স্বাধীনতা
স্বাধীনতা নামের ছোট্ট হলুদ পাখি টা এক মধ্যরাত্রে আলতো ছোঁয়ায় বাঁধা পড়লো ভারত মায়ের আঁচলে, অমনি ভারত মাতার রিক্ত শীর্ণ জরাজীর্ণ দুখিনী জীবন আমূল পাল্টে গেল।
সারা শরীর রত্ন আকরে ভরা, তপ্ত কাঞ্চন বর্ণের শরীর থেকে উজ্জ্বল রশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে। ছেঁড়া সাদা শাড়ি বহুমূল্য রঙিন বস্ত্রে পরিনত হয়েছে।সারামুখে হাসির মহিমা ছড়িয়ে পড়ছে।কিন্তু চোখের কোনে জল।তাঁর এই সুখ দেখে যেতে পারলো না তাঁর বীর সন্তানেরা।মায়ের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে,মুখে হাসি ফোটাতে তারা দলে দলে মৃত্যুর দেশে পাড়ি দিয়েছে।মায়ের সন্তানদের এই আত্ম বলিদান মায়ের বুকে এঁকে দিল গভীর ক্ষত। এছাড়া হাস্যময়ী মায়ের মহা ঐশ্বর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকল রক্তাক্ত কাটা দাগ-স্বাধীনতা পেতে গিয়ে মাকে দুটুকরো করার বিষময় লাঞ্ছনা। তাও মা তাঁর অগনিত সন্তানদের মুখোমুখি তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন।তারপর যতদিন এগিয়েছে স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস ভুলে গিয়ে মানুষ মেতেছে স্বেচ্ছাচারিতায়।দেশকে গড়ার কাজে ব্রতী হয়েছেন অনেকেই আবার ধ্বংসের শপথ ও অনেকেই অজান্তে নিয়েছেন। দেশের নুন খেয়ে আত্মসুখের জন্য দেশেরই একটু একটু করে ক্ষতি করে ফেলছে অবুঝ মানুষজন।দুর্নীতির চোরাবালিতে ডুবে গেছে সততা ও বিশ্বাস।ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহৎ স্বার্থকে ক্ষয় করে ফেলতে এতটুকু হাত কাঁপেনা তাদের। যে যুবসমাজ দেশের মেরুদন্ড তারাই আজ বেকারত্বের আগুনে পুড়ে দিশেহারা।যাদের হাতে ক্ষমতার অমৃতকুম্ভ তুলে দিয়েছে জনগণ তারা শুধু কে কতটা অমৃত নিজেরা পান করে নিতে পারে তার প্রতিযোগিতায় মত্ত।দিনে দিনে তারাই হয়ে ওঠে ক্ষমতার ঈশ্বর।হাতের মুঠোয় প্রাণ নেওয়ার তীব্র আস্ফালন তাদের চোখে মুখে।এভাবেই বছরের পর বছর ভারত মায়ের সারা শরীর জুড়ে অসংখ্য কালিমা ফুটে উঠছে।
সারাটা বছর দেশকে ভুলে আত্মসুখে মজে থেকে পনেরোই আগষ্ট মহা আড়ম্বরে স্বাধীনতা দিবস পালনের ধুম পড়ে যায়।দেশ জুড়ে ছেয়ে যায় তেরঙ্গা পতাকা... পরের দিন থেকে পথ জুড়ে পতাকারা ভূলুণ্ঠিত।পা ফেলা দায়।জাতীয় পতাকাকে মাড়িয়ে দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা ও মানুষের ভেতর দেখা যায়-
এভাবেই আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক দেশমাতৃকার প্রতি আমাদের অগাধ আনুগত্য দেখাই-নিজেরা এগিয়ে যাই,সবকিছু ফেলে, দেশকে ও ভুলে।
*************************************
মোনালিসা পাহাড়ী
মনোহরপুর, গড় মনোহরপুর
দাঁতন, পশ্চিম মেদিনীপুর,721451
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন