Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

স্মৃতিগদ্য // সুবীর ঘোষ

শারদীয় আবহে টুকরো কথা


 

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি এ বছর । ফেব্রুয়ারির শেষে যখন শারদীয় সংখ্যার জন্য গদ্য লেখায় হাত দিয়েছি তখন কে জানত এ বছর সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাবে । শক হুন বর্গি এদের লুণ্ঠনে মানুষ যেভাবে দিশাহারা হয়ে যেত এক অদৃশ্য ভাইরাসের আক্রমণে সারা পৃথিবী একপ্রকার অবরুদ্ধ । লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণনাশ । যাতায়াত ব্যবসা বাণিজ্যের পথ অবরুদ্ধ । এ হেন পরিস্থিতিতে এ বছর দুর্গোৎসব হবে কী না সংশয় ছিল । যাই হোক্ , মানুষের আবেগ ও এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত বিপুল আয়ব্যয়ের কথা মাথায় রেখেই স্থির হয়েছে পুজো হবে । নিয়মবিধিও পালন করতে হবে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে ।

 

এ বছর তাই পুজোর সেই উন্মাদনা নেই । মানুষের মন ভালো নেই । বহু বাড়িতে প্রিয়জন হারানোর শোক । তবু জীবনকে এগিয়ে যেতে হবে । সংসারচক্রের এটাই নিয়ম । এ বছর আবহাওয়া কেমন থাকবে জানি না। বাতাসে হেমন্তের আভাস পেতে শুরু করেছি । এ বছর ঋতুচক্রের ভারসাম্য অনেকটা ফিরে এসেছে । সুষম বৃষ্টি হয়েছে । অবশ্য আমফানের মতো মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ও কিছু কিছু স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় বিপুল ক্ষতিসাধন করে গেছে মানুষের ।

 

এবার এ সময় আকাশ খুব নীল । আমাদের ছোটবেলায় পুজোর সময় এ রকমই নীল আকাশ দেখতে পেতাম । পুজোর দিনগুলিতে বৃষ্টি খুব একটা পেতাম না । বিজয়া দশমীর পর ভোরের ট্রেন ধরে যখন চাকুরিজীবীরা কর্মস্থানে ফিরতেন তখন তাঁদের অনেকের গায়ে হালকা শীতবস্ত্র দেখা যেত । বাতাসে হেমন্তের গন্ধ । ধানক্ষেতে হেমন্তের শিশির পেয়ে ধানের ছড়া তৈরি হবে । শীতকাল আসছে । শীতকাল বাঙালির ঘরে পার্বণের কাল । নতুন ধান্যে হবে নবান্ন । মানুষের বলয় থেকে দুর্যোগের ঘনঘটা কেটে যাক্ । বীজাণু পরাভূত হোক্ । জগৎ ও জীবন আবার স্বাভাবিকতা পাক্ –এই হোক্ আমাদের সবার কামনা ।

 

 

 

(২)

আমাদের ছোটবেলায় এ রকম নানা কম্পানির জামাকাপড় পাওয়া যেত না । বাড়ির সব ভাইদের জন্য একই থান থেকে কাপড় কেনা হত । ফলে একই রঙের জামা দেখলে সবাই বুঝে যেত এরা সব এক বাড়ির ছেলে । তখন  টেরেলিন , টেরিকট, ডেক্রন এ সব কাপড়ের নাম খুব শোনা যেত । পুজোর ছুটি হবার প্রাক্কালে আমাদের স্কুল ম্যাগাজিন বেরোত । সে পত্রিকায় আমার লেখা ও নাম ছাপার অক্ষরে দেখতে পেলে সে যে কী আনন্দের হত তা বোধহয় বিশ্বজয় করার আনন্দের থেকে কিছু কম নয় ।

 

 ( ৩ )              

আমি তখন স্কুলের ছাত্র ।  দু'চারটে লাইন লেখার চেষ্টা করি । নিজে কবিলেখক হব  কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি । তবে হ্যাঁ একটা স্বপ্ন দেখতাম -- সম্পাদক হব। নিজের একটা পত্রিকা থাকবে । কিন্তু আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগে আমাদের গ্রামদেশে ছাপাছাপির কথা তো প্রায় দিবাস্বপ্নই বলা যায় ।

 

আমার এক বন্ধু ছিল মানিক দাস । সুন্দর হাতের লেখা ছিল তার । সে আর আমি  একদিন শুরু করে দিলাম হাতেলেখা চালাচালি পত্রিকা । দুটো ফুলস্কেপ কাগজ জুড়ে আকারে বড় করে খানিকটা সংবাদপত্রের চেহারা দেওয়া । সেই পত্রিকার পাতাগুলো আমরাই এঁকে লিখে ভরাতাম --আমার কাগজটা আমি , মানিকের কাগজটা মানিক । নানান উদ্ভট কল্পিত খবর লেখা হত নিজস্ব সংবাদদাতার নামে ।  একটা উদাহরণ দি । একদিন প্রবল ঝড়বৃষ্টি হল । আমি কাগজে খবর বার করলাম— 'গতকালকের প্রবল ঝড়ে মানিক দাসের  পড়ার টেবিল রাস্তা দিয়ে বৃষ্টির জলের বন্যাতে ভেসে যেতে দেখা গেছে । সেই টেবিলে চেপে  স্কুলফেরত কয়েকটা বেড়ালবাচ্চা নিরাপদে বাড়ি এসে পৌঁচেছে' ।  সঙ্গে ম্যাচিং রঙিন ছবি । এই কাগজ চালাচালির আনন্দ গ্রাম্যসন্ধ্যার অন্ধকার  নিঝুম পরিবেশকে বেশ সতেজ করে তুলত ।

 

কালের নিয়মে একদিন সেই উৎসাহ নিভে গেল । আমরাও পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম । তার দু'দশক পর একটি সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা  শুরু করলাম। নাম—উজ্জ্বল একঝাঁক ।  সে পত্রিকা এখনও চলছে ।

 

আমার বয়স দিগন্তের দিকে এগুচ্ছে ।  স্বপ্ন দেখার কোনো বয়স হয় না । স্বপ্নের কোনো এক্সপায়ারি ডেটও হয় না। আমার স্বপ্ন আমার ডালভাতের জীবনে মিশে রয়েছে ।

 

( ৪ )

চার মূর্তি সিনেমাটা মনে আছে ? এক সাধুবাবা এক হাঁড়ি রসগোল্লা টেনিদাদের নজর থেকে বাঁচানোর জন্য বলেছিলেন ওতে যোগসর্প আছে ।  আমারও প্রায় এক যোগসর্পের হাঁড়ি বয়ে নিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল । তখন এত সুন্দর প্যাকেজিং-এর চল ছিল না । মানুষজন আত্মীয়ের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যেতেন হাঁড়িতে । আমি তখন কিশোর । বাবা তাঁর মেয়ের শ্বশুরবাড়ি চলেছেন । সঙ্গে আমি ।  আর বিশাল এক হাঁড়িতে বড় বড় বোঁদের লাড্ডু । অতএব মুখ বন্ধ সেই হাঁড়ির, হাঁড়ি না বলে কলসি বলাই ভালো, তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পড়ল আমার ওপর । লোক্যাল ট্রেনে ভিড় হয় খুব । তার ওপর স্থানীয় প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের দরজা থেকে অনেক নীচে । বেশ কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে তবে নামতে হয় । নামার সময়  এক হাতে কলসি নিয়ে নামতে গিয়ে আর একটু হলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই আর কী । ভাগ্যের জোরে সামলে নিয়েছিলাম ।  এ সব ক্ষেত্রে যে প্রথম জনকে আগে নামতে হয় এবং মালপত্র অন্য জনকে ভিতর থেকে এগিয়ে দিয়ে তারপর নিজে নামতে হয় সে কথা না আমি জানতাম না আমার বাবার মাথায় এসেছিল । নামতে না নামতেই এক পুলিশ হিন্দিতে জিজ্ঞেস করল-- ইস মেঁ ক্যায়া হ্যায় ? আমি হিন্দি বুঝলেও বলতে পারতাম না । তা ছাড়া আমি ভাবলাম ট্রেনে কলসি নিয়ে যাওয়া বোধ হয় বেআইনি । তবু  সাহস করে পালটা জিজ্ঞেস করলাম—কেন ? পুলিশটা বোধ হয় বাংলাভাষায় স্বচ্ছন্দ ছিল না । আর না ঘাঁটিয়ে অন্য দিকে চলে গেল । তখনো চার মূর্তি সিনেমাটা দেখিনি । দেখা থাকলে বলতে পারতাম—যোগসর্প ।

 

( ৫ )

এক সময় বিজয়া দশমীর পর পরস্পর সাক্ষাৎ করার রেওয়াজ ছিল । দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেলে আমরা পরদিন সকাল  ন'টা নাগাদ আত্মীয় বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি পরিক্রমা করতাম । প্রথা অনুযায়ী বড়দের প্রণাম , ছোটদের আশীর্বাদ করার নিয়ম । আমরা নিজেরাই তখন ছোট । তাই আমরা প্রণাম করতাম বেশি , প্রণাম পেতাম কম ।  তারপরই আসত প্লেট সাজিয়ে মিষ্টি নাড়ু নিমকি পায়েস । মিষ্টি খেতে খেতে সবাই যখন হাঁপিয়ে উঠত এবং পরিক্রমাও শেষ বাড়িতে এসে পৌঁছাত , সেখানে অন্য ব্যবস্থা থাকত । তাই সবার নজর থাকত ঐ শেষ বাড়িটির দিকে । সরকারবাড়ি । সেখানে দেওয়া হত আলুর চপ , পিঁয়াজি , বেগুনি । সঙ্গে অবশ্যই অল্প কিছু মিষ্টি । উৎসাহী দাদারা কেউ কেউ তার  সঙ্গে চেয়ে নিত মুড়ি ও কাঁচা লঙ্কা । গাছ থেকে পেড়ে ভাঙা হত বাতাবিলেবু । তা-ও কেউ কেউ খেতেন ।

 

( ৬ )

আমরা যখন কর্মব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছি অনেকেই পুজোর সময় কয়েকটা দিন নিজস্ব ছুটি নিয়ে পাড়ি দিতেন নৈনিতাল, দার্জিলিং, শিমলা বা পুরী । সরকারী পরিবহণের বাস থেকে যে ভদ্রলোক দুবরাজপুরে নেমে গেলেন গ্রামের বাড়ির বাস ধরবেন বলে , তিনি আওয়াজ খেয়ে গেলেন—হয়ে গেল দশ টাকায় পুজো ভ্রমণ । তখন ও রকমই বাসভাড়া ছিল । সে সব মন্তব্য কেন জানি না হজম হয়ে যেত । এমনই মজা পুজোর ছুটির । পুজোর আবহই  সহিষ্ণু হতে শেখায় ।

প্রতিবেশী জিজ্ঞেস করেন—পুজো সংখ্যা কী কিনলেন ?

n  কী কিনব ! এখন আর সে উত্তেজনা নেই । তখন এক একটা পুজো সংখ্যা বেরুবার অপেক্ষায় আমরা বসে থাকতাম । কী লিখবেন তারাশঙ্কর বা নরেন্দ্রনাথ মিত্র ।

প্রায় তিন দশক আগে আমার কবিবন্ধুদের বিজয়ার শুভেচ্ছাপত্র পাঠিয়েছিলাম ছাপানো কার্ডে । সেখানে যা লিখেছিলাম সেই কবিতাটিই এখানে আবার তুলে ধরছি—

এখন দুপুরে রোদ হালকা কম্বলের মতো

আঁটকে আছে গায়ে ;

এখন যোজন পথ অনায়াসে

হেঁটে আসা যায় ।

কোজাগরী পূর্ণিমার সাতদিন আগে

এখন খণ্ডছায়া দালানের দোতলায় ঘষা খায় ।

ভদ্রতার বাড়াবাড়ি এখন চলবে কিছুদিন—

ধূলিময় ক্লাসঘরে প্রতিশ্রুতিপিচ্ছিল সুর

এখনো শুনতে পাওয়া যাবে ।

 

( ৭ )

খুঁজে পেলাম ১৯৯৫ সালের একটা পাক্ষিক সংবাদপত্র । পুজোর সময়কার । সেখান থেকে একটা অংশ হুবহু তুলে এ লেখা শেষ করছি ।

"গত পুজোয় চোখে চশমা দিয়ে শারদসংখ্যা কাল্পনিক পড়ছি । এমন সময় একটি মেয়ে এসে আমাকে বিজয়ার প্রণাম করল । চিনতে পারিনি । পরিচয় দিতে জানলাম প্রথম যৌবনে যে মেয়েটিকে ভালোবাসতাম এ মেয়েটি তার কন্যা" ।

 

 


সুবীর ঘোষ // ৩০১ আশ্রয়  অ্যাপার্টমেন্ট // গ্রুপ হাউসিং , বিধাননগর // দুর্গাপুর৭১৩২১২ // চলভাষ---৯৯৩২৬৪০৯৪৯

 

                                                                 

 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত