প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

হারিয়ে গেলেন জীবনানন্দ দাশ
এই দেখুন, বলতে ভুলে গেছি। কাল সন্ধ্যায় রাসবিহারী
মোড় থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত হেঁটে আসছিলাম।
আমার সঙ্গী কে ছিল জানেন? ওই যে--
'চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা'।
ম্লান মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাসবিহারী মোড়ে কল্যাণদার বুকস্টলের এক কোণে ; ভাসা ভাসা চোখে দেখছিলেন
পত্র-পত্রিকা, পুরনো বই, নতুন বই, অক্ষরের সজ্জাবিন্যাস--
করোনা-আক্রান্ত দিন কেমন ফাঁকা ফাঁকা, নিজের মধ্যে
নিজে মুখ গুঁজে নিঃসাড়ে আছে ;আমি পায়ে পায়ে পাশে
গিয়ে দাঁড়াই, নিঃশব্দে। তিনি দেখছেন, তিনি দেখছেন না।
তবু যেন বড়ই অস্থির। রামকৃষ্ণের ভাবসমাধি হত ; আর
এই কবি কি ভাব-সমাহিত। একটা পত্রিকা হাতে নিলেন,
অন্য হাতে আমাকে খামচে ধরলেন। 'দেখ, দেখ ! আমার
নামে পত্রিকা ! আমার নামে ! আমি তো দূরতর দ্বীপ !
ঘাড়ভাঙা মেঠো ইঁদুর ! শিশিরের জল ! লাশকাটা ঘরে
শুয়ে আছি টেবিলের পরে ! চল চল, তোমাকে পার্কে নিয়ে
যাবো। সবুজ ঘাস, নীলাভ অন্ধকার, রুপোলি জ্যোৎস্না
আর অনন্ত নক্ষত্রবীথি… দেখাব তোমাকে, দেখবো…
আমি এক মর্বিড আত্মমগ্ন চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে তাঁর
পাশেপাশে হাঁটতে লাগলাম। মাদকের মত একটা ঘোর।
রবীন্দ্র-পরবর্তীর সবচাইতে উজ্জ্বল নতুন এই নক্ষত্র
আমার স্পর্শে, আমার পাশে। আমার সমস্ত অনুভূতি
জুড়ে একটা ট্রামের ঘন্টাধ্বনি বেজে উঠলো, একটা
অবরুদ্ধ যন্ত্রণা…আলোকিত উদ্ভাস নয়, রহস্যময় সন্ধ্যা...
নক্ষত্রের গান শুরু হবে একটু পরে।
তিমির বিনাশী হাওয়া নীল পৃথিবীকে ঘিরে ধরবে।
আর ঠিক তখনই আচম্বিতে আমার হাত ছেড়ে
ট্রামলাইন পেরিয়ে ময়লা পোশাক পরা ম্লানমুখ
আমাদের কবি জীবনানন্দ দাশ,
আবছা কুয়াশার অনন্ত মায়াময়তার মধ্যে হারিয়ে গেলেন…
রবীন বসু
১৮৯/৯, কসবা রোড, কলকাতা-৭০০০৪২
ফোন: ৯৪৩৩৫৫২৪২১ হোয়াটসঅ্যাপ: ৮০১৭১৩৫৪৮৫
e-mail : rabindranathbasu616@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন