Featured Post
গল্প || তাসফীর ইসলাম (ইমরান)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
দীর্ঘশ্বাস
রাত ১১ টা। শিমুল অফিসের ওভারটাইম কাজ শেষ করে মাত্র বাসায় ফিরেছে। গেট খুলতেই সামনে তার আদরের ছোট্ট মেয়ে স্নেহা হাজির।
- বাবা তুমি আসছো?
- জ্বী মা আমি আসছি। তবে, এতো রাত হয়েছে তুমি এখনও ঘুমাও নি কেন?
- বাবা তোমায় একটা কথা বলবো তাই আমি তোমার পথ চেয়ে বসেছিলাম।
- আচ্ছা সোনা মা-মামনি কথাটা পরে বললো হতো না!
- না বাবা এখনি বলতে হবে। পরে বললে বাসি হয়ে যেতে পারে।
- কি কথা বলো মা।
- আমাকে একটা ট্যাপ কিনে দিবে বাবা?
- তুমি তো ছোট মানুষ! তুমি ট্যাপ দিয়ে কি করবে মা?
দাও না একটা ট্যাপ কিনে, ছোট মেয়ে আবদার করছে।
পাশ থেকে বলে উঠলো তন্নি। তন্নি হলো শিমুলের স্ত্রী। মানে, স্নেহার আম্মু।
স্নেহা তার বাবার কাছে ট্যাপ আবদার করেছে তার কারন হলো- দেশের এই করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে তাদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তাই বড় স্ক্রীনের একটা ফোন হলে ছোট্ট স্নেহার ক্লাস করতে সুবিধা হতো তাই ট্যাপ কিনে দেবার জন্য আবদার। স্নেহাকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন। আসলে সব ছেলে-মেয়েকে নিয়েই তার বাবা-মায়ের ভিন্ন রকমের স্বপ্ন থাকে। স্নেহাকে নিয়ে তন্নি-শিমুলের অনেক স্বপ্ন। তাই, স্নেহাকে ইংলিশ মিডিয়ামের একটা স্কুলে পড়ায়। অনেক খরচ হয় পড়াতে। শিমুল একটা কোম্পানিতে ছোটখাটো জব করে। পিছুটানের সংসার দেশের বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা আছে। আবার ঢাকার শহরে নিজের পরিবার নিয়ে থাকে। তবুও ওভারটাইম জব করে কোনো-রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছে।
তার আদরের মেয়ে একটা আবদার করেছে বাবা হয়ে সেটা কি করে সে পূরন না করে পারে! বাবা হলে বোঝা যায়,
দিন যত বাড়ে সন্তান যত বড় হয় বাবার দ্বায়িত্ব ততটাই বেড়ে যায়।
বন্ধুর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার এনে মেয়ের আবদার পূরন করে। এদিকে করোনার প্রকট দিন দিন বেড়েই চলেছে। সারাদেশ লকডাউন ঘোষনা করেছে। অফিস-আদালত সব বন্ধ। আর শিমুল তো কোনো সরকারি চাকরিজীবী না। একটা কোম্পানিতে ছোটখাটো চাকরি করে। বেতন পায় না অনেকদিন হয়ে গেলো। কোনো রকম ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছে।
হঠাৎ একদিন ভোর বেলা একটা মেইল আসে শিমুলের ঠিকানায়, খামে লেখা- আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত শিমুল সাহেব। আমাদের ম্যানেজমেন্ট কমিটি সিন্ধান্ত নিয়েছে করোনার এই দূরবস্হা সময়ে অফিসের কিছু মেম্বার কমিয়ে সীমিত আকারে অফিস চালাবে। তাই, আমরা আপনাকে রাখতে পারলাম না। চাকরিটা চলে গেলো শিমুলের।
চাপা ব্যাথায় বুক ফেটে যাচ্ছে শিমুলের।
বিগত মাসেরও কোনো বেতন পেলো না। এখন কি করে বউ, বাচ্চা নিয়ে ঢাকার শহর থাকবে শিমুল।
অনেকদিন পর বাবার ফোন-
শিমুল মনে মনে বলছে আমি যখন বিপদে পড়ি ঠিক তখনই বাবা আমার কাছে ফোন দেয়। বাবা সব বুঝতে পারে কেমন করে জানি। আসলেই বাবারা খুব আজব হয়।
- কেমন আছো শিমুল?
- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি বাবা। আপনি কেমন আছেন?
- আমি বেঁচে আছি রে বাবা। বাবা তুই তো বলছিলি আমারে শহরের বড় ডাক্তার দেখাবি। তা কবে দেখাবি বাবা?
দিন যত যায় বুকের ব্যাথাটা ততই বাড়ে।
- করোনা তো এখন তাই ডাক্তার রা রোগী দেখে না বাবা। কিছুদিন পর বড় ডাক্তার দেখাবো।
- আচ্ছা দেখাইস বাবা।
বিপদে পড়ে আজ বাবার সাথেও মিথ্যে কথা বললো শিমুল। কি করার আছে -
মালিকে বাসা ভাড়া পাবে ৩ মাস পর্যন্ত। মালিক ভালো মানুষ ছিলো তাই কিছু বলে না। তবে কতদিন সে ভালো পাবে? ৩ মাস, ৪ মাস, বড় জোর ৬ মাস। দেশের এই মহামারি এতো তারাতারি তো শেষ হবে না। কত স্বপ্ন নিয়ে শিমুল এই শহরে এসেছিল। মেয়েকে নিয়ে কত স্বপ্ন। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করিয়ে অনেক বড় ডাক্তার বানাবে মেয়েকে। কিন্তু এখন কিভাবে করবে সে?
মিথ্যে যত শান্তনাতে মনকে না হয় বোঝানো যায়, কেমন করে প্রিয়জনকে মনভোলানোর গল্প শোনাবে সে!
মন খারাপ দেখে তন্নি হঠাৎ জিঙ্গেস করে-
-কি হয়েছে তোমার? ইদানীং দেখতে আছি মন খারাপ। আমি তো তোমার স্ত্রী আমাকে তো বলতে পারো। কি হয়েছে তোমার।
- কি বলবো তন্নি!
কবেই তো সব শেষ হয়ে গেছে,বুকের গভীরে শুধুই এখন দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ-
তবুও এই আমি যে তোমাদের জন্য জলতরঙ্গের মতো হাসি,কিছু উত্তর তো স্নেহা,আর তোমাকে দিতে হয়। আমি ভালো আছি কিছু হয়নি আমার।
তবুও তন্নিকে সব বলে সে-
এখন কি করবা অন্য একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করো।
- এখন কে দিবে আমায় চাকরি?
আমি এখন মন খারাপের দলে, আমি এখন ডুবসাঁতারুদের দলে।
কোম্পানিকে এখন কিছু দিতে পারছিনা বলে যে কোম্পানিতে ৬ বছর চাকরি করলাম সে কোম্পানি থেকেই আমাকে বরখাস্ত করলো। আর এই অবস্থাতে নতুন কোন কোম্পানি আমাকে নিবে! জানো তন্নি সবাই স্বার্থ খুঁজে।
দুনিয়ায় স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো পাশে দাঁড়ায় না।
তুমি একটা কাজ করো-
তন্নি তার গহনাগুলো বের করে দেয়।
শিমুল- তন্নির কিছু সোনার গহনা ছিলো তা বিক্রি করে বাসা ভাড়া,দেনাপাওনা পরিশোধ করে। বাড়িওয়ালা শিমুলকে ওয়ানিং দেয় আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাসা ছেড়ে দিতে। তার এক আত্নীয় তাদের বাসায় উঠবে। শিমুলের কাছে তো কোনো টাকাও নেই যা দিয়ে সে অন্য বাসায় উঠবে। মালামাল সবকিছু নিয়ে তৈরি হয় শিমুল। চলে যাবে নিজের গ্রামে। সব মালামাল গুছিয়ে ট্রাকে তুলছে। এই সময় স্নেহা এসে বলে।
- বাবা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
- মা আমরা দেশের বাড়ি চলে যাচ্ছি।
- বাবা আমার স্কুল খুলবে তো। আমাকে স্কুলে যেতে হবে। ভালো করে পড়াশুনা করতে হবে। আমি ডাক্তার হবো।
- জ্বী মা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে তোমাকে আমি গ্রামের বড় স্কুলে ভর্তি করে দিবো।
শিমুল ভাবছে-
আমাদের স্বপ্নগুলোতে মাঝেমধ্যে মেঘের মত আশঙ্কা উড়ে আসে।
খানিক বৃষ্টি হয়।
তারপর আর হয় না।
আমরা মেঘ হয়ে উড়ে যায় অন্য পাহাড়ের গায়ে।
শুধু আমাদের স্বপ্নগুলো একা পড়ে থাকে। কোনোদিন পূর্ণতা পায় না।
এই পৃথিবীতে দুই শ্রেনীর মানুষ আছে। প্রথম শ্রেনীর মানুষদেরকে সবাই ভালোবাসে খুব। মানুষের ভালোবাসা পাবার জন্যেই এদের জন্ম। সামান্য ব্যাথায়ও এই মানুষগুলো কাতর হয়ে পড়ে। কারনে,অকারনে চোখ ঝাপসা করে। অন্যদের কষ্ট দিয়ে হলেও নিজেরটা ঠিক ঠিক আদায় করে নেওয়াই এদের কাজ। এই শ্রেনীর মানুষগুলোকে খুশি করবার জন্যেই অন্যরা নিজেদের জীবনটা না জেনেই নিলামে তোলে!
আর দ্বিতীয় শ্রেনীর মানুষদের নিয়ে বলার কিছু নেই। শুধু বলি, অকারনে তারা কখনও ঝাপসা করেনা চোখ। যেমন আমি এই শিমুল। আমার চোখের জল দেখার সময়ও কারোর নেই। এমনকি তাদের নিজেদেরও নয়! প্রথম শ্রেনীর মানুষগুলোকে খুশি করতে গিয়ে এরা নিজেদের জন্যে সময়ই বের করতে পারেনা ! ভালোবাসার খোঁজে অপচয় হয় এক একটা জীবন। আহারে! আফসোস!
কত স্বপ্ন নিয়ে নারীর টান ছেড়ে আমি এই শহরে এসেছিলাম। আজ সব স্বপ্নের বলিদান দিয়ে এই শহর ছেড়ে আবার চলে যাচ্ছি। হয়তো, আবার কোনোদিন আসবো এই শহরে নতুন কোনো স্বপ্ন বুনতে। পারবো কি সেদিন স্বপ্ন বুনতে?
মনে হয় পারবো না!
কারন-
আমার আকাশে ওরে না ফানুশ,
আমি যে স্বপ্ন পোড়ানো মানুষ।
সাধ আছে যার, সাধ্য নেই -
এই জ্বালার যে শেষ নেই;
যার জীবন হয় এমন কষ্টটা বুঝে সে।
লেখকঃ তাসফীর ইসলাম (ইমরান)
অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীঃ -
বাসাই - রামমালা, কুমিল্লা
বিভাগঃ সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং
(১০৪ তম ব্যাচ)
বর্তমান ঠিকানাঃ রামমালা,কুমিল্লা
নিজ জেলাঃ পটুয়াখালী
বিভাগঃ বরিশাল
দেশঃ বাংলাদেশ
যোগাযোগঃ
01779514534 imran187619@gmail.com
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন