google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত


কী বলব!

বন্দনা সেনগুপ্ত  



এত কিছু বলার আছে যে মনে হচ্ছে চেপে থাকলে বোধহয় দম আটকেই মরে যাব। অথচ, কাউকে কিচ্ছুটি বলছি না।


মেয়েটা ডিউটি করছিল। কি ডিউটি? না, সেবা। সে ছিল ডাক্তার। মেরে ফেলল কে? সেও ডাক্তার! জানি আপনারা বলবেন বিচারাধীন বিষয়। প্রমাণ হওয়ার আগে অপরাধী ঘোষণা করা যায় না। ঠিক কথা। কিন্তু, কিছু না করলেও দায়িত্ব প্রধানেরই। কত অভিযোগ আসছে। ওষুধ পাচার। অঙ্গ পাচার। মধুচক্র। নেক্রোফিলিয়া। ছাত্র ছাত্রীদের সুবিধা দেওয়া। জানি না ভবিষ্যতে আরও কি কি উঠে আসবে।


এই সবই আপনারা জানেন। তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছেন। কিন্তু, অনেকে প্রশ্ন করছে কেন? এখন কেন? কারণ, আমরা ভয় পেয়েছি। ধর্ষণ করে খুন কি আগে হয় নি? তাদের কারুর কারুর কি সাজা হয় নি? তাহলে এখন নতুন কি? কোথাও না কোথাও তো রোজই হচ্ছে। তাহলে? কারণ, এই মেয়েটির সঙ্গে আমরা একাত্ম বোধ করছি। ভয় পাচ্ছি আমার মেয়েটির সাথেও এমন হবে না তো? শুধু তাই নয়। সে ভয় তো আগেও ছিল। কিন্তু, এই নৃশংসতা ও প্রশাসনিক দুর্নীতি বড্ড বেশি খোলাখুলি হয়ে গেছে।


এও আপনারা সবাই জানেন। আমি ভাবছি অন্য কথা। মেয়েটিকে আমরা সবাই আমাদের ঘরের মেয়ে বানিয়ে ফেলেছি। তার মা বাবা তাকে কষ্ট করে পড়িয়ে দাঁড় করিয়েছে। মানুষ করেছে। শুধু চেহারায় নয়, সত্যিকারের মানুষ করেছে। সে সবার ভালোর জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিয়েছে।


যাঁরা অভিযুক্ত, তারাও কিন্তু একটা পরিবার থেকে এসেছেন। আমরা কি চাই আমার সন্তান এরূপ হোক? এত অপরাধ না হোক, একটাও অপরাধ করুক? জেলে যাক? চাই না। কেউ চাই না। তাহলে কেন এমন হয়? 


পরিবার সমাজের এক একটা অংশ। পরিবারে ঘুন ধরলেই এরকম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়ে ওঠে। যদি, লোভ বেশি হয়, যেন তেন প্রকারেন তাড়াতাড়ি টাকা রোজগার করার ইচ্ছা হয়, নীতি দুর্নীতির পাঠ যখন ভুল হয়ে যায়, তখনই অপরাধ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই ছোট ছোট চুরি, নগন্য মিথ্যা কথা, লোভের বশে নিজের কোলে ঝোল বেশি টানতে দেখলেই, নিজের ও ছেলে মেয়ের রাশ টেনে ধরুন। আমার শাশুড়ি মা শেখাতেন সুমতি কুমতির কথা। সুমতির ভালো কথা, শুনতে হয়। কুমতি টানে বিপদের দিকে, তার কথা শুনতে নেই। নিজেকে সংযত করতে হয়। এই কথাগুলি জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করে চলতে হয়। বাড়ির বড়দের জন্য এটা একটা গুরু দায়িত্ব। কারণ, তাঁদের দেখেই তো অন্যেরা শিখবে। একটা মজার গল্প বলি। বাচ্চা ছেলে বন্ধুর পেন্সিল উঠিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছে। যথারীতি গার্জেন কল হয়েছে। বাবা অবাক। আমাকে বললেই আমি অফিস থেকে কত পেন্সিল এনে দিই। ওর বন্ধুর পেন্সিলের কি দরকার! ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন? বাবা নিজের  চুরির কথাটা বুঝতেই পারছেন না, ছেলেকে কি শিখাবেন!


একটু আগে স্বামী সর্বপ্রিয়ানন্দ মহারাজের একটা ভিডিও দেখছিলাম। তিনি বলছিলেন, সংস্কার ও বৃত্তির কথা। সংস্কার, যা আমাদের মনের অবচেতনে থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এই ভাবনাগুলি আমাদের মনের সচেতন চিন্তায় এসে আমাদের বাক্য ও কর্মে পরিণত হয়। মানুষ কিছু শুভ অশুভ সংস্কার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু, সচেতন চিন্তা ও চেষ্টার দ্বারা আমরা তাদের পরিবর্তন করতে পারি। অশুভ এবং অন্যায় চিন্তাকে, শুভ ভাবনা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতেই হবে, নাহলে আমরা শুধু অন্যের জন্য নয়, নিজেদের জন্যও বিপদ ডেকে আনব।


মন খুব খারাপ। এমনকি, প্রধান বিচারপতির সততার দিকেও আঙ্গুল উঠছে। কে কাকে কী বলবে!


এমতাবস্থায়, যদি নিজের ও সবার ভাল চাই, তাহলে নিজের এবং পরিবারের সকলের চরিত্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে চলতে হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন