সত্যের আড়ালে বিকেলে
সুচন্দ্রা বসু
দ্রুতগতিতে রাস্তা দিয়ে ছুটছিল বাসটি। যে ভাবে যাত্রীরা ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছিলেন, সেই দৃশ্য দেখে ভয়ে আতঁকে উঠি আমি। এমন দৃশ্য দেখার পরই মনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে,কেউ ছিটকে পড়বে না তো?
দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর জন্য অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। ফলে ভিড় গাড়িতেও উঠতে এক মুহূর্ত ভাবে না। এই জন্য অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করি। বিকেলে আমায় প্রতিদিন যেতে হয়ে ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট করাতে।রোজ বিকেলে ভীড় বাসে উঠতে একই সমস্যায় পড়তে হয় আমাকে।
একদিন বিকেলে আমার পাশে কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিল। ভিড়ে ঠাসা বাস
এসে থামতেই হাতল ধরে তারা ঝুলতে ঝুলতে সেই ভিড়ের মধ্যেই দেখলাম উঠে পড়ল।
ছেলেগুলোকে ঝুলে যেতে দেখে শিউরে উঠলাম। সে সময় এক স্কুলপড়ুয়া হাত ফস্কে রাস্তায় আছাড় খেয়ে পড়ে গেল। সৌভাগ্যবশত পিছনে কোনও গাড়ি ছিল না সে যাত্রায় বেঁচে গেছে।
আমি এ কারণে ভীড় বাসে উঠেতে পারি না। তাই সময়ের আগে বাড়িতে থেকে বেরিয়ে কখনও
হাঁটতে,হাঁটতে যাই।কোন কারণে বেরতে দেরি হয়ে গেলে সেদিন বাধ্য হয়ে রিকশা চেপে যেতে হয়।
সেদিন ছেলেটা রাস্তায় পড়ে গেল দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। থেরাপি সেন্টারে না গিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
পরদিন সকালে মিতালির ফোন পেলাম। মিতালি জানিয়েছে,জানিস কাল তো আমার ফ্ল্যাটে একটা
দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমার নীচের ফ্ল্যাটের ছেলেটা কাল বাস থেকে পড়ে গিয়ে বাঁ পাটা ভেঙে বাড়ি ফিরেছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি কাল বিকেলে দেখেছি ঘটনাটা।
তুই কি করে দেখলি।
আমি ওই সময় থেরাপি করতে যাচ্ছিলাম।
তাই নাকি?
হ্যাঁ দেখে মনটা এতো খারাপ হয়ে গেল যে, থেরাপি সেন্টারে আর যেতে পারলাম না।
বেশ করেছিস জানিস তো ভদ্রলোকের একটাই ছেলে । পা-টা কাটা গেলে কি হবে বল তো?
হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। তবে জানিস তো, দোষটা ছেলেটারই ।
এ কথা বলছিস কেন?
সাহস দেখে অবাক হই আমি। ভীড় বাসে একদম জায়গা নেই দেখেও ছেলেটি হাতল ধরে ঝুলে পড়েছিল।
বাস স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করতেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে ছিটকে নীচে পড়ে গেছে ছেলেটি।
কি কান্ড বলতো?
ওর বাবা,মা সেকথা জানেই না।তাই তো ওরা বারবার ড্রাইভারের দোষ দিয়ে রাশ ড্রাইভিঙের অপবাদ
দিচ্ছিল।
হ্যাঁ রে, এভাবেই সত্য আড়ালে চাপা পড়ে যায়।
আচ্ছা রাখি, এখন অনেক কাজ পড়ে আছে।
হ্যাঁ, রাখ।
================
সুচন্দ্রা বসু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন