google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক

ব্যাকবোন  (Backbone) 

বিশ্বনাথ প্রামাণিক

 

কথাটা চাউর হতেই আগুন জ্বলে উঠল। যারা নিজেদের ভয়ঙ্কর রকমের আস্তিক বা নাস্তিক বলে মনে করে থাকে, তারাও সদলবলে ছুটে এল। ছুটে এল গোবিন্দের মা থেকে শুরু করে ফিরোজার নানি, অভিপ্সার পিসি থেকে সুদেস্নার স্বামী। গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে অলিতে গলিতে শুধু একটাই কথা বিনি পসসায় মেরুদণ্ড সারাচ্ছে গো .... শুধু তোমাকে নাইনে দাঁড়াতে হবে, ব্যাস! দুটো পরীক্ষা মাত্তর দিতে হবে তোমার – হাত দুটো মুঠো করে উপরে উঠছে কিনা, আর চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে কিনা!     কথাটা শুনেই ভোরের ট্রেন ধরতে উঠে পরে সখিনা বিবি। অনেকদিন ধরে তার চোখে আগুন জ্বলে বটে, কিন্তু হাত কিছুতেই উপরে ওঠে না, পা-ও নড়ে না হাত তুলতে গেলি কেমন ঘাড়ের খাছে খচ্‌ খচ্‌ করে নাগে। ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে আবার শুয়ে পড়ে। তার মরদটা গলা পযন্ত মদ গিলে এসে, তবে চোখি আগুন জ্বালতি পারে, হাত তুলে তার পইঠে পরিখে কইরে দেখে নেয় মরদ আছে নাকি, করমে কেরমে ভেড়া বনে যাচ্ছে...             

বিয়ের হয়ে যেদিন প্রথম এ বাড়িতে পা দিয়েছিল, তার শাউড়ির কথাগুলো এখনও মনে পড়ে সখিনার – ও গহর, শোন মনি, তরে একখান কতা কই, সাদির পরে ছেলেরা কেমন নাদা মারা ভেড়া বনে যায়। বউরে ভালবাসবা, সম্মান করবা, খাতির করবে, কিন্তু তুমি মরদ আছ নাকি, ভেড়া বনে গেইলে সে পরিখাও মাঝে মাঝে করবা?         

গহর মুখ তুলে তার আম্মির মুখের দিকে চেয়ে বলেছিল কি যে তুমি বল আম্মি। আমাকেও কি তুমি আব্বার মতো পাইছ নাকি!   

সময় এলি জানা যাবে বাপ, এত জোর দিয়ে কইয়ো না। হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল!    

সে দিন কথাটার মানে না বুঝলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতে সখিনা বুঝেছিল। কিন্তু হাতি ঘোড়ার কথাটা বুঝতে পারেনি আজও। কতবার সে তার শাউড়ির কাছ ঘেষে বসেছে, জানতে চেয়েছে – মা, অই হাতি-ঘোড়া কি বইলেছিলে জ্যান... একবার বুঝায়ে কইবে?

 প্রত্যেকবারে বুড়ি ফোকলা দাঁতে হেসে বলেছে – নিজের প্যাটের ছেলের জব্দ করনের বান তোমায় কী কইরে দি বউমা! মেয়েমানুষ হয়ে জন্মেছ, আর এটুকু জান না!  

সেই উত্তর খুঁজতে খুঁজতে আজ পাঁচ ছাবালের মা হয়ে গেল সখিনা। ফিরোজের নানি বলে তোর পিঠের হাড় বড্ড নরম, তাই অমন নুয়ে পড়িস, যা কলকেতায় গিয়ে দাঁড়া, মেরুদণ্ডখান্‌ একবার পরিখে করে আয়, সে আর উঠে দাঁড়াতে পারে নাকি!  

প্রথম প্রথম সে ভেবেছিল গলা পযন্ত চুল্লু খেলে সে-ও শক্ত হতি পারে।  নুরুলের বাপের মতো সে-ও চুল্লু গেলবার চেষ্টা করেনি তা নয়, কিন্তু কেমন বিচ্ছিরিপেনা গন্ধ। গা গুলায়, বমি পায়।    

তাই এবার সে কলকেতা যাবেই। যে করেই হোক পৌঁছাতে হবে। ফিরোজার নানিরে সে দেখেছে কলকেতা থেকে ফিরে অবদি কেমন সোন্দর বুলি ফুটেছে মুখে। কেমন চর্‌ চর্‌ কইরে মুঠোভরা হাত ওপরে তুলছে, নাবাচ্ছ। চুপি চুপি গহরকে নুকিয়ে জেনে নিয়েছে সে – ক্যামন করে কলকাতা যেতি হয়। ক্যামন কইরে নাইনে দাঁড়াতে হয়...  

হাঁ চাচি, মেলাই নোকজন আসছে? সবার অই মেরুলদণ্ড না কি জ্যান কইলে... নুয়ে পরেছে? সবার হাড় সারাচ্ছে? সবার মুখে তোমার মতো খই ফুঠছে?    

হাঁ, যা না, দ্যাখ কেমন লোকজনির গুমগুমি, ধুমধুমি...  আমি তো আবার যাব।

আবার যাবে? ক্যান তোমার সারেনি?  

সেরেছে কিনা দেখতে পাচ্ছিস নে? তবে মাঝে মাঝে যেতি হবে। তুমি ওষুধ–পত্তর খাবেনে, ব্যায়াম পত্তর করবেনে, শুধু নাইনে গিয়ে দাঁড়াবে আর নোকে যা বইলবে, সেটা গলা মিইলে হেই জোরে জোরে বইলবে। ব্যাস।     

অবাক হয়ে সখিনা বিবি চেয়ে থাকে – ওষুধ পত্তর নাগবেনে, এতেই সেরে যাবে?  কবে বসবে, ডাকতার বাবুরা?

যার সারবে এতেই সাইরে যাবে, আর যার সারার নয়, কবরে গেলিও তার সারবে না। তুই যা একবার...

যাব। কবে হবে আবার?  

 টিবিতে চোখ রাখ। যেদিন হবে নোকজনের মুখে মুখে খবর ছড়ায়ে পড়বে, তোমার শুধু চোখ কান খোলা রাখতে হবে। ব্যস।   

ক’দিন তক্কে তক্কে থাকার পর খবর পেয়ে আজ ভোরের ট্রেনে সখিনা কলকাতায় যাবে বলে উঠে পড়েছে। তখনো ভাল করে আলো ফোটেনি, পাখিদের ঘুম ভাঙেনি। সারারাত জেগে থেকে বুকের ধুকপুকুনিতে বারুদ জমিয়ে, নিঝুম অন্ধকারে বিড়ালের চক্ষু জ্বেলে, ভেজানো দরজা টেনে সবে বাইরে পা বাড়াতে যাবে, অমনি আঁচলে টান পড়ে সখিনার।  

    গহর মিঞা ঘুম জড়ানো গলায় বলে আমিও যাব বউ। আজকাল হাত তুলতি পিঠে বড় ব্যাথা করে। একা এতদূরে তুই যেতে পারবিনি, আমারে নিয়ে চল। নাইনে আমিও দাঁড়াই। মেইয়েটার মুখে জ্যানো আমার ফিরোজার মুখ বসানো...     

 =======================

বিশ্বনাথ প্রামাণিক, সোনারপুর, কলকাতা। 


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন