Featured Post
গল্প ।। শ্রাবনী রায় ।।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
তৃষা সার্থক
প্রথম পর্ব
আমি যামিনী তুমি শশী হে
ভাতিছ গগণও মাঝে...
মম সরসীতে তব উজল প্রভা
বিম্বিত যেন লাজে .........
গান-টা দুরে কোথা থেকে সুমধুর কণ্ঠে ভেসে আসছে , তৃষা আর ওর বান্ধবীরা ঠিক বুঝতে পারছে না । ওরা চারিদিক তাকাচ্ছে আসে পাশে, উপর দিকেও , অথচ কাছাকাছি কেউ নেই যার গান এত স্পষ্ট শোনা যায় । কলেজের মেইন বিল্ডিং-এ যাবার রাস্তাটায় কামিনী ফুল গাছের করিডোরের ফাঁকফোকর দিয়ে উপর দিকে তাকালে এক-আধ টুকরো আকাশের আসে পাশে দেখা যায় কলনিয়াল স্থাপত্যের অট্টালিকা , তারই বিশালাকার জানলার থেকে মুখ বাড়িয়ে একগাল হাসি নিয়ে কলেজের একনম্বর গায়ক সার্থক-দা গান গাইছে । তৃষার বান্ধবীরা সবাই জানে কার জন্য গানটা গাওয়া হয়েছে । সবাই খুব মজা পেয়েছে ব্যাপারটায় , সবাই হাসছে …। তৃষাও না হেসে পারল না । এক ঝলক হেসে ফেলেই মাথা নামিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল । সার্থকদাকে নিয়ে তৃষার বান্ধবীরা এখন আর মস্করা করে না তৃষার সাথে । ওরা জেনে গেছে যে তৃষার কোনো আগ্রহ নেই এই বিষয়ে । কিন্তু এই সার্থকদা-টা হার মানে না , কিছুতেই পিছু ছাড়ে না । প্রায় সময়েই এরকম যেমন তেমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসে । বন্ধু-বান্ধব, প্রফেসর, লোক-লৌকিকতা কিছুই দেখে না । খুব অস্বস্তিতে পরে যায় প্রথম-বর্ষীয়া তৃষা । ও এখনও কলেজর পরিবেশ পুরপুরি বুঝে উঠতে পারেনি । তাই ও বুঝতেই পারে না যে, কেউ-ই বুঝতে পারছে না বা বোঝার চেষ্টাও করছে না যে , কে ? কখন ? কেন ? কার জন্য ? গান গাইছে বা কোনও অপ্রয়োজনীয় কাণ্ড ঘটাচ্ছে । কারোর এতো সময় নেই যে সেটা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসবে । দুর থেকে সার্থককে দেখতে পেলেই তৃষা পালাবার পথ খুঁজতে থাকে , তাতে ফল বিশেষ কিছু হয় না । ওই মাথা নামিয়ে , ভিড় খুঁজে তার মধ্যে দিয়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে । আর এইসব ব্যর্থ চেষ্টাগুলো সার্থক তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে । কখনও হাঁটার গতি মন্থর করে , কখনো কারোর সাথে কথা বলতে দাঁড়িয়ে পরার বাহানায় আবার কখনো ভীষণ স্টাইলের ভঙ্গিতে তৃষার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসি -হাসি মুখে এগিয়ে যায় ।
কিছুদিন আগেই তৃষা এক সিনিয়র দিদির থেকে জানতে পেরেছে যে সার্থক নাকি প্রতি বছরই প্রথম বর্ষের মেয়েদের দেখে গান গায় । কিছুটা অত্যুক্তি হলেও বলতে সে দ্বিধাবোধ করেনি । সেই কথা শুনেই তৃষা আর নরম হয় না । কোনরকম ভুল সিগনাল দিতে চায় না সে । তৃষা খুব ভাল করে জানে কলেজটা পড়াশুনোর জায়গা , পরবে আর পরা শেষ হলে বাড়ি ফিরবে, ওর ঠাকুরদা যে কথা বলে ওকে কলেজ পাঠিয়েছিল , সে কথা এতো তাড়াতাড়ি ভোলার মেয়ে তৃষা নয় । পায়ের তলার মাটি তাকে শক্ত করতে হবে । দাঁড়াতেই হবে তাকে জীবনে , তাই সময়টা-কে হেলায় হারাতে চায় না সে । সেই সামর্থ্যও তার নেই । ঠাকুরদার কথা অমান্য করার সাহস বা মনোভাব কোনটাই রাখে না সে ।
তবে তৃষা একেবারে উদাসীনও হতে পারছে না এইব্যাপারএ সারাক্ষণই দেখা হয় আর কিছু না কিছু করতেই থাকে সার্থক । ভিড় চাট স্টলে একেবারে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ানো , কোনও একদিন ওর ছুটির পর , বাড়ি চলে যেতে যেতে হঠাৎ তৃষা-কে দেখে সামনে এসে সঙ্গে থাকা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে গলা চরিয়ে , "না যাব না এখন , ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না " বলে দাঁড়িয়ে পরা , থেকে শুরু করে তৃষার ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ঢুঁ মারা , কিছু না শুধু একঝলক দেখেই চলে যাওয়া । আর কিছু করার না থাকলে , তৃষাকে দেখতে পেলে সার্থকের বন্ধুরা সবাই মিলে মাঝে মাঝে এমন ছেলেমানুষি করে নিজেদের মধ্যে , যে তৃষা একবারে হতভম্ব , ওর মজা পাওয়া উচিত না , অস্বস্তিতে পরা উচিত তা বুঝে উঠতে পারে না ।
সত্যি বলতে কি সার্থক ভাল গান গায় , কলেজের হয়ে ক্রিকেট খেলে , প্রায় সবাই সার্থকের বন্ধু । ঈর্শনীয় ডিপার্টমেন্টের ছাত্র আর দেখতেও খুবই সুপুরুষ । শান্ত , বুদ্ধিদীপ্ত , আকর্ষণীয় , ওর প্রতি বেশিদিন উদাসীন হওয়াও কঠিন । সেই সার্থক কলেজর এতো মেয়ে থাকতে তৃষার পিছনে সময় নষ্ট করছে কেন ? ও যেমন ছেলে কলেজর যে কোন মেয়েই ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবে । তাহলে তৃষা কেন ?
এরই মধ্যে একটা নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে । তৃষার মোবাইল এ প্রতিদিন ভাল ভাল রোমান্টিক শায়ারি আসছে । অচেনা একটা নম্বর থেকে , এতো সুন্দর লেখা কে রোজ রোজ টাইপ করে করে পাঠায় ওকে …? বন্ধুরা বলেছে এতো চিন্তার কিছু নেই , সোজা একটা ফোন করে জেনে নিতে কে মেসেজ পোস্ট করছে । কিন্তু তৃষা কোনদিনই তাতে বিশ্বাসী নয় , নিজে কল করে আপনি কে বলছেন ? প্রশ্ন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না সে । যার দরকার সে নিজেই ফোন করবে । ও কেন ফোন করতে যাবে ? গলা বাড়িয়ে বলতে যাওয়া যে , কে আপনি ? কেন এতোদিন ফোন করছেন না আমাকে ? আমাকে ফোন করুন দয়া করে । এঁর মানে তো তাই...। আপনার প্রতি আমি খুব কৌতূহলী … এটাই তো বোঝায় । না , তৃষা তা পারবে না , যা হবে দেখা যাবে I
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন