Featured Post
অণুগল্প ।। স্বাধীনতা ।। সুমিতা চক্রবর্তী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
স্বাধীনতা
সুমিতা চক্রবর্তী
প্রত্যন্ত এক গ্রামের মেয়ে কালি। ক্লাশ এইটে পড়ে। কিন্তু বাবা ওকে আর পড়াতে চাননা। বলেন "ঘরের কাজ শেখো মায়ের কাছে।" তাই ওর স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বাইরে বেরোনোও এখন মানা। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু ভাইকে স্কুলে যেতে দেখলে কালির খুব মন খারাপ লাগে। মা'র কাছে কান্নাকাটি করেও কোনো লাভ হয়নি। মা বলেন "মেয়েমানুষ লেখাপড়া করে কি করবে!" কালি ঘরে কাজের ফাঁকে স্কুলের বইগুলো নাড়াচাড়া করে লুকিয়ে। ও যে পড়তে খুব ভালোবাসে! বইয়ের রাশি রাশি কালো অক্ষরগুলো ওকে নিয়ে যায় এক অন্য জগতে। কিন্তু ওর ইচ্ছের কে দাম দেবে!
একদিন ভোরবেলা ঘুম ভেঙে কালি দেখল ভাই স্কুলে যাচ্ছে। ওর মনে পড়ল আজ্তো ১৫ ই অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবস। ও চটপট উঠে স্কুলের পোশাক পরে নিলো অনেকদিন পর। ভাই অবাক হয়ে বলল "দিদি, তুই স্কুলে যাবি? মা দেখলে কিন্তু…।" কালি ইশারায় ভাইকে থামায়। দুজনে বেড়িয়ে পড়ে চুপিচুপি। স্কুলে পৌছে এক মুহূর্তে মন ভালো হয়ে গেলো কালির। একজন ছাত্র কবি গুরুর "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" কবিতাটা আবৃত্তি করছে "কেনরে বিধাতা পাষাণ হেন,/ চারিদিকে তার বাঁধন কেন/ ভাঙরে হৃদয়, ভাঙরে বাঁধন/… উথলি যখন উঠিছে বাসনা,/ জগতে তখন কিসের ডর…।" কালির মন আনচান করে উঠল। এরপর বক্তব্য রাখতে স্টেজে উঠলেন সবার প্রিয় শঙ্করী দিদিমণি। উনি বলছেন -"স্বাধীনতা মানে শুধু দেশের মুক্তি নয়, দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি, অজ্ঞান, অশিক্ষা থেকে মুক্তি…।" কালির মনে পড়ছে দিদিমণি ক্লাসে বলতেন "মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া খুব জরুরি। সাবলম্বি হবার জন্য। শিক্ষিত সমাজ গঠনের জন্যও। শিক্ষিত মানুষ যেন এক আলোকবর্তিকা…।" হ্যাঁ, একেবারে ঠিকতো! কালি ছুটল স্টেজের দিকে। শঙ্করী দিদিমনিকে ওর খুব দরকার।
কালিদের বাড়ীতে এসেছেন শঙ্করী দিদিমণি। কালির মা বাবা বললেন "আমাদের অভাবের সংসারে মেয়েকে পড়িয়ে কি হবে?" দিদিমণি বললেন "আপনাদের ছেলেতো পড়ছে স্কুলে। তবে মেয়েটাকে আপনারা ছেলের থেকে তফাৎ করে মানুষ করছেন কেন? তাছাড়া কালি যথেষ্ট মেধাবী ছাত্রী। পড়াশোনায় আগ্রহী। আর তেরো বছরের একটা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন, একথা যদি থানায় জানাই?" মা বাবা ভয়ে চুপ করে গেলেন।
সারাদিন বৃষ্টির পর বিকেলের আকাশে সাতরঙা রামধনু দেখে কালি ডাকল "ভাই, রামধনু দেখবি?" মাঠের আলের উপর দিয়ে হাঁটছে দু ভাইবোন। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের দিকে চেয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো কালি। অনেকদিন পর খুব হাল্কা লাগছে। মনে হচ্ছে খুশিতে পাখির মতো উড়ে যাবে। ও দুহাত প্রসারিত করে আবৃত্তি করলো -"শিখর হইতে শিখরে ছুটিব/ ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব/ হেসে খলখল গেয়ে কলকল / তালে তালে দিব তালি…।" ভাই বলল "দিদি, তুই যে আজ বড়ো খুশী?" কালি জবাব দিলো ''খুশী বৈকী, বাবা আমায় কাল থেকে স্কুলে যেতে বলেছেন!"
====================সুমিতা চক্রবর্তী
23/1, লালাবাবু সায়র রোড
পোস্ট - বেলুড় মঠ
ডিস্ট- হাওড়া
পিন- 711202
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন