Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

ছবি
  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

মৌমিতা ঘোষালের অণুগল্প



###স্বাধীনতা###



আজ তিন হল ঘরে বন্ধ আমরা। বাইরের পায়চারির শব্দ কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে.... কখনও আবার এগিয়ে আসছে, অথবা দূরে চলে যাচ্ছে। সব শুনছি ঘরের ভেতর থেকে। তিন দিন সূর্য দেখিনি। এই তিন দিন সকালও হয়নি, সন্ধ্যেও না। গতকাল জানালা একটু ফাঁকা করে বাইরে উঁকি মারতে চেয়েছিলাম। অবস্থা বুঝে ওঠার আগেই ফায়ারিং-এর শব্দ। গা ছমছম করে উঠেছিল। সেই থেকে আর বাইরে দেখার চেষ্টা করিনি। আমি তো আর একা নয়, সঙ্গে সন্তু আছে। সন্তু, আমার ছেলে, বয়স মাত্র সাত। মা হারানোর পর থেকে এমনিতেই ভীতু। সেই ফায়ারিং শুনে এখনও সিঁটিয়ে আছে। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। তাকে শান্ত করতে হচ্ছে বারবার। আজ তিন দিন হল স্কুলে যায়নি। মাঝে মাঝে বলছে, 'বাবা, সুবোধ আজ অবশ্যই স্কুলে যেতে বলেছিল', 'আজ জানো তো বাবা, স্কুলে ম্যাচ ছিল', 'সবাই বোধহয় এখন খেলছে' 'এখন টিফিন খাচ্ছে'। শুনছি, কিন্তু বাইরের দিকেও কান আছে আমার। হয়তো কোনো সময় ছুটে আসবে এই দিকে, ভেঙে যাবে দরজা। হয়তো গুলিও ছুটে আসবে আমাদের দিকে। এমনি করে শেষ হয়ে যাব! সন্তু চুপ করে গেছে এইবার, কাছে গিয়ে বুকে জড়িয়ে বসলাম। আজ আমাদের সমস্ত পৃথিবী একটা ছোট্ট ঘরে, আর দুটি প্রাণী ছাড়া কেউ নেই। সন্তু ভয় পাচ্ছে, ক্রমাগত বেশি, বেশি জোরে আকড়ে ধরছে। আমিও ভয় পাচ্ছি। ছোটো বেলায় শুনেছিলাম, যখন দেশে স্বাধীনতা ছিল না। বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। সন্ধ্যেতে আলো জ্বলত না ঘরে ঘরে। পাছে বিপক্ষ দল হেলিকপ্টারে করে বোমাবর্ষণ করে! তবুও বোমা পড়ত, লোক মরত। সন্তুর ডাকে তন্দ্রা ভাঙল। 'বাবা, আজকেও স্কুল যাব না?'
-নারে? আজও না?
-কেন বাবা? আজ তো স্বাধীনতা!স্কুলে সবাই যাবে। বাইরের আঙ্কেলগুলো যাবেনা পতাকা দেখতে?
অবাক হলাম। তাইতো,আজ তো ১৫ই আগস্ট, স্বাধীনতার দিন। আর আমরা এভাবে! সন্তুকে কে বোঝাবে যে আজ আমাদের ঘরে আজ স্বাধীনতা ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না। ওর স্কুলেও কি পতাকা উঠেছে। জানিনা। বাইরে যারা দাঁড়িয়ে তাদের কি আজ আনন্দের দিন নয়! তাদের কি একবারও মনে হচ্ছে না, উড়ন্ত পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে 'জন গণ' গাইতে! একবার বন্ধেমাতরম রব তুলতে। সন্তুকে দেখলাম। মনমরা একদম। পড়ার টেবিল থেকে পেনদানীতে রাখা ছোটো পতাকাটা আনলাম, সঙ্গে বিস্কুটের কৌটো। সন্তুকে ডাকলাম, 'চল আজ আমরা স্বাধীনতা দিবসে পতাকা তুলি। ছোট আটার গুলির উপর বেদি বানিয়ে পতাকা দাঁড়ালো মেঝেতে। হয়তো আকাশে উড়ল না, কিন্তু মন তখনো সমান তালে আন্দোলিত হচ্ছে। দুজনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম। বিস্কুটও খেলাম। ঠিক যেমন স্কুলে হত তেমনটি। মরতে যদি হয় তাহলে স্বাধীনতার সুর বুকে বেঁধে মরব। কত কত প্রাণের বদলে এই স্বাধীনতা, কয়েকটা বন্দুকধারী লোক আর তাদের পায়ের শব্দ, আমাদের এই স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পারে না।

             

নাহ।আর আমরা ওখানে থাকি না। সেদিনের স্বাধীনতা বদ্ধ ঘরে থাকলেও, তারা আটকে রাখতে পারেনি। সেদিনই সন্ধ্যের আগেই আরও একবার স্বাধীন হতে পেরেছিলাম আমরা। পায়চারির শব্দ ধীরে ধীরে কমে গেছিল, পুলিশের অ্যানাউন্সমেন্ট কানে আসছিল। আমরা আবার স্বাধীন হচ্ছিলাম।
তারপর আর আমি দেরি করিনি। সন্তুর মুখ চেয়ে কিছু দিনের মধ্যেই চলে এসেছি শহরে। আসলে চলে নয় পালিয়ে এসেছি। এখানের এক চিলতে বারান্দায় যখন সকালের রোদ হুমড়ি খেয়ে পড়ে, বাতাসে বাতাসে বাজে স্বাধীনতার সুর, ঘর আঙিয়ায় হুটোপুটি করে বেড়ায় স্বাধীনতা। কিন্তু আজও যখন খবরের কাগজে জঙ্গল মহলের খবর আসে আমার শহুরে স্বাধীনতা খোঁচা মারে বুকের মধ্যে। সেই বদ্ধ জীবন, সেই অবগুন্ঠনে ঢাকা স্বাধীনতা আজও আছে সেখানের আনাচে কানাচে, নিস্তব্ধ পায়চারি করে মৃত্যু। ঘরের ভেতর কুকড়ে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদে একটি স্বাধীন দেশের প্রাণ।

        *************************


মৌমিতা ঘোষাল 
বেলিয়াতোড়,  বাঁকুড়া 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল