Featured Post
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আমাদের কর্তব্য ।। আবদুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
পৃথিবীর জীবজগতের সব থেকে সেরা ফসল মানুষ। সেই মানুষ প্রকৃতির খামখেয়ালী পনার কাছে আত্মসমর্পণ করেনি কোনো দিন । মানুষেরা তার উর্বর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। প্রকৃতির খামখেয়ালী পনাকে পায়ের ভৃত্য করে, নিত্যনতুন সমাধান বের করে নিজের অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রেখেছে ।
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছে অবিরাম। যুগেযুগে প্রকৃতি ফুঁসে উঠেছিল মানুষের অনৈতিক এবং অশ্লীলতার বিরুদ্ধে। মানুষেরা ভুলে যেতে বসেছিল স্রষ্টা কে । নিজের খায়খেয়ালিপনা কে এতো বেশি গুরুত্ব দিয়ে ছিল যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কে হেয় প্রতিপন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে । মহান সৃষ্টিকর্তার দূতকে অস্বীকার করেছে বারবার। অস্বীকার করে নিজেদের কেই মহান সৃষ্টিকর্তা রুপে জাহির করেছে।এর যারা বিরোধিতা করেছে তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে । অমানবিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, মানুষ যখন অসহায় হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে তখন মহান সৃষ্টিকর্তার আজব সব বিপর্যয় নামিয়ে আনেন পৃথিবীতে। যেমন মূসা নবীর আমলে ফেরাউন কে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল সমুদ্রে ,নূহু নবীর আমলে মহাপ্লাবন হয়েছিল। আরও অনেক অজানা অজানা অসুখের দ্বারা অত্যাচারীত পীড়িত মানুষদের রক্ষা করেছে মহান সৃষ্টিকর্তা । জালিম রাজাকে, জালিম জনগোষ্ঠী কে ধ্বংস করে দিয়েছে ।
নির্বিচারে মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নষ্ট করে দিয়েছে সাধের অরণ্য। ইঁট, কাঠ,পাথর ,আর কলকারখানার ধোঁয়ায় পৃথিবীকে দূষিত করেছে । তার জেরে পৃথিবীতে বারবার নেমে এসেছে প্লাবন ,দাবানল, মহামারী।
সৃজনশীল মানুষ প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে নিত্য নতুন সমাধান বের করে নিজেদের অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রেখেছে। তবু মহামারী হানা দিয়েছে বারবার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক রোগে প্রায় দুকোটির মতো লোক মারা গিয়েছিল। স্ংক্রমন ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল মানুষ, বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্ভব হয়েছিল ভ্যাকসিন তৈরি। কোটি কোটি মানুষ রক্ষা পেয়েছিল সেদিন । তখন মানুষ মনে করে ছিল এই বুঝি বিশ্বজুড়ে মহামারীর দিন শেষ।
সাম্প্রতিক কালে ১৯৮১ত নতুন একটি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।যাতে মানুষের টীকে থাকা সংকটজনক হয়ে ওঠে। যার নাম এইডস। বৈজ্ঞানিক নাম "একোয়ার্ড ইউমেনো ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম"। প্রধানত অশ্লীল জীবন যাপন, অবাধ যৌনাচার অঞ্চলে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।অত্যাধিক মদ্যপান , অসংযত যৌনতা,অবাধ মিলন যে এই রোগের প্রধান কারণ তারা বুঝতে পারেন।
কয়েক লক্ষ লোক হয়েছে এই ব্যাধির স্বীকার। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল এইব্যাধি ।১৯৮৪ সালে একদল বিজ্ঞানী অক্লান্ত পরিশ্রমে ধরতে পেরেছিলেন "হিউম্যান,ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি"নামক এক ভাইরাস এই রোগের মূল কারণ। যার পোশাকি নাম এইচ আইভি । সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল এই ব্যাধি।মানব সভ্যতা পড়ে গেছিলো হুমকি র মুখে।অবাধ যৌনাচার এই রোগের মূল কারণ।
অত্যাধিক অশ্লীল জীবন যাপন , অখাদ্য কুখাদ্য পশুপাখি ভক্ষণ করার জন্য নেমে এসেছে প্লেগ, এইডস ,কলেরা ,বসন্ত ,ম্যালেরিয়ার মতো মারন অসুখ ।যা পৃথিবীতে গ্রাম থেকে শহর উজাড় হয়ে গেছে ।
স্রষ্টা মানুষের অবৈধ, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।।
সতর্কবার্তা শুনিয়ে ছেলে। মাত্রাতিরিক্ত বেপরোয়াকে লাগাম দেওয়ার জন্য এনেছে মহামারী। গ্রাম, শহর উজাড় করে দিয়েছে।
বিজ্ঞান আবার প্রকৃতির এই ভয়াবহতা কে থামতে সক্ষম হয়েছে কিছু শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রচেষ্টায়।
২০২০সালে পৃথিবীর মানুষের যোথেচ্চোপণা, রাহাজানি , ধর্ষণ লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকৃতির খামখেয়ালীপনার আজ আমরা স্বীকার । অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে অভাগা নিপিড়িত জনগণ। তারা ফলস্বরূপ পৃথিবী দেখলো নতুন মহামারী। নাম করোনা। পৃথিবীর এটি নবিনতম মহামারীর নাম কোবিধ_ ১৯ ।আহা কি সুন্দর নাম। এই নামে র ভিতরেই লুকানো আছে তার মর্মস্পর্শী আবেদন। এটি এমন এক মৃতজীবি ভাইরাস ।যা জীবন্ত শরীরে প্রবেশ করে এবং তার বিস্তার ঘটায়। এই ভাইরাস স্তন্যপায়ী ও পাখিদের আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে এই করোনা ভাইরাস প্রথমে শ্বাস নালীতে সংক্রমণ ঘটায়। তারপর ফুসফুস এর অক্সিজেন বাহী সকল কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
করোনা শব্দ টি ল্যাটিন ভাষার করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে। করোনা মানে মুকুট। দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন। অনুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসের কাঁটাগুলো দেখতে লাগে গদার মতো। গদা আকৃতির কণাগুলোকে মুকুট বা সৌরকরনার মতো দেখতে লাগে। ভাইরাসটিপ্রটিন সমৃদ্ধ।যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা অঙ্গস্ংস্থান করে ।এটি প্রথমে টিস্যুগুলোকে আক্রান্ত করে নাজেহাল করে দেয়। ভাইরাস টি ডাইমরফিজম রূপে প্রকাশিত হয়।এটি তিন থেকে সাতদিন এর মাথায় প্রকাশ্যে আসে। দ্রুত গতিতে হাঁচি কাশি দ্বারা এবং সংস্পর্শে র মাধ্যমে অপরকে সংক্রমিত করে।
মাত্র তিন মাসের মাথায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে হু হু করে। যেহেতু এই ভাইরাস টি নতুন তাই এর চিকিৎসার ঔষধ পত্র মানুষের হাতে আসেনি। এই সুযোগে সারা বিশ্বে তান্ডব চালাচ্ছে এই নিন মহামারী টি । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হিমসিম খাচ্ছে এর গতি প্রকৃতি উদ্ভাবনে। মধ্যচীনের ইউহান প্রদেশে এর উৎপত্তি ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯।
চিকিৎসা বিজ্ঞান ও থেমে নেই।অদম্য সাহসের সাথে একে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন একদল শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। চিরকাল মানুষ প্রকৃতির নৃশংসতা কে হার মানিয়েছে,আজও তাকে হার মানাবে এই আমাদের বিশ্বাস। সবচেয়ে মানুষ আশংকা করছে "রেসিডেন্ট ইভিল" সিনেমা দেখার পর।আর এটা কি সেই মনুষ্যসৃষ্ট ভাইরাস ।যা ইচ্ছাকৃত ভাবে যুদ্ধাস্ত্রের মতো অন্য দেশের উপর প্রয়োগ করা যায়। তবে কি মানুষ দিন গুনছে একটা জীবাণু যুদ্ধের।
তথাকথিত আধুনিক এবং উন্নত দেশের শিরোপা যাদের মাথায় তাদের দেশে বেশি করে চালাচ্ছে মৃত্যুর বিভিষীকা। ইতালি, আমেরিকা ,স্পেন ,চীন, তুরস্কের পথে পথে আজ মৃত্যুর মিছিল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে তারা। দিশেহারা হয়ে পড়ছে বিজ্ঞানী দল ।তবে এটুকু তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে আক্রান্ত শরীরের থেকে দূরে থাকা, তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। বারবার হাতমুখ ধোয়া।হাত দিয়ে বারবার নাক মুখ স্পর্শ না করা । ঘরে বসে বেশীরভাগ সময় কাটানোর চেষ্টা করা।বাড়ির বাইরে গেলে মুখোশ হ্যান্ডগ্লাব্স পড়া , বেশি বেশি করে স্যানিটারাইজড ব্যাবহার করা। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলা। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। এগুলো মেনে চললে অনেক টা রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
বিশ্ব জুড়ে করোনা অতমারির রূপ নিয়েছে।এই অবস্থায় সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অর্থনীতি বিদগণ বলেছেন ১৯৩০সালে একবার এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল পৃথিবী। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন আবার হলো ২০২০সাল। একশো বৎসর পার করতে পারেনি উন্নয়ন কামী পৃথিবী। আবারও মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে পৃথিবী । পৃথিবী যেন সভ্যমানুষের অনাচার আর সহ্য করতে পারছিলো না। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে,মানে পরিবেশ কে বাঁচিয়ে রাখতে রুদ্র মূর্তি ধারণ করেছে আজ। থমকে দিয়েছে পৃথিবীর ঔধত্যপণাকে। পৃথিবীর আনাচে কানাচে যতো অনাচার , হাহাকার, আকাশ বাতাস কাঁপানো ধ্বনি উঠেছিল সব যেন আজ নিশ্চূপ।টুঁ শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে না। পৃথিবীর অমোঘ শান্তির বাণী, শ্বাশ্বত নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে।কমে গেছে দূষণ। পৃথিবী যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
আগামী দিনগুলো আমাদের ভালো কাটুক। সারা পৃথিবীর মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক।শোষণ, পীড়ন মুক্ত পৃথিবী ফিরে আসুক।বিভেদকামী মানুষের পরাজয় নিশ্চিত হোক। এক সুন্দর পৃথিবী আমরা যেন রেখে যেতে পারি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সুকান্তের কথায়----
"এসেছে নতুন শিশু, তাকে
ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ,মৃত
আর ধ্বংসের পিঠে।
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব _তবু আজ
যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণ পণে পৃথিবীর সরাব
জঞ্জাল
এ বিশ্বকে,এশিশুর
বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ
আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন
শিশু কে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।"
###
আবদুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন