এ এক অন্য স্বপ্ন
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
সব মেয়েরা স্বপ্ন দেখে । আচ্ছা, শুধুকি মেয়েরাই স্বপ্ন দেখে? আমার গল্পে, স্বপ্ন দেখেছিল একটি ছেলে। সে এক আজব স্বপ্ন। মাকে বলেছিল স্বপ্নের কথা। মা হেসে বলে, দূর বোকা। এটা আবার স্বপ্ন নাকি! এটা তো সত্যি।
তোর বিয়ে হবে।সুখের সংসার হবে। একটা ফুটফুটে ছেলে হবে। আমরা দুই বুড়ো-বুড়ি তাকে নিয়ে মেতে থাকব। আর তোরা দুটিতে মনের সুখে ঘুরে বেড়াবি। আর মানুষের সেবা করবি। তাতেই আমাদের সুখ।
কিরে বাবু, ঠিক বলছি তো? একমুখ হেসে দাঁড়িতে চুমু দিয়ে চলে গেল মা।
মা-টা আমার বড্ড বোকা। বোঝেই না এমন স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় নাকি। সব কাল্পনিক।
বাবুর মা একজন সুশিক্ষিত রুচিসম্পন্ন মেয়ের সাথে সম্বন্ধ করে বাবুর বিয়ে দিল। বাবু বারবার বলেছে, মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই সে বিয়ে করবে। মাকে খুব ভালোবাসে।
বাড়ির সবাই কত খুশি। বাবুর স্বপ্নটা এবার সত্যি হতে চলেছে।
সবাই মিলে বেশ কিছুদিন আনন্দে মেতে উঠলো। বাবুও খুব খুশি।
স্বপ্নটা সব মিলে যাচ্ছে।
কিন্তু তারপর? বাবুর বউ উচ্চশিক্ষিতা ডাক্তার। বাবুও ডাক্তার। দুজনেই ব্যস্ত।
বাবুর মা চাকুরীকরা ডাক্তার রোজগেরে বৌমার যত্নের ত্রুটি রাখে না। ঘুম ভাঙলেই কফি কিংবা চা। তারপর ব্রেকফাস্ট। বউয়ের বাসি নাইটিটা মা যত্ন সহকারে ধুয়ে দিত। টিফিন করে ব্যাগে গুছিয়ে দেওয়া, দুপূরের লাঞ্চ, সব একা হাতে বাবুর মা সামলে নিত।
বাবু কতবার বারণ করেছে, এসব কী করছ মা? এগুলো কি তোমার কাজ?
মা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে, দূর বোকা! তুই আর বৌমা আলাদা নাকি? তোরা ভালো থাকলেই আমার সুখ। তাতেও বাবুর বউ সন্তুষ্ট হয় না।
বউয়ের আবদার, এবার থেকে বাপের বাড়ি থাকব। তোমাকেও থাকতে হবে। এতদূর থেকে ডিউটি করতে পারব না। রোজগেরে বউয়ের কোনো টাকায় শ্বশুর বাড়ির জন্য খরচ হত না। কেউ খোঁজই নিত না, কোথায় রাখে, কী করে টাকা নিয়ে?
বাবুর মা, বাবুকে সাবধান করেছে, খবরদার টাকা চাইবি না বৌমাকে। ও স্বাধীন। নিজের যা মন চায় তাই করুক।
শুরু হলো বৌমার জুলুম। বাবুকে মায়ের সাথে কথা বলতে দেখলেই রেগে আগুন হয়ে যেত।
বাবা- মাকে বাজে ভাষায় গালাগালি করা, বাবুর চরিত্র নিয়ে অশান্তি করা,বাবুর কাজকর্ম নিয়ে রাগ দেখানো, এমনকি বাবুর মায়ের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধাতেও বৌয়ের রাগ।
অবশেষে বাবু, যেদিন জানিয়ে দিল, মা- বাবাকে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। সেদিন তো বাবুর গায়ে হাত তুলতে গেল। মা এসে আটকে দিতে আরও অশান্তি। আমাদের স্বামী -স্ত্রীর কথাতে মায়ের নাক- গলানো কিসের?
ছেলের বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে ছেলে এখন বৌয়ের। খবরদার কোনো কথা বলতে আসবেন না।
মা গুটিসুটি হয়ে আঁচলের খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
সেই রাতেই কখন যে বাবুর বৌ, বাড়িছাড়া হল, কেউ জানতে পারে নি।
সকালে সারাবাড়ি তল্লাশী করে দেখা গেল, আলমারি থেকে সমস্ত গহনা, দরকারী কাগজপত্র, এমনকি শ্বাশুড়ির গহনার বাক্সটা নিয়ে বাড়িছাড়া হয়েছে বাবুর বৌ।
তারপর! স্বপ্নটা ভেঙে গেল।
বাড়িতে পুলিশ এল। জানিয়ে দিল বাবুর বউ বধূ নির্যাতনের কেস করেছে। বাড়ির সকল সদস্যের নামে কেস করেছে। রেহাই পায়নি বাইরে থাকা দাদা-বৌদিও।
পাড়াময় হইচই। সবাই অবাক। বাড়ির মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল। বাবু এখন কোনোক্রমে জামিনে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে। এও কি সম্ভব! বাবুর স্বপ্নটা ভেঙে গেল।
মা কেমন গুমরে আছে। বৃদ্ধ বাবার হার্টের সমস্যা আরও বেড়ে গেল।
বাবু এখন ভীষণ একা। এখন শুধু অপেক্ষায়। একটা তারিখ থেকে আরও একটা তারিখের অপেক্ষায়।
তবে সে হাল ছাড়েনি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার নতুন করে বাঁচতে। নতুন একটা অন্য স্বপ্ন দেখছে।
সে এক অন্য স্বপ্ন।
===================
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
গ্রাম- ভগবান পুর
পোস্ট - দিঘির পাড় বাজার
থানা--ফলতা
পিন-৭৪৩৫০৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন