বিশ্বাসঘাতক
দশ বছর পর আবার দেখা বিশ্বাস ঘাতক মনোতোষ এর সাথে।এক নামি দামী চোখের হসপিটাল এ।একই জায়গাই বসে দুজন,সামনা সামনি বেঞ্চে।সুধা ওকে দেখে স্থির থাকতে পারছিল না।মনে হচ্ছিল খুব করে ঝাড় দিতে।কিন্তু পারছিল না কারণ তার স্বামী অতনু তার পাশেই বসে ছিল।ও জানত সুধার অতীত এর কথা কিন্তু মনোতোষ কে কখনো দেখেনি।
দশ বছর আগে এই মানুষ টাই চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করে সুধার জীবন টা নরক বানিয়ে চলে যায়।সুধা ভীষণ ভালোবাসত মনোতোষকে।একে অপরকে চোখে হারাত এমন অবস্থা।ওদের এই একাত্ম প্রেম এর কাছে বাড়ির লোকেরাও হার মেনেছিল।মেনে নিয়ে ছিল ওদের সম্পর্কটা।দুই বাড়ির সম্মতিতে ওদের বিয়ের দিনও স্থির হয়।অনেক পরিকল্পনা চলে দুজনের,অনেক স্বপ্ন দেখে ওরা।
বিয়ের ঠিক দুদিন আগের কথা।মনোতোষ এর এক বন্ধু সুধার বাড়ি এসে বলে গেলো এ বিয়ে হবে না। মনোতোষ চায় না সুধাকে বিয়ে করতে।বাবা মা ভীষণ রেগে গেলেন।"জীবনটা ছেলেখেলা নাকি?যখন যা ইচ্ছে বললেই হলো।তবে ভালই হলো বিয়ের আগেই চেনা গেলো ছেলেটাকে।এই ছেলের সাথে বিয়ে হলে সুধার জীবন টা নষ্ট হয়ে যেত।কিন্তু সুধা কোথায় গেলো?"খোজ খোজ রব পড়ে গেলো বাড়িতে। কোথাও সুধা নেই।
সুধা এই কথা টা বিশ্বাস করতে পড়েনি।সে জানতো মনো তারসাথে এরকম করতেই পারেনা।সুধাকে যে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতো সে কি এমন কাজ করতে পারে।মনোর বাড়ি এসে সুধা চিৎকার করে ডাকতে লাগলো। মনোর বাবা বেরিয়ে এসে বললেন,সে বাড়িতে নেই।দুদিন থেকে বাড়ি আসেনি।শুধু ওর মা কে ফোন করে জানিয়েছে যে সে তোমায় বিয়ে করতে পারবে না।সুধা যেনো তার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।কেমন পাথরের মতো দাড়িয়ে থাকলো।
তার পর থেকে সুধা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে,সুধার বাবা মা পাহাড়ে চলে যায় সুধা কে নিয়ে।বছর দুই পর সুস্থ্য হলে বিয়ে হয় অতনুর সাথে।সে একজন মানসিক রোগের ডাক্তার।সুধার চিকিৎসা চলা কালীন তার সাথে পরিচয়।তাই অতনু সুধার জীবনের সবটাই জানে।খুব ভালো ছেলে সে।তাকে পেয়ে সুধা আজ খুব সুখী।
কিন্তু আজ আবার এতদিন পর মনোতোষ কে দেখে মন টা কেমন নাড়া দিয়ে উঠলো।কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার মনোতোষ এর কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই তার দিকে।এমন ভাবে বসে আছে যেনো সে তাকে চেনেই না।এটা সুধকে আরো অসস্তি র মধ্যে ফেলছিল।সুধা বসে থাকতে না পেরে পাশে বারান্দার দিকে চলে গেলো।সুধা খুব আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছিল।একটু নিজেকে স্বাভাবিক করে ফিরে এসে দেখে মনো সেখানে নেই।সে বুঝলো মনো ডক্টর এর কেবিনে ঢুকেছে।অতনু বললো সুধা এর পর তোমার নাম আছে।সুধার কানে সেকথা বোধ হয় পৌঁছলো না।সে অধীর আগ্রহে কেবিনের দরজা র দিকে তাকিয়ে রইল।সুধার নাম ডাকা হলো।তার হুশ ছিল না।অতনু হাত ধরে প্রায় টেনেই কেবিনের ভিতর নিয়ে গেলো।তখনও মনোর হাত ধরে একজন নার্স বাইরে নিয়ে গেলো।
সুধা আর নিজেকে সামলাতে না পেরে ডাক্তার বাবুকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে উনার?
ডাক্তার বাবু বললেন উনি মনোতোষ দত্ত।দশ বছর আগে একটা অ্যাকসিডেন্ট এ উনার দুটো চোখ ই নষ্ট হয়েগেছে।তবে বিগত কয়েক্ বছর ধরে চিকিৎসা চলার পর একটা আশার আলো দেখা গেছে।উনি একটা চোখ এ হালকা আলো দেখতে পাচ্ছেন।কাল উনার একটা মেজর অপারেশন আছে।
সুধা বাকরুদ্ধ হয়ে পরলো। মনোতোষ এর বিশ্বাস ঘাতক হাওয়ার কারণ টা সুধার আর বুঝতে বাকি থাকলো না।
.................................................................................................................................
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন