Featured Post

নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গ্রন্থ-প্রকাশ : ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে ও ২। পত্রিকার অনুদানে

ছবি
  নবপ্রভাত পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে  গ্রন্থ-প্রকাশ বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি ১। সম্পূর্ণ পত্রিকার খরচে এক ফর্মার ১০টি পুস্তিকা : এই প্রকল্পে লেখক-কবিদের থেকে কোনো খরচ নেওয়া হবে না।        পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বইগুলি প্রকাশিত হবে। লেখক/কবিকে সশ্রদ্ধায় সৌজন্য সংখ্যা দেওয়া হবে।       যাঁদের আগে কোন বই হয়নি , তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। নতুনদের উপযুক্ত লেখা না পেলে বাকিদের লেখা নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরিত হবে।       লেখা সকলেই পাঠাতে পারেন। মেলবডিতে টাইপ করে বা word ফাইলে ।   ই-মেল : nabapravat30@gmail.com  (এবং হোয়াটসঅ্যাপেও)। বইয়ের শিরোনামসহ ১৫টি কবিতা বা ১৫টি অণুগল্প পাঠাতে হবে , শব্দ সংখ্যা বা লাইন সংখ্যার বাঁধন নেই । মনোনীত হলে মানানসই বইয়ের ফরম্যাটে যে কটি যাবে রাখা হবে ।       সঙ্গে লেখক পরিচিতি , ঠিকানা , যোগাযোগের ( কল ও হোয়াটসঅ্যাপ )   নম্বর ও এক কপি ছবি দেবেন। লেখক পরিচিতিতে অবশ্যই জানাবেন, এটি আপনার প্রথম প্রকাশিত বই হবে অথবা পূর্ব প্রকাশিত গ্রন্থতালিকা। অনলাইন বা মুদ্রিত পত্রিকা বা সমাজ - মাধ্যমে প্রকাশিত লেখাও পাঠানো যাবে । তবে কোনও গ্রন্থভুক্ত লেখা

গল্প ।। পাতাল প্রবেশ ।। আলাপান রায় চৌধুরী


ব্রেকফাস্ট টেবিলে সত্য আর সিম্মি একসাথে হল সেদিন সকালে। সিম্মি লেন্স পরে ছিল না। ওর প্রাকৃতিক ক'টা চোখের চাহনির মধ্যে কীরম একটা আচ্ছন্ন ভাব ছিল! সত্য সেটা খেয়াল করেনি- হয়তো এটা ভেবে যে ঘুমের ঘোর কাটেনি সিম্মির।

তবে সিম্মি মুখ খুলতেই পরিষ্কার হল ব্যাপারটা। ও বলল, 'জানো, কাল রাতে পেড়-ওয়ালে বাবা মেরে সাপ্নে মে আয়ে থে!'

সত্য অবাক হয়ে খাবারের থেকে নজর সরিয়ে বলল, 'বলো কী! আমিও তো ওনাকে দেখলাম স্বপ্নে!'

সিম্মি এবার চমকে উঠে যেন সজাগ হল। তারপর বলল, 'সাচ?'

'মুচ!'

'স্বপ্নের মধ্যে উনি বললেন, খুব শীঘ্রই দেখা হবে আবার।'

'আশ্চর্য ব্যাপার তো! আমিও তো একই স্বপ্ন দেখেছি।'

সিম্মি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শুধু।

সিম্মির ক'টা চোখের দিকে তাকিয়ে সত্য বলল, 'আচ্ছা কখন দেখলে কিছু বুঝতে পারলে?'

'ভোরবেলা মনে হয়।'

'আমিও হয়তো ভোরেই দেখেছি।'

'আচ্ছা?'

'কথায় বলে, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়!'

'ওটা তো কথার কথা।'

'একদমই। কিন্তু আমরা দু-জনে মোটামুটি একই সময় একই স্বপ্ন দেখলাম কেন?'

সিম্মি ঠোঁট উলটে না জানার ভঙ্গি করল।

'শুনেছি গ্যাস হলে মৃত লোকের স্বপ্ন দেখে লোকে। হোমিওপ্যাথিতে সিম্পটম নেওয়ার সময়ও ডাক্তারদের পেশেন্টকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি।'

'কী? মৃত লোকের স্বপ্ন আসে কিনা?'

'হ্যাঁ।'

'আত্মা স্বপ্নের মধ্যে ঢুকতে পারে তো!'

'হ্যাঁ, পারে বলে শুনেছি। আর স্বপ্নতে আমরা যে অজান্তেই অ্যাস্ট্রাল প্রজেকশন করছি না, তা কে জানে!'

'অল্টারনেট রিয়ালিটির ঝলকও হতে পারে তো স্বপ্ন?'

'ইয়াপ্‌, ওই থিয়োরিটাও বাজারে আছে।'

এইসব কথা হতে-হতেই হঠাৎ সবজিওয়ালার গলা শোনা গেল। রোজকার মতো সবজির ঠেলা-গাড়ি নিয়ে হাজির সবজিওয়ালা বিকাশ। সিম্মি উঠে বাইরে যাচ্ছিল। সত্য বলল, 'উঁহু, লেন্স ছাড়া বাইরে যেও না।'

'ওহ ইয়েস্‌, থ্যাংকস্‌! খেয়াল ছিল না।'

'আমি যাচ্ছি, দাঁড়াও।'

সত্য সবজি কিনে ফিরে আসার ফাঁকে সিম্মি ব্রেকফাস্টটা সেরে ফেলল। আজ মর্নিং রান-এ যাবে না ও। পরে যোগ-ব্যায়াম করবে।

সত্য সবজি নিয়ে ডাইনিং স্পেসে ঢুকে সেগুলো রেখে কয়েকটা টাকার নোট আলোয় মেলে ধরে ভাল করে দেখল। সিম্মি সেই সময়টা সত্যকে লক্ষ্য করছিল।

এরপর সত্য বলল, 'নতুন কাজ এসে গেছে, বুঝলে! কিন্তু আমি একা যাব এবার। তুমি এদিকের কাজ মিটিয়ে কলকাতা যেতে পারো।'

'কিন্তু কাজটা কী শুনি?'

সত্য কাজটা বলায় সিম্মি বলল, 'আমার মনে হয়, আমার তোমার সাথে যাওয়াটা উচিত।'

সত্য বলল, 'কিন্তু ওপরওয়ালার হুকুম। কিছু করার নেই!'

'ঠিক আছে। আমি এদিকের কাজ শেষ করে চলে আসব–বাই চান্স যদি দরকার হয়। কলকাতা যাব না।'

'ঠিক আছে। একটা টেন্টেটিভ ডেট ঠিক করে নিচ্ছি যেদিন কোনও একটা পয়েন্টে আমরা মিট করব। স্টাডিতে এসো।'

সেদিন আবার ওদের দুজনের আলোচনা শুরু হল। সত্য বলল, 'লাদাখে অসুর!'

'ক্যায়া?'

'হুম্‌, লাদাখে অসুর দেখা গেছে বলে দাবি, পাদুম বলে একটা জায়গার কাছের পাহাড়ে। অন্তত বর্ণনা থেকে তো তাই মনে হল–অসুরের মতো কিছু বা কেউ, অথবা অসুরই। সেই হর্নড্‌ হেলমেট...'

'হর্নড্‌ হেলমেট?'

'হ্যাঁ, মানে হেলমেটের ওপরে সিং, প্রাচীনকালের মতো!'

'ওহ ইয়েস, পৌরাণিক সিরিয়ালে দেখেছি!'

'সেই সবকিছু। সেই জন্য আমাদের ডাক পড়েছে। আর যতদূর মনে পড়ছে এই ধরণের হেলমেট অতীতে বিভিন্ন উপজাতি ব্যবস্থার করতো- হয়তো আজও করছে!'

'ওখানেও কি পুরো একটা গ্রুপ?'

'তা তো জানা যায়নি। ওটা তো আমাদের জানতে হবে। আপাতত একটাই স্পটেড হয়েছে।'

'আচ্ছা!' সিম্মি একটু ভেবে বলল, 'লাদাখ তো তিব্বতের পাশেই।'

'আর তিব্বত মানেই অসুর।'

'সেটা কেন?'

'জুলস ভার্ন-এর ওই লেখাটার কথা শুনেছ? ওই যে, "আ জার্নি টু দ্য সেন্টার অফ্‌ দ্য আর্থ"?'

'তুমি আগর্ত ইম্প্লাই করছ?'

'ইয়েপ্‌! আগর্ত– তিব্বতের মাটির তলায় অসুরদের একটা আলাদা জগত! সে জন্যই ভাবছি যে এই অসু ওই আগর্তর বাসিন্দা কিনা– যদি আগর্ত বলে আদৌ কিছু থেকে থাকে তো!'

'এই ধারণাটা কীভাবে আর কেন জন্মাল?'

'এত গভীরে আমি যাইনি গো।'

'আচ্ছা হলো আর্থ থিয়োরির সাথে কি এটা সম্পর্কিত?'

'সেটাও ঠিক বলতে পারব না। তবে হতেই পারে– দুটোর মধ্যে খুব মিল। মাটির তলায় একটা জগৎ!'

'ক্রাস্ট-এর তলায় একটা সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবী– যার সাথে আমাদের পৃথিবীর কোনও সম্পর্ক নেই! হলো আর্থ থিয়োরি তো জুলস ভার্ন-এর গল্পের কথাটাই বলছে।'

'আর সেই পৃথিবীর ভেতরের পৃথিবীতে নাকি একটা নিজস্ব সূর্যও আছে, নিজস্ব বাস্তুতন্ত্রও আছে সেখানকার, প্রাণীকুলও আছে।'

'বাস্তু হোয়াট? কী বললে?'

'ইকোসিস্টেম! আর আমাদের পৃথিবী বা ক্রাস্ট-এর বিভিন্ন জায়গা আছে যেখান দিয়ে সেখানে পৌঁছানো যায়। যেমন মেরু অঞ্চলগুলো।'

'মেরু অঞ্চল মিন্‌স? মেরু পর্বত?'

'না না, ওটা তো সম্ভবত ইন্ডিয়ার ওপরের পামির পর্বত। প্রাচীন ভারতের অংশ ছিল ওটা, যতদূর জানি– মানে যাকে এখন গ্রেটার ইন্ডিয়া বলে আর কী।'

'ওহ, আই সি। আমার মা-দের দেশের বাড়ি যেখানে ছিল সেখান থেকে পামির পর্বত দূরে নয়। গল্প শুনেছি আমি নানির কাছে।'

'ওহ হ্যাঁ, পেশওয়ারের কাছে ছিল তো তোমার আসল মামার বাড়ি।'

'হ্যাঁ। পেশওয়ারের উত্তর দিকের পাহাড়ে।'

'আগে নর্থ-ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স বলত– দেশভাগের আগে।'

'হুম্‌ হুম্‌। এখন খাইবার পাখতুনখয়া বলে ওই অঞ্চলকে।'

'কাশ্মীরও তো কাছেই তাহলে ওখান থেকে।'

'হাঁ, একদম পাশেই।'

'আচ্ছা, হ্যাঁ, তো যেটা বলছিলাম, মেরু অঞ্চল বলতে নর্থ পোল, সাউথ পোল।'

'আচ্ছা আচ্ছা! মেরু অঞ্চল আর মেরু পর্বত সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস তাহলে।'

'এই হলো আর্থ-এর ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, তাহলে হিমালয়েও কি এরম কোনও বটমলেস্‌ পিট আছে যেখান দিয়ে পাতালে পৌঁছানো যায়?'

'তবে এই আগর্ত মিথ-এও কেভ সিস্টেমের উল্লেখ আছে না?'

'হ্যাঁ, কেভ নেটওয়ার্ক বা গুহার সারি তো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেছে মাটির নিচে।'

'আবার কোথাও-কোথাও পাথরের, মানে পাহাড়ের ভেতরেও।'

'মাটির তলায় সারি-সারি গুহা আর সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গের ছড়াছড়ি। সুড়ঙ্গ-শহর বললেও ভুল হবে না কিছু-কিছু ক্ষেত্রে। 'ডেরিন্‌কুয়ু', এই সেই, আগেও এই নিয়ে আলোচনা আর কাজ করেছি আমরা দু-জনে– সৌরাষ্ট্রের কেস্‌টায়।'

'হিমালয়ে তো বৌদ্ধ গুহা, গুম্ফা-টুম্ফাও আছে।'

'হিমালয়ের ব্যাপারে তো নিশ্চিত ভাবে কিছু বলাও যায় না! এখানে যে কী থাকতে পারে আর না থাকতে পারে...'

'কেঁচো খুঁড়তে কেউটে না কী বলে না বাংলায়? সেই ব্যাপারটা আর কী!'

'আর হিমালয়ে কী পাওয়া যেতে পারে আর না পারে...'

'তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই!'

'আই এগ্রি। সেই জন্যই আমরা এত কাজ পাই অবশ্য।'

এই বলে সত্য সিম্মির দিকে তাকিয়ে চোখ মারল, আর সিম্মি তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা বাঁকা হাসি হাসল। তারপর সত্য বলল, 'প্রশ্ন হল, তিব্বতের আগর্তও কি আসলে জাস্ট একটা কেভ সিস্টেম?'

'আর সেটা পুরোটাই বা তার একটা অংশ আমাদের আজকের দিনের লাদাখে আছে কিনা!'

'এর কতটা বাস্তব, আর কতটা বাড়িয়ে বলা, তাও তো জানা নেই আমাদের।'

'আর ওই লাদাখি অসুর– সে যদি..., র‍্যাদার তারা যদি সত্যি হয়, তাহলে তারাই বা কারা?'

'কোনও কেভ সিস্টেম, মানে ওই গুহার সারি থেকে থাকলে, সেখানে কি কোনও রিমোট ট্রাইব বসবাস করে?'

'বা 'ফেরাল পিপ্‌ল'– যারা মূল স্রোতের মানব সভ্যতার থেকে অনেক দূরে, আলাদা হয়ে থাকে।'

'তোমার এটা কেন মনে হল যে লাদাখের অসুররা 'ফেরাল' হতে পারে? পাঠানকোটের অসুররা তো সবার সাথে মিলেমিশেই থাকত। কেউ জানতোও না!'

'বিস্তীর্ণ ধূসর মরুভূমি; পপুলেশন ডেন্সিটিও কম। এরম জায়গাই তো 'ফেরাল' লোকজনের লুকিয়ে থাকার পক্ষে আদর্শ!'

'বাত তো সাহি হ্যায়! তবে পাঠানকোটের মতো যদি এদের একটা পুরো গোষ্ঠী থেকে থাকে লাদাখে বা অন্য কোনও জায়গায়, তাহলে তাদের 'ফেরাল' বলা চলে কি? একটা গোটা উপজাতি মানে সেখানে সবাই মানুষের সংস্পর্শেই রয়েছে; আমরা যাকে 'সভ্যতা' বলে জানি তার থেকে দূরে থাকলেও মানুষের ছোঁওয়া বা উপস্থিতি থেকে দূরে নয় তারা।'

'সেক্ষেত্রে তো তারা আনকন্টাক্টেড ট্রাইব। এরম উপজাতি তো অ্যামাজনের জঙ্গলে, তারপর সেন্টিনেল দ্বীপে- এসব জায়গায় আছেই, যাদের বাইরের পৃথিবীর সাথে কোনও সম্পর্কই নেই।'

'হ্যাঁ, আর সম্পর্ক তৈরি হোক, সেটাও তারা চায় না। তারা প্রকৃতির কোলেই খুশি। একদিক দিয়ে ভাল। মানিকবাবুর আগন্তুক ছবিটা মনে পড়ে গেল!'

'হোয়াট ওয়াস দ্যাট? দ্য লাস্ট পার্ট!'

'আ মুভি বাই দ্য গ্রেট রে হুজ্‌ নেমসেক্‌ আই অ্যাম। নেভার মাইন্ড!'

'ওহ, ওকে!' বলে সিম্মি মুচকি হাসল। তারপর আবার বলে চলল, 'আর একটা ব্যাপার। শোনা যায় যে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমেরিকান আর্মি একটা গুহাতে এক দৈত্যের সম্মুখীন হয়– মানে দৈত্য বা দৈত্যাকার মানুষ। সেই দৈত্যও তো 'ফেরাল' অসুর হতে পারে'

''ফেরাল', গুহা- নিবাসী অসুর! যা রটে তার কিছুটা তো সত্যি বটে!'

'এই ক্লাসিফায়েড খবরটা মনে হয় লিক হয়ে গেছিল। গোপন রাখা যায়নি!'

'আর আর্মির লোকেরা ঢপ মারবে বলে মনে হয়না!'

'ইচ্ছা করে মিথ্যে বা ভুল বলবে বলেও মনে হয়না..., এক যদি নেশা করে না থাকে'

'বা ভুল না দেখে থাকে। আর মিথ্যে বলেই বা কি লাভ?'

'এক্ষেত্রে মিথ্যে বলার তো কোনো কারণ নেই!'

'কে বলতে পারে? উম্মম, এরম একটা থিয়োরি আছে কিন্তু বাজারে।'

'কীরম থিয়োরি?'

'ওই, যে প্রকৃতির রোষের শিকার হয়ে দশরাজন যুদ্ধে হারার পর কিছু অসুর আফগানিস্তানের উত্তর অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেয়– সেখানে এক নতুন রাজত্বও স্থাপন করে। তারাই পরবর্তীকালে ইরান আর পশ্চিম এশিয়ার অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।'

'আই সি! উম্‌, ইন্টারেস্টিং!'

'একটা ব্যাপার ঠিক যে সেদিনের সেই অসুরদের সাথে আজকের কান্দাহার অঞ্চলের এই দৈত্যের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা না জানতে পারলে শুধু অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়াই সার হবে। আর এমনিতেও কান্দাহার আফগানিস্তানের উত্তরভাগেও অবস্থিত নয়।'

'যাক্‌ গে, ওই কান্দাহার জায়েন্ট-এর কেস্‌টা অন্তত আমাদের হাতের বাইরে। তাই ভেবে লাভ নেই।'

'হুম্‌ হুম্‌, কাজে ফেরা যাক।'

লাদাখের যেখানে যেতে হবে সেই জায়গাটা কিছুক্ষণ স্টাডি করে সত্য বলল, 'জম্মু আর হিমাচলের ঠিক ওপারে লাদাখের জান্সকার অঞ্চল। পাদুম টাউনটা হল জেলা হেডকোয়ার্টার টাইপের ওই অঞ্চলের। ওর আশেপাশে থেকে অপারেট করতে হবে আমায়।'

সিম্মি সেই ফাঁকে যাওয়ার রুটটা দেখে নিয়েছে। ও বলল, 'ওখানে হোটেল বা হোম-স্টে তো কমই হবে। তবে ঠিক জায়গাটা লোকেট করতে পারলে হয়তো জেলা হেডকোয়ার্টার থেকে আর একটু দূরে গিয়ে থাকতে পারবে–লোকজনের থেকে একটু দূরে।'

'ওখানকার পপুলেশন ডেন্সিটি কম তো ইন্ডিয়ার অন্য জায়গার তুলনায়। তাই ওখানকার হেডকোয়ার্টারেও লোকজন গড়ে কমই হবে ইন্ডিয়ার অন্য জেলা হেডকোয়ার্টারগুলোর তুলনায়।'

'আচ্ছা মিডিয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে পারলে?'

'মানে কেস্‌টার মিডিয়া কভারেজ হয়েছে কিনা?'

'ইয়াপ্‌!'

'না না, এটা গোপন সূত্রে পাওয়া খবর– অসমর্থিত সূত্র অবশ্য। তবে ওপরওয়ালারা নিশ্চিত হতে চায়।'

'মানে যেতে পড়সি দেশগুলোর নতুন কোনও অতর্কিত আক্রমণের ভয় না থাকে!'

'হুম্‌, আর অসুর না এলিয়েন, না অন্য কোনও কিছু, সেটাও জানাটা দরকার, মিডিয়া এখনও গন্ধ পায়নি এটার।'

'বাই দ্য ওয়ে, আমি রুটটা দেখলাম। মানালি হয়ে যেতে পারবে তুমি। তারপর লেহ্‌ হয়ে জান্সকার। অ্যান্ড আই উইল ফলো ইউ।'

'বাহ! যে খবরটা দিয়েছে সে আমাদেরই একজন। তার সাথে লেহ্‌-তে দেখা করে নেব আমি পাদুম যাওয়ার পথেই।'

'আমরা পাঠানকোটে থাকলে অবশ্য আরও সহজে পৌঁছনো যেত। এনিওয়ে, তোমার মিনিমাম দেড়-দুদিন লাগবেই, চণ্ডীগড় আর মানালিতে নাইট-স্টেও করতে হবে লেহ্‌-এর পথে রওনা হওয়ার আগে। ওখান থেকে দুটো রুট–একটা কার্গিল হয়ে, আর একটা লিংশেড হয়ে। লিংশেডটাই শর্ট হবে।'

'কী কী জিনিস লাগবে তার একটা লিস্ট বানিয়ে নেব আজ দু-জনে মিলে ভেবেচিন্তে।'

'ভাল কথা, আমি তোমার সাথে কতদিন বাদে মিট করব?'

'তুমি ওই কাজ শেষ হলেই চলে এসো।'

'আরে তাও একটা ডেট আর টাইম তো বলো।'

'হ্যাঁ, তোমার ক'দিন লাগবে মোটামুটি?'

'ই অ্যারাউন্ড ১.৫ উইক্স।'

'তাহলে আমি যেদিন বেরব সেদিন থেকে ১৫ দিন বাদে মিট করবে। তার আগে কাজ শেষ হয়ে গেলে আমি বার্তা পাঠিয়ে দেব; লোকেশন চেঞ্জ হলেও জানাব। নয়তো পাদুমেই মিট করব, বুঝলে।'

তারপর সত্যর কী মনে হতে গুহা নিয়ে ইন্টারনেটে একটু পড়াশুনা করল কিছুক্ষণ। তারপর সিম্মিকে ও বলল, 'ভিয়েতনাম-এর হাং সন ডুং গুহার ব্যাপারে পড়লাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা– যার ভেতরে নদী, জঙ্গল, মেঘ-টেঘ সবই আছে; আছে তার নিজস্ব আবহাওয়াও। অদ্ভুত! তাই না?'

'বাব্বা! এরম জায়গায় তো কোনও ট্রাইব অনায়াসে থাকতে পারে।'

'তুমি এইরম কোনও গুহায় কখনও গেছ নাকি?'

'না না, নট ইয়েট!'

'ওখানে ক্যাম্প করলে দারুন লাগবে কিন্তু!'

'তা লাগবে, তবে...'

'তবে কি?'

'একটা কথা মনে করার চেষ্টা করছিলাম।'

'ইয়েঃ, আমার মনে পড়লো- এটাই কি সেই গুহা যেখানে লিজার্ড ম্যান দেখা যায় বলে শোনা যায়?'

'ইয়েস! এটাই ভাবছিলাম আমি- আমার ভাষা-ভাষা মনে পড়ছিল- নামটা খুব চেনা-চেনা লাগছিল!'

'হাং সন ডুং হলো লিজার্ড ম্যানের গুহা- আমার মনে পড়ে গেল।'

'ভাগ্গিস মনে পড়লো! আমি মনে না করতে পারলে আজ সারাদিন ওটাই মাথায় ঘুরতো।'

এই কথায় ওরা দু-জনেই একটু হাসলো; তারপর সত্য হালকা গম্ভীর হয়ে বলল, 'এ ভিয়েতনামে গিরগিটি মানবের কিংবদন্তির আড়ালেও কোনো হারানো বা অনাবিষ্কৃত উপজাতির বাস্তব অস্তিত্ব থাকতেই পারে।'

'আবার কোনো ক্রিপটিডও হতে পারে।'

সত্য মাথা নাড়লো

সিম্মি বলল, 'এই বিদেশী ক্রিপটিডের কেসগুলো যে কবে পাব আমরা!'

'আমার খুব ইচ্ছা অন্তত কিছু বিদেশী মিস্টরি নিয়েও কাজ করার! সুযোগ আসবে আশা করি। যাইহোক...'

'ভিয়েতনামের এই গুহার মতো রকমই কোনও গুহার গল্পই কালক্রমে আগর্তর উপাখ্যানে পরিণত হয়নি তো?'

'আগে দেখা তো যাক যে কেস্‌ মে দম্‌ হ্যায় কি নাহি! পাঠানকোটের মতো পাদুমেও অসুর আছে নাকি!'

'হা হা, হ্যাঁ হ্যাঁ!'

'আমার মনে হয় তোমার জি.পি.আর. বা এল.আই.ডি.এ.আর. নিয়ে যাওয়া উচিত। অন্তত এল.আই.ডি.এ.আর-টা।'

'কোনও 'ফেরাল' ব্যক্তি হোক বা আনকন্ট্যাক্টেড বা মূল স্রোতে থেকে বিচ্ছিন্ন ট্রাইবের সদস্য, সে বা তারা যে মাটির তলায়ই থাকবে তারও তো মানে নেই। তাই...'

'আর তাছাড়া এটাও ঠিক যে আর্মি চেক-পোস্টে প্রব্‌লেম হতে পারে; পুলিশ বা অন্য লোকজনেরও সন্দেহ হতে পারে জি.পি.আর. বা এল.আই.ডি.এ.আর. নিয়ে গেলে। জিনিসটা বাজেয়াপ্ত হয়ে গেলে আরও কেস্‌!'

'রাইট ইউ আর, বেবি!'

সিম্মি একটু হাসল। সত্য বলে চলল, 'এটা এমন একটা জায়গা যেখানে আউট অফ্‌ দ্য অর্ডিনারি কিছু নিয়ে যাওয়া যাবে না– গেলেই সন্দেহ হবে! তাই আগে এটুকু বুঝেনি যে কেস্‌টায় আদৌ দম্‌ আছে কিনা!'

সিম্মি হাসিমুখে বলল, 'সেবার নর্থ বিহারে মনে আছে?'

'হা হা হা, ইন্ডিয়ান আর্মির স্নাইপার যে আমাদের শুট্‌ করেনি এই ভাগ্যি!'

'অ্যারেস্ট বা ইন্টারোগেশন অবধিও ব্যাপারটা গড়াতেই পারত।'

'সেই, সে আর বলতে! যা আমরা করতে চাই না সেটাই করতে হত সেক্ষেত্রে– আত্মপ্রকাশ!'

'এক্সপ্লোরার-এর ছদ্মবেশটা আমাদের ফেভার করে সবসময়, লল!'

পরের দিন সত্য হেডকোয়ার্টারে গেল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য সত্য সেন্ট্রাল ডাটাবেস-টাও একবার ঘেঁটে দেখে নিলো- যদি সেখান থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তারপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এল সেদিনই। তারপরের দিন ভোরবেলা সিম্মি ওর গালে চুমু খেয়ে বিদায় জানাল সত্যকে–ও নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ল। সাথে রয়েছে মাউন্টেন সিকনেস্‌-এর জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর অক্সিজেন। যেহেতু অনেকটা পথ আর একা ড্রাইভার, তাই উত্তরাখণ্ডের চমোলি থেকে যাত্রা শুরু করে মাঝে-মাঝে থেমে এগোতে থাকল ও। পথ চলতে-চলতে পাল্টাতে থাকে ভূপ্রকৃতি ও তার সৌন্দর্য! সন্ধ্যায় চণ্ডীগড় পৌঁছে শহরের কাছে একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার বেরিয়ে পড়ল সত্য। লাদাখ এলাকায় ঢোকার পর গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ সেখানকার অপার্থিব শোভা উপভোগ করে নিল ও– অবশ্য পুরো যাত্রাপথেই ও যখনই থেমেছে চারিদিকের ভিউটা উপভোগ করতে ভোলেনি। তারপর আবার স্বচ্ছ নীল আকাশের তলায় কত রুক্ষ-শুষ্ক উপত্যকা পেরিয়ে এগোনো শুরু করল সত্য। সেদিন রাতটা তার কাটল লাদাখের প্রাণকেন্দ্র লেহ্‌ শহরে। যার কথায় এতদূর আসা, রাতে হোটেলের কাছে একটা ক্যাফেতে দেখা করতে এল সেই লোকটি। সে বলল যে পাদুমে আর তার আশেপাশের এলাকায় অসুর দেখা যাওয়ার ব্যাপারটা ওখানে কানাঘুষো শোনা গেছে। তার থেকে যেখানে অসুর দেখা গেছে তার এক্স্যাক্ট লোকেশনটা জেনে নিল । পরের দিন রাস্তা খারাপ থাকার ফলে লিংশেড গ্রামে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল ওর; তাই সেখানে পৌঁছে রাতটা একটা হোম-স্টেতে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় সত্য।

পরদিন সকালে বেরিয়ে পাদুম পৌঁছে যায় ও– রাস্তা খারাপ থাকার ফলে আবারও হিসাবের তুলনায় বেশি সময় লাগল, আর খেতে হল খারাপ রাস্তার ধুলোও। সেদিন হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে অন্ধকার হওয়ার আগে সত্য হাইওয়ে দিয়ে সেই জায়গাটা দেখতে গেল যেখানে, আর যার আশেপাশে, ওকে অনুসন্ধান চালাতে হবে। জায়গাটা পাহাড়ে হলেও হাইওয়ের ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেখান থেকেই বাইনোকুলার দিয়ে ভাল করে চারিদিকটা সময় নিয়ে নিরীক্ষণ করল সত্য। পরদিন সকালে ওখান দিয়ে যে ট্রেকিং রুটটা গেছে সেটা ধরে সেখানে পৌঁছাবে ও। এটাই প্ল্যান!

যেখানে তথাকথিত অসুর দেখা গেছিল বলে খবর, সেই জায়গাটা লেহ্‌-তে থাকাকালীনই ম্যাপে দাগিয়ে নিয়েছিল সত্য। কয়েকটা ট্রেকিং রুট ঠিক করে নিল সত্য, আর সেই অনুযায়ী খোঁজও শুরু করে দিল হাইকার-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েই। প্রতিদিন সাথে থাকছে অক্সিজেন, ওষুধ, আর অবশ্যই জল আর খাবার।

আট দিন কেটে গেল, কিছুই পাওয়া যায়নি। হোটেল ছেড়ে একটা হোম-স্টেতে এসে উঠেছে ও। অবশেষে নবম দিনে শিকে ছিঁড়ল! একটা নাম-না-জানা পাহাড়ি ঝর্ণার আশেপাশের কয়েকটা খাঁজ পরীক্ষা করতে-করতে একটা ফাটলে চোখ পড়ল র। একটু চেষ্টা করে ও দেখল যে একজন মানুষ গলে যেতে পারবে কষ্ট করে হলেও। ফাটলটা এমনভাবে রয়েছে যে কেউ খুব ভাল করে না খুঁজলে জানতেই পারবে না যে এখানে এই ফাটলটা রয়েছে! একা বেশিদূর এগোতে চায় না ও; গুজরাটের সৌরাষ্ট্রে সেবার কী হয়েছিল সেটাও ওর মনে আছে। কিন্তু তবুও কৌতূহল থেকে যতদূর পর্যন্ত একা নিরাপদে এগোনো সম্ভব, ততদূর অবধি ফাটলটা চেক করার চেষ্টা করল ও। ফাটলটা দিয়ে আড়াআড়িভাবে বেশ কিছুটা এগোনোর পর ওর মনে হল জায়গাটা একটু বেড়েছে। সত্যর মনে পড়ল প্রকৃতির এক অনন্য বিস্ময় দক্ষিন আমেরিকার ইকুয়েডরে অবস্থিত টায়স গুহার কথা!

এতক্ষণ ফাটলের ভেতর প্রাকৃতিক আলো খুব কমই ঢুকছিল– তাই টর্চটা হাতে নিয়ে নিয়েছিল সত্য। কিন্তু আর একটু এগোতেই মনে হল সামনের দিকটায় একটু আলো রয়েছে– টর্চ আপাতত আর লাগবে না; খালি চোখই যথেষ্ট। ফাটলটা এবার আর একটু প্রশস্ত হওয়ায় সত্য মোটামুটি সোজাসুজিভাবেই এগোনো শুরু করল। আলোর উৎস অবধি পৌঁছনোর আগেই হঠাৎ কী যেন একটা চকচক করে উঠল সামনে– আয়না নাকি? কয়েক পা এগোতেই ঘটল অদ্ভুত এক কাণ্ড– আচমকা ধোঁওয়ায় ঢেকে গেল চারদিক! সামনে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না যে! আর ধোঁয়ার লক্ষ্য যেন সত্যই– নিমেষের মধ্যে ঘিরে ফেলে তাকে লক্ষ্য করেই যেন আক্রমণ করল ধোঁয়ার কুণ্ডলীগুলো! সত্য বিপদ বুঝে পিছনোর চেষ্টা করল, কিন্তু সেই সরু ফাটলে দ্রুত পিছনোও গেল না। বিশেষ কিছু বুঝে বা করে ওঠার আগেই সত্য অনুভব করল যে ধোঁয়ায় তার মস্তিস্ক ও স্নায়ু আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে; সে সংজ্ঞা হারাচ্ছে! অল্প সময়ের মধ্যেই ও পুরোপুরি অচৈতন্য হয়ে ফাটলের পাথরের গায়ে এলিয়ে পড়ল। এতে ওর কানের পিছনটা পাথরে ঘষা লেগে ছোড়ে গেল; কিন্তু জায়গা ছোট হওয়ায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সুযোগ পেলোনা ওর শরীরটা- ফলে কোনো গুরুতর আঘাত পেলোনা ও।

সত্যর জ্ঞান ফিরল– কতক্ষণ পরে ফিরল, সেটা  জানে না! সে এটুকু বুঝল যে কোনও গ্যাসের প্রভাবে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। কানের নিচে একটু জ্বালা অনুভব করলো সত্য- তার বেশি কিছু না। ও যেখানে আটক ছিল সেখানে গোল পাথর দিয়ে বন্ধ করা দরজা; ঘরটাকে কক্ষ না বলে কুঠুরিই বলা চলে। প্রাচীন মিশরের নেয় জানালার মতো এয়ার-শ্যাফ্‌ট বা বাতাস আসার রাস্তা দিয়ে হাওয়া আসছিল বলে নিঃশ্বাস নিতে পারছিল ও। সত্যর আবার মনে পড়ে গেল তুরস্কের পাতাল শহর 'ডেরিনকুয়ু'-র কথাও। আয়নার সাহায্যে বাইরে থেকে আলো ঢুকছে পাথরের ঘরে অল্প-অল্প। মিশর-বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে মিশরেও হাজার-হাজার বছর আগে এইভাবে আয়নার সাহায্যে আলো প্রবেশ করানো হত মাটির তলায় বানানো সমাধি-কক্ষগুলোতে। ও কি জ্ঞান হারিয়ে স্বপ্ন দেখছে, নাকি টেলিপোর্ট হয়ে দূর অতীতে চলে এসেছে ও?
যাই হোক, পূর্ব অভিজ্ঞতা আর চারিদিকের পরিবেশ থেকে সত্য বুঝল যে ও মাটির তলায় রয়েছে– সেটাকে পাহাড়ের ভেতরের ফাঁপা অংশ বলেই মনে হল র! সেদ্ধ বীজ জাতীয় কিছু খাবার দেওয়া হয়েছে ওকে– কিন্তু সেদিকে ওর মন নেই। ওর মনে তখন কৌতূহলের লহর উঠেছে। সত্যর রুক্স্যাকটা কাছে নেই– তাই তখন সময় কত সেটাও দেখা যাচ্ছে না কারণ ফোনটা তার মধ্যেই ছিল। সেটা এখন কোথায় কে জানে! তবে এয়ার-শ্যাফ্‌ট দিয়ে আসতে থাকা আলো থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে তখনও দিনের বেলা
 

একসময়ে হঠাৎ ঘড়ঘড় করে সামনের গোল পাথরের দরজাটা খুলে গেল! সত্য আশ্চর্য হয়ে সামনের দিকে তাকাল। চমরী গাইয়ের খুলি পরা, হাতে সম্ভবত কোনও প্রাণীর হাড় থেকে তৈরি দণ্ড-ধরা দুইজন লোক কুঠুরিতে ঢুকে সত্যকে ধরে মাটি থেকে তুলে জোর করে টেনে সামনের দিকে, মানে কুঠুরির বাইরে নিয়ে যেতে শুরু করল। তারা যখন ওকে নিতে আসল আর যেভাবে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল, তার থেকে সত্যর এটা বুঝতে বাকি রইল না যে ও সেখানে বন্দি– বন্দি মানে একেবারে জেল-বন্দি কয়েদির মতো হাল ওর! যদিও কোথায় এবং কেন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই নিয়ে তার যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কুঠুরি থেকে বেরোনোর পর তার বিস্ময়ের সীমা থাকল না! তাতে বাকি প্রশ্নগুলো তখনকার মতো তার মগজে চাপা পড়ে গেল।

অনেক উঁচু নিচু গুহা-গহ্বরের মধ্যে দিয়ে তারা যখন ওকে নিয়ে এল একটা বিরাট খোলা জায়গায়– সত্যর এবার আর এটাও বুঝতে বাকি রইল না যে এই পাহাড়কে ফাঁপা কারা বানিয়েছে! এখানে পাহাড়ের গায়ের একটা ফাটল দিয়ে অনেকটা আলো আসছে। একটা জলধারাও বইছে পাহাড়ের পাথর আর মেঝের পাথরের গা দিয়ে। সেখানে জানোয়ারের ছাল আর চমরী গাইয়ের শিং-পরা অনেক অর্ধ-নগ্ন পুরুষ ও নারী। এখানে তো একটা নয়, অসংখ্য অসুর। পাহাড়ের ভেতর একটা গোটা বসতি, একটা গোটা আদিবাসী সমাজ! এ যে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! এ তো সত্যিই আগর্ত!

সেই লোকরা একসাথে কী যেন করছিল। একটু এগোতে ও বুঝল যে সীমিত আলোতেই সম্ভবত চাষের কাজ করছে তারা। তারা নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তাও বলছে– এটুকু বোঝা যাচ্ছে। তাদের ভাষা অবশ্য ও বুঝতে পারছিল না। আর পারবেই বা কী করে? তাদের ভাষা আর সত্যর ভাষার উৎস যদি একও হয়ে থাকে তাও হাজার-হাজার বছরের ভাষা-বিবর্তনের ফলে আজ তা সত্যর কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠবে যে এটাই স্বাভাবিক!

আরও কাছে যেতেই সেই লোকজনরা মাথা তুলে তাকে দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার তারা নিজেদের কাজে মন দিল। ওই দু-জন প্রহরী গোছের লোক তাকে ইশারা করে চাষের কাজে হাত লাগাতে বলল। কাজে হাত লাগিয়ে চারিদিকের সবকিছু দেখতে আর অনুভব করতে লাগল ও। এখানকার পরিবেশটা লাদাখের ভূপৃষ্ঠের মতো নয়। আর মাটির তলায় চাষবাস হয়তো ওই বইতে থাকা জলধারার জন্য সম্ভব হচ্ছে। এখানকার আবহাওয়ায় কেমন একটা উষ্ণ ছোঁওয়া– লাদাখের শীতল মরু পরিবেশের প্রভাব যেন এখানে নেই!

সত্যর মনে পড়ল যে চীনদেশেও এরম একটা শহর আছে যেখানে লোকে আজও মাটির তলায় ঘর বানিয়ে থাকে– তাতে শীত আর গ্রীষ্ম দুটোতেই স্বস্তি পাওয়া যায়– কিন্তু কিছুতেই জায়গাটার নাম মনে পড়ল না ওর- হয়তো নামটা কঠিন বলেই! সেটা অবশ্য এরকম মাটির তলায় গোটা একটা শহর নয়, শুধু কিছু ছোট বাড়ি মাত্র।

তবে সত্য এটাও বুঝতে পারল যে আপাতত পালানোর উপায় নেই! সুযোগ বুঝে পালানোর চেষ্টা করতে হবেআপাতত নিজেকে ওর সিনেমার এক্সট্রার মতো মনে হচ্ছিলো। কিসের চাষ হচ্ছে তা না বুঝেই কিছুটা আনমনা, কিছুটা চিন্তিত আর কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে যন্ত্রের মতো চাষের কাজ করতে থাকল ও। সেখান থেকে কয়েক ঘণ্টা পর চাষের কাজ সেরে ফেরার সময় সত্যর মনে হল হয়তো এই হালকা আলোয় কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এরা, আর ওর চোখও সেই পরিবেশে সয়ে গেছে কিছুটা। তখন ও বুঝতে পারল যে এই সাম্রাজ্য সম্ভবত অনেকগুলো তলা বা ফ্লোর জুড়ে আছে- কারণ যে তলায় তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল সেই কুঠুরিটা ওই চাষের ক্ষেতের ওপরের তলায় অবস্থিত। কিন্তু কতটা ওপরে সেটা অনুমান করতে পারল না, আর তা অনুমান করা সম্ভবও না

ফেরার পথে এক আশ্চর্য সমাধিক্ষেত্র দেখল ও– অসুরদের সমাধিক্ষেত্র! সত্য কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়াল। দেওয়ালের গায়ে লম্বা খাঁজ-খাঁজ মতো কাটা– পাথরের কফিন বলে মনে হল সেগুলো ওর। খাঁজগুলো খোলাই। বাইরে থেকে কোনও কিছু দিয়ে ঢাকা নয় এরম নিদর্শনও আছে পৃথিবীর অন্য জায়গায়। তবে সেইসব ক্ষেত্রে মৃতদেহগুলি মমি বানিয়ে রাখা হয় বলে সত্যর অন্তত জানা নেই। এখানে কিন্তু তার ব্যতিক্রম। কিছুটা মমির মতো করে রাখা রয়েছে মৃতদেহগুলি– হয়তো বিশেষ লোকেদের দেহগুলি সংরক্ষণ করা হয়। গোধূলি দ্রুত এগিয়ে আসছে। যেহেতু পাথরে খাঁজ-কাটা তাকের মতো কফিনগুলো খোলা, তাই তার ভেতরে কী আছে সেটা আয়না থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া ক্ষীণ আলোয় অল্প হলেও বোঝা যাচ্ছিল। তার মধ্যে রয়েছে এক বা একাধিক দেহ– কাপড় বা জন্তু-জানোয়ারের ছাল দিয়ে ঢাকা বা মোড়া হয়তো। সে জন্যই আলোর অভাবে সেটা ঠিক বোঝা গেল না। যারা ওকে কুঠুরি থেকে বের করে চাষ করাতে নিয়ে গেছিল, সেই দু-জন প্রহরীই ওকে আবার ফেরত নিয়ে যাচ্ছিল। সত্য আর বেশি কিছু বোঝার আগে ওই দু-জনের মধ্যে একজনের হাতের সেই হাড়ের তৈরি দণ্ডের ধাক্কা হঠাৎ পিছন থেকে পিঠে লাগায় সত্য আবার চলতে শুরু করল। ওখানকার লোকজন যেসব ঘরে থাকে, সেগুলোও যেতে-যেতে দেখল সত্য। ছোটবেলায় টি.ভি-তে দেখা 'ফ্লিন্টস্টোনস' কার্টুন শো যেন বাস্তবে দেখছিল সত্য- অলীক কল্পনাও তাহলে সত্যি হয়! একটা বড় ঘর আর তার পরিবেশ দেখে মনে হল ওটা সরাইখানা জাতীয় কিছু- তার আসবাবপত্রও হয়তো পাথরেরই তৈরী। এইসব দেখতে-দেখতেই কুঠুরিতে ফিরে এল ও। আশেপাশে আরও কয়েকটা একই রকমের ঘর আছে। তাতে ও অনুমান করল যে এটা হয়তো এই পাতালপুরীর কারাগার!

এতক্ষণ এই বিপদের মধ্যে খিদে ব্যাপারটা ঠিক মাথায়ও আসেনি, আর অনুভব হয়নি। গোধূলিতে খুব খিদে অনুভব করায় শেষ পর্যন্ত দ্বার-রক্ষীদের দেওয়া সেই অচেনা খাবারই ওকে কোনওমতে খেতে হল। খিদের চোটে অবশ্য বেশ দ্রুতই সেটা খেয়ে ফেলল ও। খেতে খেতে ও ভাবলো, 'এই খাবার নির্ঘাত শুধু কয়েদিদের জন্য! এখানকার সাধারণ মানুষজন অবশ্যই এর থেকে ভাল খাওয়া দাওয়া করে।'

তারপর পাথরের তৈরি কুঁজোতে রাখা জল কষ্ট করে খেয়ে নিল। স্বাদটা থেকে ও বুঝতে পারল যে ওটা স্থানীয় ঝর্ণার জল কারণ এই ক'দিন ধরে এদিক-ওদিক সার্ভে করতে গিয়ে ও এক-আধ বার পাহাড়ি ঝর্ণার জল চেখে দেখেছে বৈকী! যাইহোক, সাময়িকভাবে খিদে মিটল। এরপর বসে বসে পালানোর উপায় ঠাওর করার চেষ্টা করতে লাগল ও। এয়ার-শ্যাফ্‌ট তেমন চওড়া নয় বলে শ্যাফ্‌ট গলে পালানো যাবে না। সিঁধ কাটারও উপায় অন্তত এই মুহূর্তে নেই। তাই দরজায় প্রহরীরা থাকবে অনুমান করেও কয়েকবার ভেতর থেকে ঠেলা-গুঁতো মেরে দরজাটা খোলার চেষ্টা করল ও; কিন্তু কোনও লাভ হল না! তারপর পাথরের ঘরের মধ্যে কোনও ফাঁপা বা দুর্বল অংশ আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করল সত্য– এর জন্য হাত আর পা দিয়ে পাথরের দেওয়াল আর মেঝেতে মেরে-মেরে দেখল ও। কিন্তু সবই নিরেট! শেষে তখনকার মতো নিরুপায় হয়ে বসে পড়ে সিম্মির কথা ভাবতে লাগল। সিম্মি থাকলে হয়তো সাহায্য করতে পারত। সেবার গুজরাটের কালা পর্বতের গুহায় যখন সত্য আটকে পড়েছিল তখন সিম্মিই তো ওকে বাঁচিয়েছিল! কিন্তু এখন সিম্মি নেই। কয়েকদিনের মধ্যেই ওর লাদাখে চলে আসার কথা, কিন্তু রুক্‌-স্যাকটা অসুরদের হাতে লুণ্ঠিত হওয়ায় সিম্মিকে সিগনাল দেওয়ারও উপায় নেই! এইদিকে এখান থেকে বেরোতে না পারলে ওর নিজের ভবিষ্যৎ কী হবে সেই নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছে সত্য– এই বিচিত্র জগতের বাসিন্দারা ওর সাথে কী করতে চলেছে তা জানে না ও। একটা রাস্তা না বেরোলে সত্য-সিম্মিদের হেডকোয়ার্টারের খাতায় অন্য কারুর-কারুর মতোই 'মিসিং ইন অ্যাকশন' হয়ে যাবে স্বয়ং সত্যও। ও কিছুটা ব্যাকুল হয়ে মনে-মনে বলল, 'বাইরের জগতের কোনও কিছুই কি এখানে এসে পৌঁছোয়নি? আজকের যুগের লাদাখের সাথে কি এদের কোনও মিলই নেই? বাইরের জগতে বার্তা পাঠানোর কি কোনও উপায়ই নেই?'

সর্বগ্রাসী অন্ধকারটা যেন ধীরে-ধীরে তাকে চেপে ধরছিল। সময় বোঝা না গেলেও এটা সত্য বুঝতে পারল যে খুব একটা রাত হয়নি। তবে আরও একটা জিনিস ওকে ক্রমে চেপে ধরছিল! ওর মনে হল যে এই পাতাল-দেশের সবাই প্রাচীন কালের মতোই সূর্যোদয়ের সাথে ওঠা আর সূর্যাস্তের সাথে ঘুমোনোতে অভ্যস্ত। সত্য মনে-মনে ভাবল, 'সব কেমন নিশ্চুপ! না ওপর থেকে, না নিচ থেকে, না পাথরের দরজার বাইরে থেকে, না এয়ার-শ্যাফ্‌টের দিক দিয়ে– কোনও সাড়া-শব্দই নেই কারুর বা কোনও কিছুর! সবাই কি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছে, নাকি পাথর ভেদ করে কোনও শব্দ আমার অবধি পৌঁছচ্ছে না? এই সুযোগে যদি বেরিয়ে যাওয়া যেত, ইস্‌! হেল! নাহ, একটা না একটা দিশা পাবই! একটা না একটা রাস্তা বেরোবে না? এত ট্রেনিং নিয়েছি কীসের জন্য তাহলে? আর একটু ভাল করে জায়গাটাকে স্টাডি করতে হবে। কিন্তু তার আগেই যদি...! না না, পারতেই হবে আমায়! বেরোবই! হ্যাঁ!'

এইসব ভাবতে-ভাবতে সারাদিনের ক্লান্তি আর এই ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশের প্রভাবে চোখ লেগে এলো ওর।

তখন কত রাত হয়েছে কোনও ধারণা নেই ওর। হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল সত্যর– ও নাকে একটা ঝাঁঝ অনুভব করছে, আর তার সাথে কাশিও পাচ্ছে খুব। মিশকালো অন্ধকারের মধ্যেও ওর বুঝতে অসুবিধা হল না যে এটা সেই ধোঁয়া যার ফলে দিনের বেলায় ও অজ্ঞান হয়ে গেছিল। এবার এয়ার-শ্যাফ্‌ট দিয়ে সেই ধোঁয়া আসছে আবার। কেউ কি ইচ্ছা করে করছে এটা? মনে তো হয় তাই! কিন্তু কেন? এসব অবশ্য সত্য ভাবার বা বোঝার সময় পায়নি তখন– কারণ তখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে ধোঁয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার– সেই আদিম গ্যাস-চেম্বার থেকে মুক্ত হওয়ার! কিন্তু সেই চেষ্টা অল্প কিছুক্ষণের, এবং বৃথা! পালানোর কোনও পথ নেই– গোল পাথরের দরজা বন্ধ আর ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে ঘর। অতএব আবারও জ্ঞান হারাল সত্য!

সেই নাম-না-জানা ঝর্নাটা যে পাহাড়ে তার পিছন দিকে কিছুটা দূরে একটা পাহাড়েই অবস্থিত একটা মনাস্ট্রি। সত্যর চোখ খুলল সেখানে। সত্য সেখানে তার রুক্‌-স্যাক সমেত কীভাবে পৌঁছাল সেটা একজন মাঝবয়সী বৌদ্ধ সাধুকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি শান্ত গলায় বললেন, 'তোমাকে যিনি বাঁচিয়েছেন, তিনি এখানকার প্রধান লামা। উনি কাল রাতে আমাদের আদেশ দেন ঝর্ণার ধার থেকে তোমাকে উদ্ধার করে আনার জন্য। তার আদেশ মতোই আমরা আপনাকে খুঁজতে যাই আর ওই ঝর্ণার ধার থেকে উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসি।'

সত্য অনুমান করল যে তাদের পাতাল রাজ্য থেকে ঝর্ণার ওখান অবধি হয়তো অজ্ঞান অবস্থায় ওকে সেই অসুররাই ছেড়ে দিয়ে গেছিল। গোপনীয়তা বজায় রাখে বলেই অজ্ঞান না করে ওকে ছাড়েনি তারা- পাছে তাদের আরও কিছু রহস্য সত্যর চোখে পড়ে যায়। আরব্য রজনীর আলিবাবার গল্পের মুস্তাফা দর্জিকে যেমন চোখ বন্ধ করে মৃত কাশেমের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, অনেকটা সেরম ব্যাপার আর কী।

কিছুক্ষণ পর প্রধান লামার সাথে দেখা করারও সুযোগ পেলো ও। লামার ঘরে ঢুকতেই তাঁর আভা মণ্ডলের পজিটিভ ভাইব্রেশন ওকে কারুর একটা কথা মনে করিয়ে দিল। কিন্তু ঠিক কার কথা সেটা তখনকার মতো ও বুঝতে পারল না।

'আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাব মাননীয় লামা!'

লামা শান্তভাবে বললেন, 'সব ব্রহ্মাণ্ডের ইচ্ছা। আমি তো মাধ্যম শুধু।'

'আপনি আজ না এলে ওরা যে কী করত আমার সাথে!'

'তোমার এখনও এই জগতে অনেক কাজ বাকি আছে।'

'ওরা নিশ্চয়ই আগন্তুকদের মেরে ফেলে বা বলি দেয়?'

'না, ওরা অন্যরকম সাজা দেয়– তোমার মতো আগন্তুকদের ওরা ওদেরই একজন বানিয়ে নেয়। বহির্জগতে বা মূল স্রোতে ফিরতে দেয় না। তুমি অত্যধিক কৌতূহল দেখিয়ে আরও এগিয়ে যেতেই ওরা বুঝতে পারে যে, জানতেই হোক বা অজান্তেই হোক, তুমি ওদের আস্তানায় ঢোকার চেষ্টা করছ।'

'আচ্ছা আচ্ছা। তাহলে ওরা নজরদারি করে? বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রাখে ওরা?'

'হ্যাঁ, পাহাড়ের গায়ে খুব ছোট-ছোট গর্তের মধ্যে আয়না লাগিয়ে ভেতর থেকে সব দেখতে পায় ওরা।'

সত্য বুঝল যে লামা গর্ত বলতে সম্ভবত এয়ার-শ্যাফ্‌টগুলোর কথা বলছেন, আর এটা সিম্পল ফিজিক্স! আয়নাগুলো আলোর সোর্সের পাশাপাশি পেরিস্কোপ হিসাবেও কাজ করে। আর সাবমেরিনের নাবিকের মতোই পাহাড়ের মধ্যে থেকেও বা মাটির তলায় থেকেও বাইরের সবকিছু দেখতে পায় ওরা– বিশেষ করে ওদের ঠিকানায় কেউ চলে এল কিনা সেটা ওরা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে খেয়াল রাখে!'

লামা বললেন, 'তাই ওদের এলাকায় কিছুটা ঢুকে পড়তেই ওরা তোমাকে এক বিশেষ ধোঁয়ার সাহায্যে অজ্ঞান করে পাহাড়ের ভেতরের অলিগলি দিয়ে মাটির তলায় নিয়ে যায়। এইসব গুহা-পথ পাতালবাসীরা শ'য়ে-শ'য়ে বছর ধরে পরিশ্রম করে খোদাই করেছে। বহু প্রজন্ম কেটে গেছে এই কাজে। আর ওদের তৈরি ওই পাতাল-নগরীতেই তুমি বন্দি ছিলে আজ ভোর-রাত অবধি।'

'ওদেরও নিশ্চয়ই সমাজ আছে। উৎসব আছে, নিয়ম-কানুনও আছে।'

'হ্যাঁ, আছে। যে আগন্তুকদের সেটা ভাল লেগে যায়, বা যারা নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়, তাদের পক্ষে ভাল। যারা তা পারে না, তাদের জীবন নরকে পরিণত হয়! আমি জানি তুমি পারতে না ওখানে থাকতে।'

'সত্যি মহান লামা, আমার জন্য ওরম জীবন নয়। আমি পারতাম না ওখানে মানিয়ে নিতে। কিন্তু, বহির্জগতের কোনও লোক ওখানে আটক হলে তারা পালানোর চেষ্টা করে না, বা পালাতে পারে না?'

'প্রথমত পালানো খুব মুস্কিল ওখান থেকে–তুমি নিজেও সেটা দেখেছ। তবুও যখন-যখন যারা-যারা পালাতে পেরেছে তাদের কথা হয় বাইরের পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করেনি, নয়তো তাকে পাগল ভেবেছে।'

'আর বিশ্বাস করে কেউ ওই পাতাল-গহ্বর খুঁজতে এসে থাকলে?'

'হয় তারা পাতালবাসীদের হাতে চিরকালের মতো আটক হয়েছে, নয়তো নিহত হয়েছে। আবার অনেকে আর পাতালপুরীর প্রবেশপথ খুঁজেই পায়নি। তোমারও নিজেরও তো এক সপ্তাহ লেগে গেল, ঠিক কোন জায়গায় খুঁজতে হবে সেটা জানার পরেও।'

সত্য দেখল যে লামা জানেন যে ও এক সপ্তাহ ধরে অসুরদের ট্রেস্‌ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

লামা বললেন, 'এমনিতেই দুর্গম পার্বত্য এলাকা– আজকে নয় রাস্তাঘাট হয়েছে। কিছু বছর আগে অবধিও রাস্তাঘাট ছিল না সেরকম, জানোই তো।'

'হ্যাঁ, তাই অতীতে এখানে আসা বা এখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়া দুটোই বেশ কঠিন ছিল।'

'পাতালবাসীদের কথা এখানকার লোকরা জানে, কিন্তু কেউ প্রকাশ করে না বাইরের পৃথিবীর কাছে।'

সত্য বুঝল যে এটা এখানকার স্থানীয় অলিখিত কোড অফ্‌ কন্ডাক্টের অন্তর্গত হয়ে গেছে।

লামা বলে চললেন, 'তুমি জেনে গেছ সব, কিন্তু তোমায় কথা দিতে হবে যে তুমি কাউকে কিছু বলবে না– তুমি যাদের জন্য কাজ করো, তাদেরও না, আর এমনকি তোমার বান্ধবীকেও না।'

সত্য একটু অবাক হল– লামা সিম্মির কথা জানলেন কী করে! তাহলে কি ইনফরমেশন লিক হল?

লামা বলে চললেন, 'কাল দুপুরে তোমার বিপদ অনুভব করে আমি কাল রাতেই ওদের প্রধানের সামনে প্রকট হই!'

লামার এই কথাটা শুনেও সত্য আশ্চর্য হল কারণ প্রথমত, ও যে বিপদে পড়েছে সেটা তো লামার জানার কথা নয়! তাহলে কি লামার টেলিপ্যাথির শক্তি আছে? আর দ্বিতীয়ত, অতি বৃদ্ধ লামাকে দেখে মনে হচ্ছে যে বার্ধক্যের ভারে খুব বেশি দূরে যাতায়াত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে কি লামা সূক্ষ্ম দেহে সেখানে গেলেন? সত্যর সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল।

সত্য যে কিছু ভাবছে সেটা বুঝতে পেরে লামা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার স্মিত হাসিমুখে বলা শুরু করলেন, 'আমি পাতালবাসীদের কথা দিয়েছি যে তুমি কাউকে কিছু বলবে না। সেই শর্তেই ওরা তোমায় ছেড়েছে।'

সত্যর মধ্যে এবার একটু সঙ্কোচের ভাব দেখা দিল। সে বলল, 'কিন্তু শ্রদ্ধেয় লামা, ওদের ব্যাপারটা বাইরের পৃথিবী, বিশেষ করে ভারত সরকার ব্যাপারটা জানলে ওদের সাহায্য করতে পারবে- মূল স্রোতে ফেরাতে আর জীবনের গুণগত মান উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারবে সরকার।'

এর উত্তরে লামা ঠাণ্ডাভাবেই বললেন, 'দ্যাখো সত্য, এটা তাদের ইচ্ছা, তাদের সিদ্ধান্ত। আর আমাদের সেটাকে সম্মান করা উচিত– তারা যখন কাউকে নিজেদের অস্তিত্ব জানাতে চায় না, তখন আমদেরও উচিত ব্যাপারটা প্রচার না করা– তাই নয় কি? ভেবে দেখো।'

তার প্রত্যুত্তরে ও ধীরে ধীরে বলল, 'কথা দিলাম আমি! কথার খেলাপ হবে না কখনও।'

'হিমালয়ার বুকে তো এরকম অনেক রহস্যই আছে। তুমি তো সেসব নিয়ে চর্চা করো, সেইসব রহস্যের সন্ধান আর সমাধানও করো!'

সত্য আবারও অবাক হল– লামা তার জীবিকার কথাও জানেন! লামা বলে চললেন, 'তাই একটা রহস্য না হয় উহ্য থাক সমাজেরকাছে। আরও সুযোগ পাবে...'

সত্য হালকা হেসে বলল, 'কিন্তু ওরা এভাবে নিজেদের লুকিয়ে রাখে কেন, শ্রদ্ধেয় লামা?'

'ওরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে। শুরুর দিকে ওরা মাটির ওপরেই থাকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন থাকে মাটির নিচে। মাটির ওপরে মানুষের আনাগোনা, মানুষের হানাহানি, আবহাওয়ার প্রকোপ আর আরও হাজারো সমস্যায় জর্জরিত মানব সমাজ। তাই পাতালকেই ঘর বানিয়েছে ওরা।'

এই প্রসঙ্গে সত্যর মনে পড়ে গেল ওপাল পাথরের জন্য বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার শহর 'কুবার পেডি'-র কথা–যেখানের শুষ্ক আবহাওয়া আর গরমের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ মাটির তলায় বসবাস করে। আর তার সাথে তুরস্কের 'ডেরিনকুয়ু'-র কথাও– যার ব্যাপারে প্রচলিত আছে যে হানাহানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই স্থানীয় মানুষ মাটির তলার সেই শহরে আশ্রয় নেয়। এর আগেরদিন আটক থাকাকালীন চীনের সেই নাম-না-জানা শহরের কথা তো ও ভেবেছিলই। কয়েক মুহূর্ত সেগুলোর কথা ভেবে ও লামাকে জিজ্ঞেস করল, 'কবে থেকে এরকম হল?'

'সেই দাশ রাজার আমল থেকে।'

'মানে সেই দশরাজন যুদ্ধ যা ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিল?'

'হ্যাঁ, সেই যুদ্ধে ভরত গোষ্ঠীর উপজাতিদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর এই উপজাতির লোকরা পালিয়ে আসে এখানে– যেখানে কেউ তাদের খোঁজ পাবে না।'

সত্যর মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়ে গেল পাঞ্জাবের পাঠানকোটের প্রত্নক্ষেত্রে পাওয়া সেই শিলমোহরগুলোর কথা– একটা শিলমোহর ছিল যেটা দেখে মনে হয়েছিল সেটা মাটির তলায় অসুরদের অবস্থান বোঝাচ্ছে। এখন ওর মনে হচ্ছে ওটা এই পাহাড়ের ভেতরে অসুরদের অবস্থানটাই বোঝাচ্ছিল।

লামা বলতে থাকলেন, 'ধীরে-ধীরে প্রাকৃতিক গুহাকে আরও খুঁড়ে পাহাড়ের ভেতর থাকতে শুরু করে তারা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাহাড়কে ফাঁপা বানিয়ে একটা শহর তৈরি করে ফেলেছে তারা। তাদের গোষ্ঠীর নিয়মই হল সেখান থেকে না বেরোনো; তবে খুব অল্প হলেও এই গুহা-জগতের বাইরে লোক বেরিয়ে আসে– নিয়ম উল্লঙ্ঘন করা লোক তো সব সময়েই আছে, সব জায়গায়ই আছে; এইটা গুণই বলো বা দোষ, মানুষের মধ্যে তো আছেই ওই প্রবৃত্তিটা।'

'আর বেরিয়ে এলে তারা কি পালিয়ে যায়?'

'পালিয়ে তারা আর যাবে কোথায়? বাইরের পৃথিবীর আচার-আচরণ কিছুই তো জানে না তারা– বাইরের জগতের সম্মুখীন হয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয় তারা। কখনও কেউ বাইরে বেরিয়ে এলেও আবার তাদের আটক করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়– কঠোর দণ্ডও দেওয়া হয়।'

'মানে মৃত্যুদণ্ড?' চমকে জিজ্ঞেস করল সত্য।

'না, তার থেকেও ভয়ঙ্কর– একঘরে করে দেওয়া হয় অনেকদিনের জন্য– যাতে তারা নিজের লোকজনের, নিজের উপজাতির অভাব টের পায়। আর সেই উপলব্ধি থেকেই যাতে তারা আর তোমাদের জগতে যাওয়ার কথা না ভাবে।'

'এভাবেই ৫০০০ বছর ধরে চলে আসছে তাহলে!'

'হ্যাঁ, কেউ-কেউ কখনও-কখনবেরিয়ে এলে তোমাদের জগতের লোকরা তাদের দেখে ভূত, দৈত্য বা ভিনগ্রহী ভেবে ভুল করে, ভয় পায়। সেরমই একটা খবর পেয়েই তো তুমিও এখানে এসেছ।'

সত্য সবকিছু মন দিয়ে শুনছিল। সত্যর ঠিকুজি-কুলুজি সবই জানেন বর্ষীয়ান লামা। তাই সত্যর এখানে আসার উদ্দেশ্যও যে লামা জানেন সেই কথা শুনেও সত্য এবার আর নতুন করে চমকে উঠল না। ও বলল, 'হ্যাঁ, মাননীয় লামা। আমি উত্তর পাঞ্জাবে এরম এক গোপন উপজাতির সন্ধান পেয়েছিলাম কিছু বছর আগে। তারা অবশ্য মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, কিন্তু নিজেদের ট্রাইবাল আইডেন্টিটি, ইয়ে মানে আদিবাসী পরিচয়, গোপন রাখে তারা। এখানেও যে এরম 'ফেরাল' পিপ্‌ল, মানে মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন একটা প্রাচীন উপজাতির সন্ধান পাব, তা ভাবতেও পারিনি! তবে এটাও ঠিক যে এরম পাণ্ডববর্জিত জায়গাই তো লুকিয়ে থাকার পক্ষে আদর্শ! লাদাখের প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান শুনে আমার মনে পড়েছিল পাঠানকোটের সেই অসুরদের কথা। এরা সম্ভবত তাদেরই জাতভাই-বোন। এদেরই আমরা পৌরাণিক কথায় অসুর বলে চিনি। কিন্তু সত্যি-সত্যি যে দুটো ব্যাপার এভাবে মিলে যাবে, দুটো ক্ষেত্রেই যে একই উপজাতির সন্ধান পাওয়া যাবে, তা ভাবতেই পারিনি আমি!'

লামা স্মিত হাসলেন। সত্য বলল, 'আপনি আমার জন্য যা করলেন তা আমি জীবনেও ভুলব না! আর এমনিতেও আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে খুব আপন মনে হল। মনে হলে যেন আপনাকে আগে থেকেই চিনি আমি!'

এর জবাবও লামা স্মিত হাসি দিয়েই দিলেন, তবে এবার তার হাসির মধ্যে যেন একটা হালকা রহস্যের ভাব ফুটে উঠল। সত্য বলতে থাকল, 'সব, সবকিছু যেন নাটকের মতো হল– যেন স্বপ্নের মধ্যে দেখলাম! আমি তাদের হাতে আটক হব, তাদের শহরে বন্দি-দশায় সময় কাটাব, আবার এত তাড়াতাড়ি উদ্ধারও হব, আর আপনার সাথেও যে এরম ভাবে, এরম অবস্থায় দেখা হবে- এসব আমি স্বপ্নেও ভাবিনি!'

'স্বপ্নে ভাবোনি, কিন্তু স্বপ্নে দেখেছ–আভাস পেয়েছ আমাদের সাক্ষাতের।'

সত্য এবার জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারল না, 'যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই, মাননীয় লামা।'

লামা অল্প হেসে বললেন, 'আমি তোমার কাজের কথা, বান্ধবীর কথা, আর তোমাদের দু-জনের দেখা স্বপ্নের কথা, এইসব কীভাবে জানলাম– তাই তো?'

সত্য অবাক হল, তবে তার সাথে এটাও বুঝতে পারল যে লামার সম্ভবত থট রিডিং-এর ক্ষমতা আছে– কারুর মনের কথা পড়ে ফেলতে পারেন তিনি। ও শুধু একটা ছোট 'হ্যাঁ' বলল।

এর প্রত্যুত্তরে লামা একটু গম্ভীর ভাবে বললেন, 'সত্য, আমাদের আগেও দেখা হয়েছে!'

এই কথার অর্থ না বের করতে পেরে সত্য ফ্যালফ্যাল করে বয়স্ক লামার স্নিগ্ধ মুখের দিকে চেয়ে রইল। কিছু মুহূর্ত পর সত্যর মুখ দিয়ে বেরোল, 'আমাদের আগেও দেখা হয়েছে? কিন্তু আমি তো ঠিক মনে করতে পারছি না, মাননীয় লামা!'

তারপর তিনি যা বললেন সেটা শুনে সত্যর মনে হল যে ও নির্ঘাত অন্য ডাইমেনশন বা রিয়েলিটিতে পৌঁছে গেছে!

লামার সাথে কথোপকথন শেষ হওয়ার পর সেই ঘর থেকে বেরিয়ে লামার সাথে কথোপকথনের ধাক্কা আর প্রভাব থেকে নিজেকে কিছুটা সামলে নেওয়ার পর আগের ঘরে ফিরল ও। ঘরে এসে একবার রুক্‌-স্যাকটা চেক করল সত্য– হ্যাঁ, সবকিছুই আছে! কিচ্ছু খোওয়া যায়নি। তথাকথিত অসুররা একটা জিনিসেও হাত দেয়নি!

সেদিন দুপুরের খাবারটা মনাস্ট্রিতে খেয়ে প্রধান লামাকে প্রণাম জানিয়ে সেদিন বিকেলে তার হোম-স্টের দিকে হাঁটা লাগাল। পাহাড় ডিঙিয়ে ট্রেক রুট ধরে ফিরতে-ফিরতে সত্য মনে মনে ভাবল যে হোম-স্টের মালিক এতক্ষণে নিশ্চয়ই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন– সত্য আগের রাতে ঘরে ফেরেনি। তাই হয়তো পুলিশ বা মিলিটারিকে এতক্ষণে খবরও করে দিয়েছেন তিনি। তারা যদি সত্যর জন্য সার্চ শুরু করে দিয়ে থাকে তাহলে এবার তাকে তার দুম করে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কৈফিয়ত দিতে হবে! এইসব আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতে হোম-স্টেতে ফিরে ও জানতে পারল যে সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। আগেরদিন বিকেলে মনাস্ট্রি থেকে একজন বৌদ্ধ সাধু এসে হোম-স্টের মালিককে জানিয়ে গেছেন যে সত্য সেই রাতটা মনাস্ট্রিতেই থাকবে; পরদিন হোম-স্টেতে ফিরবে। তাই সত্যর জন্য দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ ছিল না মালিকের কাছে। সব জেনে সত্য মাননীয় লামাকে মনে-মনে আবারও ধন্যবাদ জানাল

রাতে সত্য ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখল যে তার ঘরের মেঝেতে একটা বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে, আর সেই অতলস্পর্শী অন্ধকারের মধ্যে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই অন্ধকার থেকেই প্রকট হওয়া দুই অসুর! অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা ভয় বা অসুরদের আস্তানায় আটক হওয়ার পোস্ট-ট্রমাটিক-স্ট্রেস-ডিসঅর্ডার থেকেই হয়তো এমনটা হল! সাধারণ মানুষ ছাড়াও সেনাবাহিনীর শক্ত-পোক্ত মানুষদেরও যুদ্ধ-জনিত শক এবং অবসাদ থেকে এরকম হয়ে থাকে।

অসুররা কি তাদের বন্দিকে এত সহজে ছেড়ে দেবে? স্বপ্ন থেকে জেগে একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর এই প্রশ্ন মাথায় আসতেই টর্চ জ্বালিয়ে সত্য প্রথমে হোম-স্টের বারান্দাটা দেখল, আর তারপর জানালার বাইরে যেটুকু পর্যন্ত টর্চের আলো পৌঁছয় সেটুকু ভালো করে দেখে নিল। কোথাও কেউ নেই! তারপর ওর মনে হল যে, যদিও সাবধানের মার নেই, তবুও প্রধান লামা যখন অভয় দিয়েছেন তখন চিন্তার কোনও কারণ নেই! তারপর রাতের লাদাখি পরিবেশটা একটু উপভোগ করে অল্প জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল ও।

পরেরদিন গোটা দিনটা মানসিক প্রস্তুতি নিল সত্য। নিজের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও ধর্ম-সঙ্কট কাটিয়ে সিম্মিকে কী বলবে মনে-মনে তার একটা ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে নিল ও। এমনিতে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়– এটা তাদের রোজ দিনের গল্প। কিন্তু এই ব্যাপারটা অন্য।

বাইরের কেউ ভুল করে বা ইচ্ছা করে অসুরদের এলাকায় ঢুকে পড়লে পাতালের সেই উপজাতির মানুষরা তাদের চিরকালের মতো নিজেদের একজন বানিয়ে নেয়। এই প্রসঙ্গে সত্যর মনে পড়ল যে সারা পৃথিবীতে রহস্যময়ভাবে নিরুদ্দেশ হওয়া অভিযাত্রী বা হাইকারের সংখ্যা কম নয়– যাদের নিরুদ্দেশ হওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, আর তাদের কোনও চিহ্নও পাওয়া যায়নি! আবার কারুর-কারুর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। এই নিয়ে বই বেরিয়েছে, টি.ভি.-তে শো হয়েছে, ইন্টারনেটে লেখা-লিখি, ভিডিও, কত কিছু হয়েছে। এরপর থেকে লাদাখে এসে যদি কেউ বা কারা আশ্চর্য ভাবে নিরুদ্দেশ হয় তাহলে হয়তো ধরে নিতে হবে যে সে বা তারা পুরাণের পাতা থেকে বাস্তবে উঠে আসা অসুরদের কবলে পড়েছে।

সেদিন বিকেলে এটা-ওটা ভাবতে-ভাবতে ওর এটাও মাথায় এল যে, যে হোম-স্টেতে রয়েছে তার তলায় মাটির নিচেই আছে অসুরদের পাতালপুরী! কী অসাধারণ স্থাপতি তারা– সত্যর মনে পড়ল পৌরাণিক উপাখ্যানে আছে ময়-দানবের কথা। তিনিও তো অসুর ছিলেন। সত্য স্বগতোক্তির মতো করে এই কথাগুলো বলল, 'ময়-দানব এর চরিত্রটা নিশ্চয়ই কোনও বাস্তব ঐতিহাসিক চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে বানানো। ময়-দানবকে তো রূপক বলে মনে হয়না। তিনিও কি এই পাতালবাসী অসুরদেরই একজন ছিলেন? তাদেরই কোনও পূর্ব-পুরুষ...'

ওদিকে সত্যকে লাদাখি মাখন-চা দিতে এসে সেই হোম-স্টের মালকিন সেই কথাগুলো শুনতে পান। কিন্তু তার বিন্দু-বিসর্গও বুঝতে না পেরে উনি জিজ্ঞেস করেন, 'কিছু বলছেন, বাবু?'

সত্য বুঝল যে এরম অন্যমনস্ক হয়ে বিড়বিড় করাটা ঠিক হয়নি। কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও লিক হয়ে যেতে পারত। ও নিজেকে সামলে নিয়ে একটা মেকি হাসি হেসে বলল, 'না না, ও কিছু না– একটা কবিতার লাইন মনে করছিলাম। আপনাকে কিছু বলিনি।'

'হ্যাঁ, আমদের লাদাখের সৌন্দর্য দেখে অনেক টুরিস্টের কবিতা বলতে ইচ্ছা হয়! এই নিন আপনার চা।' বলে মুচকি হেসে মালকিন চা রেখে তিনি সেই ঘর থেকে চলে গেলেন।

তার পরের দিন কথামতো সিম্মি বাইকে করে পাদুমে এসে পৌঁছল। সত্য ওর সাথে একটা ভিউইং পয়েন্টে দেখা করল। সিম্মি ওকে জিজ্ঞেস করল যে কাজ কেমন এগিয়েছে। সত্য বলল, 'না আমি কিছু খুঁজে পাইনি! মনে হয় এ যাত্রায় খবর ভুল ছিল।'

'ওহ, তাহলে তো বেকার হয়ে গেল!'

'আমি কিছু খুঁজে পাইনি। তার মানে যে ওটা নেই তা তো নয়– হয়তো অন্য কেউ কোনওদিন খুঁজে পাবে। হয়তো লাদাখে নয়, খোদ তিব্বতে অসুরদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যাবে!'

সিম্মি কিছু সন্দেহ করল না; ও ভাবল যে সত্য একটু হতাশ। তাই বলল, 'আমি তো এসে গেছি– এবার আমরা দুজনে মিলে খুঁজব! দেখি না কী পাওয়া যায়।'

'না না, আমি কাল অবধি অলরেডি ১০ দিন খুঁজেছি, জানোই তো। দুটো বর্ডারই এখান থেকে খুব দূরে নয়। কাজেই আর বেশি ওখানে ওই একই জায়গায় ঘোরাঘুরি করলে লোকজনের সন্দেহ হতে পারে।'

'সেটাও ঠিক। তুমি এতদিন ঘুরে বেড়ালে। কেউ সন্দেহ করেনি তো?'

'নাহ্‌, কখনও স্কেচ আর্টিস্ট তো কখনও জিওলজিস্ট। আবার কখনও ভূ-পর্যটক সেজে ঘুরেছি। আর বাসা তো পাল্টেছিই।'

'আচ্ছা আচ্ছা, ইয়েহ বাত হ্যায়!'

'তবে এখানে, এই এত দূরে এত কষ্ট করে আসাটা পুরোপুরি বেকার যায়নি বুঝলে– একটা দারুণ রোড ট্রিপ তো হলই; তাছাড়া আমাদের স্বপ্ন-রহস্যের সমাধান হয়ে গেল লাদাখে এসে।'

'বল কী? কেয়া বাত হ্যায়!'

'হুম্‌, আমাদের দু-জনের দ্বিতীয় প্রপার যৌথ অভিযান রাজস্থানের প্রভাবল্লিতে।'

'উও তো হ্যায়! তার সাথে কী সম্পর্ক?'

'রাজস্থানের প্রভাবল্লির সেই পেড়-ওয়ালে বাবা মৃত্যুর পর এই লাদাখে আছেন! তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে আমার।'

'কী বলছ তুমি? আর ইউ সিওর?'

'অ্যাবসলুটলি! ১০০%!'

'কিন্তু আমরা বিশ্বাস করব কী করে? লোকটা জালি নয়তো?'

'না না, আমাদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন উনি।'

'সেটা তো অনেকরকম ভাবেই জানা যায়। জালি হলে লোকটা তো আমাদের কভার ব্লো-ও করে দিতে পারে! তুমি এত সিওর হচ্ছ কী করে?'

'কারণ উনি এমন-এমন কথা বললেন যা হয় পেড়-ওয়ালে বাবা, বা তোমার আমার ছাড়া, অন্য কারুর পক্ষে জানা সম্ভবই নয়।'

'আচ্ছা তাই?' এতক্ষণে মনে হল সিম্মি আশ্চর্য হয়েছে।

সত্য বলল, 'যা শুনছ তাই! আমারও এটা জানতে পেরে কতটা ধাক্কা লেগেছে ভাবো! একজন অভিজ্ঞ লামা রূপে উনি আমাদের জগতেই আছেন- আমাদের ডাইমেনশনেই!'

সিম্মি বিড়বিড় করে বলল, 'ট্রুথ ইজ্‌ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।'

'উনি আভাস পেয়েছিলেন যে আমরা আসব এখানে; তাই স্বপ্নে আমাদের দেখা দিয়ে উনি বলেন যে ওনার সাথে আমাদের দেখা হতে চলেছে'

সিম্মির মুখ দেখে মনে হলো আরও অবাক হয়েছে। ও সত্যকে প্রশ্ন করলো, 'তার মানে উনি মারা যাননি?'

'না, উনি সশরীরে আর নেই।'

            'তাহলে অশরীরে আছেন?'

            'হুমমম, ওনার এসেন্সটা এখানকার এক বয়স্ক লামার মধ্যে আছে'

'কিন্তু এটা কী করে হয়? পেড়-ওয়ালে বাবা মারা যাওয়ার পর এই জীবিত লামার শরীরে প্রবেশ করবেন কী করে?'

'কেন পারবেন না?'

'অ্যাস্ট্রাল প্রজেকশনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রবেশ করেছেন বলতে চাইছ?'

'না, ওটা নয়'

'সূক্ষ্ম দেহে সাময়িকভাবে প্রবেশ বা ভর করেননি?'

'নাহ । তবে সূক্ষ্ম দেহে যে উনি যাতায়াত করতে পারেন এটা সত্যি!'

'হ্যাঁ, তার প্রমান তো আমরা পেয়েছি সেবার রাজস্থানেই'

'সত্যি, অলৌকিক ক্ষমতা এই মহাযোগীর!'

'সে তো ঠিক আছে। কিন্তু এই কেসটা কি?'

'দিস ইজ্‌ আ কেস অফ্‌ রিপ্লেস্‌মেন্ট রিইন্‌কার্‌নেশন, বুঝলে!'

'আব ইয়ে কেয়া চক্কর হ্যায়?'

'হুম্‌, পরাবিজ্ঞানের ভাষায় একে এটাই বলে। বিরাট বড় চক্কর!'

'তাতে কী হয়?'

'একজন মৃত ব্যক্তির আত্মা অন্য একজনের শরীরে ঢোকে।'

'ঢুকে তার আসল আত্মাকে রিপ্লেস করে দেয়?'

'হ্যাঁ, ধরো কেউ সিওর মারা যাচ্ছে– সে হঠাৎ বেঁচে উঠল– আর নতুন করে বেঁচে ওঠার পর তার পুরো পার্সোনালিটিই পাল্টে গেল- তার স্বভাব, তার কথা-বার্তা, তার আচার-বিচার, সবকিছু। আবার এরমও হয়, জীবিত ব্যক্তির আত্মাকেই অন্য আত্মা রিপ্লেস করে দিল। এটা পসেস করার বা ভর হওয়ার ব্যাপার নয় কিন্তু, রিপ্লেস বা বদল করার ব্যপার।'

'আচ্ছা তো ইয়ে বাত হ্যায়!'

'যতদূর মনে পড়ছে ৮০-র দশকে ইউ.পি.-তে এরম একটা কেস্‌ হয়েছিল– সেটা কোর্টে অবধি উঠেছিল। আরও কেস্‌ আছে এরকম।'

ভগবানজিও তো এটার কথা বলেছেন না?'

'ভগবানজি মানে পেড়-ওয়ালে বাবার কথা বলছ?'

'না, স্বামীজির মানসপুত্রের কথা বলছি।'

'ওহ হো, হ্যাঁ, দেখতে হবে ওটা। শরীর পরিবর্তন, নাকি সাধনার সাহায্যে শারীরিক বয়সকে নিয়ন্ত্রণ করা, কমিয়ে ফেলা– এই দুটোর মধ্যে কোনটা বলেছেন মনে নে ঠিক তবে এই জাতীয় সাধনার কথা যে উনি উল্লেখ করেছেন সেটা মনে আছে। হিউম্যান সুপার পাওয়ারস্‌, বুঝলে!'

'উনি তো তিব্বতের জ্ঞানগঞ্জের অস্তিত্বের কথাও বলেছেন। আর ৪০-এর দশকের শেষের দিকে তিব্বতি সাধনাও শিখেছেন। জ্ঞানগঞ্জ, মানে 'শম্ভালা'। তাই তো?'

'হ্যাঁ, অনেকের কাছে 'শাঙরি-লা'-ও। তিব্বতি সাধুদের আশ্চর্য ক্ষমতা তো পৃথিবী-বিখ্যাত! হয়তো হিমালয়তে থাকার ফলেই...! যাই হোক, আসল প্রসঙ্গে ফিরি।'

'হ্যাঁ, পেড়-ওয়ালে বাবা কী করে এটা করলেন?'

'উনি যা বললেন সেটা হল এরকমঃ প্রভাবল্লির সেই পিশাচকে আটকাতে গিয়ে উনি বুঝতে পারেন যে তাকে আটকাতে গেলে ওনার নিজের আসল শরীর ত্যাগ করা ছাড়া গতি নেই কারণ পিশাচকে পরাস্ত করতে গেলে তাঁকে অ্যাস্ট্রাল লেভেলে সূক্ষ্ম দেহে পিশাচের সাথে লড়াই করতে হবে। তিনি সেটাই করলেন; সাময়িকভাবে পিশাচকে সফলভাবে বেঁধে রেখে তিনি জনকগড়ে নিজের বাসস্থানে ফিরে গেলেন হাভেলি থেকে অন্তর্হিত হয়ে। এই পিশাচকে বেঁধে রাখা ছিল সাময়িক; তাই ওনাকে নিজের শরীর ত্যাগ করে পিশাচের মোকাবিলা করতে হয় অ্যাস্ট্রাল লেভেলে ফিরে গিয়ে। তবে কোনও কারণে উনি নিজের শরীরে পুনরায় প্রবেশ করতে পারেননি। হয়তো অ্যাস্ট্রাল লেভেলে ওনার যা সময় লেগে গেছিল ততক্ষণ ওনার শরীর সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হত না।'

সিম্মি এতক্ষণে কথা বলল, 'সেই। অ্যাস্ট্রাল টাইমের ব্যাপারে তো আমাদের কোনও ধারণা নেই। পার্থিব সময়ের হিসেবের সাথে সেটা নাও মিলতে পারে। ওটা তো আলাদা একটা ডাইমেনশন!'

সত্য আবার বলল, 'প্রতাপ বাহাদুরের হাভেলি শাপমুক্ত হলেও নিজের শরীরে আর প্রবেশ করতে পারলেন না পেড়-ওয়ালে বাবা। এদিকে ওনার কিছু সাধনা বাকি ছিল– তাই তাঁর প্রয়োজন ছিল একটা নতুন সাধক-শরীর। ওনার সাথে অ্যাস্ট্রাল লেভেলে যোগাযোগ হয় এই বৌদ্ধ লামার। দু-জনেই এনলাইটেন্‌ড মানুষ। ইনি শরীর ত্যাগ করতে চাইছিলেন, আর পেড়-ওয়ালে বাবা করতে চাইছিলেন নতুন শরীর ধারন। একদিন রাতে লামার আত্মা শরীর ত্যাগ করল, আর পেড়-ওয়ালে বাবার আত্মা প্রবেশ করল লাদাখি লামার শরীরে। সেই থেকে উনি এখানেই আছেন এখানকার একজন হয়ে–খোলসটা পাল্টেছে শুধু।'

এই অবধি বলে একটু থেমে সত্য সিম্মিকে জিজ্ঞেস করল, 'কী ভাবছ?'

'নাহ্‌, ভাবছি যে এই এক জীবনে যে আর কী-কী দেখতে আর জানতে পারব তা জানি না!'

'সেই, ওনার সাথে এরম ভাবে এই সুদূর লাদাখে সাক্ষাৎ হয়ে যাবে, তা কে ভেবেছিল বলো?'

'তাও আবার এমন একজনের সাথে যিনি সাধারণ মানুষের কাছে মৃত।'

'বসংসি জির্নানি...!' এটা বলে একটু থেমে সত্য পুরো শ্লোকটা মনে করার চেষ্টা করল।

সিম্মি জিজ্ঞেস করল, 'মানে?'

'ভগবৎ গীতার একটা শ্লোক বলছিলাম।'

'ওহ আচ্ছা। আই সি...! ইয়ে, ওনার সাথে ঠিক কোথায় দেখা হল তোমার?'

'হ্যাঁ, চলো তোমায় নিয়ে যাব ওই মঠে। আমিও ওখানেই দেখা পাই ওনার।'

দুপুর অনেকটা গড়িয়ে গেছিল। একটা ক্যাফেতে হালকা লাঞ্চ সেরে নিয়ে দু-জনে মিলে পেড়-ওয়ালে বাবার সাথে, মানে প্রধান লামার সাথে, দেখা করার জন্য মনাস্ট্রির উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলো ওরা


=== সমাপ্ত ===





নাম: আলাপন রায় চৌধুরী। 
ঠিকানা: দমদম, কলকাতা- ৭০০০৬৫।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। 'স্বাধীনতা, স্বদেশ ও স্বকাল' বিষয়ক সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩১ আগস্ট ২০২৪

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান