শক্তি রূপেন সংস্থিতা
-----------------------------------------
নিষ্পাপ মায়াবী ভোরের নমনীয় আলোক'মালায়,
ঘাসে ঘাসে মুক্তো ঝরা শবনমে পা ফেলতেই শীতল এক অনুভূতিতে সিক্ত হয় মনের বাতায়ন।
ক্রমশ আবিষ্ট হই মেয়েবেলার ফেরারি বাহারী গল্পে।
শরতের নীলাম্বরের আঙিনায় উঁকি দেওয়া সফেদ মেঘেদের মাঝে বিমুগ্ধ দুচোখ
হারায় দৃষ্টির পরিসীমা।
বাতাসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তখন মা.. মা গন্ধ,
সদ্য প্রস্ফুটিত শিউলি সুবাস ধরিত্রীর প্রতিটি কোণায় বিলিয়ে দেয় আগমনীর সুর।
বাঁধ ভাঙে হৃদয়ের উচ্ছ্বাস।
চোখ বুজে এক ছুট্টে আমি যেন পৌঁছে যাই প্রফুল্লিত শুভ্র কাশেদের ঘন বনে।
ধুলো উড়ানো রাঙা মেঠো পথ পেরিয়ে ছুটতে থাকি আরো......
নির্দ্বিধায় পেছনে ফেলে আসি শহুরে জটিলতা, কংক্রিটের প্রাণহীন জংগল।
ক্রমশ নিঃশ্বাসের গভীরতায় মিশে যেতে থাকে হেমন্তের আমন ধানের ঘ্রাণ,
পরম যত্নে নিকানো দুগ্গা দালানের ভিজে মাটির খুশবু।
হৃদস্পন্দনের প্রতিটি ছন্দে ফের একবার অনুভূত হয় ঢাকের জয়ধ্বনি।
ফেলে আসা শৈশব যেন আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নিষ্পাপ সরলতায়।
যেখানে হয়তো কোথাও রেখে এসেছি আমার অমূল্য অপার্থিব চাওয়া পাওয়া;
হাত বাড়ালেই এখনো যাকে ছুঁতে পারি অবলীলায়।
দূরের খেয়াঘাটে অপেক্ষমান ইচ্ছামতীর শান্ত স্রোতের বুকে এলিয়ে পড়া প্রাচীন অশ্বত্থের ডালে যখন একফালি রোদ খেলা করে,
পড়ন্ত গোধূলির সুবর্ণরেখা ধরে কৈলাশ থেকে বার্তা বয়ে আনে নীলকন্ঠ পাখি।
মায়ের আগমনী বার্তায় মরা দীঘির পদ্মবনে গুনগুন সুরে গুঞ্জরিত হয় কালো ভ্রমরের দল।
আমার ধুলি মাখা অন্তঃকরণ অবচেতনে
শুনতে পায় নূপুরের রুনু'ঝুনু শব্দ,
অতন্দ্র আঁখিপটে ভেসে ওঠে আদিশক্তির অভয়প্রদায়িনী দিব্য স্বরূপ।
আমার চিবুক ছুঁয়ে নেমে আসে আনন্দের বারিধারা,
বুকের গহীনে তমসার ঘনান্ধকারে জ্বলে ওঠে একশো আট প্রদীপ।
দিগন্তের ওপার থেকে তখন যেন পবিত্র দীপ্ত কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে " যা দেবী সর্বভূতেষু, শক্তি রূপেন সংস্থিতা,".....
অমলিন এই স্মৃতিদের ভীড়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েও ফিরিয়ে আনি এক একটি মণিমুক্তো,
বুঝতে পারি এই মায়াময় ভূমন্ডলের বুকে নারীশক্তির অপরিহার্যতা,
অনুভব করি আমারই হাতের মুঠোয় লুকিয়ে সৃষ্টির বীজমন্ত্র।
ভাবতে অবাক লাগে...শত অত্যাচার, ঠুনকো মান-অভিমান, অব্যক্ত যন্ত্রণা আর একরাশ অবহেলা পেরিয়েও আজও এই সুবিশাল নভোমন্ডলের নক্ষত্র তলে আমি এক জাজ্জ্বল্যমান জীবনীশক্তি।
"আমাতেই নিহীত সমগ্র বিশ্ব, সমগ্র বিশ্বের ব্যাপ্তিতেই আমি"।
----------------------------------------------------------
সুচেতা বিশ্বাস চৌধুরী
সন্তোষপুর, কলকাতা- ৭০০০৭৫
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন