google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ছোটগল্প ।। ঝগড়ার ফল ।। তৃণা মুখার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

ছোটগল্প ।। ঝগড়ার ফল ।। তৃণা মুখার্জী

 


ঝগড়ার ফল

তৃণা মুখার্জী

 খুব কাছের দুই বন্ধু অমল ও বিমল।
একসাথে খাওয়া থেকে শুরু করে শোয়া, সব কিছুতেই তারা একত্র। তাই হয়তো ভগবান তাদের নামের মধ্যে এমন মিল রেখেছেন। শুধু নামের মিল নয়, মনের মিলও ছিল প্রবল। কিন্তু  এত নিকট বন্ধুত্ব একদিন শেষ হতে বসেছিল সামান্য কিছু কারণের জন্য।সেই কারণের কথা জানানোর জন্য লিখতে বসিনি। তাদের এই বন্ধুত্ব ও প্রেমের গাঢ়তায় কিভাবে ফাটল ধরলো তাই লিখবো আজ।রাগ কম বেশি আমাদের সবার মধ্যেই থাকে। কেউ তাকে কন্ট্রোল করতে পারে আবার কেউ মনের যতটুকু রাগ ঝগড়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে ।এমনই এক ঘটনার সাক্ষী আমি ।অমল, যার কাছে সব আছে। বাবা-মা,পরিবার আর যা পেলে মানুষ সুখী হয়, সবকিছু।কিন্তু বিমলের ক্ষেত্রে এটি উল্টো। প্রতিনিয়ত তাকে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে চলতে হয় কারণ বিমলের মা নেই।মা এমন একজন মানুষ আমাদের জীবনে, যার উপস্থিতি সন্তানের কাছে অনেকটাই। মা ছাড়া সবকিছুই যেন অপূর্ণ। মা শব্দটা শুনলে বিমলের বুকে যতটা কষ্ট হয় তার থেকে বেশি কষ্ট হয় অমলের। সেই ছোটবেলা থেকে অমল তার মাকে বিমলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। বিমল যেন তার নিজের ভাই ।কত ঝগড়া, কত অভিমান দুজনের মধ্যে যেমন হয় তেমনি আবার ভেঙ্গেও যায়। অমল কোনদিনই চায়না বিমল তার থেকে দূরে যাক। সারাদিনের যত কথা দুজন দুজনকে না বলতে পারলে শান্তি হয় না।কিন্তু বিমল কদিন থেকে অন্য মনস্ক।অমলের কথা সে শুধু মাথা নামিয়ে শোনে। অমল‌ গড়গড় করে বলে যায় কিন্তু লক্ষ্য করে না যে ,সেই বিমল আর এখন সেই বিমল নেই ।এখন‌‌ সে‌ অনেক কিছু নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করে ।মনে মনে হাসে, চুপচাপ থাকে ।বিশেষ কিছু বলে না। অমল জানে বিমলের বাড়িতে অশান্তি, তাই নিয়ে অনেক কষ্টে থাকে বিমল তবে সে কথা তো  সে বলে অমলকে। বিমলের অভিমানকে‌ সব থেকে বেশি ভয় পায় অমল। বিমেলের এই পরিবর্তন সেইদিন ধরা পরলো ,যেদিন বিমল তার প্রথম প্রেমের কথা জানালো। খুশি হবে কিনা বুঝতে পারল না অমল। শুধু বুঝতে পারল বিমল এখন থেকে তার একার নয়। ভালোবেসে ,বোঝার মতন লোক এসে গেছে। সুচন্দ্রা বিমলের ক্লাসমেট । ওর সঙ্গেই বিমল প্রেম করছে। অনেক ঝামেলা হয়েছে এই প্রেম নিয়ে তবুও অমল কোনদিনই বিমলকে ছাড়েনি।বিমল এখন সবকথা বলেনা, ভাবে হয়তো হিংসা করবে অমল । কষ্ট পাই তবুও মেনে নেয় অমল।অমলের মনেও ভালোবাসার দোলা লাগলে বিমল বলে ওঠে-- তোর ভালোবাসার দরকার নেই। তোর জীবনে তো সবকিছু আছে। না পাওয়ার যন্ত্রনা তোর হৃদয় নেই। উত্তর অমল বলতে গিয়েও বলতে পারেনা। এখন প্রত্যেক কথায় কথায় ঝগড়া হয় ওদের।বিমল বলে অমল নাকি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে। এতদিনকার বন্ধুত্ব মরীচিকার মত কোথায় হারিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে কেমন আছিস ?কি করছিস? ছাড়া কোনো কথাই আর হয়না। এটাও হয়তো অন্য রকমের ভালোবাসা। যে ভালোবাসা ঝগড়া দিয়ে হয় ,যার মাধ্যম হয়তো নীরবতা। যেটা ভালোবাসা দিয়ে ধরে রাখা যেত সেটা হয়তো এখন ঝগড়া দিয়ে ধরে রাখা সহজ হয়ে গেছে। এমন বন্ধুত্ব হয়তো বা  সবার জীবনে আছে। তবে ঝগড়াকে ফল হিসেবে গ্রহণ করে তাকে টিকিয়ে রাখার কাহিনী আর কোথাও নেই। এত ঝগড়া ও মনকষাকষির মধ্যে শুধু একটা জিজ্ঞাসা ,কেমন আছিস? প্রত্যেকটা অক্ষর পড়ে অমলের চোখে যেমন জল আসে ,আমি নিশ্চিত লিখতে গিয়েও বিমল ও সেই জল আটকাতে পারে না।

---------

  তৃণা মুখার্জী

গনপুর পূর্ব বর্ধমান
৭০০১৪৬৬৯২০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন