google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। মেন্টাল ।। চন্দন মিত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অণুগল্প ।। মেন্টাল ।। চন্দন মিত্র

মেন্টাল

চন্দন মিত্র

 

অত বড়ো অফিসার তবু বাড়িতে কোনো মান নেই। কথায় কথায় বউ মেন্টাল বলে খোঁচা দেয়। মেয়ে অবশ্য সরাসরি বলে না, রেগে গেলে মায়ের রেফারেন্স টেনে বলে, এইজন্যই মা তোমাকে ড্যাস বলে। না, শব্দটি সে ভুলেও উচ্চারণ করে না কখনও।
    শনিবার অফিস-ফেরতা নির্মলবাবু গেলেন মাছবাজারে। তাঁকে দেখে নিরঞ্জন একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্যার আসুন আসুন একেবারে কাঁচা ইলিশ দেব এই গঙ্গার। নির্মলবাবু, নিরঞ্জনের বাঁধাধরা কাস্টমার, কদাচিৎ অন্য দোকান থেকে কেনেন। সে অবশ্য নিরঞ্জন হাত দেখালে তবে। যেদিন ভালো মাছ থাকে না, সেদিন নিরঞ্জন নির্মলবাবুকে হাত দেখিয়ে দেয়। থার্মোকলের বাক্স থেকে প্রমাণ সাইজের ইলিশটি বের করে ডালার উপরে রাখে নিরঞ্জন। বরফের কুচি মাখা রুপোলি শরীর বিজলি বাতির ছটা পেয়ে ঝকঝক করছে যেন এখনো প্রাণ আছে। নির্মলবাবুর চারপাশে ভিড় জমে যায়। জোড়া জোড়া চোখ থেকে অদৃশ্য জিভ বেরিয়ে সেই রুপোলি শরীরখানি চেটে নিতে চায়। নির্মলবাবু কিছু বলার আগেই নিরঞ্জন পাল্লায় চাপিয়ে দেয় সেই পেল্লাই সাইজের ইলিশটিকে। পাল্লায় শুয়ে সেই সুন্দরী এমন ভাব দেখায় যেন সে তার দাম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তার চোখের দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় তার দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্যের ইঙ্গিত। অর্থাৎ যতই দেখ না কেন  আমায় কিনতে পারবে না।
    স্যার, দেখুন দেড় কেজিরও বেশি। আপনি দুহাজারই দিন। নির্মলবাবু নিঃশব্দে টাকাটা মিটিয়ে দেন। কিন্তু তাঁর মাথার ভিতরে চিন্তারা পাক খেতে থাকে। এত বড়ো একটা ইলিশ মাছ নিয়ে তিনি কী বা করবেন। বাড়িতে মোট তিনজন লোক। তাছাড়া অমন একটা ইলিশ মাছ ভাজলে গন্ধ ছড়াবেই। নিতান্ত বালক দুই ভাইপোর মনে খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে। ইদানীং ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ফলে দিতে গেলে হয়তো নেবে না, খামোখা ঝগড়া বাধবে। প্রতিবেশিদের যা অবস্থা তাদের পক্ষে ইলিশ কিনে খাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। আপদেবিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে নির্মলবাবু কখনোই দ্বিতীয়বার ভাবেননি। এইসব ভালোবাসার মানুষদের টানেই তো সহধর্মিণীর দেওয়া মেন্টাল শিরোপা শিরোধার্য করেও গ্রামে থেকে  গেলেন নির্মলবাবু। তবে ইলিশ কিনে খাওয়ানো কেমন যেন আদিখ্যেতা বলে মনে হয় তাঁর কাছে। অথচ ইলিশ ভাজার গন্ধটা তাদের নাকেও পৌঁছে যাবে। এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়ে ইলিশ খাওয়া অনৈতিক। এতসব কথা তিনি নিরঞ্জনকে বলতে পারবেন না, বলবেনই বা কেন ! এতবড়ো ইলিশ হয়তো নিরঞ্জন কাউকে বিক্রি করতে পারবে না, তাই নিরুপায় হয়ে তাঁকেই ধরেছে। তাছাড়া এতগুলো লোকের সামনে নিরঞ্জনকে না-বলার মানে তাঁর নিজের মানটুকু ভরাবাজারে জলাঞ্জলি দেওয়া। 
স্যার, কেটে দিই ?
না, না, থাক কাটতে হবে না।
তাহলে ব্যাগ দিন।
ব্যাগ থাক, তুমি বরং একটা পলিথিনে দিয়ে দাও।
স্যার, আপনি তো পলিথিন...
আজকে লাগবে।
    পলিথিনের প্যাকেটে মাছটি নিয়ে নির্মলবাবু হনহন করে হাঁটতে থাকেন। তাঁর চলে যাওয়ার পথের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নিরঞ্জন। আজকে স্যারের আচরণ কেমন যেন অস্বাভাবিক ঠেকে তার কাছে। স্যার তো কোনোদিন মাছ না-কেটে নিয়ে যান না, তাও আবার পলিথিনের প্যাকেটে ! নিরঞ্জনের মাথায় বেশিক্ষণ কোনো ভাবনা টিকে থাকতে পারে না। একদামে অতবড়ো ইলিশখানা বেচতে পেরে সে খুশিতে ডগমগ হয়ে একটি সিগারেট ধরিয়ে ফেলে। 
    নির্মলবাবু বাড়ির দিকে না-গিয়ে উলটো দিকের পথ ধরেন। মিনিট দশেক হেঁটে তিনি গঙ্গার ঘাটে পৌঁছে যান। উপরের দিকে হাওয়া-বিলাসী নারীপুরুষের ভিড়। ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে নির্মলবাবু জলের কাছে পৌঁছে যান। না, লোকজন কেউ নেই। পাড়ের মাস্তুলবাতির কিছুটা আলো জলের উপর পড়েছে। নির্মলবাবু একবার উপরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নেন, কেউ দেখছে কিনা। তারপর প্যাকেট থেকে সন্তর্পণে মাছটি বের করে তার লেজ ধরে জলে ভাসানোর চেষ্টা করেন। জোয়ারের স্রোত পেয়ে মাছটি মালিন্য মুক্ত হয়। আচমকা নির্মলবাবু হাতে একটা ঝটকা পেয়ে অবাক হয়ে দেখেন মাছটি তাঁর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে ক্রমশ জলের গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এক অনাবিল আনন্দে নির্মলবাবু আঁজলা ভরা জল নিয়ে মাছটির প্রস্থানপথের দিকে ছিটিয়ে দেন।                       
====================
 

চন্দন মিত্র

ভগবানপুর (হরিণডাঙা)

ডায়মন্ড হারবারদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

সূচক - ৭৪৩৩৩১

1 টি মন্তব্য: