রামচরণ ভাবলো দুধ যখন নেওয়াই হয়ে গেছে তখন আরেকটু পরে ঘরে গেলেও হবে। ওত তাড়া নেই। যদিও ক্ষেত্রমনি মাঠ থেকে আসার পর পেছনে লেগে লেগে রামচরনকে পাঠিয়েছে। বিধু গয়লানির থেকে দুধ আনার জন্য। কি তিথি পরব আছে কে জানে। ঠাকুরকে ভোগ নিবেদন করবে। রামচরন বউয়ের এই স্বভাবটা একেবারেই পছন্দ করে না।' উঠল বাই তো কটক যাই।' তা সে বেলাবেলি সূর্য ডোবার বেশ আগেই রামচরণকে পাঠিয়েছিল। কাল বিজুর জন্মদিন। নিজের ছেলেপুলে নেই বিজুকে নিজের ছেলের মত ভালবাসে ক্ষেত্রমনি। আখায় আগুন দিয়ে আগেভাগে পায়েসটা করে রাখবে। তারপর অন্য কিছু চাপাবে। বিধু এ পাড়ায় দুধ দিতে দুপুর গড়িয়ে দেবে। তা ছাড়া এ পাড়ায় দুধ খাওয়ার মত লোক আছে নাকি। অত বাজে পয়সা কার আছে। যদি কেউ নেয় তাহলে বিধুকে আগেভাগে খবর দিতে হয়। তার থেকে দুধটা এনে রাখলে একেবারে নিশ্চিন্দি। রামচরণ ধলাখালির মাঠটা পেরিয়ে বাঁশ ঝাড় পাশে রেখে বিধু গয়লানির কাছে গেল। গল্প, গুজব করে দুধ নিয়ে বেরতে বেরতে প্রায় সন্ধে। এদিকে অন্ধকারে রামচরন ভালো দেখে না। কি যে পায়ে কামড়ালো ঠাহর করতে পারল না। খুব জ্বলতে শুরু করল ধীরে ধীরে পা টা অবশ হচ্ছে। রামচরন জোরে পা চালায়। এক্ষুনি ওঝার কাছে যেতে হবে। ওঝার কাছে যেতে যেতেই শরীরটা বেশ ভালো লাগে। জ্বালা, যন্ত্রনা আর নেই। ভাবে কোনো বিষাক্ত পোকা কেটেছিল বোধহয়। জীবনকা`র চায়ের দোকানে রাজা উজির মেরে ফেরে কিন্তু কেউই ওর কথায় কোনো সায় দেয় না ফুট কাটে না। রামচরন ওদের আলোচনায় মাথা নাড়ল, যথাসাধ্য জ্ঞান বিতরণ করল। তবুও।
ফিরে যাওয়ার দুধের কৌটো বউয়ের হাতে দিতে যায় কিন্তু বউ খুব কাঁদছে। বাড়িতে ঢোকার মুখেও দেখেছে অনেক লোক ভেতরে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে। আর একটু কাছে যেতেই দেখে ও ওতো রামচরন তা শুয়ে কেন। সে তো দিব্বি হাঁটাচলা করছে
দেবা, দিনু সবার চোখ ছলছল ওদের অনেক ডাকল রামচরন। গায়ে হাতও দিলো কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি টের পেল না। হাতে দুধের কৌটো নেই দেখে আবার জীবনকার চায়ের দোকান বাব্বা যেতে এক মিনিটও লাগল না। রামচরন কি ডানা লাগিয়েছে। দুধের কৌটো যেমনকার তেমনি পরে আছে। ফিরে এসে শোয়ানো মানুষটাকে কতবার নাড়াতে চেষ্টা করল। কিন্তু রামচরনের দেহ নিথর হয়েই রইল। ও ভাবল তাহলে নাক, কান যে কোনো একটা ফুটো দিয়ে সুরুত করে ঢুকে যাই। হালকা তো হয়েই গেছি। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তা করতে পারল না। ক্ষেত্রমনি আছাড়ি পিছাড়ি করে কেঁদে চলেছে। শেষ পর্যন্ত শরীরটা কাঁধে করে লোকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রামচরন ওর দেহের সঙ্গে সঙ্গেই চলেছে..
রোজ রামচরন ওর বাড়ি থেকে সন্ধে বেলায় দেহের সাথে রওনা দেয়---
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন