শিকার
আজ বিকালে কালবৈশাখীর প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। কালো মেঘ চারিদিকে অন্ধকার করে রেখেছে। খেলার জন্য অনেকেই মাঠে এসেছিল; হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ হওয়াই সবাই ক্লাবেই ঢুকেছে। বিকালে খেলতে না পেলে মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে যায়; আজও সেই রকম বোধ হল। এতো জোরে ঝড় হচ্ছে যে ক্লাবের দেওয়াল পর্যন্ত কাঁপছে। আমরা সবাই ক্লাবের ভেতরে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছি। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না, মিনিট কুড়িকের মধ্যেই থেমে গেল। কিন্তু যেটার জন্য আমাদের বিকালে মাঠে আসা, সেটা আর হলো না; ক্রিকেট খেলাটা মাটি হয়ে গেল।
হঠাৎ অন্ধকার হয়ে আসা জগৎ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হলে আমরা বেশ কয়েকজন প্রফুল্ল মনে ক্লাবের বাইরে এলাম। দেখলাম কাবেল দাদু গুটি গুটি পায়ে ক্লাবের দিকে আসছে।
আমাদের কাছে এসে একটু ফিক করে হেসে বলল, "কিরে তোদের খেলার তো আজকে বারোটা বেজে গেল!"
অমিয়দা রেগে গিয়ে বলল, "তোমার খুব আনন্দ হচ্ছে না।"
দাদু বলল, "কি যে বলিস, আনন্দ হবে কেন। বরং দুঃখ হচ্ছে রে, তোরা খেলতে পেলি না।"
বিকাশদা কৌতুকের ছলে বলল, "দুঃখ প্রকাশ করো না খুড়ো, এর বিকল্প একটা কাজ আছে।"
আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি কাজ গো বিকাশদা?"
বিকাশদা হেসে বলল, "কেন, কেষ্টখুড়োর আজগুবি গল্প শোনা।"
দাদু রেগে বলল, "আজগুবি গল্প তোরা শুনিস কেন, আমি তোদের শুনতে বলেছি।"
আশিষ বলল, "দাদু রাগ করছো কেন, খেলা তো হলো না; একটা গল্প বলো শুনি।"
দাদু রেগেই বলল, "আমার আজগুবি গল্প তোদের শুনতে হবে না।"
অবশেষে সকলের পীড়াপীড়িতে দাদুর রাগ ভাঙলো; গল্প বলতে রাজি হলো। আমরা মাঠের একপাশে একটা উঁচু জায়গা দেখে গোল হয়ে বসলাম। দাদু গল্প বলতে লাগলো।
অনেক বছর আগের কথা, কখন ঠিক আমার মনে নেই। তবে ঘটনাটা ভালোই মনে আছে। যতদূর মনে পড়ছে সম্ভবত তখন আমার বয়স কুড়ি বাইশ হবে। আমি তখন আদিবাসী মানে সাঁওতালদের ছেলের সাথে খুব ভালো মেলামেশা করতাম। সারাদিন ওদের সাথেই ঘুরে বেড়াতাম। লেঠুডাঙা গ্রামের সাঁওতালদের ছেলেগুলোর সাথে; এখনও বেশ কয়েকজনের সাথে ভালোই বন্ধুত্ব আছে। তবে আগের মতো আর ওতটা যোগাযোগ নাই। ওরা খুব সহজ সরল হয়, খুব কম সময়েই সবাইকে বিশ্বাস করে। সেই রকম আমিও ওদের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। এবার মূল গল্পটা বলি শোন।
পাঁচ-সাতজন ছেলের সাথে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল। ওরা যেখানেই যেত আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যেত; অবশ্য আমারও যাওয়ার আগ্রহ থাকতো। তোরা হয়তো জানিস নাকি জানিনা, লেঠুডাঙার সাঁওতালরা বছরে দুবার শিকারে যায়। একবার পৌষ পার্বণের ঠিক আগে; কোনদিনটা আমার ঠিক মনে নেই। আর একদিন জৈষ্ঠ্য মাসের পাঁচ তারিখ, এটা আমার খুব ভাল করে মনে আছে। ওই দিন সাঁওতালদের সবাই শিকারে যায়; সবাই বলতে সব ছেলেরা, মেয়েরা অবশ্য নয়। জৈষ্ঠ্য মাসের পাঁচ তারিখ সব ছেলেদের শিকার যেতেই হবে; ওদের কি একটা নিয়ম আছে, আমি ঠিক জানি না। ওই দিন সরকার থেকেও ওদের জন্য যাতায়াতের সমস্ত ভাড়া ফ্রি করে দিয়েছে।
আমি এতো সব জানলাম এই কারণে, আমি ওদের সাথে একবার শিকারে গিয়েছিলাম; ওই জৈষ্ঠ্য মাসের পাঁচ তারিখে। ওরা অবশ্য আমাকে শিকারে যেতে বলেনি, আমারই একটা কৌতুহল ছিল। ওদেরকে বলতেই ওরা নিয়ে যেতে রাজি হলো। সাঁওতালরা সব দল বেঁধে শিকার করতে যাই। দল বলতে বিশাল বড়ো দল নয়; এই আট-দশ জন করে ছোট ছোট দলে শিকার করে। আমরা সেবার সাতজন একটা দলে ছিলাম; আমি ছাড়া বাকি যে ছয়জন ছিল, সবাই আমার সাঁওতাল বন্ধু। সুতরাং তাদের সঙ্গে যেতে আমার বেশ আনন্দই লাগল। ওরা যেহেতু প্রতিবছরই স্বীকার করে, তাই বিভিন্ন জঙ্গলের খবর ওরা রাখে। সেবার আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে শিকার করতে চলে গিয়েছিলাম; ঝাড়খন্ডের একটা বড়ো জঙ্গলে। আমি বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম এই কারণে; কোনদিন রাজ্যের বাইরে যাওয়া হয়নি, কিছু হোক আর না হোক বিনা খরচায় অন্য একটা জায়গা তো দেখা হবে।
আমরা সাতজনই ঝাড়খন্ড গিয়েছিলাম; আমাদের সাথে বাকি যারা শিকারে গিয়েছিল, তারা আমাদের রাজ্যেই বিভিন্ন জঙ্গলে চলে গেল। আমরা যে জঙ্গলে শিকার করতে যাব ওই জঙ্গল থেকে কিছুটা দূরেই একটা স্টেশন আছে; নামটা ঠিক মনে নাই, ওই স্টেশনে আমাদের ভোরের দিকে নামার কথা। কারণ সকালে পশুরা খাবারের জন্য গভীর জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে জঙ্গলের আসেপাশে ঘাসপাতা খেতে আসে। তখনই শিকার করার সঠিক সময়। এটা আমি আমার ওই সাঁওতাল বন্ধুদের কাছ থেকেই জেনেছিলাম।
কিন্তু সেদিন সকালে আমাদের আর শিকার করা হলো না। আগের দিন বাড়ি থেকে বেড়িয়েও ট্রেনের সমস্যার জন্য ভোরে পৌঁছানো গেল না। আমরা যখন ট্রেন থেকে নামলাম তখন প্রায় সকাল নটা বেজে গেছে। শিকারের আমি কিছুই বুঝি না, তাই আমার বন্ধুরা যা বললো চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনলাম।
গনেশ নামে একজন বন্ধু বলল, "এখন তো জঙ্গলে গিয়ে কোন কাজ নেই, পশুরা সব গভীর জঙ্গলে চলে যাবে!"
অন্য একজন বন্ধু স্বপন বলল, "হ্যাঁ, এখন স্টেশনেই থাকা যাক, বিকালের দিকে জঙ্গলে যাওয়া যাবে, তখন যদি আবার তাদের দেখা মেলে।"
সবার সম্মতি হওয়াই সারাদিনটা স্টেশনেই কাটানো হলো। রাতে ট্রেনে ভালো ঘুম না হওয়াই দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে নিলাম। বিকালে সূর্য যখন পড়ন্ত হয়ে এলো, আমরা তখন জঙ্গলের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। আমরা ভেবেছিলাম স্টেশন থেকে জঙ্গল খুব কাছেই, কারণ স্টেশন থেকে জঙ্গলের সীমানা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু আমরা সেখানে যখন গেলাম দেখলাম, সেটা জঙ্গলে সীমানা নয়, সেটা একটা বেশ বড়ো খাল। খালের দুই তীরে বেশ বড়ো বড়ো ও ঘন গাছের সারি। সেখান থেকে দু-তিন কিলোমিটার ফাঁকা মাঠের পর জঙ্গলের সীমানা দেখা যাচ্ছে।
খালের কাছে গিয়ে সবাই বেশ বিরক্তি বোধ করল। কারণ জঙ্গলে পৌঁছাতে যদি সন্ধ্যা হয়ে যায়, তাহলে শিকার পাওয়া যাবে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "তোরা আগে এখানে শিকারে আসিসনি।"
গনেশ বলল, "না রে এই প্রথম এলাম। পাশের গ্রামের অনেকেই এসেছে। তাঁদের মুখেই শুনলাম এই জঙ্গলে প্রচুর পশুপাখি আছে। খুব তাড়াতাড়ি শিকার পাওয়া যায়।"
অবশেষে ফাঁকা মাঠে হেঁটে জঙ্গলে পৌঁছাতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগল। আমরা সেখানে যখন পৌঁছলাম তখন দিনের আলো প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। জঙ্গলে প্রবেশ করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা নেমে এলো, কিন্তু কোন শিকার পাওয়া গেল না। কি করা যায়, প্রথমে সবাই ভাবলাম স্টেশনে ফিরে যাব। তারপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হলো।
গনেশ বলল, "দেখ আমরা যদি স্টেশনে আজ ফিরে যায়, প্রায় দুঘণ্টা সময় লাগবে। আবার কাল ভোরে দুঘন্টা হেঁটে আসতে হবে, তবে আমরা শিকার পাবো। এতো হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে শিকার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আমরা যেটা করতে এসেছি সেটাই হবে না।"
অন্য একজন বন্ধু মহাদেব বলল, "গনেশ ঠিকই বলেছে, এতো হাঁটাহাঁটি করলে ক্লান্ত হয়ে যাব।"
স্বপন বলল, "তাহলে এখন উপায়?"
গনেশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "উপায়! উপায় একটা আছে, আমাদের কাছে তো একটা তাঁবু আছে। ওটা দিয়েই জঙ্গলের আসেপাশে রাতটা কাটিয়ে দিলে কেমন হয়?"
স্বপন বলল, "সেটা মন্দ বলিসনি, কিন্তু এখানে তো বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে।"
গনেশ জিজ্ঞাসা করল, "কিসের বিপদ?"
স্বপন বলল, "যদি কোন হিংস্র জন্তু আক্রমণ করে।"
গনেশ বলল, "আমি যতদূর জানি রাতে জন্তুরা বেশি ঘোরাফেরা করে না। আর যদিও আসে, আমরা এতোজন আছি, আমাদের কাছে অস্ত্র তো আছেই। তাছাড়া রাতে ভালো ঘুম হবে না, একটা রাত জেগেই কাটিয়ে দেব। আগুন জ্বালালে জন্তুরা কাছে আসবে না।"
মহাদেব বলল, "তাই হোক, কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার।"
সবাই সম্মতি দিলে জঙ্গলের একেবারে পাশে তাঁবু পাতা হলো। তাঁবুর কিছুটা দূরে জঙ্গলের শুকনো কাঠ দিয়ে বেশ বড়ো করে আগুন জ্বালানো হলো। আর আমরা তাঁবুর পাশে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে কাটিয়ে দিলাম; শিকারের গল্প। অন্যান্য বছর ওরা কোথায়, কিভাবে শিকার করেছে সেই সব। আমি প্রশ্ন করে গেলাম, ওরা অবিরাম উত্তর দিয়ে গেল। শিকার সম্পর্কে আমার অজানা দিকগুলোর একটু সমৃদ্ধি ঘটলো। রাত গভীর হলে খাওয়া দাওয়া শেষ করা হলো। তখন গনেশ বলল, "আমার ঘুম আসছে না, আমি জেগে থাকছি। তোদের যদি ঘুম পাই ঘুমিয়ে নে।"
আমাকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল, আমি গিয়ে তাঁবুর ভেতরে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম গনেশ ছাড়া একে একে সবাই এসে হাজির হলো।
সম্ভবত তখন মাঝরাত, যেন কিসের এক শব্দে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। উঠে দেখলাম আমার আগেই সবাই উঠে তাঁবুর মধ্যে বসে আছে। বুঝলাম এই শব্দ জন্তুর পায়ের, খুরের শব্দ। তাঁবু থেকে বেড়িয়ে দেখলাম একপাল জন্তু আমাদের তাঁবুর পাশ দিয়েই দ্রুত গতিতে ছুটে গেল। আমরা যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন তাকে তোয়াক্কা পর্যন্ত করল না, তাদের দ্রুত গতিতে আগুন নিভে গেল। তখন আমরা খুব ভয় পেলাম; এই কারণে যে, গনেশকে তাঁবুর আশেপাশে দেখতে পেলাম না। তারপর কিছুটা দূরে তাকে দেখতে পেয়ে স্বস্তি পেলাম। আমরা তার কাছে ছুটে গেলাম, দেখলাম তার তীরে দুটো হরিণ কুপোকাত হয়েছে।
দেখলাম গনেশ অক্ষত, সে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, "জঙ্গলে কি হয়েছে বলতো, জন্তুগুলো জঙ্গল থেকে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে কেন?"
সেটা তো আমাদেরও অজানা। মহাদেব বলল, "কি জানি বুঝতে পারছি না।"
আমি বললাম, "আমার মনে হয় জঙ্গলের ভেতর বড়ো কোনো দূর্ঘটনা ঘটেছে।"
গনেশ বলল, "সে তো বটেই, না হলে জন্তুগুলো জঙ্গল থেকে পালাবে কেন। কিন্তু হয়েছেটা কি?"
কিছুক্ষণ ভেবে গনেশ বলল, "যে যার অস্ত্র নিয়ে নে, জঙ্গলে প্রবেশ করে দেখি ব্যাপারটা কি!"
কিন্তু স্বপন যেতে রাজি হলো না। সে বলল, "জঙ্গলে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, এতো রাতে জঙ্গলে প্রবেশ করাটা উচিত হবে না।"
গনেশ বলল, "শিকার করতে হলে দূর্ঘটনা যখন তখন ঘটতে পারে, সেজন্য এখন কি ঘটছে সেটা আমাদের জানা দরকার। আর যদি সেরকম বুঝতে পারি আমরা ফিরে আসবো। কিন্তু একটা রহস্যময় ব্যাপার না জানলে মনটা শান্তি পাচ্ছে না।"
মহাদেব বলল, "গনেশ ঠিকই বলেছে, আমরা শিকারী, জঙ্গলে কি ঘটছে সেটা আমাদের জানা প্রয়োজন।"
আমাদের অস্ত্র বলতে তীর-ধনুক ও বর্শা। যে যার অস্ত্র নিয়ে আমরা সবাই গনেশকে অনুসরণ করলাম, অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বপনও তাই করল।
একটু গভীর জঙ্গলে যেতেই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আমরা সাতজন বীর পুরুষ কাঠের পুতুল হয়ে গেলাম। যা দেখলাম মনে করলে এখনও আমার বুকটা কেঁপে উঠছে। দেখলাম এক দৈত্য আকৃতির পুরুষ, কি কুৎসিত চেহারা, মুখটা দেখলেই প্রাণ শুকিয়ে যাবে। সে জন্তুগুলোকে একটা একটা করে ধরছে, আর গর্জন করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। কি নৃশংস সেই হত্যা! একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায় না। সারা শরীরের রক্ত হিম হয়ে এসেছিল। বৃক্ষের আড়াল থেকে পুতুলের মতো আমরা কিছুক্ষণ দেখলাম। ভয়ে পা কাঁপতে লাগল। খুব ভয় পেয়ে গনেশ জঙ্গল ত্যাগ করার নির্দেশ দিল।
কাঁপতে কাঁপতে জঙ্গলের বাইরে এলাম। জিনিসপত্র খুব তাড়াতাড়ি গুছিয়ে সেই রাতের অন্ধকারেই স্টেশনে ফিরে এলাম। সেবার আমাদের আর শিকার করা হলো না। গনেশের তীরে বিদ্ধ হরিণ দুটোই আমাদের তৃপ্তি দিয়েছিল।
___________________________________
অলোক দাস
গ্রাম- খাটগ্রাম
ডাকঘর- সন্তোষপুর
থানা- গোঘাট
হুগলি, ৭১২৬০২
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোঃ- ৮৩৪৮৯২৯৬৩০
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন