স্মৃতির পাতায় নববর্ষ
মিঠুন মুখার্জী
বাঙালি আনন্দপ্রিয়। বারো মাসে তেরো পার্বণকে কেন্দ্র করে তারা সারা বছর আনন্দে মেতে থাকেন। তবে সবার কাছে সব অনুষ্ঠান বিশেষ থাকে না, কোনো কোনো পার্বণ বিশেষ হয়ে ওঠে। তারা ইংরাজি নববর্ষকে যেমন আপন করে আনন্দে মেতে ওঠেন, তেমনি নিজেদের বাংলা নববর্ষে নানান অনুষ্ঠানে সামিল হন। সকল বাঙালিরই থাকে নববর্ষকে কেন্দ্র করে নানান স্মৃতি। তবে সকল স্মৃতি তারা মনে রাখেন না। কিছু কিছু স্মৃতি চিরকাল মনে থেকে যায়। আমার মনেও নববর্ষকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ স্মৃতি আজও জেগে আছে, যার কথা আজ আমি ব্যক্ত করব।
১৪১০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ। তখন আমার বয়স ছিল কুড়ি বছর। এখনকার থেকে অনেক প্রানচঞ্চল ছিলাম আমি। আমাদের গোবরডাঙায় পয়লা বৈশাখ থেকে দশ দিন গোষ্ঠবিহার নামে একটি মেলা হয়। আজ এই মেলা দুশো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে গুরুজনদের নমস্কার করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কালীবাড়ি প্রসন্নমায়ের মন্দিরে প্রনাম করে গিয়েছিলাম একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল কলকাতায়। নববর্ষ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। গান, নাচ , কবিতা আবৃত্তি সব কিছুই ছিল। নাম করা শিল্পীরা ধুতি - পাঞ্জাবি ও মেয়েরা নতুন শাড়ি পড়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আমিও সেখানে কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবার সুযোগ পেয়েছিলাম। গেয়েছিলাম 'এসো হে বৈশাখ ' গানটি। সকলে হাততালি দিয়ে ধন্য ধন্য বলেছিল। সেই প্রশংসার কথা আমি আজও ভুলতে পারি নি। এটা আমার বিশেষ পাওনা ছিল। বাঙালির প্রিয় খাবারগুলো সেদিন দুপুরের ভুঁড়িভোজে ছিল। ডাল,আলুপোস্ত, কাতলা কালিয়া, ইলিশ ভাঁপা, খাসির মাংস, আমের চাটনি, পাঁপড়, চমচম, রসোগোল্লা ইত্যাদি। বাঙালির অনুষ্ঠান আর জমিয়ে খাওয়া - দাওয়া হবে না, তাই হয়। সেই দিনের খাওয়া-দাওয়ার কথাও আমি আজও ভুলি নি।
বিকেলে বাড়ি ফিরে মনের আনন্দ নিয়ে চার দোকানে হালখাতা করেছিলাম আমি। মনের মধ্যে নতুন বছরের আনন্দ ছিল ভরপুর। সন্ধ্যাবেলায় গিয়েছিলাম গোষ্ঠবিহার মেলায়। নাগরদোলা, ডিস্ক, প্যারাসুট চড়ে ছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। খেয়েছিলাম ফুচকা, চাউমিন, কোকোকোলা, আইসক্রিম ইত্যাদি। ওই দিন মেলায় আমি আমার ভালোবাসার নারীটিকে দেখেছিলাম। তাকে কোনোদিনই আমি বলতে পারি নি, আমি তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু বৈশাখের ওই মেলায় প্রথম আমি ওর সাথে কথা বলেছিলাম। ওর চোখের চাহনি আমি আজও ভুলতে পারি নি। আজ অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে, কিন্তু তাকে আমি আজও ভুলতে পারিনি। আজও বউ-মেয়েকে নিয়ে বৈশাখ মাসে গোষ্ঠবিহার মেলায় গেলে আমার মনে হয় আমার প্রথম ভালোবাসার মেয়েটি কোথাও না কোথাও থেকে আমাকে দুচোখ ভরে দেখছে।
===============
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন