Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রণব কুমার চক্রবর্তীর প্রবন্ধ

 

তেরঙ্গা ঝান্ডা - ভারতের মহিলাদের উপহার




সময়টা মধ্যরাত্রি ৷
চোদ্দই অাগস্ট শেষ হয়ে ঘড়ির কাঁটা সবেমাত্র পনেরই অাগস্টে গিয়ে পড়েছে ৷
১৯৪৭ সালের এই দিনের এই সময়েই নয়া দিল্লীর বর্তমান সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে
স্বাধীন ভারতের দেশ বরেণ্য নেতৃত্বদের প্রথম অানুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
ড: রাজেন্দ্র প্রসাদ মহাশয় সেই সভার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ৷ শুধুমাত্র
সংসদ ভবনের সেই কক্ষই নয় , সারা দিল্লীর রাজপথও সেই সময় জন সমুদ্র হয়ে উঠেছে৷
তিল ধারনের জায়গা নেই ৷ প্রায় দু"শ বছরের। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি পাওয়ার
অানন্দে এবং উচ্ছাসে সবাই বিভোর ৷
মুহূর্মুহূ স্লোগান উঠছে - ভারতমাতা কী জয় ৷ ....মেরা ওয়াতন হ্যায়হিন্দুস্থান ৷ .....
ঠিক এমন সময়েই সভার সঞ্চালক ঘোষনা করলেন - মাননীয় সভাপতি ? সর্বপ্রথমেই
ভারতীয় মহিলাদের তরফ থেকে শ্রীমতি হানসা মেহেতা অাপনার হাতে অামাদের প্রথম
জাতীয় পতাকা (তেরঙ্গা ঝান্ডা ) তুলে দেবেন ৷ ...














ঘোষনা শোনা মাত্রই সারাটা কক্ষ হাততালির বন্যায় ভেসে গিয়েছিল ৷ এতদিনের
অাশা পূর্ণ হতে চলেছে ৷ স্বাধীন ভারত পেতে চলেছে তার নিজস্ব জাতীয় পতাকা !
শ্রীমতি মেহেতা সহ ৭০ জন মহিলা উঠে দাঁড়িয়ে ভারতমাতার জয়ধ্বনি দিয়ে
সভাপতির হাতে পতাকাটি সমর্পণ করে অাবেগ মন্থিত কন্ঠে বলে ওঠেন -
..." I am proud to becomming an Indian woman particularly at this moment
....it is in the fairness of thing that the first flag of free India that
is to fly over this August House should be a gift rom the women of India
since its idea to the finalisation.." ....


কথাগুলো মোটেই অযৌক্তিক এবং অবাস্তব নয় ৷ অামরা যদি ভারতবর্ষে জাতীয় পতাকা
তৈরির ইতিহাসের বিবর্তনের ধারার দিকে তাকাই , দেখবো - এই জাতীয় পতাকা তৈরির
ভাবনা প্রথম যিনি উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি একজন মহিলা ৷ স্বামী বিবেকানন্দের
মানসকন্যা - ভগিনী নিবেদিতা ৷ পরাধীন ভারতের মুক্তির লড়াইয়ে সমগ্র দেশের
মানুষকে এক জাতী এক মন্ত্রে দিক্ষিত করে তুলতে হলে সবথেকে অাগে যে
চিন্তা-বোধটা ভারতীয়দের মধ্যে জাগিয়ে তোলা দরকার - সেটা হলো জাতীয়তাবোধ ৷
নিবেদিতার মতে - সেই বোধটা গড়ে তুলতে হলে সবথেকে অাগে সমগ্র জাতির একটা
নির্দিষ্ট জাতীয় পতাকার প্রয়োজন ৷ সেই মতো ১৯০৪ সালে ভগিনী নিবেদিতা তাঁর
বুদ্এধগয়া সফরকালে দেবরাজ ইন্দ্রের হাতের অস্ত্র - বজ্রকে দেখে অনুপ্রাণিত
হয়ে একটি বজ্র পতাকার নক্সা তৈরী করেছিলেন ৷















কিন্তু , সেই বজ্টির পতাকাটির রঙ চীনের সমর-পতাকার রঙের মতো হওয়ায় ভারতীয়দের মনঃপূত হয়নি৷
 এই প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছিলেন - ..." I was inspired by the Vajjra,a thunderbolt sign
the symbol of the Lord Buddha , that implies the selfness of mankind
....it was the weapon of Lord Indra ,an it is a symbol of strength .It is
also associated with the Goddesses Durga . According to legend Vajjra was
created by the bones of the sage Dadhichi ... it is a symbol of supreme
sacrifice ."... বন্ধু ম্যাকলয়েডকে চিঠিতে লিখেছিলেন -..." We have chosen
the design of the National Flag with the thunderbolt as the symbol of the
flag . Unfortunately , I took the Chinese war flag as my ideal and made it
to black and red . This does not appeal to Indians ."..."..তাই পরে তিনি
তাঁর ছাত্রীদের দিয়ে অারোও একটি পতাকা তৈরি করেছিলেন এবং ১৯০৬ সালের জাতীয়
কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রদর্শিত করেছিলেন ৷ কিন্তু, কংগ্রেস দল ওই পতাকাটিকে
গ্রহণ করেনি ৷


একথা অনস্বীকার্য যে প্রথম তেরঙ্গা পতাকা ১৯০৬ সালে বঙ্গ-ভঙ্গ অাইনের
বিরোধিতায় কোলকাতার তিন জায়গায় উত্তোলিত হয়েছিলো ৷ বলা বাহুল্য , ফরাসী
বিপ্লবের অনুপ্রেরণায় সাম্য-মৈত্রী এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে
অনুপ্রাণিত হয়ে তদানিন্তন রিপন কলেজের ছাত্র সুচীন্দ্র প্রসাদ বসু (মতান্তরে
শচীন্দ্র প্রসাদ বসু ) এবং বিপ্লবী সুকুমার মিত্র যে দুটো রঙের পতাকা তৈরি
করেছিলেন সেগুলোর নাম - কোলকাতা পতাকা বা ক্যালকাটা ফ্ল্যাগ ৷
ভারতের বাইরে বিশ্বের দরবারে ( জার্মানীর স্ট্যুটগার্ট শহরে এক
অান্তর্জাতিক শ্রমিক অান্সদোলনের সম্মেলনে) যিনি প্রথম ভারতের হয়ে তেরঙ্গা
পতাকা উত্তোলিত করেছিলেন তাঁর নাম ভিকাজী রুস্তম কামা ৷




 বিদেশে নির্বাসিত ব্রিটিশ নজরবন্দী এইভারতীয় বিপ্লবী রমণীর এই দুঃসাহসিক কাজ নি:সন্দেহে
প্রশংসার দাবী রাখে ৷ এই প্রসঙ্গে উত্তেজিত ম্যাদাম কামা নিজেই বলেছিলেন -
.."This flag is of Indian Independence. Behold it is already sanctioned by
the blood of martyard Indin youths. I call upon you the gentleman to stand
rise and salute this flag of Indian Independence ....In the name of this
flag, I appeal to the lovers of freedom all over the world in co-operate
with this flag and feel sympathy to one-fifth population of the human race."...

ভারতের মাটিতে ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন কায়েম করার উদ্দেশ্যে ১৯১৭ সালে
ব্রিটেনের অায়ারল্যান্ডের মডেলে যে হোম-রুল অান্দোলন
চালু হয়েছিল তার অন্যতম পুরোধা ছিলেন অন্যান্যদের সাথে অার এক মহিলা ৷ নাম
অ্যানি বেসান্ত ৷













তাঁর ইচ্ছ মতোই বাল গঙ্গাধর তিলকের সহায়তায় ভারতীয়দের
জন্য একটি পতাকা চালু করা হয়েছিল ৷সেই পতাকাটি "হোম-রুল ফ্ল্যাগ" নামেই
খ্যাত ৷












বলা বাহুল্য, এই পতাকায় ব্রিটিশদের রাজকীয় প্রতীক ব্যবহার করা
হয়েছিল বলে পতাকাটিকে সরকার বাহাদুর নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিল ৷


ভারতের এই জাতীয় পতাকা তৈরির বিবর্তনের ইতিহাসের শুরু ১৯০৫ সালে ভগিনী
নিবেদিতার হাত দিয়ে , এবং পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে ১৯৪৭ সালের ২৭শে জুলাই ভারতের
কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বেলীর বিশেষ অধিবেশনে ( পতাকা কমিটির সুপারিশে ) ৷
এইদীর্ঘ ৪৩ বছরের বিবর্তনের ধারায় অন্যান্য অনেকেই বিভিন্ন সময়ে পতাকার
নক্সা এঁকেছেন এবং জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা কমিটির কাছে জমাও দিয়েছিলেন যেমন -
সুচীন্দ্রপ্রসাদ বসু , সুকুমার মিত্র , বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগো ,
শ্যামাচরণ ভার্মা , শ্রীকৃঞ্চ অায়ার , বীর সাভারকার ,
ম্যাদাম ভিকাজী কামা , পিঙ্গলে ভেঙ্কাইয়া , ডা: হার্দিকার এবং বেগম সুরাইয়া তৈয়বজী প্রমুখ ৷













বলাবাহুল্য , এই বেগম সুরাইয়া তৈয়বজীর স্বামী বদরুদ্দিন তৈয়বজী ছিলেন তৎকালীন
ভারত সরকারের একজন উচ্চপদস্থ অাধিকারিক ৷


যদিও বলা হয়ে থাকে ভারতীয় জাতীয় পতাকার নক্সা প্রস্তুত করেছিলেন
অন্ধ্রপ্রদেশ নিবাসী কংগ্রেস কর্মী পিঙ্গলে ভেঙ্কাইয়া , কিন্তু সম্প্রতি
ক্যাপ্টেন পান্ডুরাঙ্গা রেড্ডি এবং জাতীয় কংগ্রেসের অনুসন্ধান কমিটির প্রধান
পট্টভি সিতারামাইয়া ও বিদেশী ঐতিহাসিক ট্রেভর রঁল্যার লেখা গ্রন্থ থেকে উঠে
এসেছে বর্তমান তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দ্রাবাদ নিবাসী বেগম সুরাইয়া তৈয়বজীর
নাম ৷ বলা হচ্ছে পিঙ্গলে ভেঙ্কাইয়া অাসলে স্বরাজ্য পতাকা এবং জাতীয় কংগ্রেসের
পতাকা তৈরি করেছিলেন ( জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধি যে পতাকাটিকে জাতীয় পতাকা
বলে মানতেন ), অার বেগম সুরাইয়া তৈয়বজীই অামাদের বর্তমান তেরঙ্গা জাতীয়
পতাকার নক্সা তৈরী করেছিলেন ৷



















যেহেতু পরাধীন দেশ মাতৃকার মুক্তি সাধনের জন্য দেশবাসীকে জাতীয় চেতনায়
উদ্বুদ্ধ করতে জাতীয় পতাকার গুরুত্বের কথা প্রথম বিবেচনা এবং পতাকার প্নথম
নক্সা তৈরি করেছিলেন একজন মহিলা , বহিঃবিশ্বে তেরঙ্গাকে উত্তোলন করেছিলেন
যিনি তিনিও একজন মহিলা ৷ সর্বোপরি যিনি অামাদের জাতীয় পতাকা তেরঙ্গার
সার্থক রূপ দান করেছিলেন - তিনিও একজন মহিলা ৷ তাই, ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ই
অাগস্ট রাত্রে ভারতীয় সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে স্বাধীন ভারতের প্রথম
অধিবেশনে সভাপতি ড: রাজেন্দ্র প্রসাদের হাতে অামাদের প্রথম জাতীয় পতাকাটি
তুলে দিয়ে শ্রীমতি হানসা মেহেতা যথার্থই বলেছিলেন - "অামাদের জাতীয় পতাকা
(তেরঙ্গা ঝান্ডা) ভারতের মহিলাদের উপহার ৷"...

=========================================================


















লেখকঃ প্রণব কুমার চক্রবর্তী

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩