google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re শেফালি সরের মুক্তগদ্য - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮

শেফালি সরের মুক্তগদ্য

"আমার দেশ, দেশের মানুষ"


 শস‍্য শ‍্যামলা ভারত আমার জন্মভূমি আমার প্রিয় দেশ। ভারত আমার দেশজননী একথা বলতে ও ভাবতে আমার গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। কারণ এদেশ কত মহামানবের জন্মস্থান। ভারতমাতা কতশত বীর সন্তানদের জননী। কতশত কবি সাহিত্যিক বৈজ্ঞানিকের জন্মভূমি আমার এই ভারত।এ দেশে জন্মেছে কত মহীয়সী সতী নারী! সাধু সন্তের দেশ আমার এই মহান ভারত। আমার কাছে আমার ভারত এক পবিত্র তীর্থস্থান।                
        এ দেশের প্রতি বহু দেশের বহু মানুষের লোভ আছে। যেমন ছিল ইংরেজদের। ফরাসি বণিকের ছদ্মবেশে একসময় ইংরেজরা  এদেশের সহজ সরল মানুষ গুলোকে ঠকিয়ে এ দেশের অধিপতি হয়ে দু'শ বছর ধরে এদেশের মানুষকে প্রচুর দুঃখ কষ্ট দিয়েছিল। বণিকের মানদন্ড একদিন রাজদণ্ড রূপে দেখা দিয়েছিল।
       পরাধীন হয়ে ভারতবাসী সেদিন পরাধীনতার শৃঙ্খল পরিয়েছিল ভারতমাতার পায়ে।সে এক কলঙ্কময় অধ্যায় ভারতবাসীর জীবনে। মায়ের সেই পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য মায়ের বীর সন্তান সন্ততিরা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে সংগ্রাম করেছিল ছদ্মবেশী শত্রুদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য। একদিন সেই সংগ্রাম সফলও হয়েছিল। যেদিন বিদেশী শত্রুদের হাত থেকে ভারতজননীকে মুক্ত করেছিল, সেই মহাপুণ‍্য দিনটি হল--১৯৪৭সালের ১৫ই আগষ্ট। সেদিন মায়ের বীর সন্তানদের চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল।ভারতমাতাকে বিশ্বের দরবারে রাণীর মতো পরিচয় করাবেন।ধনে মানে ক্ষমতায় ও যোগ‍্যতায় দেশকে স্বয়ম্ভর করে তুলবেন। হিংসা দ্বেষ মারামারি দলাদলি থাকবে না। স্বচ্ছ সুন্দর এক স্বপ্নময় ভারত গড়ে তুলবেন সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।ভারত স্বাধীন হলো ঠিকই কিন্তু সম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। থেকে গেছে স্বার্থপরতা মতভেদ দলাদলি যা দেশকে সম্পূর্ণ কালিমা মুক্ত করতে পারে নি। এজন্য দায়ী আমাদের দেশের মানুষ নিজেরাই।আজ স্বাধীনতার ৭২বছর পরে ও ভাবতে হচ্ছে এই ভারতের মাটিতে আমরা কতটা স্বাধীন বা কতটা নিরাপদ! ভাবতে হচ্ছে শিক্ষা অঙ্গনের পবিত্রতা নিয়ে। ভাবতে হচ্ছে শিক্ষা পদ্ধতি ঠিক পথে হাঁটছে তো! আজ স্বাধীন ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভাবছি-এ কোন অরাজক দেশে বাস করছি--, যেখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। রাজনীতির অঙ্গনে আজ দাউদাউ করে জ্বলছে প্রতি হিংসার আগুন।দেশনেতাদের মধ্যে কোনো আদর্শ নেই। তাঁরা সাধারণ মানুষের মতো ঝগড়া ঝাটি মারামারি হাতাহাতি করে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করে।
         এই সমস্ত  দুর্নীতি গ্রস্ত নেতা ব‍্যক্তিরা কী ভারতের মতো বিশাল দেশের অভিভাবক হিসেবে উপযুক্ত কি না প্রশ্ন জাগে মনে! শুধু গদি নিয়ে টানাটানি। গদি রক্ষার জন্য যে কোন রকম কু-কর্ম করতে নেতা আর তাদের চ‍্যালা চামুণ্ডারা পিছপা হয়না। এহেন অবস্থায় আমার দেশের মানুষ কেমন আছে আর কি বলবো! শুধু আপনার মনে আপনিই প্রশ্ন করি। উত্তর অবশ্য একটাই আসে মন থেকে। দেশের মানুষ একটুও ভালো নেই। কারণ সর্বত্র এখন স্বার্থপরতা বিরাজ করছে। হিংসার আগুনে পুড়ে মরছে দেশের সাধারণ মানুষ। পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয়।কারণ তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট। দেশের সাধারণ মানুষ কারণে অকারণে গণপিটুনির শিকার। এই সব দলবদ্ধ কার্য কলাপের পিছনে আছে পঞ্চায়েতী রাজনীতি ও কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তির সমর্থন। সমাজ বিরোধী কাজকর্ম আগে ও ছিল কিন্তু স্বাধীনতার পরে দুর্নীতি এদেশে এমন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে স্বাধীনতার আগে তা অকল্পনীয় ছিল।                      শিক্ষা ব‍্যবস্হাও এখন দুর্নীতি গ্রস্ত। শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে মধুর সম্পর্ক নেই। পুস্তকের ভারে ছেলে মেয়েরা ন‍্যুব্জ হয়ে পড়েছে। শিরদাঁড়া সোজা নেই তাদের। যে সমস্ত গুণে ব‍্যক্তির ব‍্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে সেই সব মানবিক গুণগুলি যেমন  জিজ্ঞাসা, কল্পনা, দায়িত্ব বোধ,সত‍্য এর প্রতি গভীর আনুগত্য,সাহস,করুণা, স্নেহ প্রেম , ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ভক্তি প্রভৃতি এইসব মানবিক গুণগুলি র বিকাশ অসম্ভব এই তথ্য নির্ভর শিক্ষা ব‍্যবস্হায়। অর্থাৎ শিক্ষার মান নিম্নগামী।
          কারুশিল্প যা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য তা আজ অবহেলিত। সূক্ষ্ম কারুকার্য চড়া দামে বিক্রি হলেও তার সিংহভাগই যায় দালাল আর সরকারি আমলাদের ভোগে।            
          উজ্জীবনের নামে সংস্কৃতি আজ বিপদাপন্ন।আজ মার্গ সঙ্গীতের যথার্থ সমঝদার দুর্লভ।সে জায়গায় এসেছে বৈদ‍্যুতিক যন্ত্র সহকারে তারস্বরে উচ্চ কোলাহল সম্পন্ন গানবাজনা যাতে কানের বারোটা বেজে যায়। সেই সাথে নানান দূষণ যেমন -শব্দ দূষণ, জল দূষণ,মনোদূষণ, দৃশ্য দূষণ এর কবলে  পড়ে আমার দেশের মানুষ ভয়ানক ভাবে বিপর্যস্ত। বিশেষ করে শব্দ দূষণে আক্রান্ত হয়ে মানুষ একদিন শ্রবণ শক্তি হারিয়ে বধির হয়ে যাবে আমার বিশ্বাস। দেখছি পঞ্চায়েতের এতে প্রচ্ছন্ন মদত অবশ্যই আছে।মনোদূষণের ফলে একান্নবর্তী পরিবার গুলো ভাঙছে। বৃদ্ধ বৃদ্ধারা তাই বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা খুঁজছে। দৃশ্য দূষণ যা ঘটছে দূরদর্শন ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। স্বাধীন ভারতের সাহিত্য তো কোন মহৎ ভাবের প্রকাশে বা প্রভাব বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না।                 
        তারপর আছে ভারতের জন সমস্যা যা বর্তমানে জন বিস্ফোরণের আকার নিয়েছে। চাষযোগ্য জমি ভরিয়ে উঠছে বাসগৃহ।রুজি রোজগারের জন্য গড়ে উঠেছে দোকান পাতি।ফলে কোথাও খোলা মাঠ নেই, রাস্তা ঘাট সঙ্কুচিত। সবুজের নিধন করে গড়ে উঠেছে অবাঞ্ছিত বিলাস বহুল প্রাসাদ  সমূহ।যার ফলে বায়ু মন্ডলে যথেষ্ট অক্সিজেনের অভাবে অনিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন‍্যা, মহামারী,খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতির প্রকোপে পড়ে আমার দেশের মানুষ বিপর্যস্ত।
        স্বাধীনতার ৭২বছর পরেও বেকার সমস্যায় ভুগছে আমার দেশের মানুষ। জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটলো,ভূমি সংস্কার আইন তৈরি হলো তবুও আমার দেশের কৃষকের দুঃখময় জীবনের অন্ধকার দূরীভূত হয়নি আজও।                         আমার দেশের চিকিৎসা ব‍্যবস্হা মোটেও ভাল নয়। ঔষধ পত্র জাল এজন্য দেশের মানুষ ভুগছে। তাছাড়া হাসপাতাল বা নার্সিং হোম তো বর্তমান ডাক্তারদের ব‍্যবসা কেন্দ্র। তাঁরা সেবার নামে রীতিমতো ব‍্যবসা করছে। এদিকে আমার দেশের মানুষ সুচিকিৎসা না পেয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। সবশেষে যে বিষয়টি বিশেষ করে একজন নারী হিসেবে আমাকে খুব আহত করে তার হল  ধর্ষণ। ঘরে বাইরে আজো নিরাপদ নয়। স্বাধীন ভারতে আজো নারীর পায়ে পরাধীনতার বেড়ি কেন প্রশ্ন জাগে মনে? সন্দেহ হয়, আমরা কী সত্যি সত্যি ই স্বাধীন ভারতের মাটিতে বাস করছি কী -না!                     

   ।। স----মা------প্ত ।।                


  শেফালি সর ,জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন