আমাদের স্বাধীনতা : প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি
সুবীর ঘোষ
এ বছর ২০২৪-এ আমাদের স্বাধীনতার ৭৭ বছর পূর্ণ হল। স্বাধীনতা মানে স্ব-অধীনতা বা স্বীয় অধীনতা। স্বাধীন মানুষ দেশের আইনকানুন, নিয়মনীতির মধ্যে থেকেও তার নিজের ইচ্ছামতন জীবনযাপন করে। স্বাধীনতাহীনতার অনেক উদাহরণ আমরা ইতিহাস থেকে জেনেছি। এই পৃথিবীতে একসময় ক্রীতদাস প্রথা চালু ছিল। এই বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি বিশ্ববিখ্যাত বই আছে---'আঙ্কল টম'স কেবিন' নামে। ১৮৫২ খৃষ্টাব্দে এই বইটি লিখেছিলেন আমেরিকার মহিলা লেখক হ্যারিয়েট এলিজাবেথ বিচার স্টোয়ে। এই বইটি ক্রীতদাসপ্রথা অবলুপ্ত হওয়ার পেছনে যথেষ্ট প্রভাববিস্তার করেছিল।
প্রথমে বাণিজ্য করতে এসে মোঘল বংশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত শাসনের অধিকার দখল করে। ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনস্থ উপনিবেশে পরিণত হয় । সুদীর্ঘ ১৯০ বছর এই পরাধীন সময়ের মেয়া।
নানা ঘটনার অভিঘাতে এবং নানা কারণের মিলিত সমাহারে ভারত ছেড়ে একদিন ব্রিটিশরা চলে গেল। আমরা স্বাধীনতা পেলাম। যাবার আগে ব্রিটিশ শাসকেরা দেশটাকে দুভাগ করে দিয়ে গেল। এটাই পরাধীনতার সর্বোচ্চ গ্লানি যে দেশটা আমাদের অথচ তার ভৌগোলিক সীমানা নির্ধারণ করে গেল একটা বিদেশী শক্তি। স্বাধীনতার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীতে আমাদের ফিরে দেখা খুব দরকার আমরা কী পেলাম আর কী পেলাম না।
প্রাপ্তি
১) নিজের দেশ নিজে শাসন করার অধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ; পরবর্তীকালে আধারকার্ডের মাধ্যমে অনন্য পরিচয়পত্র
২) কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ও দুগ্ধ সরবরাহে শ্বেত বিপ্লব
৩) দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা থেকে নানান ভারী মাঝারি ও কুটির শিল্পের বিস্তার, নগরায়ন ও গ্রামে গ্রামে বিদ্যুদয়ন
৪) রেল ও রাস্তা সম্প্রসার, মেট্রো রেল এবং পর্যটনে ব্যাপক উন্নতি
৫) বৃক্ষরোপণ, পরিবার পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, পানীয় জল, নদীবাঁধ, সেচ, উন্নত শস্যবীজ, পশুপালন, মৎস্যচাষ, স্বগৃহ ও শৌচালয় ইত্যাদি জনমুখী প্রকল্পের বিকাশ
৬) বন্যপ্রাণী ও বনসম্পদ সংরক্ষণ
৭) কয়লা ও ব্যাঙ্কিংব্যবস্থার জাতীয়করণ
৮) ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীসহ প্রতিরক্ষায় শক্তিঅর্জন
৯) পরমাণু, মহাকাশ গবেষণা ও বিজ্ঞানের নানা শাখায় ব্যাপক অগ্রগতি, দেশে টেলিভিশন, টেলিফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের বিস্তৃত ব্যবহার ও প্রয়োগ, চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি
অপ্রাপ্তি
১) দেশভাগ ও উদবাস্তু সমস্যা, পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের সর্বসান্ত হওয়া, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও মৃত্যু
২) কাশ্মীরের এক অংশ পাকিস্তান-দ্বারা দখল এবং চিরস্থায়ী উৎপাত ও আক্রমণ
৩) ১৯৬২-র চীন যুদ্ধে ভারতের পরাজয়
৪) কালোবাজারির ক্রমবিকাশ এবং আর্থিক বৈষম্য; দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা ও উৎকোচের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কাজকর্মে শৈথিল্য
৫) মুদ্রাস্ফীতির ফলে আতঙ্কিত জনজীবন
৬) নির্বাচনে রিগিং ও বাহুবলে নির্বাচনে জয়
৭) সংখ্যালঘু মানুষ ও নারীদের ওপর নির্যাতন
৮) হাওয়ালার মাধ্যমে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার এবং ব্যাঙ্কের বিপুল ঋণ পরিশোধ না করে বিদেশে পলায়ন
৯) ভয়াবহ বেকারত্ব, কর্মহীনতা এবং কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া
১০) ৭৭ বছরেও নেতাজী অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন করার মতো প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাব
আমরা সকল দুর্নীতি ও অপশাসন – মুক্ত এক ভারতবর্ষকে দেখতে চাই । এক অবিচার-অনাচারের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে আর এক অবিচার-অনাচারের দুনিয়াতে যাবার জন্যই কী আমাদের এত এত স্বাধীনতা – সংগ্রামী তাঁদের অমূল্য প্রাণ বলিদান দিয়েছিলেন ?
_____________________________________________________________________________
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন