Featured Post
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মগরাহাট এলাকার কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্.ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মগরাহাট থানা এলাকার স্থানীয় কথ্য শব্দ, শব্দের উচ্চারণ, বাগ্.ধারা ইত্যাদির কিছু সংগ্রহ ২০১৬ সালে রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকার বিশেষ ভাষা সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল যা পরে নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে (সুচেতনা, ৪ পৌষ ১৪২৩) যায়। ক্রমশ ব্যবহার-কমে-আসা এইসব শব্দ, পরিভাষা ইত্যাদির এখানে রইল আরও কিছু সংগ্রহ। দৃষ্টান্তগুলি একটু বেশি পুরোনো গ্রামীণ উচ্চারণে দেওয়া হল মূলত ধরে রাখার জন্যে। এখন আমরা সবাই সমস্তটা এত আগের উচ্চারণে বলি না – বিশেষত ক্রিয়াপদ, তবে বাগ্্ধারা, পরিভাষা জাতীয় শব্দগুলো এখনও অনেকখানি বর্তমান। আমাদের উত্তরপ্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নানা কারণে এমন সব উচ্চারণের থেকে ক্রমশ দূরবর্তী হয়ে পড়ছে অনিবার্যভাবেই। আমরা নিজেরাই তো তাদের সঙ্গে আমাদের শিশুবেলার উচ্চারণে কথা বলি না, মান্য চলিত বাংলাই (মাচবা) মেনে নিয়েছি। কিন্তু ধরে রাখার দায় তো থাকেই – ওই বিপুল উচ্চারণ ও অর্থবৈচিত্র্য, সর্বোপরি চিত্রযোগ! তাই মিশ্র উচ্চারণ এড়িয়ে, একই ধরনে রাখার চেষ্টা এ অনেকখানি বাপ-পিতেমো, মা-ঠাগ্.মাদের উচ্চারণ যে!
এ-জেলার একাধিক লেখকই এসব ধরে রেখেছেন বা রাখছেনও তাঁদের সাহিত্য বা সংগ্রহের মাধ্যমে। আমার ক্ষুদ্র প্রয়াসটিও তার সামিল হোক।
কোনও কোনও শব্দ সরাসরি উচ্চারণানুগ বানানে না লিখে আলাদা করে উচ্চারণ লেখা হয়েছে মূলত পরবর্তীকালে যাতে শব্দের উৎস থেকে আমরা বহুদূরে নিক্ষিপ্ত না হয়ে পড়ি সেই কারণে। আমি ভাষাবিজ্ঞানী বা ভাষা-গবেষক নই। আজন্ম গ্রামীণ কথ্যভাষারই একজন হিসাবে, কোন সব অমোঘ টানে কোনও একসময় না টুকতে শুরু করে থাকতে পারিনি। সে সংগ্রহ-প্রচেষ্টা কোমরবেঁধে নয়; যখন যা মনে এসেছে বা বাড়ি ও বাড়ির বাইরে পথেঘাটে, আত্মীয়স্বজনের মুখে শোনা থেকে খুব ধীরগতিতে বছরের পর বছর ধরে চলেছে তা।
এটা মনে হয় যে, সমস্ত শব্দেরই কোনো সুদূর উৎসমূল হয় না সবসময়। এমন অনেক শব্দ তো থাকেই যাদের বয়সের মোটামুটি একটা হিসাব থাকার কথা, আমরা তার সবটার ঠিকমতো হিসাব রাখতে পারি না সেটা আলাদা ব্যাপার। কাজটা সহজ তো নয়। গ্রামীণ সমাজে পরিবর্তনশীলতার মধ্যেও যেমন তার কর্মসংস্কৃতির একটা আবহমান রূপ থাকে, ভাষার বলয়েও তেমনই নব নব শব্দ, বাক্্ভঙ্গি ইত্যাদির আগমন যেমন ঘটে, বহু দূরবর্তী কত সব শব্দ, বাক্্ভঙ্গি আদি থেকে যায় মর্যাদার আসনে – রূপে-রূপান্তরে। আমাদের অজ্ঞতায় উৎস থেকে তাদের যাত্রাপথ অনেকসময় বিশদভাবে বুঝে উঠতে পারি না এই যা। প্রকৃত অভিধান তাই চিরচলমান, কে কবে তা লিখবেন বা তাঁর লিখিত অভিধানের কোন বা কেমন সংস্করণ করবেন সে অন্য প্রশ্ন। লোকে, বিশেষত গ্রামের লোক তাদের কথাবার্তায় অনেকসময় তাৎক্ষণিক এমন কোনও কোনও শব্দ ব্যবহার করে বসে, পণ্ডিতেরা হয়তো যার উৎস নির্ধারণে মাথাকুটে মরবেন। অথচ এমন শব্দের পারস্পরিক পৌনঃপুনিক উচ্চারণ একসময় তাদেরকে ব্যবহারের বলয়ে নিয়ে আসতে পারে। অর্থাৎ তার মোটামুটি একটা বয়স শুরু হয়ে যায়। অভিধানকাররা একসময় তাদের স্বীকার করতে বাধ্য হন। মান্য চলিতের অভিধান স্থানীয় কথ্য শব্দ এড়িয়ে চললেও, কোনও এলাকার আঞ্চলিক শব্দের অভিধান তা এড়াতে পারে না, যদিও তেমন সমৃদ্ধ অভিধান অত্যন্ত অপ্রতুল। নতুন শব্দ যেমন ব্যবহারে আসে, ব্যবহারের বৃত্ত থেকে ধীরে ধীরে বিলয়ও ঘটে কত শব্দের! শাসকের ভাষানীতিও দেশ ও দশের উপর প্রভাব বিস্তার করে ভাষা-ব্যবহারে। তবে দরবার বা দপ্তরের ভাষা বেবাক পালটে গেলেও, লোকসমাজের ভাষা সহজে তার খোলনলচে পালটে ফেলে না।
পূর্বোক্ত প্রকাশিত লেখায় একটু বিশদে বলা হয়েছে বলে এখানে ভূমিকা বাড়ালাম না, সরাসরি সংগ্রহে চলে আসছি। কোনো ভুলভ্রান্তি নজরে এলে, দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভালো লাগবে। তাতে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।
অংশ বংশ ধ্বংস – ভাগাভাগিই বংশকে শেষ করে।
অনটাইম – অবেলা, সাধারণত দুপুর পেরিয়ে গেলে বলা হয়। অর্থে ইংরেজি অন টাইম-এর বিপরীতই।
অখেজে/অখেজো – অকেজো। তিরস্কার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
অদ্গুনো – অতগুলো। অতগুলো অদ্গুলো হয়ে অদ্গুনো।
অব্যুশি – অবশ্যই। কাল সোকালে ঝেন অতি-অব্যুশি যায়। সোকালে (সকালে) আমাদের প্রতিবেশী মুসলমানদের উচ্চারণ।
অসমকাল – অসময় কাল, মূলত বয়সকাল। তোমার তেবু ছাবালপোন আচে, আমার অসমকালে কে দেগবে বলো!
অ্যায়ছেল ও আসেই নে – এসেছিল ও আসেইনি-র উচ্চারণ। প্রশ্ন – তোর বর অ্যায়ছেল ন্যায়? উত্তর – ও আসেই নে।
আইবি তো – আসবি তো।
আঁড়ির ভাতার – আঁড়ি রাঁড়ি-র উচ্চারণ। রাঁড়ির ভর্তা। অল্পবয়সি ছেলেদেরকে তাদের মায়েদের আকছার-দেওয়া আদুরে গালি। অর্থাৎ কত রাঁড়ির ভাতার ছিল তখন সমাজে!
আগইস/রাগরিস – রাগ ইত্যাদি। এট্টুও আগইস নি লোকটার।
আগা/আগালে কাটানো – ঝাড়ার সময় কুলোর মুখে চালের থেকে অতি ক্ষুদ্র শস্যকণা কাটানো বা আলাদা করা। সাধারণত খুদের থেকেও খুব ছোট ছোট যা সচরাচর হাঁস-মুরগিকে খেতে দেওয়া হত। এখন এসব পোষাও কমে গেছে আর রেশনের গোটা গোটা চালগমও দিব্যি খাচ্ছে।
আগাস ঝুলে থাকা – প্রচণ্ড মেঘ – বৃষ্টি আসে-আসে ভাব।
আঙ্গল-পাঙ্গল করা (উ. আঙ্গোল-পাঙ্গোল) – আগলানো-পাগলানো। ঝে জিনিস তোর নয়, তুই ঝেতই আঙ্গোল-পাঙ্গোল করিস, তোর হবে রে! (উচ্চারণ ঝ্যাতোই – যতই)
আচকাআচকি – শত্রুতা, পরস্পরে ঝগড়াঝাটি বা বৈরিতা।
আড়া কাজ বাড়া – প্রায়-হয়ে-আসা কাজ আবার বাড়িয়ে দেওয়া, খানিকটা কেঁচে গণ্ডূষ করা।
আনত/আনতো/আনাতো – আর নয়তো। তুই যদি আসতি পারিস, দেক আনতো আমার যেতি হবে।
আনাড়িকোনাড়ি – উলটোপালটা। সারাটা দিন তোর কেবল আনাড়িকোনাড়ি!
আবজানা-কুবজানা/কোবজানা – নোংরা-আবর্জনা। ওটোনে নোকে এরম আবজানা-কোবজানা করে আকে!
আমড়া খাই-টক খাই করা – অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে কী বলবে ভেবে না পাওয়া অবস্থা।
আরুন-দারুণ – স্বাস্থ্যবান, দশাসই, তরুণ-যুবক। শোক হবেনে, আরুন-দারুণ ছাবালটা ওরম হুটুক্কারে কেঁইদে চলে গেল! (হুটুক্কারে – হঠাৎ করে)।
আলমা আলমা কথা – অস্পষ্ট উচ্চারণ, কিছুটা বোঝা যায় কিছুটা যায় না এমন উচ্চারণ, ভাঙা ভাঙা কথা।
আলোসতর – আতপচাল ভিজিয়ে গুঁড়ো করে, ডাবের জল, কলা, নলেন গুড় ইত্যাদি সহযোগে তৈরি থকথকে সুস্বাদ খাবার। পৌষসংক্রান্তি ইত্যাদির দিন পুজোর সময় করা হয়।
আশলা – আরশোলা।
-আস – -রা, বহুবচনে। কাল আমার মামাতো ভাইআস আসবে। মামাতো ভাই এবং আর কেউ কেউ আসবে।
আসবঅ্যান – আসব এখন, আসব'খন। মূলত আমাদের এদিকের মুসলমানরা এমন উচ্চারণ করে থাকে। একইভাবে যাবঅ্যান, করবঅ্যান, খাবঅ্যান। অন্যান্যরা বলে আসব একন ইত্যাদি।
ইক্ষুনি – এক্ষণই, এখনই।
ইদনে – এই দিনে।
ইস্টাসোন – স্টেশন।
উঁচো – উঁচু। আর এট্টু উঁচোয় নে যা, নে গে উঁচো করে বাঁদ।
উঁতোয় দাওয়া/দওয়া – উনান, বান ইত্যাদি জ্বালিয়ে কাজ সারা হয়ে যাওয়ার পর, শুকানোর জন্যে কাঁচা, আধশুকনো, ভিজে বা সরস কাঠ উপরে সাজিয়ে দেওয়া। (দাওয়া/দওয়া – দেওয়া)
উইড়ুনি/ওড়াউনি – ওড়াতে মানা করা হচ্ছে। ও বৈদি, ওরম ধুলো উইড়ুনি/ওড়াউনি। (বৈদি – বউদি)
উইলে নাওয়া – নামিয়ে নেওয়া। ছাবালটার তক্তাপোষে উইটে দিয়েলি, ককন পড়ে যাবে – উইলে নিআয়-উইলে নিআয়। (উইটে দিয়েলি – উঠিয়ে দিয়ে এলি)
উটোউটি – উঠোউঠি থেকে। পরপর, একের পর এক। উটোউটি ক'দিন ধরে বিষ্টি হচ্চে।
উদ্.নে – ওই দিনে, সেই দিনে।
উদাউট – শেষ, গায়েব। ইংরেজি উইদাউট থেকে। একটা আত্তিরির জন্যি ইঁটক'টা একিছিলুম একেনে, তা একাআত্তিরির মদ্যি অদ্দেক উদাউট হয়ে গেল!
উদোমাদা – আলাভোলা, এলোমেলো; খুব বুদ্ধিমান বা পরিপাটি নয়।
উপ্.সুন্দুরি – রূপসুন্দরী থেকে। খুব রূপসী বা সুন্দরী, অত্যন্ত সুন্দরী।
উবজে – উপযাচক হয়ে। না বললি উবজে কে ওর বাড়িই যাচ্চে, তুই থামদেন!
একুনি – হাতপাখা।
একে-দুই কাজ সারা – এক কাজের মধ্যে/সঙ্গে অন্য কাজ সেরে ফেলা।
একেয়ার – প্রচণ্ড, প্রচুর, অনেক। একেয়ার নোক জমেচে/একেয়ার বাড়াবাড়ি করে ফেলেচে।
-এন – এখন অর্থে। খাবিএন, করবিএন, এমনকি খাসেএন, হবেএন। অর্থাৎ খাবি'খন, করবি'খন, হবে'খন (এমনকি মান্য কথ্যতে 'কন-ই উচ্চারিত বেশি) – খাবি এখন, করবি এখন। আমাদের প্রতিবেশী মুসলমানরা – বিশেষত মুসলমান মহিলারা খাবিএনো, খাবাএনো, যাবিএনো উচ্চারণ করে। এই এ অ্যা উচ্চারিত, অর্থাৎ খাবিঅ্যানো, যাবিঅ্যানো...। কেন্, থাগ না, ওব্্লা যাবিঅ্যানো। কেন্ উ. ক্যান্, কেন থেকে। ওব্্লা – ওবেলা। অ্যানো অ্যান-ও উচ্চারিত হয়ে থাকে, অর্থাৎ যাবিঅ্যান।
এলো বাউনি – পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন বাউনি গড়ে, ছড়িয়ে, পরের দিন পুজো দেওয়া। এলো খোলা অর্থে।
ওকেন – ওখানে। পেনটা ওকেন থেকে দে দেন।
ওজাল – (হাঁস-মুরগির ডিমপাড়া বা ছানাতোলা ইত্যাদি সংক্রান্ত) দফা। এ বচর দু-ওজাল ছানা তুলিচি। (উ. বচোর। অর্থাৎ বছর)
ওজোড়/উজোড় – উজাড়। সে বচর ওলাউটোয় মানুষ মরে গেরাম ওজোড় হয়ে গেল!
ওড়া – পাজি, ওঁচা। শিশু-কিশোরদেরকে আদরের গালি। অপুষ্ট ধানের শিষকে ওড়া বলা হয়। প্রবাদ আছে – ওড়া ক্যাঁজড়া শুঁড়ির দামড়া। ক্যাঁজড়া এক প্রকার ছোট উদ্ভিদ, আসলে কেচড়া হয়তো।
ওনচানো – ওপর ওপর থেকে কিছু তুলে নেওয়া। ওপর থেকে কুটিগুনো উনচে নে আগে, তারপর ধানগুনো খড়ায় তোল। আগে চৈতেমুগ কড়াই উনোনের উপর কড়ায় (কড়াইয়ে) ভালো করে কিছুক্ষণ কুঁচিকাটি (কুঁচিকাঠি) দিয়ে নেড়ে – হালকা সুন্দর একটা বাস বেরোনো পর্যন্ত (কিন্তু ভাজা নয়) – তুলে শিলের উপর হালকা করে নোড়া দিয়ে ভেঙে (মূলত দু-ভাগ) নেওয়া হত। আগুনের তাপে কড়াইয়ে কড়াইয়ের ওই নেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটিকেও ওনচানো বলে। ভালোভাবে যাতে ভাঙে, বেশি গুঁড়ো-গুঁড়ো না হয়ে যায়, অনেকে তাই শিলের উপর একটি চট পেতে নিয়ে তার উপর কড়াই ভাঙত।
ওব্বর-চাব্বর/উব্বুর-চাব্বুর, উব্বর-চাব্বর – উচ্চবাচ্য। কী রে, খুব তো তড়পাচ্ছিলিস, একন আর কোনো ওব্বোর-চাব্বোর নি যে!
ওমর – উমর, বয়স।
ওয়চে/ওয়েচ্/ওয়েচে বা অয়চে – চল-চল-চল, তুই আবার এইচিস কেন, আমার হাতে পানি ওয়চে/ওয়েচ্। (এক মুসলমান মহিলা টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে ফিরছেন, ইতোমধ্যে তাঁর বাচ্চাটি ছুটে এসেছে। সে মায়ের কোলে উঠতে চায়। এমত সময়ের উক্তি। অয়চে/ওয়েচে সাধারণত এখানকার পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়দের উচ্চারণ)
ওষুদপালা – ওষুদপত্তর। ঔষধপত্র।
কওসা – কুয়াশা।
কচানো – নতুন করে ডালপালা বেরোনো, নতুন প্রাণ পাওয়া, চেকনাই হওয়া (সচরাচর পুরোনো বা দুর্বল ভগ্ন গাছ প্রসঙ্গে)। মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ – বাব্বা, এ বুড়ো দিন দিন কচাচ্চে রে!
কতার পড়োনে বলা/পড়া – কথাপ্রসঙ্গে।
কাঁদ্দেচে – কাঁদতেচে – কাঁদছে।
কাটে-কবাটে – তুমুল ঝগড়া, দু-পক্ষের এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ। কাঠে-কপাটে থেকে।
কাডরা – কাটরার উচ্চারণ। সবজি। পুরো মশ্যোমটা/মর্শমটা বিষ্টিই বিষ্টিই তা এ বচর কাডরাচাষ কত্তি দেলে আগাশে! (মশ্যোম/মর্শম – উ. মোশ্যোম/মোর্শম। মান্য চলিত – মরশুম)
কাড়া – পরিষ্কার করা; শুরু করা। যেমন গোলকাড়া অর্থাৎ গোয়াল পরিষ্কার করা। শুরু অর্থে – এবার নতুন এট্টা ঝেটা (উ. ঝ্যাটা) কাড়তি হবে, এটা বড্ড এট্টুখুনি হয়ে গেচে। জমি কাড়ানোও জমিতে প্রথম চাষ দেওয়া অর্থাৎ লাঙল দেওয়া।
কাড়ায় ওটা (ওঠা) – বন্ধ করে দেওয়া। পাঁচটা বিইয়ে সেই কবে কাড়ায় উটেচে! বা, দুটো মোটে বেন দে মা ঠাগরুন আমার কাড়ায় উটেচে। অর্থাৎ গাভীটি বিয়োনো বন্ধ করে দিয়েছে। আষাঢ়ের পথম দিকি দু-এক পশলা (উ. পষলা) দে সেই ঝে আগাস কাড়ায় উটল, আর বিষ্টির নাম কত্তেচে!
কানকুড়ো – কানকো, মাছের কানকো। কানকুড়োগুনো ফেলিসনি, চচ্চড়িই দোবো একন।
কানমুতো – কান ও তার আশপাশ। ভিমরুলি কেমড়ে – কানমুতো কেরম ফুলে উটেচে দেকিচিস!
কাপটাকাপটি/কাপসাকাপসি – (ঝগড়া সম্বন্ধে) প্রচণ্ড। এই সিদিন দুজনের কাপটাকাপটি ঝগড়া, আর একন দেকো ঝেন কত ভাব!
কাপসাকাটা/কাপসাকাটি/কাপসিকাটা – (বৃষ্টি সম্বন্ধে) মুষলধারে, প্রচণ্ড বৃষ্টি। কাপসাকাটা/কাপসাকাটি/কাপসিকাটা বিষ্টি হয়ে গেল এক পষলা (পশলা উচ্চারণ নয়)।
কারবারভুতো – ব্যাবসা-ট্যাবসা, ব্যাবসা-বাণিজ্য। নিছাক্কা বসে না থেকে ঝাহোক এট্টা কারবারভুতো কল্লি তো তেবু সংসারের (উ. সোংসারের) এট্টু সুকল হয়। (সুকল – সুবিধা, সুরাহা)
কালগেগাদ্দিন – কালকেকার দিন, কালকের। একইভাবে পশ্্শুগাদ্দিন, তশ্্শুগাদ্দিন।
কালা (উচ্চারণে কা-র উপর জোর) – ঠান্ডা, শীতল। শরীট্টা ভালো নয় বলতিচিস, এগবারে কালা জলে চান করিসনি, এট্টু ওদে বইসে দে। (ওদে – রোদে)
কিরপন – কৃপণ।
কী-কোম্্নে – কী-কেমন, কী-সব। ব্যাগের ভিদরি কী-কোম্্নে নে যাচ্চে তা কে জানে!
কুঁগড়িপিটে/কুঁগড়িমেরে – কুঁকড়ে, গুটিসুটি মেরে ছোটখাটো হয়ে।
কুঁজো-জোকুরে – বেঁটে-কুঁজো, জোকারের মতো।
কুড় – সুতো, দড়ি ইত্যাদির শুরু অর্থাৎ যে প্রান্ত ধরে খোলা শুরু করা হয়।
কুদড়ো – যোগাযোগ ইত্যাদির দিক দিয়ে খুব-একটা ভালো জায়গা নয়; অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন।
কুদলো/কোদলা – বড়, বড়সড়। কুদলো ছাবাল হয়ে তুই এর'ম কাজ কত্তি পাল্লি!
কুন – কোন-এর উচ্চারণ। আমাদের এখানে মূলত মুসলমান মহিলারা উচ্চারণ করে, জেলার কোথাও কোথাও অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও শোনা যায়। কুন দিকতন একিচিস জাঁতিকলটা?
কুমে – কমে। দাঁড়া না, ভিড়ডা এট্টু কুমে আসুক (বা কুমুক), যাচ্চি।
কেগরানো/কেগরে যাওয়া – ছড়ে যাওয়া, দাগ পড়ে যাওয়া।
কেড়ে-বিজড়ে খাওয়া – কেড়েকুড়ে খাওয়া। বিজড়ে – এট্টা পিটে খেলি বউ দাঁতবিজড়ে পড়ে। (পিটে – পিঠে, পিষ্টক)
কেপটে/কাপটে ধরা – সাপটে ধরা, ভালো করে ধরা, জোরদারভাবে ধরা।
কেরাচ তেল/কেরাচিন – কেরোসিন তেল।
কোঁতারে – (মূলত পাঁকাল জাতীয় মাছ সম্বন্ধে, তবে শিং-মাগুর সম্বন্ধেও বলা হয়ে থাকে) বড়সড়, দশাসই। পরাণ এট্টা কোঁতারে তোড়ামাচ ধরেচে।
কোনামোচড় – রাস্তার বাঁক। কোণ মোচড় দিচ্ছে যেখানে।
কোনে – কোনখানে। ইঁটগুনো বয়ে এনে কোনে আকব?
কোলে-কাঁকালে – কোলে-কাঁখে।
খইবন ঠিগরোনো – খইয়ের মতো চারিদিকে লাফিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া/পড়া।
খচাই – দরদাম করা, মূলত জিনিসপত্র কেনার সময় দাম কমানোর জোরালো প্রয়াস।
খচ্চা – খরচা।
খজরা/খচরা – খচ্চর, বদমায়েশ।
খদ্ন (উ. খোদ্নো) – ব্যবহারজীর্ণ বা দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় ভগ্ন অবস্থা বা পচে-ধসে-খসে ক্ষয়প্রাপ্ত, নষ্ট-অবস্থা।
খরখর – (উ. খরোখরো) – তাড়াতাড়ি, শীঘ্র। খরখর যা, দেরি হয়ে গেচে। খর মানেই দ্রুত, এক্ষেত্রে দু-বার বসে।
খাউকুড়ো – এক গালি, আদর করেও দেওয়া হয় এ গালি। ওলাউটো-খাউকুড়ো। ওলাউটো ওলাউঠা বা ওলাওঠা অর্থাৎ বিসূচিকা অর্থাৎ কলেরা রোগ থেকে (এমন মড়ক যে একটা গতিগঙ্গা করে এসে দাবায় না উঠতে উঠতে আর একটা মৃতদেহ দাবা থেকে ওলানো অর্থাৎ নামানো)
খাউধুড়কে – খালি খিদে পায় যার, খেতে পারে বা ভালোবাসে যে।
খাউনে – ভালো খেতে পারে যে। ও ঝেমনি খাটুনে তেমনি খাউনে।
খাওয়াদাওয়া-এলাক-পোশাক – খাওয়াদাওয়া, পোশাকআশাক সমস্তকিছু।
খাটপাঁজুরে – ছোট-বড়, একত্রে বেশ কিছু জিনিসের মধ্যে কিছু অসমান বা এক মাপের নয়।
খানধাবড়ে/খানধাবড়ি – বেয়াড়া, শাসন-না-মানা। সচরাচর গরু সম্বন্ধে প্রয়োগ করা হয়।
খাবেনি/খাবিনি – খাবে না। আমাদের এখানে মুসলমানদের মধ্যে এ উচ্চারণের চল আছে। হুগলি জেলার মেয়ে আমার এক কাকিমা বলল, আমার মেয়ে কাঁচা ছোলা ছাড়া ভাজা ছোলা আনলি মোটে খাবিনি। আমাদের মধ্যে সচরাচর 'খাবেনে' চলিত।
খামড়ি – গোয়ালে গরু বাঁধার দড়ি। খোঁটার সঙ্গে বাঁধা এই দড়ি গরুর গলার কাছে দু-ভাগ হয়ে যায় এবং দু-দিক থেকে গলাকে বেষ্টন করে। তারপর এই দুই ভাগের এক প্রান্তের শেষের ফাঁকে অন্য প্রান্তের বড় গিঁটটি গলিয়ে দেওয়া হয়।
খারা – মাছ জিইয়ে রাখার চেড়ার চৌকোনা খাঁচা
খিউনো/খিয়োনো – পার হওয়া। খালে তো এট্টুখুনি মোটে জল, প্যান্টুলটা এট্টু গুইটে নে খিইয়ে আয় না। (এট্টুখুনি – এট্টুখানি/এট্টুখেনি/এট্টুখিনিও উচ্চারিত)। এ তো একনও পজ্জন্ত খিউলুনি। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত এল না। উৎস যেন, খিইয়ে অর্থাৎ পার হয়ে এল না। খেয়া থেকে সম্ভবত।
খিচ মাল – চেকনাই মাল নয়, শেষগুড়ুন্তে, গাছের শেষের দিকের সবজি ইত্যাদি। খিচ কাজ – ছোটখাটো, একটু-আধটু কাজ। খুচরো কাজ।
খুদ কাটানো – বিশেষত কুলোয় ঝাড়ার সময় চালের থেকে খুদকে আলাদা করা (বিশেষ হস্তকৌশলে)
খে – খেই। এক-একটা সুতো, সুতোর সংখ্যা।
খোঁডরানো/খোঁটরানো – নখ, কাঠি ইত্যাদি দিয়ে ক্ষত বা কোনও কিছু ঠোকরানো বা ঘাঁটা। ঘা-টা অত খোঁডরাসনি, অক্ত/রক্ত বেইরে যাবে। ফুসকুড়িটা খুঁডরে খুঁডরে (খুঁটরে খুঁটরে) তো ঘা করে দিলি!
খোড়েন টান – অত্যন্ত অভাব। ক'টা কাটকুটো একেন একে গিচি কাল, কার এরম খোড়েন টান ধল্ল যে নে চলে যেতি হল!
খৌরি পাকি – যে অল্পবয়সি নারী হালকা-শরীর এবং চটপটে। ডাকখৌরি – ডাকপাখি, ডাহুক। অর্থাৎ ডাকপাখির মতো হালকা-শরীর ও তৎপর, চটপটে।
খ্যাগরামেগরি করে খাওয়া – (মুরগি ইত্যাদির) তাড়াহুড়ো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খাওয়া।
খ্যায়পড়া – ক্ষয়-পড়া। মূলত আদুরে তিরস্কার হিসাবেই প্রচলিত। অর্থাৎ যেন ক্ষয়ে গেলেও মরণ নেই। নাওয়া নি, খাওয়া নি, এই ঠিক্কেন দুকুরবেলায় কোতায় যাচ্চিস রে খ্যায়পড়া!
গ-ওটা – বাতিক শুরু হওয়া, মূলত কুকুরের রোগ দেখা দেওয়ায় কামড়ানোর প্রবৃত্তি। (ওটা – ওঠার উচ্চারণ)
গাদড়া – অপরিচ্ছন্ন, পরিষ্কার নয় এমন। আন্নাঘরের সামনটা এরম গাদড়া করে আকে মানুষ! অথবা, এট্টু গায়-মাতায় সাবাঙ-টাবাঙ দে, ওরম গাদড়া হয়ে থাকিস কেন তুই! 'তুই এট্টা ন্যায় গাদড়া' যখন বলা হয় তখন অপরিচ্ছন্ন এবং অলস উভয়ার্থই প্রকাশ করে।
গান্ডেপিন্ডে গেলা – প্রচণ্ড খাওয়া।
গাবজানো/গাবুজ-গাবুজ করা – বেশি কথা বলা, বকবকানি। ও তুমি ঝত বলো, সারাদিন একন ওই গাবজাতি অইল! বা, গাবজানি চলতি থাগল। কিংবা, গেবজে যাবে। গাবুজ-গাবুজ কত্তি থাগবে একন। বা, গাবুজ-গাবুজ চলতি থাগবে। গাবজানো-র অন্য অর্থ মাখামাখি করে ফেলা বা নোংরা করা।
গাবলুতি – গাফিলতি। গাবলুতি করে তকন বাবার সঙ্গে গেলিনি আর একন জামা পচন্দ হয়নে বললি হবে! (সঙ্গে – উ. সোঙ্গে)
গামসি-পিটে খাওয়া – প্রচুর খাওয়া, ভূরিভোজ।
-গার – -দের। আব্দুলগার বাড়ি যাতি হবে। আব্দুলদের। (মগরাহাট থানা এলাকায় মূলত মুসলমানদের উচ্চারণ)
গালখচা – বকবক করা।
গালা – ধার, কিনারা, প্রান্ত। দাবার এক গালায় আচে লম্পটা, দেক না।
গালাঘুঁষো – কানাঘুষো।
গায়-পায় – গায়েগতরে। শরীর লাগা। মেয়েটা দেকতি-শুনতি যা হোক, বেশ গায়-পায় আচে, তাই নয়?
গুঁজড়ে গুঁজড়ে কাজ করানো – বারবার বলে কোনও কাজ করানো। 'গোঁজড়ানো' থেকে। আগুন গোঁজড়ানো বা গুঁজড়ে দেওয়া মানে 'ফুঁড়কোবাড়ি' গুঁজে গুঁজে আগুন উসকে দেওয়া। তেমনই যেন তাগিদ দিয়ে দিয়ে করানো। 'ফুঁকো' বলা হয় দু-দিক -ফাঁকা বাঁশের (আদতে বাঁশের 'আগালে'র) বিঘৎ-দেড়েকের নলটিকে যার এক প্রান্ত আগুনের দিকে করে অন্য প্রান্ত থেকে ফুঁ দিয়ে সদ্য-নিভন্ত আগুন ওসকানো হয়। ফুঁকোকে ফুঁকোবাড়িও বলে কোথাও কোথাও।
গুঁড়োডালা – ডালা, চালা নয়। গুঁড়োডালায় চালের গুঁড়ো (গুঁড়ি) চালা হয় আর গুঁড়োচালায় গুঁড়ো (কুঁড়ো) চালা হয়।
গুইড়ে আসা – কমে আসা, প্রায় শেষ হয়ে আসা। পুকুরের জল গুইড়ে আসা, গাছের বেগুন গুইড়ে আসা।
গুড়ুক তমাক – গুড়াখু তামাক।
গুমো গন্দ – অনেকদিন কিছু বদ্ধ পড়ে থাকলে যে গন্ধ হয়।
গুল্লে – গোড়ালি।
গেইলে একঘাঁট – গালাগালি দিয়ে একশা করা। 'একঘাট' হওয়াও সম্ভব, তবে আমরা বরাবর 'একঘাঁট' উচ্চারণই শুনে এসেছি।
গোচনগাচান – গুছনগাছান, গোছগাছ।
গোড়ে গোড় দাওয়া – কারও বিরুদ্ধাচরণ না করে তার মত বা পথকে সমর্থন করে চলা। তুই ওর গোড়ে্ গোড় দিচ্চিস! (দাওয়া – দেওয়া)
গোমর (উ. গোমোর) – গুমর, গর্ব।
গো-মুগরুনি – প্রচণ্ড মার (গরুকে মুগুর-পেটা করার মতন)।
গ্যাগরানো/গ্যাগরানি – বিশেষত বাচ্চাদের দীর্ঘ কান্নার পর তার যে রেশ থাকে দীর্ঘক্ষণ – হালকা কাঁপুনি বা আক্ষেপ-সহ হতে পারে।
গ্যারগেরে – গরগর (ঘোর লাল বা প্রচণ্ড রাগ) থেকে। লঙ্কায়/ঝালে তা এগবারে গ্যারগেরে! লঙ্কায় বেশি ঝাল অর্থেও 'রাগ' শব্দের প্রয়োগ আছে। যেমন, এ নঙ্কাটায় খুব আগ আচে। কিংবা, খাজেমালি (বা গুলে) নঙ্কা ঝকন পথম-পথম এল, বাবা কী আগ ছেল তকন!
ঘরযোগের কতা (উ. ঘজ্জোগের ) – নিতান্তই পারিবারিক কথা বা কোনও এক পরিবারের কথা।
ঘষিঘাঁটা – কাজে ত্বরা নেই – হচ্ছে তো হচ্ছে ভাব; কুড়ে, অলস প্রকৃতির। ওরম ঘষিঘাঁটা লোকের হাতে দেচ, এক্ষুনি ওই হল তোমার কাজ!
ঘুসড়ো-ঘাসড়া – ছোটখাটো ঘরোয়া চিকিৎসা। ডাক্তার দেকাচ্চিস তা কী হয়চে, ওই সঙ্গে ঘুসড়ো-ঘাসড়া এট্টু কর না – ঝেদিক দে সারে। (সঙ্গে – উ. সোঙ্গে)
ঘুঁগরি মেরে কতা বলা – অনিচ্ছাসূচক বিরক্তিমিশ্রিত গর্জনের সঙ্গে কথা বলা।
ঘেড়োনো – ঘাড় দেওয়া, দায়িত্ব নেওয়া, কাজের ভার বা দায়িত্ব স্বীকার করা। এত করে বলতিচি বোনির বের সবজির বাজারটা করে দিতি, তা কিচুতেই ঘেড়োয় না!
ঘেতুমি/ঘেতোমো – কাজ না করার ইচ্ছা, কর্মে অনীহা; কোনও কিছু না-করার ইচ্ছায় কালক্ষেপ করা। যে এমন করে তাকে ঘেতো বলে।
চঙমঙ করা – চারিদিকে তাকিয়ে কাউকে খোঁজা।
চট-পাল্লা গুইড়ে নাওয়া – সেদিনের মতো কারবার শেষ। (গুইড়ে < গুড়িয়ে < কুড়িয়ে/গুটিয়ে)
চরখর/চরখরে (উ. প্রথমটি চরখরো) – চনমনে, দ্রুত চরে যে, চটপটে; সজীব, চলাফেরায় স্বচ্ছন্দ। মুরগির ছানাগুনো বেশ চরখর হয়চে।
চাঁপ – খেজুর গাছের ফুলের পুরো থোকা বা গুচ্ছটি, যার থেকে খেজুর হয়।
চাঁপালি/চেঁচালি – ডাগকে খেজুর গাছের সঙ্গে আটকে রাখে যে জালি ধরনের জিনিস।
চাগাড় – কোদাল, শাবল ইত্যাদি দিয়ে চাগিয়ে তোলা।
চাজ্জমা (চারজমা থেকে বোধহয়) – কাজে তুখোড়, সবদিক সামলাতে পারে এমন। মেয়ে ঝেন এগবার চাজ্জমা।
চাটে/একচাটে – একদিক দিয়ে সমস্ত, কাউকে বা কোনও কিছু বাদ না দিয়ে। চাটে/একচাটে সব তলা ভেঙে যা। হয়তো একচেটে বা একচেটিয়া থেকে, কিন্তু অর্থ কিঞ্চিৎ ভিন্ন।
চালান – শাকসবজি, মাছ ইত্যাদির দফা। সবে দু-তিন চালান শোঁশা তুলিচি আর নোনা উটে গাচগুনো সব ঝেমলে যাবেনে!
চালি – বিক্রয়ার্থ হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ছোট ছোট গুড়ের ভাঁড়ের মুখে অর্থাৎ ভরা-গুড়ের উপর গুড়েরই তৈরি গাঁজা (গাঁজলা) হাতে ফেঁটে (ফেটিয়ে) বেশ ঘন করে পুরুভাবে ঢেলে দেওয়া হয়। পরে এটি খানিক শক্ত হয়ে ওঠে, কিছটা পাটালির মতো। একে চালি বলে। বাঁকে বা গাড়িতে করে দূরে নিয়ে যাওয়ার সময় এটি গুড়কে সহজে চলকে (ছলকে) উঠতে দেয় না। বায়ুনিরোধকের কাজ করায় ভিতরের গুড় ভালোও রাখে বেশিদিন।
চুক – চুপ। কদ্দিন আর চুক করে থাকা যায় বলদেন, মানষির শরীত্তো (শরীর তো)!
চুরুনি – চুরনি। চোরের স্ত্রীলিঙ্গ।
চুলোর চোতড়ে যাওয়া – পণ্ড হওয়া, নষ্ট হওয়া, বিফল হওয়া বা ফালতু হয়ে যাওয়া।
চেইলে – চালিয়ে। তুলনায় একটু 'ভদ্দরআনা' চাইলে।
চেউনি – চেয়োনি, চেয়ো না। দেখা এবং মাঙা উভয়ার্থেই।
চেটি – বাঁশ-কঞ্চি, বেত ইত্যাদির পুরু আঁশ বা ছাল; ছিলকা বলা যায় খানিকটা।
চেলে ফেলে দাওয়া/দওয়া – ছুড়ে ফেলে দেওয়া। কী সোন্দর স্বাস্ত হয়চে, আমাদের/আঙ্গার তো এক হাতে চেলে ফেলে দেবে রে!
চোঙ্কানো – ঘরে মুড়ি ভাজার সময় উনোনের উপরে কড়ায় (কড়াইয়ের) বা ভাজনাখোলায় প্রথমে একটু জল ও লবণ দিয়ে তাতে চাল ঢেলে কুঁচিকাটি (কুঁচিকাঠি) দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়া হয় লালচে ভাব আসা পর্যন্ত। এমনকি দু-একটি চাল ফুটি-ফুটি ভাব। একে বলে চোঙ্কানো। পুরো চাল তুলে বা ঢেলে নেওয়া হয়। পরে ভাজনাখোলায় বালি দেওয়ার পর তা গরম হয়ে গেলে, অল্প করে চোঙ্কানো চাল তাতে ফেলে কুঁচিকাটি দিয়ে নেড়ে নেড়ে বালির উপর থেকে কুঁচিকাটির সাহায্যে হালকা করে তুলে নেওয়া হয় ভাজা মুড়ি। এইভাবেই অল্প অল্প করে চাল গরম বালিতে ফেলে নেড়ে তুলে ভাজা হবে পুরো মুড়ি।
চোকল মেরে ওটা (উ. চোকোল)– চোকল আসলে ছোবল। ফুঁসে ওঠা। কোনও কিছুর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠা। এট্টা কতা বলবার উপায় আচে – বাবা, ঝেন চোকল মেরে উটতেচে!
চোকোলো – চোখওলা, দৃষ্টিসম্পন্ন। গেঁড়িটা বেশ চোকোলো হয়চে। (গেঁড়িটা – শিশুটা)
চোতোড় কেটে দাওয়া (দেওয়া) – খুব মার মারা, বেদম মার।
চৌফুরে – দুপুরে বাড়ি না ফিরে একটানা বিকেল বা সন্ধে অবধি কাজ করা। বাস্তবে বেলা আড়াইটে-তিনটে পর্যন্ত। চৌপহর অর্থাৎ চারপ্রহর চৌপর হয়ে চৌপুরে, তার থেকে চৌফুরে। না, আজগের ওরা একন আসবেনে, খালা মাটের বন্দে ওয়া হচ্চে – চৌফুরে করে এগবারে সেরে দে আসবে। (ওয়া – রোয়া)
চ্যানচেনে মিষ্টি – খুব মিষ্টি। চিনিচিনি থেকে চ্যানচেনে।
ছনি (উ. ছোনি) – লাউ, কুমড়ো ইত্যাদির ফুল ছাড়ার পর ছোট অবস্থা। কুমড়ো গাচটায় কেরম ছনি পড়েচে/ধরেচে দেকিচিস!
ছন্দ-অংশে/ছন্দে-অংশে না থাকা – আদৌ যুক্ত না থাকা। আমি এসবের কোনো ছন্দ-অংশে/ছন্দে-অংশে নি আর সে আমার নাম করে দেল!
ছরকোট করা – ছড়িয়ে ফেলা, ছড়ানো, ছড়িয়ে এলোমেলো করে ফেলা। এর নাম ভাত খাওয়া হ্যারে, ছরকোট করিচিস!
ছানা-লাগা – ক্ষতস্থানে আঘাত লাগা।
ছেঁক-দাওয়া – বৃষ্টি সাময়িক ধরা/বন্ধ হওয়া। দাঁড়া, এত বিষ্টিই বেরুসনি, এট্টু ছেঁক দিলি বেরুবি। (ছেঁক – উ. ছ্যাঁক)
ছেঁচ/ছেঁচতলা (উ. ছেঁচতোলা)/ছাঁচতলা – দাওয়ার কোল, উঠান যেখানে দাওয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় সেই জায়গা বা তার কাছেপিঠের জায়গা।
ছেঁচারি কাঁটার মতন – অজস্র, প্রচুর।
ছেলে দাওয়া – সাধারণত কঞ্চি, পালা ইত্যাদি দিয়ে পেটা, মারধর। কঞ্চিপালা দে ভালো করে ছেলে দিলি তকন বুজতি পারবি রে।
ছোড়-ধরা – বিরক্ত ধরা বা দায়মোচনের জরুরি তাগিদ।
ছোড়ান – চাবি।
জইড়ে-গুইড়ে – জড়িয়ে-কুড়িয়ে অর্থাৎ কোনও প্রকারে।
জউরো (উ. জোউরো) – উদ্ভট ব্যাপার স্যাপার, উলটোপালটা করা, 'সিন ক্রিয়েট' করা।
জটি ধরা – চাল, গম, কড়াই ইত্যাদিতে পোকা ধরে পরস্পর জড়িয়ে থাকা। চালটায় কেরম জটি ধরেচে দেক! জট বা জটা থেকে। জটেবুড়ি।
জলটানের মাচ – শরৎ-শেষে বা প্রথম-হেমন্তে জমিতে জল যখন অত্যন্ত কমে আসে (টান পড়ে, অর্থাৎ অবশিষ্ট জল খা-বিল-নদী টেনে নেয়) সেই সময়ে ধরা মাছ।
জষ্টিজলি – জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচুর বৃষ্টিতে মাঠঘাট ভরে যাওয়া।
জানদড় – দৃঢ় জীবনীশক্তিসম্পন্ন, বলিষ্ঠ স্বাস্থ্যের অধিকারী।
জাবড়িকেটে বসা – থাবড়ে বসা। পুরো পাছা, পা ইত্যাদি-সহ মাটিতেই বা মাদুর প্রভৃতির উপর বসে পড়া।
জালবাড়ি – জালবোনার বাড়ি।
জালাভাঙা খোলা – ভেঙেচুরে গেলেও বনেদিয়ানাহীন নয়। খোলার মধ্যেও জালাভাঙা খোলা। না-না, ভালো খেইয়েচে – ঝতই হোক বাবা, ঝেমন হোক জালাভাঙা খোলা তো!
জিগরে জিগরে/জেগরে জেগরে খাওয়া – খাওয়ার আর ইচ্ছা নেই বা পেট ভরে গেছে, তবু/তার পরেও খেতে হবে এমন অবস্থা। হয়তো নষ্ট যাতে না হয়, তাই জোর করে খেয়ে নেওয়া বা আদিষ্ট হয়ে বাধ্যত খাওয়া, বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। বলতে গেলে জোর করে করে খাওয়া। হয়তো খেতে পারবে বলে হাঁকাই করে নিয়েছে।
জোয়ান্নে – জব্দ, দুর্বল হয়ে পড়া, জবুথবু।
জ্ঞেত – জ্ঞাতি।
জ্যাটো চাষ – আগে চাষ। মরশুমের শুরুতেই বা প্রথমের দিকে। জ্যেষ্ঠ থেকে জ্যাঠো, তার থেকে জ্যাটো। বিপরীত নাবি।
ঝড়ি পাগলি – উস্কোখুস্কো এলোমেলো চুলের মেয়ে।
ঝাল্লে – ঝাড়া হয় যা, ঝাঁট দিয়ে একত্র-করা ময়লা। ঝাড়লে থেকে এসেছে বলেই মনে হয়। একইভাবে ঝাল্লেকুল্লে বা ঝাল্লেমাটি প্রচলিত। কুল্লে তেমনই কুড়োলে থেকে হয়তো বা।
ঝুল-কাটাকাটি – টানাপোড়েন। ওই নে তো ঝুল-কাটাকাটি চলতেচে আজ এগবচর ধরে। (গাদি খেলার ঝুল-কাটা থেকে)
ঝিঁকুর – ঝিঙে, লাউ ইত্যাদি বেশি পেকে যাওয়া। কী ঝিঙে আনলে, এ তো পেকে ঝিঁকুর হয়ে গেছে/পেকে এগবারে ঝিঁকুর!
ঝেড়ে ওটা – বেশ বেড়ে ওঠা।
ঝেড়েপেড়ে ওটা – সবকিছু ফেলে হঠাৎ উঠে পড়া।
ঝেমলে যাওয়া – প্রচণ্ড রোদে বা বিষে মূলত সবজিখেতের গাছপালা ঝিমিয়ে পড়া, লালচে বা পোড়া-পোড়া ভাব হয়ে পড়া।
টকে হাকুচ/হাকুন্ড – খুব টক, প্রচণ্ড টক। ও গাচের তেঁতুল খেতি পারবি তুই, টকে হাকুচ! এই প্রয়োগটিই বেশি, হাকুচ টকও বলা হয়ে থাকে।
ট ভ কাঁটালের ক – 'যা হোক- মা হোক' করে সামান্য পড়াশোনা সেরে নেওয়া। দায়সারা পড়া।
টটবিটর/টটবিটট – তরবিতর, হেরফের। এই পরীক্ষার সমায় খাওয়ার এট্টু টরবিটর/টটবিটট হলি শরীর খারাপ হবার ভয়। (সমায় – উ. সোমায়)
টাঁকি/কেঁট – এঁটুলি/এঁটুল, গরুর গায়ের রক্তপায়ী কীট।
টাকটাক করা – অত্যন্ত তৃষ্ণা বোঝাতে।
টাকার ভিস্তি উড়ে যাওয়া – (সাধারণত অসুখ-বিসুখে) প্রচুর খরচ হয়ে যাওয়া।
টিগলি – ঘন করে গোলা আটার পুরু গোল গোল ছোট ছোট চাকতির মতো নরম রুটিজাতীয় খাদ্য। কোনও জিনিসের বর্ণনায় 'টিগলি-টিগলি মতন'। মান্য চলিত বাংলা টিকলি।
টেশন – স্টেশন।
টেঁপা-জোকুরে (উ. ট্যাঁপা) – অপুষ্ট, ছোটখাটো, টেরাবেঁকা, নধর বা মসৃণ নয়। জোকুরে জোকার থেকে বোধকরি।
টোগলামারা/টোকলামারা – টইটই করে ঘুরে বেড়ানো। ও তো এট্টা টোগলামারা জাত!
টোল-ফেলা পাটি – টোল-ফেলার দল, বেদে, যাযাবর। (টোল – ছই, পাটি – পার্টি)
টেংরামাছ-ধরা – তন্দ্রায় ঢুলে ঢুলে পড়া। সারাদিন টো-টো করবি আর সন্দেয় পড়তি বসলি কেবল টেংরামাছ-ধরা ন্যায়! (কেবল – উ. কেবোল)
ঠিগরে (উচ্চারণে গ-এ হসন্ত) – কঠিন, শক্ত। ঠিগরে মাটি বা ঠিগরে কড়াই। ঠিকরানো থেকে ঠিকরে হয়ে বোধহয়।
ঠিসেল – ঠেস। ওরম ঠিসেল দে কতা বলতি হবে!
ঠেকসোমারা – সমাপ্তপ্রায়। তা ইদিক কাজ পেরায় ঠেকসোমারা হয়ে অ্যায়চে।
ঠেকেজোড়ে (উ – ঠ্যাকেজোড়ে) – জোড়াতালি, কোনওগতিকে। ওই ঠেকেজোড়ে চলে যাচ্চে কোনওঅকমে।
ঠেলায়-ঠোকরে – এমনিতে কথাবার্তা হয় না, ঠেলায় পড়ে অর্থাৎ দায়ে ঠেকে অল্প-আধলা কথাবার্তা হওয়া।
ডিম বসানো – 'ছানা তোলা'র জন্যে তা-নেওয়া মুরগিকে নিয়ে বেশ কয়েকটি ডিম বসানো। একুশ দিনের কাছেপিঠে বাচ্চা।
ডেও-ঢেকনা (উ. ঢ্যাকনা) – বাসনপত্র। (ঢেকনার মান্য চলিত ঢাকনা)
ডেঙা মাচ – চুনো নয়, বড় বিলমাছ। ল্যাটা, শোল, কই, মাগুর ইত্যাদি।
ডেমরে/ডেমরা – বড়সড় ও মোটাসোটা। ডেমরে কলা, ডেমরে কাক। ওরম ডেমরা ডেমরা চোক করে কী দেকতিচিস রে! উকুনের বড়কে বলা হয় ডেমর/ডেমরা।
ডেমা – ছোট্ট ঢেলা বা ডুমোমতো। বেজনার কাঁতার নিচি ডেমা মতন কী এট্টা হাতে ঠেকল! (নিচি – নিচে)
ঢালা/ঢালাময় – সর্বত্র। মুড়িগুনো ঢালাময় এরম ছইড়িচিস, ভাজতি হয় না ন্যায়!
ঢিঁইয়ে ঢিঁইয়ে ওটা – ভুগে ভুগে বা অন্য কোনোভাবে আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠা (গাছ, জীবজন্তু)। একটু 'ভদ্দরআনা' উচ্চারণ 'ঢিঙিয়ে ঢিঙিয়ে'।
ঢিবঢিবে – জনহীন স্থান, পোড়ো জায়গা বা ঢিবে (ঢিবি) – সাধারণত ভয়ের জায়গা। সবে সন্দেবেলা তা কী হয়চে, কে যাবে ওই ঢিবঢিবের মাজঘানে। (মাজঘানে – মাঝখানে)
ঢিবলে – ঢিপির ভাব। পিটির এই জ্যায়গাটায় কেরম ঢিবলে হয়ে উটেচে, তোর বোধায় ফোঁড়া উটতেচে রে। ব্যতা নাগদেচে একেনে? (পিটি – পিঠে)
ঢেপসে/ঢাপসে দাওয়া – (মূলত বিছানা) বেবাক ভিজিয়ে দেওয়া। ছাবাল আজ বেজনা ঢেপসে দেচে। অর্থাৎ পেচ্ছাপ করে বিছানা বেবাক ভিজিয়ে দিয়েছে (মূলত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে)। খুব মারাকেও ঢেপসে দাওয়া বলে।
ঢোক দাওয়া – বাচ্চা চারাগাছে পরিমাণমতো করে জল দেওয়া (মগ, ঘটি, গ্লাস ইত্যাদি দিয়ে)। অন্য অর্থ – কাউকে কিছু কিছু সাহায্য (মূলত আর্থিক)। ওর কি আর ওতে সংসার চলে, আমাদের মাজে মাজে ঢোক দিতি হয় – কী আর করব বলো! (সংসার – উ. সোংসার)
ঢোকা-খাওয়া – মায়ের দুধে না হওয়ায় বাচ্চার অন্য দুধ খাওয়া। এর থেকে ঢোকা-খাওয়ানো।
ঢোলা – নতুন গজানো বাঁশের গায়ের প্রতি গাঁটের মাঝের আবরণ। সুপারিগাছের পাতার গোড়ার চওড়া অংশ যা গাছকে বেষ্টন করে থাকে তা সুপুরিঢোলা।
তন (উ. তোন) – দিক। এই দিকতন চলে আয়।
তন্দারি – তদারকি, খোঁজখবর, তদন্ত। তদন্ত থেকে সম্ভবত। তুই একফোটাখিনি মেয়ে, তোর সবকিচুই অত তন্দারি কীসির রে!
তলাঞ্চে – তলানি। তলাঞ্চে মুড়িক'টা খেয়ে নিই।
তা-গুড়ুন্তে – শেষের দিকের। তা-গুড়ুন্তে ছেলে/ফল।
তাবলা ( উ. তাব্্লা) – তালুতে করে এক দলা। অন্য অর্থ স্বল্পবুদ্ধি, চালাক-চতুর নয় এমন, বোকা, চৌকস নয়। স্ত্রীলিঙ্গে তাবলি।
তাম্বেক – তামাম, বেবাক, সমস্ত। একা আত্তিরির মদ্যি তোমার পুকুরির তাম্বেক মাচ উদাউট করে দেল! (উদাউট – ইংরেজি উইদাউট)
তাল – কাণ্ড, ফ্যাসাদ, বিপদ। আর বলুনি, সে এট্টা তাল হয়চে! কিংবা, ভালো এট্টা তাল বেইদে বইচিস! বা, শরীর তো ওর মোটে ভালো নয়, সেদিন তো এক তাল কেটে গেচে।
তিন খন্দ চাষ – তেফসলি, তিন বার চাষ হওয়া।
তিজেল হাঁড়ি – বেনন/বেনুন হাঁড়ি। ছোট হাঁড়ি (আগে ছিল মূলত মাটির। পিতল-কাঁসারও হতে পারে। এখন মূলত অ্যালুমিনিয়াম বা দস্তার)। তবে এখন আর এই নাম তেমন একটা কেউ উচ্চারণ করে না। (তথ্যঋণ – ঊষা নস্কর, নুরুল্লাপুর)
তিন-তাড়াতাড়ি – অতি শীঘ্র (সাত-তাড়াতাড়ির অনুরূপ)
তিরুটি – ত্রুটি। বাবা, আমার শাউড়ির কাচে এট্টু তা তিরুটি হবার জো নি।
-তুক – ক্রিয়ার অতীত বা ভবিষ্যৎ রূপে। করতুক, খেতুক, যেতুক, ভালোবাসতুক। অর্থাৎ করত, খেত, যেত...। তোদের সঙ্গে (উ. সোঙ্গে) না হয় এট্টু খেলা করতুক।
তুম্ভুর – ছেয়ে-যাওয়া, ভরে-যাওয়া। আগাস কেরম মেগে তুম্ভুর করে অ্যায়চে দেকিচিস!
তেক্ষুনি – তৎক্ষণেই। সঙ্গে সঙ্গে।
তেজ করা/দেকানো– রাগ করা। কাল আত্তিরি ছাবাল তেজ করে/দেইকে ভাত খায়নে তাই পান্তার হাঁড়ি নাবাতি আর সবুর সয় না!
তেদড়-নেদড় (উ. তেদোড়-নেদোড়) – ইতস্তত ভাব, কোনও কিছু না-করার ভাব।
তেরকি/তিক – রাগ। তিরিক্কি থেকে হতে পারে। ভাতের ওপর অত তিক/তেরকি দেকানো ভালো নয়। (ওপর – উ. ওপোর)
তেলমা – আরশোলা।
তেলানি (উ. ত্যালানি) – তেল বেড়ে যাওয়ার ভাব, অনিচ্ছা, অরুচি। খাবেনে, খুব তেলানি হয়চে, ন্যায়!
তোড়া – দাপানো, দাপাদাপি করা। অ্যাসবেসটারের চালে হুনুমানটা তুড়তেচে বলে তো ওরম জোরে জোরে শব্দ হচ্চে। আর এক তোড়া হল মাছ – পাঁকাল মাছ।
থুয়েইচি – (থুয়ে আসা থেকে) থুয়ে এইচি, থুয়ে এসেছি, রেখে এসেছি।
থোবাড়ি দাওয়া – থাবড়ে দেওয়া, বকে বা তিরস্কার করে থামিয়ে দেওয়া।
দপনে থাকা – যন্ত্রণা ইত্যাদির উগ্রতা কম থাকা, দমিত থাকা। এই ডাক্তারের ওষুদটা খাওয়ার পর যন্তন্নাটা এট্টু দপনে আচে।
দাঁত-থোবনা – দাঁত-থুতনি। দাঁত-থোবনা ভেঙে দোব একদম।
দাগরাজি – কেটে-ছড়ে যাওয়া সম্বন্ধে। দাগসমূহ। কাঁটাকোটার ওপর পড়ে সারা গায় তা দাগরাজি হয়ে গেচে!
দানার বরাত – আয়ু। নেহাত একোনো দানার বরাত আচে তাই বেঁচে ফিরে অ্যায়চে।
দিআসা – দিয়ে আসা। ভবিষ্যৎ রূপ – দিআসব/দিআসবি/দিআসবে।
দিউনি/দুউনি – দিয়ো না।
দুউনি – দুয়ো না (গাই না দোয়ার নির্দেশ)
দুদ-রোজ করা (দুদ-রোজানে) – কারও থেকে রোজ দুধ নেওয়া (অল্প কিছুদিনের জন্যেও হতে পারে)
দুনের – দুনিয়ার। ও এগবারে দুনের অধম (দুনিয়ার অধম, অর্থাৎ তার মতন অধম আর কেউ নেই)। দুনেখেখো – দুনিয়াখেকো। দুনিয়ার সবাইকে যে খেয়েছে অর্থাৎ বাবা-মা আত্মীয়স্বজন কেউ নেই যার। দুনের খজরা – দুনিয়ার খচরা অর্থাৎ খচ্চর। যারপরনাই বদমায়েশ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আদরসূচক প্রয়োগও।
দেখোটে – বেয়াড়া। ও এট্টা দেখোটে ছাবাল ন্যায়!
দেনদারি – দেনাদার থেকে দেনদার হয়ে দেনদারি। দেনা হওয়া, ঋণী হয়ে পড়া।
দে যাতি এইচি – দিয়ে যেতে এসেছি।
দৈবিষ্যাৎ/দৈবিষাৎ – দৈবাৎ, কদাচ, কালেভদ্রে।
দোকা – গরুর মেছলা বসানোর উঁচু জায়গা।
দোকান-পাসাড়ি – দোকান-পসরা (পসারি)। পসারি থেকে পাসাড়ি।
দোয়াল গাই – দুধেল গাই (দোয়া – গাই দোয়া বা দুধ দোয়া)।
দ্যাকতা – বদান্যতা, সৌজন্য। কার দ্যাকতায় আজ করে খাচ্চিস তুই সেটা একবার মনে করিস না!
ধরঙ্গা করা – বৃষ্টি সাময়িক থামা বা ধরা।আগাসটা এট্টু ধরঙ্গা করেচে, এবার বেইরে পড়।
ধারানে – ধরনে-র উচ্চারণ। ধরনে, দৃষ্টান্তে। সে কি আর জানি না, নিজেদের ধারানে বুজতি পাত্তিচি তো।
ধুর – দূর-এর উচ্চারণ। তারপর আমি কৎধুর গেলুন, তোর আর দেকতি পেলুমনি! ঘুঁড়িটা কত ধুরি চলে গেচে দেক!
ধেউড়ে – খুব লম্বা। ধেউড়ে জমি/বাড়ি। ধেউড়ে নোক (লোক) বা ধেউড়ে নম্বা নোক। ধেউড়ে গোয়াল।
নবার – নেওয়ার। ব্যতিক্রমী এক উচ্চারণ। ওর মত নবার আবার কী আচে, ও কি তোমার মুকির ওপর না বলবে! (ওপর – উ. ওপোর)
নয়চা – নয়া, ডাগর।
নাকবাড়ি/নাকসাবাড়ি তপাত – অনেক তফাৎ, প্রভূত পার্থক্য।
নাটাঝামটা – বাধাবিপত্তি, বিপদ-আপদ, ঝক্কিঝামেলা। এ বচরটা (উ. বচোরটা) আমার কী যে নাটাঝামটা গেল!
নাপ/লাপ কাটা – লম্ফ দেওয়া।
নিইগেচে – নিয়ে গেছে।
নিছাক্কারা – নিছক।
নিধাউত – নি-ধাত – ধাত না থাকা, অত্যন্ত ক্লান্ত বা অবসন্ন হয়ে পড়া, আচ্ছন্ন অবস্থা বা জ্ঞান হারানো। বাবা, তুই যে নিধাউত হয়ে পড়লি রে!
নিপিন্ডি – নিবিড়, ঘন, নিশ্ছিদ্র। পুরো ঘরটা অঙে অঙে তা এগবারে নিপিন্ডি করে দেচে! অঙে অঙে – রঙে রঙে।
নিভ্ভরে ঘুমোনো – গভীর ঘুম ঘুমানো।
নিয়েসে – নিয়ে এসে। একইভাবে, দিয়েসে।
নিঅ্যায়ছেল – নিয়ে এসেছিল।
নুট করে শোওয়া – বিশেষ করে মায়ের কোলের কাছে বাচ্চাদের টুক করে শুয়ে পড়া। বাড়ির কোনও কোনও ছোটখাটো পোষ্যরও ওইভাবে শুয়ে পড়া।
নুনির মালা – নুনের অর্থাৎ লবণের মালা। এই সেদিনও বহু ঘরে নারকেলের মালায় নুন রাখা হত রান্নাঘরে খাওয়ার জায়গায়।
নেওন – লেপন। বড্ড নোনা ধরেচে, খইসে দে উনোনটা এট্টু নেওন দিতি হবে।
নেংটা হোল/ হোলা – সম্পূর্ণ উলঙ্গ। ছড়া আছে – নেংটা হোল পাদের খোল/ভাত খাবি তো গত্ত খোল। হোলকোদ্্লাও বলা হয়। মূলত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বলা হয়।
নেচকা (উ. ন্যাচকা) – তরল নয়, শক্তও নয়, নরম কাদা-কাদা ভাব। আটার নেচি (লেচি) থেকে বোধহয়, নেচকা বোঝাতেও ওইটিই আদর্শ।
নেচোয় – নিচে। অত নম্বা দড়ি দাবার ওপরে ভাঙা যাবেনে, নেচোয় চল। অর্থাৎ উঠোনে নেমে দড়ি ভাঙার কথা বলা হচ্ছে। (দড়ি ভাঙা – দড়ি তৈরি করা)
নেতুড় – একের পর এক, পরপর, নাগাড়ে। পঞ্চাশ সালে না খেতি পেয়ে তা নেতুড় দে নোক মরেচে।
নেমপালা – নিয়ম-পালা, নিয়ম পালন; নামমাত্র। মাচ ওসে গেচে দেকতি পাচ্ছিসনি, ওরম নেমপালা করে তেল দিলি হবে! – বেশি করে তেল-মশলা দে গ্যারগেরে না কল্লি খেতি পারবি!
নেম্বর – ইংরেজি মেম্বার। পঞ্চায়েত সদস্য ইত্যাদি।
নোনো – বাচ্চাকে আদরের সম্বোধন।
নোম্বা – লম্বা। হেই আল্লা, তোর ছাবাল তো হেই নোম্বা হয়ে গেচে রে!
ন্যাত্্টানা – ন্যাতাটানা থেকে। পেচনে তোমার কাপড়টা তো ন্যাতটানা খেয়ে খেয়ে যাচ্চে!
পণটাক – পণখানেক, এক পণ অর্থাৎ কুড়ি গণ্ডার মতো (কলা, বিচুলি/বিচালি ইত্যাদির ক্ষেত্রে)। নক্্খি পুজোয় শিন্নি দোবো, পণটাক কলার এট্টা কাঁদি আকিস আমার জন্যি।
পত তুলে/উইটে দাওয়া/উটে যাওয়া – আত্মীয়তা উঠিয়ে দেওয়া/উঠে যাওয়া। পথ থেকে পত। এই হাড়টোকা গত হলি এ-বাড়ির পত তো তোদের উটে যাবে! অর্থাৎ কোনও এক বয়স্ক/বয়স্কা মারা গেলে।
পদীপ/পদীপির (উ. পোদীপির) – প্রদীপ/প্রদীপের।
পব্ব (উ. পব্বো) – কাণ্ড বা নাটক – সীতেআনি ঝেন পব্ব কত্তেচে! পর্ব বা অধ্যায় থেকে। অসাধারণ প্রয়োগ।
পয়সা গায় কামড়ানো – পয়সা খরচ করার জন্যে আঁকুপাঁকু। থামদেন, অত দাম দে কিনতি যাব কেন – পয়সা কি আমার গায় কামড়াচ্চে!
পয়সার হিল্লাট – পয়সার লাট, প্রচুর পয়সা।
পরশুনি – মূলত ফ্যান ঝারার মাটির গামলাসদৃশ পাত্র। ফ্যান গরুর মেছলাতে দিয়ে, ধুয়ে এনে উপুড় করে রেখে দেওয়া হত; সকড়ি করা (এঁটো করা) হত না। আমাদের বাড়িতে কানা-উঁচু বড় থালার মতো পাত্র ছিল তা মূলত মাটির থালাই। (তথ্য-সহায়তা – ঊষা নস্কর, নুরুল্লাপুর, দক্ষিণ বারাশত)
পলকে যাওয়া (উচ্চারণ পোলকে) – খড়, বিচুলি ইত্যাদি মাটি-জলের সংস্পর্শে এসে দুর্বল হয়ে যাওয়া, ছত্রাক জন্মে যাওয়া। খড়ক'টা একেন একিছিলুম, কেরম পলকে গেচে দেক! এট্টু ওদে দে-ওদে দে।
পাঁজা – আভিধানিক অর্থেই, তবে একটু ভিন্ন প্রয়োগে – বাবা, নেপালগার বউ, তা সে একপাঁজা মেয়ে!
পাঁটাচুবুনি (পাঁটা – পাঁঠা) – ঝটপট যেমন-তেমন করে চান করা।
পাকা বজ্জর – মূলত সবজি জাতীয় কিছু অত্যন্ত পাকা এবং পেকে গিয়ে খুব শক্ত হয়ে যাওয়া। যেমন, ঝিঙে, লাউ, মুলো ইত্যাদি পাকলে শক্ত হয়ে যায়। মান্য চলিত বজ্র।
পাকি – স্নেহের সম্বোধন। কী বলব রে পাকি, সে এক কাণ্ড হয়চে। পাকি পাখি-র রূপ।
পাতাকবি – পাতাকপি, বাঁধাকপি।
পাতালি কোলে করে নিয়ে আসা/যাওয়া। দু-হাতের উপর পুরো শরীরটাকে রেখে কোলে করে নিয়ে আসা/যাওয়া।
পান্তাখেকোর বেলা – সকালের যে সময়ে পান্তা খাওয়া হয় সকাল আর দুপুরের মাঝামাঝি সময়। দিনের প্রথম প্রহর বলা যায়।
পামদুল্লো – গাবদাগোবদা, নরম গোলগাল।
পালটো – গোলগাল চেহারা বা ভালো শরীর অথচ গতরকুলষে, অলস, কুড়ে। ও পালটো গতর, এট্টা কুটো নেড়ে খাবেনে! কিংবা, বসে বসে খেয়ে খেয়ে পালটো হচ্চিস – এট্টা কাজের বেলা নয়!
পিট-নাওয়া – হাঁস-মুরগির সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে। ঝুপঝুপ করে বসে পড়ে, ধরা দেয় পিঠ পেতে। হাঁসা বা মোরগের সঙ্গে এটা মিলনের সময়।
পিট-পাওয়া/খাওয়া (পিট – পিঠ) – সচরাচর সিদ্ধধানে রোদ খাওয়ানোর দফা। ধানের পিঠ ফিরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ ধান উপযুক্ত সময়ে এক-একবার উলটে দেওয়া এক-এক পিট। আর দু-পিট পেলি/হলি তোর ধান হয়ে যাবে।
পুঁড়ি কাটানো/দাওয়া – কাস্তে, খড়-কোচা (কুচা) বঁটি ইত্যাদি কামারের 'পান' দেওয়া বা শান দেওয়া – আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে ছেনি মেরে মেরে ঘনঘন দাগের মতো খোপ কাটা। পুঁড়ি ফেলা আবার অনাকাঙ্ক্ষিত – দা-হেঁসো-ছুরির তীক্ষ্ণ ধার কে আর ভাঙা ভাঙা করে ফেলতে চায়!
পেটখোরাকি – পেটের খোরাক অর্থাৎ কেবল খেতে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া।
পেরাক – পেরেক।
পেষাই করে ছাড়া – আচ্ছা করে ধোলাই দেওয়া।
পোঁদ ফিত্তি – মুহূর্তে। শীতকালের বেলা, পোঁদ ফিত্তি আর নি! ফিত্তি – ফিরতি, ফিরতে।
পোন – পৌনের (কোনও পাত্রের তিনভাগ পরিমাণ, অর্থাৎ সিকিভাগ কম) উচ্চারণ। এবেলা পোনঘটিটাক দুদ হয়চে কিংবা পোনপালিটাক চাল বসাও।
পোষ্কার – পরিষ্কার।
ফকোটে – বিনা ব্যয়ে, ফাঁকিতে। ফকোটে খাবি নাকি, কিচু খসা।
ফলফলে – চাষের খেতের নধর শাক বা লতানে শাকসবজির গাছ সম্বন্ধে প্রযোজ্য। নাউগাচটা কেরম ফলফলে হয়ে উটেচে দেকিচিস!
ফাইফুটকি – খানিকটা ফাইফরমাশ অর্থে; টুকটাক ছোটখাটো কাজকর্ম করা। তা নুড়কে ছাবালপোন থাগলি সোংসারে ফাইফুটকি করে না হ্যাগো! (নুড়কে – ছোট ছেলেমেয়ে)
ফাঁটা – ভাঁজা, মেশানো, ফেটানো। তাস ফাঁটা।
ফাবরি মারা – সশব্দে এক-দু-বার ধমক দেওয়া বা হাঁক দিয়ে বকা। সোমানে তড়পাচ্ছেলো, ওর বাপ ফাবরি মেরে উটলি তবে চুক (চুপ) করে। শ্যামলের ওপোর ঝেই ওর বাবা ফাবরি মেরে উটেচে...।
ফুটপাতরে – ফুটপাথে। কী করব, ঝকন দেকব আর চলতেছেনে, এট্টা বাটি নে কলকাতার ফুটপাতরে গে বসব।
ফেকোনো – চিৎকার করে ডাকা। ফেকুচ্চিস কেন? – চিৎকার করছিস কেন?/বারবার জোরে জোরে ডাকছিস কেন?
ফেরেঙ্গা – ডালপালা ইত্যাদি যেখানে দু-ভাগ হয়েছে বা তিন-চার ভাগ। দু-ফেরেঙ্গা, তে-ফেরেঙ্গাও বলে।
ফোর-করে দাওয়া – ফুরিয়ে দেওয়া। অতটা গুড় দুজনে খেয়ে তো ফোর করে দিলি!
বউটা, কিন্তু বরটা বলা হয় না সচরাচর – 'সেই ওগা-করে বউটা আসত ন্যায়, তাস্যঙ্গে দরকার আচে তাই বসে আচি।' – এক মহিলার প্রশ্নের উত্তর এটি আর এক মহিলার। ব্যাপারটা কোনও পুরুষ সম্বন্ধে হলে কিন্তু বরটা বলা হয় না, বলা হয় নোকটা অর্থাৎ লোকটা। (বড়জোর বউটা-র জায়গায় মেয়েটা প্রচলিত)
বকিল (উ. বোকিল) – কৃপণ, কিপটে।
বগ্্নি – বউনি।
বচর-খোঁড়া/বচ্ছোর-খোঁড়া করা – বছরে সাধারণত একাধিকবার খাওয়া বা করা হয় এমন কিছু কোনও নির্দিষ্ট বছর ফাঁকা যেতে না দিয়ে কোনও জিনিস অন্তত একবার খাওয়া বা কোনও কাজ অন্তত একবার করা। বচরগার (বা বচ্ছোরগার) জিনিস, তা আমাদের ছাবালপোন ঘরের আনাঅস মুকি তুলবে! ওদের নাকি গাল চুলকোয়! ওইজন্যি, তা দাম বল্লি আর কী করব – বলি এট্টা আসামের আনাঅস নে যাই, বচর-খোঁড়া করবেনে তা বলে! (বচর – উ. বচোর)
বচ্ছরগার দিন – বছরের নির্দিষ্ট দিন – সাধারণত উৎসব-অনুষ্ঠানের।
বাঁধা বাউনি – পৌষ সংক্রান্তির দিন বাউনি গড়ে, পুজো দিয়ে গোলা, ঘর, গোয়াল ইত্যাদিতে ফেলা।
বাকুল – বাসস্থানের জায়গা, বসতবাটী। আমাদের এখানকার মুসলমানদের ব্যবহৃত। বাকুলি যাতি যাতি আত হয়ে যাবে গো বু।
বাজার-ভাব – মড়ক, মূলত ওলাউঠা, বসন্ত ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব এবং ব্যাপকতা।
বাজি/বাজান – বাপজান। মূলত এতদঞ্চলের মুসলমানরা এই সম্বোধন করে বেশি।
বাফারাক/বাফ্যারাক জায়গা – একটু বাড়তি জায়গা, সামান্য পরিসরযুক্ত; সুপরিসর বা সুবিধাযুক্ত জায়গা নয়।
বাসফুট – আভাস, লক্ষণ, ইঙ্গিত। সত্যি বলতিচি বোন, ঘরের পাশে এত বড় ঘটনা হলিও আমরা এট্টুও বাসফুট পাইনি। অর্থাৎ যেন কোনোরকম বাস বা গন্ধ ফুটে ওঠেনি বা দাগ দেখা যায়নি।
বাস্তে না হাগানো – বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়া বা আপ্যায়িত না করা, পাত্তা না দেওয়া। ওর আর আমি বাস্তে হাগাই হ্যারে!
বুন – বোন অর্থাৎ ভগ্নী। আমাদের প্রতিবেশী মুসলমানদের উচ্চারণ।
বেইয়ে দাওয়া – কাছাকাছি ছুড়ে দেওয়া। একটু ভদ্দরআনা উচ্চারণ বাইয়ে দেয়া।
বেগোড়বাঁই – কারসাজি; ছলচাতুরি করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা; বেয়াড়াপনা।
বেজ্্না – বিছানা।
বেনুন/ব্যানন হাঁড়ি – ব্যঞ্জন বা বেন্ননের হাঁড়ি (সাধারণত ছোট আকারের)
বেরগে পড়ি – বেরিয়ে পড়ি, কোথাও বার হয়ে পড়ি। (স্থানীয় মুসলমানের মুখে এমন উচ্চারণ শুনেছি কখনও কখনও)
বেলান্তে করা – বেলা অন্ত করে অর্থাৎ শেষবেলা অবধি কাজ করা। 'চৌফুরে'র অনুরূপ, সকাল থেকে কাজ করে সাধারণত আড়াইটে-তিনটে নাগাদ (বা দুটো) ছাড়া। না, ওরা আজ বেলান্তে করে বাড়িই আসবে।
বোস থাকা – বসে থাকা। ঘরে বোস থেকে কেন খালি সুদ টানি! কিংবা, বাবা, অতক্ষণ বোস থাকতি হবে!
ব্যাভার – ব্যবহার। এটা কি এট্টা মানষির মতন ব্যাভার হল!
ভয়তরাসে – ভীতসন্ত্রস্ত।
ভাগ্ন ধরে যাওয়া (উ. ভাগ্নো) – ভগ্ন থেকে।
ভানকি – ভানার (ধান। চিড়েও বা) মজুরি।
ভায় – দিক, গতিমুখ। এই ভায় দে চলো না, অত বেড় দিচ্চ কেন? বেড় – ঘুর, বেষ্টন, পাক। বেড় দে – ঘুরপথে। ভায় ভায় – পরপর সব গুছিয়ে। ও ভায় ভায় সব বলে দিচি, অসুবিদে হবেনে।
ভারবোজা (বোঝা থেকে বোজা) – বহুত দায়ভার যা বহন না করার ইচ্ছা বা অপারগতা। ভাগনিটা ভারবোজা হয়েছেল তাই দেকল কি দেকলুনি বে দে দেল।
ভিদরি/ভিদরে – ভিতরে। (দ-এ হসন্ত উচ্চারণ)
ভুগলুমি – ভুলভাল কথা, হামবড়াই ভাব। তুই বল্লি আর আমি ওই বিশ্বাস কল্লুম, যা ভুগলুমি মারিস তুই!
ভুর – অনেক বাঁশ (একশো-দেড়শোটি)একসঙ্গে বেঁধে খাল বা নদীতে ভাসিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া। (ঋণ – বিমল গায়েন, ঘনশ্যামপুর)
ভুলকোনো – বারবার পাতলা পায়খানা করা। ভুলকুনি – বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া। আতদিন ভুলকুচ্চিস আর ওই তেঁতুলগুনো খায় কেউ হ্যারে! ভোলকানি – খুব পাতলা, তরলপ্রায়। ওইটোকা আটায় অদ্্গুনো জল দেয় নোকে, এগ্্বারে ভোলকানি করে ফেলিচিস তো! ও গোবরটা নিতি পারবিনি – এগ্্বারে ভোলকানি।
ভেঁইয়ে – ভাঙিয়ে। গোমকোটা এট্টু ভেঁইয়ে এনে দে না রে বাপ। (এখানকার মুসলমানদের উচ্চারণ, জেলার অন্য কোথাও কোথাও হিন্দুদের মধ্যেও চল আছে) গোমকোটা – গমক'টা।
ভেজাল (উ. ভ্যাজাল) – ব্যস্ততা, ভিড়, ঝামেলা। একন শীত থাকতি থাকতি পাকা দুটো সেইরে আনি, না হলি গরম আসলি নোকের ভেজাল হয়ে যাবে (পাকা – পাখা, ফ্যান)। কিংবা, একন হবেনে, একন আমার অনেক ভেজাল আচে।
ভেন্নভাতে পাড়াপড়শি – পাড়া-পড়শি মানেই যেমন একভাতে নয় তারা, তেমনই ভিন্নভাত হয়ে গেলেই যেন পাড়া-পড়শির মতো হয়ে পড়ে সম্পর্ক। একান্নবর্তী পরিবারে আলাদা হাঁড়ি-কাড়া অর্থাৎ আলাদা রান্নাবান্না শুরুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এটি।
ভোগলাস/ভোগলেস – বড় ছেঁড়া-গর্ত (জামাকাপড়, বস্তা ইত্যাদিতে)
ভোতর – ভিতর। কলসির ভোতরে হাত ঢুইকে দে দেক না। (উ. ভোতোর)
ভোল – টালি, অ্যাসবেসটস ইত্যাদিতে গর্ত। ঘরের চালে বেল পড়ে এট্টা খোলায় অ্যাদ্্বড় এট্টা ভোল হয়ে গেচে!
মই-মাড়ান - ক'জন মিলে মুলোবাড়িটা তা মই-মাড়ান করেচে! মই-মাড়ান করে খাওয়া। মূলত, মাড়িয়ে মই-দেওয়ার মতো অবস্থা করা।
মদ্দামদ্দির চাষ – প্রাকৃতিক কারণে যে-বছর চাষ (অবশ্যই আমন ধানের) খুবই কষ্টের, 'নাটাঝামটা'র।
মদ-মাতালে – মদে মাতাল যে, একাধিক মদখোর সম্বন্ধেও প্রয়োগ করা হয়। যত সব মদ-মাতালের কাণ্ড!
মনযাইমতন – মন যা চায় সেইমতন, আপন মর্জিমতো। তুমি কারোর কতা শুনবেনে, নিজের মনযাইমতন চলবে তা একন আমাদের বল্লি কী হবে!
ময়তা – সেরা, ভালোটি। ময়তা ময়তাগুনো শুদু তুমি খাবে! ময়তা ময়তা খেয়ে নোকের নোব বেড়ে গেচে। (লোকের লোভ)
মহাবেদ্দি – মহাব্যাধি।
মাচির মাতার মতন নোক – প্রচুর লোক, অত্যন্ত ভিড়। কেরম নোক হয়চে? বাবা, সে কেবল মাচির মাতা-মাচির মাতা!
মাটগুদোম – মাটি + গুদাম। ও কী উনোন করিচিস, এগবারে মাটগুদোম! পাদলা করবি তো – উনোন তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যাবে, জ্বলবে দেকতি হবে!
মাতা-মুড় গুঁজে – কোনও প্রকারে। সামনে মেয়ের বে-টা মাতা-মুড় গুঁজে দে নিতি পাল্লি এট্টু নিশ্চিন্ত হই।
মাসাক্কারণ – মাসভর, একমাস ধরে। মাসের কারণ থেকে।
মুক-নাড়া দাওয়া – তিরস্কার করা, কটূকথা বলা। (মুক – মুখ)
মুগরোমুগরি – উপর্যুপরি (মুগুরের পর মুগুর থেকে); একটানা প্রচুর পরিমাণে কোনও কাজ হওয়া। একন তোদের বাড়ি গেলি আমার হবে, মুগরোমুগরির গাদিপেটা চলতেচে। গাদিপেটা – গাদার বিচুলি/বিচালি পেটা বা ধানঝাড়াই।
মুড়-ভাবা দাওয়া – মান্য চলিত ভাপা। অল্প একটু ভাপিয়ে নেওয়া।
মেজা – চটকানো, চটকে মাখানো। ভাতক'টা মিজে নে, দুদ দিই।
মোতো – মধু বা আকর্ষণ। কী মোতো প্যায়চে তা কে জানে, দু-বেলা দেকো সেকেনে ছুটতেচে! এখানে সেকেনে বা সেখানে মূলত তার বা তাদের কাছে। এই মোতো মতো-র মতো উচ্চারণ নয়, মো-র উপর জোর থাকে।
মোনো মারা – পোঁদ মোনো মেরে যাওয়া। শুকিয়ে ওঠা, দুর্বল হওয়া, শীর্ণ হওয়া।
-য়েই – 'খন। খাইয়েই, যাইয়েই, করিয়েই...। খাব'খন, যব'খন, করব এখন...
আঙএঙে/রাঙরেঙে অবস্তা (রঙে রাঙা থেকে যেন) – খুব ভালো আর্থিক অবস্থা। বাবা, তকন ওদের কী আঙএঙে অবস্তা!
লচ – লস (loss)। সবে নতুন বইচি বাজারে, একন লচে আন কত্তেচে। loss -এ run.
লট মাল – শেষগুড়ুন্তে মাল, গাছের শেষের দিকের ছোট ছোট বা দেখনাই নয় বা উৎকৃষ্ট নয় এমন সবজি, ফল ইত্যাদি। লাটের মাল মানে সবসুদ্ধ বা সবরকম মিলিয়ে সমস্ত মাল।
শাকপাজড়া/শাকপাচড়া – শাক-পাতা।
শুদু-আল্লো – শুধু-আলুনি, লবণ ইত্যাদি ছাড়া। নিছাক্কা শুদু-আল্লো পান্তা ভাল্লাগে, বল! কেবল আল্লো লবণহীন, কিন্তু শুদু-আল্লো বলতে লবণহীনতার চেয়ে আনুষঙ্গিক জিনিসের অভাব বোঝায় বেশি। যেমন, পান্তার ক্ষেত্রে কোনও কিছু ভাতে বা পোড়া, তরকারি ইত্যাদি।
শেলোষ্যা – শ্লেষ্মা। ইতু পল্টাচ্চে ন্যায়, ও সড়দি-শেলোষ্যা এট্টুআদটু হবে একন ছাবালপোনেদের।
শোঁসা – শশা।
শ্যাম্বল বন্ন – শ্যামল বর্ণ। শ্যাম্বল উচ্চারণ করলেও অনেকেই উচ্চারণ করেন বর্ণ-ই। বলা বাহুল্য, শ্যাম্বল বর্ণ মাজগেতে অর্থাৎ মাঝারি রং – না বেশ ফরসা, না বেশি কালো – বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়।
সকালে-বেলা – সকালবেলাকার বেলা, সকালবেলা। (বলার একটা ধরন)
সব্্গোল – সম্পূর্ণ গোলাকার, পুরো গোল।
সব গোল ঘুঁইচে – সব গোলোযোগ ঘুচিয়ে। সব গোল ঘুঁইচে সামান্য ক'টা টাকা, ও তুই দে দেদেন।
সাজার-জায়গা/পুকুর – জ্ঞাতিগোষ্ঠী বা অনেকের অংশ আছে এমন জায়গা বা পুকুর।একাধিক মালিকের।
সানা – কাজে আসা, সারা। ও ডাক্তারের ওষুদি আমার ভালো সানে না।
সাবাঙ – সাবান।
সিদ্্নে – সেদিনে, সেদিন। সিদ্্নে তুই আসবি বলে আর এলিনি!
সুপোট – সুগম, যাতায়াতের সুবিধা এমন, ভালো রাস্তাঘাট ইত্যাদি আছে এমন, যোগাযোগের সুবিধাজনক অবস্থান। বিপরীত – কুপোট।
সেঙা – সেলাই করা। বেলা দুকুর অব্দি কাঁতা সিঙতিচিস, তা আঁদবি ককন! (ককন – উ. ককোন)
সোমাজ – সমাজ। আসলে সামাজিক অনুষ্ঠান, লোক-খাওয়ানো, সমাজ-খাওয়ানো বলারও বহুল প্রচলন আছে। আজগের সোমাজ, আর আজগের কলকেতায় তোমার যেতিই হবে! (এখানকার মুসলমানরা সোমাজ উচ্চারণ করে, জেলার অন্য কোথাও কোথাও হিন্দুরাও। এখানকার হিন্দুরা সাধারণত সমাজ উচ্চারণ করে)
সোর যা – সরে যা (সরে যেতে বলা হচ্ছে)। সোর যাও বেশির ভাগ সময়েই উচ্চারিত হয় সোজ্জাও।
সৌগুনি/সৌকুনি – সৌখিন।
স্যায়না – বড়সড় হয়ে যাওয়া (মূলত ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে)। সেয়ানা থেকে, যদিও সেয়ানা অন্য অর্থেই ব্যবহৃত হয় বেশি, অর্থাৎ চালাক অর্থে।
হইগই – সঙ্গে 'নি' বসবেই, অর্থাৎ নেই বা অপ্রতুল অর্থে। খানিকটা লক্ষণ বা চিহ্ন অর্থও নির্দেশ করে যেন। প্রয়োগ দেখলে আন্দাজ করা যাবে – পুকুরি মাচের হইগই নি, সারাবেলা জাল ফেলে যাচ্চে! কাজের হইগই নি।
হড়দম – হরদম।
হরেন – ইংরেজি হর্ন। এই, সামনে গাড়ি, হরেন দে-হরেন দে।
হাঁকাই – হাঁকের সঙ্গে তেমন সম্পর্কিত নয়, – হাঁকাই করে চাড্ডি নাওয়ার বেলা নিচিস, আর একন খাবুনি বলতিচিস! হতে পারে হাঁকডাক করে নিয়ে শেষে খেতে না পারা।
হাঁচা/হাঁচামাচা করা – আন্দাজে খোঁজা, মূলত অন্ধকারে বা জলের মধ্যে দুই হাতের সাহায্যে কোনও কিছু সন্ধান করা। ডোবায় হাঁচা করে ক'টা বিলমাচ ধল্লুম। (বিলমাচ – বিলের মাছ, চ্যাং-ল্যাঠা-কই-নয়না-শোল ইত্যাদি-সহ চুনোপুঁটি)
হাঁচড়-পাঁচড় (উ. হাঁচোড়-পাঁচোড়) – নিজেকে হিঁচড়ে টেনে কোনও প্রকারে কোনও প্রতিকূল জায়গা থেকে উঠে আসা বা বেরিয়ে আসা। বাবা, হাঁচড়-পাঁচড় করে কোনোকেরমে (কোনোক্রমে) উটে এইচি!
হাঁটকানো – ঘাঁটা, ঘাঁটাঘাঁটি করা। যাঃ, আমি জামাকাপড়গুনো গুইচে আকলুম/আকলুন আর তুই সব হেঁটকে দিলি!
হাঁড়ুস হাঁড়ুস করে খাওয়া – একমনে গোগ্রাসে কাঁচা সবজি, ফল বা ঘাসজাতীয় কিছু খাওয়া। হাঁড়ুস হাঁড়ুস/হাঁড়োস হাঁড়োস করে চুলকানোও হয়।
হাঁদোস – বড় বা মোটা গর্ত।
হাত-নম্বা (লম্বা) – খরুচে হাত, অমিতব্যয়ী। হাত-খরুচেও বলা হয়। ওইরম হাত-নম্বা করে চলবি আর অভাবে পড়লি তকন কী করবি?
হাত পুইড়ে খাওয়া – বাড়িতে বিশেষত পুরুষদের রেঁধে খাওয়া (অনভ্যস্ত বা অভ্যস্তও হতে পারে। ভাবটা যেন, মহিলার কাজ পুরুষকে করতে হচ্ছে)
হাত-হিঁচুড়ি – টুকটাক হাতিয়ে নেওয়া, হাতটান। হাত-হিঁচুড়ে/হিঁচড়ে/হিঁচোড়ে – উক্ত স্বভাবের। ভালা হাত-হিঁচুড়ের কতা এনিচিস তুই মাজখানে! মাজখেনে-ও উচ্চারিত।
হাতাহাতি – না, হাত দিয়ে পরস্পর মারামারি নয়, হাতে হাতে অর্থাৎ পাঁচজনে হাতে হাতে কোনও কাজ সেরে নেওয়া। হ্যাঁ, হাতে হাতে থেকে হাতাহাতি উচ্চারিত হয়।
হালুকচালুক – মোটামুটি খাওয়া-চলাফেরায় সক্ষম। গোরুটা দু-দিন ধরে দাঁতে কুটোটা কাটেনে, ওষুদ খাওয়াতি, আজ থেকে এট্টু হালুকচালুক কত্তেচে।
হিস্যদিকি জ্ঞান না থাকা – ভালো-মন্দ, ছোটবড় জ্ঞান না থাকা বা কাণ্ডজ্ঞানের অভাব। হ্রস্ব-ই দীর্ঘ-ঈ থেকে হ্রস্বিদীর্ঘি ইত্যাদি হয়ে বোধহয়। অথবা হ্রস্বদীর্ঘজ্ঞান না থাকা থেকে।
হুঁদরে ওটা – (চোখ-মুখ সম্বন্ধে) ফুলে ওঠা, ফোলা ভাব। মুকি দুটো বলতা কেমড়ে চোক-মুক কের'ম হুঁদরে উটেচে দেক না ছাবালের! বেশি ঘুমের ফলে চোখ-মুখ ফোলা-ফোলা হয়ে উঠলেও বলা হয়ে থাকে।
হেঁটু – হাঁটু। হেঁটুই ব্যতা, বসতি পাত্তিছিনি।
হেউত করে করা – মনে করে, খেয়াল করে, দায়িত্ব নিয়ে কোনও কিছু করা। ওর কতা বাদ দাও, বাবা, তুমি হেউত করে না কল্লি ও কাজ আর হবেনে।
হেড়ো সেঁটে যাওয়া – যে কাজ করা খুবই কষ্টকর। হেড়ো হাড় থেকে বোধহয়।
হেবড়ে – গোড়া-হেবড়ে কাট, গোড়া-হেবড়ে কাট। মাটির যতটা সম্ভব গায়ে থেকে ধানগাছ ইত্যাদি কাটা।
হোলুই মেরে ওটা – অনেকে একসঙ্গে কাউকে বা কিছু নিয়ে চিৎকার করে ওঠা।
হ্যাঁকাতে – একবগ্গা, একরোখা, বেপরোয়া, হাঁকডাকপ্রবণ, কারও কথা গ্রাহ্য করে না যে। হুঁডরো-হ্যাঁকাতে/হুঁটরো-হ্যাঁকাতে এসবেরই আরও বেশি অর্থে।
হ্যাঁকোর হ্যাঁকোর – একরকম কাশির আওয়াজ। হ্যাঁকোর হ্যাঁকোর করে আতদিন কাশতোচো তেবু বিড়ি না ফুঁকুলি তোমার চলবেনে!
হ্যামস্যাম – হিমসিম। আর বলিসনি, ঝে ভারী হয়চে! এইটোকা পত আসতি হ্যামস্যাম খেয়ে গেলুম/গেলুন/গেলুঙ।
* * *
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন