বা প্রয়োজনে ব‍্যবহার করার জন‍্য। অর্থাৎ সেই অর্থে অন‍্যান‍্য প্রাণিজগতের কাছে নিজেকে প্রভু বা ঈশ্বর রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো যে এতো বৈচিত্র্যময় অগুন্তি প্রাণীকুলের মধ্যে একমাত্র মানুষই বিদ‍্যা বুদ্ধির দৌড়ে একই প্রাকৃতিক পরিবেশে একত্রে বেড়ে ওঠা সত্বেও বাকি সবার থেকে প্রায় সবদিক থেকেই এতো স্বতন্ত্র কেনো? তাহলে কোথাও কি কোনো একটা যোগসূত্র (link) অনুপস্থিত ( missing) আছে? একমাত্র মানুষই দু-পায়ে ভর দিয়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপে (equal steppings) বুক সোজা বা টানটান অবস্থায় রেখে মাথা উঁচু করে দীর্ঘ পথ একটানা চলতে সক্ষম।একমাত্র মানুষেরই হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের আকার বিভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ম কাজ করার উপযোগী করেই গঠিত কেনো? একমাত্র মানুষের মনেই লজ্জা বোধ এলো কেনো?একমাত্র মানুষই বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলো কেনো?একমাত্র মানুষই লিখিত লিপির মাধ্যমে ভাষাকে লিপিবদ্ধ করে বিদ‍্যালাভ বা শিক্ষা অর্জনকে প্রাধান্য দিল কেনো?একমাত্র মানুষই তার পরবর্তী প্রজন্মের জন‍্য, তাদের সুযোগ, সুবিধা ও সমৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে এতো উৎসাহি কেনো? একমাত্র মানুষই এতো জিজ্ঞাসু বা অনুসন্ধিৎসু কেনো? সে কিসের খোঁজে মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহে, নক্ষত্রে প্রতিনিয়ত উপগ্রহ পাঠাচ্ছে? তবে কি সে সম্পূর্ণ অজান্তেই তার হারিয়ে যাওয়া অতীতকে খুঁজছে? তাহলে মানুষ কি এই পৃথিবীর বাইরে থেকে একদা এসে থেকে যাওয়া কোনো পথভ্রষ্ট ভিনগ্রহি? নাকি অন‍্য কেউ তাদেরকে এখানে স্বইচ্ছায় রেখে গেছে আরও কোনো মহান উদ্দেশ্যে বা প্রয়োজনে?
এই প্রশ্নের উত্তর আগামী সভ‍্যতার কাছেই জানার ইচ্ছা নিয়ে আপাতত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো বিকল্প নেই।

                           -----××××-----

MRINAL BANDYOPADHYAY,
KAMPA PURBAPARA,
VILL. AND P.O. KAMPA,
DIST. 24 PGS (NORTH),
PIN. 743193;
Mb. 9748815168.

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩