কীভাবে বেঁচে আছে আমাদের স্বাধীনতা ?
১৯০ বছরের লড়াইয়ের চরম পাওনা ছিল সেদিন, সালটা ১৯৪৭ এর ১৫ই আগষ্ট। জাতীয় জীবন সেদিন সীমাহীন আনন্দে মেতে উঠল। যদিও দেশভাগের নিদারুণ যন্ত্রণা ছিলই তবু পরাধীনতা থেকে মুক্তি, মুক্তি বিদেশী শোষণ শাসন থেকে। উড়ল স্বাধীন দেশে স্বাধীন পতাকা। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন করে জন্ম নিল ভারতবর্ষ। আমরা পেলাম স্বাধীনতা, অবাধ স্বাধীনতা। স্বার্থক হলো সেই সব বীর যোদ্ধাদের আত্মবলীদান যারা জীবনের মায়া করেনি, নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাও ভাবেনি। ঘর তাদের প্রত্যেকেরই ছিল তবু দিনের শেষে যাদের ঘরে ফেরা হয়নি। দামাল মায়ের সেই সন্তানরা যে সবাই স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলেন এমনটা কিছুতেই নয়, অনেক অভাবী মা তাদের সন্তানদের এগিয়ে দিয়েছিল আরেক মাকে স্বাধীন করবার জন্য । নিরন্ন ঘরে একটাই স্বপ্ন সেদিন ছিল একদিন স্বাধীনতা আসবে সেই স্বাধীনতায় জীবনের সব অভাব মুছে যাবে ।
সেদিনের সেই স্বাধীনতার পর অনেক পথ হেঁটে সময়টা আজ ২০১৮তে দাঁড়িয়ে। মাঝপথে অনেক সময় চলে গেছে । এই সময়ে আমাদের পাওয়া না পাওয়ার
প্রত্যাশাও অনেক এসেছে গেছে । তবে প্রশ্ন এখানে আছে - আমাদের সেদিনের সেই
স্বাধীনতা আজ কীভাবে বেঁচে আছে ? কতটা ভালো রেখেছি সেই স্বাধীন ভারতবর্ষকে ?
আজকের ভারতবর্ষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কেমন আছে তোমার স্বাধীনতা ? সুখে আছে তো ভালো আছে তো তোমার স্বাধীনতা ?
নির্বাক কিছু শব্দ হয়তো ভেসে আসবে ।প্রথমেই আসবে স্বাধীনতার পরেও আরও
স্বাধীনতার কথা । হ্যাঁ আজকের ভারতবর্ষের এটা একটা বড়ো সমস্যা । পৃথক রাজ্যের দাবী যার জ্বলন্ত প্রমাণ । একের পর এক রাজ্যগুলো ভেঙে যাচ্ছে আর রাজ্যের আয়তন ছোটো হয়ে আসছে কখনো ভাষার ভিত্তিতে কখনো ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে। দৈনিক আন্দোলনগুলো মাথা চাড়া দিচ্ছে যেন দেশের মধ্যেই দেশ গড়ার প্রয়াস । আর তা নিয়ে চলছে দিনের পর দিন ধর্মঘট , রাজনৈতিক অস্হিরতা কখনো হত্যালীলা । ফলস্বরূপ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বন্ধ । বন্ধ যাচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি ।
জাতীয় জীবন যখন এভাবে ক্লিষ্ট হতে থাকে তখন মনে প্রশ্ন এসেই যায় এই কি ছিল
সেদিনের স্বাধীনতার প্রাপ্তি ? সেইসব বীর, যোদ্ধা , বিপ্লবী, দেশপ্রেমিক তারা
কি কোনো এক মনেও ভেবেছিল স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ একদিন এখানে পৌঁছবে। তাহলে কীভাবে আর কতটুকুই বা মনে রাখলাম আমরা তাদের আত্মত্যাগ আর আত্মবলীদানকে । যদি সত্যিই আমরা তাদের মনে রাখতাম তাহলে এদের মতো করেই আমরাও দেশটাকে ভালো রাখতাম।
বিচ্ছিন্নতাবাদ শব্দটা হয়তো জন্ম নিত না । পৃথক রাজ্যের দাবী উঠতো না ,
বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতাও মাঝামাঝে জাতীয় জীবনকে বিপর্যস্ত করে
তুলতো না । তবে আমরা একটা কাজ করে থাকি সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা দীবস,
প্রজাতন্ত্র দীবস কিংবা সেই সব বীর যোদ্ধা দেশপ্রেমিকদের জন্মদীবস এলে আমরা
তাদের স্মরণ করতে ভূলি না । শ্রদ্ধার্ঘ অর্পন করি অনেক শ্রদ্ধার সঙ্গে,
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দিনটিকে ভরিয়ে তুলি। তার পরদিন আবার যে যার জীবনের
ব্যস্ততায় মেতে উঠি ।
তবে এরপরেও বলবো এ স্বাধীনতা অমূল্য , অমূল্য আমাদের দেশ।
অমূল্য এদেশের অমূল্য এ স্বাধীনতাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।
আসুন আমরা সবাই মিলে এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করি আর বীর যোদ্ধাদের আত্মবলীদানে সেদিন যে স্বাধীনতা এসেছিল আমাদের জীবনে সেই স্বাধীনতায় বেঁচে উঠি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ।
===========================
সম্পা পাল, শিলিগুড়ি ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন