আগস্টের জন্মদিনের গল্প
মানুষ সৃষ্টির সবচেয়ে সেরা জীব। মানুষ তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীতে তার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যায়। ঠিক করে তার গতিপথ, অবস্থান, ভাল-মন্দ-তৃপ্তি। পৃথিবী সৃষ্টি ইসলামী দৃষ্টি কোন থেকে বলা হয় এ বিশ্বে আঠার হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করা হয়েছে। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে মানুষ। বৈজ্ঞানিক প্রমাণেও মানুষেরই সবচেয়ে বেশী জ্ঞান ও বিদ্যাবুদ্ধি অর্জন এবং কল্যাণ করার ক্ষমতা আছে যা অন্য প্রাণীর চেয়ে বেশী। তাই মানুষই শ্রেষ্ঠ। এ মানুষই হচ্ছে আঠার হাজার মাখলুকাতের মধ্যে ভিন্নতর; বাকীরা সব এই মানুষের মঙ্গলের জন্য সৃষ্টি। এমনকি বিষাক্ত প্রাণী, জীবজন্তু ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এ পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে মানুষের কল্যাণে। তাই একটি মানব শিশু জন্মের সাথে সাথেই শুরু হয় তার আদি বা অগ্রজ মানুষদের নানা আয়োজন। শিশুর স্নেহময় মুখ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম ফুল। তাই শিশু মাত্রই মানুষের মাঝে জেগে ওঠে কোমলতা যা অনেক নিষ্ঠুরকেও নিস্পাপ একটি শিশু মুখ দমন করতে পারে।
এ পৃথিবীতে শিশু সব দম্পতিই কামনা করেন এবং করেন একত্রিত বসবাস করা সকল বন্ধুজনও। বিশ্বের সকল পরিবার বা সামাজিক বসবাসের রীতি-নীতি ভিন্নতর হলেও শিশু পছন্দ করেন সবাই। আর এ শিশুর জন্ম মানেই আনন্দঘন মুর্হুত, আনন্দঘন অনুভূতি, সুন্দরতম দিন। আমাদের বাঙালি সমাজ নয় কেবল বিশ্বের সব সমাজেই শিশুর জন্ম দিন মানে একটি সুন্দর দিন মনে করে নানান আয়োজন করে। একরকম নীতিতে দাঁড়িয়েছে। তাই জন্মদিন গুরুত্ব বহন করে প্রত্যেক পারিবারিক ব্যবস্থায়। শিশু হতে বয়স্ক লোকের জন্মদিনের আয়োজন আমাদের বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় ভিন্ন রকম। শিশুর জন্মদিনের আয়োজনে বিশেষভাবে কেক থাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দেয়া, আত্মীয়দের দাওয়াত দেয়া এসব রেওয়াজ আবশ্যিক রূপেই করে থাকে। বড়দের জন্মদিনেও কেক, নতুন জামা, বন্ধু দাওয়াত এসব থাকে। শিশুদের জন্ম বাষির্কী দিনটিতে শিশুর বাবা মাই এসবের আয়োজন করে থাকে। অন্যদিকে বয়স্ক বা বৃদ্ধদের বেলায় একটু ভিন্ন। যেমন বেশী বৃদ্ধ হলে ছেলে-মেয়ে, নাতি, নাতনী, পুত্র বধূ বা মেয়ে জামাই এরা মিলে এসব আয়োজন করে। যুবক বেলায় বিয়ে হলে বউ অথবা স্বামী সেলিব্রেট করে, নতুন কাপড় বা কেক কাটে। আবার বিয়ের পূর্বে হলে তো আরো ভিন্ন রকমই এ আয়োজন। প্রেমিক-প্রেমিকা এ আয়োজন করে ভিন্ন রকম আমেজে। সামর্থ অনুযায়ী নুতন কাপড়, কেক, ফুলের তোড়া এবং বন্ধু বান্ধব নিয়ে রেস্টুরেন্টে পার্টি দিয়ে পালন করে।
বর্তমান সময়ে শুধু মানুষেরই জন্ম দিন নয় বিভিন্ন কোম্পানী, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, পোষা পশু-পাখি সহ সব কিছুরই বর্ষ পূর্তি পালন করা হয়। সেখানে কেক থাকে, সাংস্কৃতিক পর্বসহ সাথে থাকে নানা আয়োজন। এত কিছুর সাথে মৃত্যু বার্ষিকী পালন, বিবাহ বার্ষিকী পালন, প্রেমের বর্ষ পূর্তি পালন ইত্যাদি বেশ ঘটা করেই করে থাকে মানুষ। তাই এসব উৎসব করা এখনকার সময়ে খুব আগ্রহে করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যস্ততা ছাড়া সমাজের অন্যরা থাকে অনেকটাই নির্বিকার। যাই হোক জন্ম দিনের আলোচনা করি। জন্মদিনটা ঘটা করে পালন না করে বরং একটু যদি ভাবি জীবন থেকে সময় কমে যাচ্ছে। তাহলে মানুষ বেপরোয়া হয়ে উৎসব না করে সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজেদের চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগিয়ে এ পৃথিবীকে কিছু দিয়ে যাবার চিন্তাই করত। তবে যারা করে তারা কখনও নিজেদের জন্ম দিন পালন না করলেও অন্যরা তাদের কর্মের জন্য তা ধরে রাখে। আমরা পালন করি বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের জন্ম-মৃত্যু দিবস, কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম-মৃৃত্যু দিবস। কারণ তাঁরা অর্জন করে নিয়েছেন ইতিহাসের এ মহান অধ্যায়টি। আমরা পালন করি বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে জাতীয় ভাবে শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আমাদের ঐতিহ্যের শিকড় ধরে রাখতে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়। জাতীয় ভাবে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করি। বিশ্বের প্রত্যেক দেশে তাদের জাতির পিতাকে স্মরণ করে তাদের জন্ম-মৃত্যু দিবসে। ভারতে ধর্মীয় দেবতার মত পালন করা হয় মহাত্মা গান্ধীর জন্ম-মৃত্যু দিবস। ইতালীতে গ্যারিবল্ডিকে, মিশরে জামাল, তুরস্কে কামাল আতাতুর্ককে, চীনে মাওসেতুংকে। এ রকম সব মহান ব্যক্তির কর্মের জন্য তাদের জাতি সত্তার অংশ হিসাবে সে সব দেশের নাগরিকগণ স্মরণে রাখেন। ইতিহাসের মহানায়কদের ছেলেবেলা থেকে জীবনের প্রতিটি স্তরেই ইতিহাস বিশ্লেষণ করে। তাদের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যায় গবেষণার বিষয়। সাধারণের চেয়ে ঐতিহাসিক ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু একটু ভিন্নতর। এ রকমই যে তাদের জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয় মানুষ অর্থাৎ সে সব মহান ব্যক্তিদের ভক্তরা অনুকরণ ও অনুশীলন করে। কিন্তু নচেৎ জন্ম হিসাবে সাধারণ আর অসাধারণের মধ্যে তফাৎ বলতে কিছুই নেই। জন্ম মানেই আনন্দ। সমাজ সম্মত নয় এমন জন্মও জন্মই। কারো না কারো আনন্দের ফসল। আর মৃত্যু মানে বেদনা। প্রিয় মানুষ হারানোর বিয়োগ ব্যথা সবাইর কাছেই এক। বেদনায় অশ্রু ঝরেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর চোখের রুপোলী জল সবারই এক। তাতে কোনো লাল, নীলের চিহ্ন নেই।
প্রিয় মানুষের জন্ম দিন প্রত্যেক মানুষের কাছেই আনন্দের। আর তাই ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর একটি কথা বাঙালী জাতির জন্য কতোটা আনন্দের সেটি ভাববার বিষয়। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু তখনও দেশের মাটিতে পা রাখেননি। পাকিস্তানে ইয়াহিয়া খান পদত্যাগ করলে জুলফিকার আলী ভুট্রো প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন। ভুট্রো আর্ন্তজাতিক চাপের মুখে ৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেন। পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্ত হয়ে লন্ডনের দশ ড্রাউনিং স্ট্রীট -এ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। তারপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে কেবল ভারতের মাটি ছুঁয়েছেন। দিল্লিতে তাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী, রাষ্ট্রপতি ভেংকটা গিরি, মন্ত্রীপরিষদ, সেনাপ্রধান সহ সকলে অভ্যর্থনা জানান। তখন তিনি অভ্যর্থনা মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছেন- কবে তিনি বাংলাদেশ হতে ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ফেরত নিবেন। কী সাহসী পূর্ণ কথা ; এমন একটি দেশ যাদের সাহায্যে নিয়ে সদ্য স্বাধীন হয়েছে নতুন শিশুর মত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু তখনও নিজ দেশে নয় বরং সে দেশেই অবস্থান করছেন। সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন ! এমন দুঃসাহস কার ছিলো ? হ্যাঁ তিনিই একমাত্র দুঃসাহস দেখানোর উপযুক্ত মানুষ ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু। তার ব্যক্তিত্বের কাছে ক্ষমতাধর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিপদের বন্ধু রাষ্ট্রের লৌহমানব প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হেসে বলেছিলেন -বঙ্গবন্ধু আপনার আগামী জন্মদিনের আগেই ভারতীয় সেনা বাহিনী ফেরত আনা হবে। বঙ্গবন্ধুর আরও সাহসী উচ্চারণ ছিল যে ‘‘আমি যতদিন চাইব ভারতীয় সেনা বাহিনী ততদিনই থাকবে।” এ সাহস কেবল বঙ্গবন্ধুরই ছিল। যিনি উপমহাদেশের মানচিত্রকে বদলে দিয়েছেন। আমেরিকার গণতন্ত্রের নায়ক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছেন,
``Government of the people, by the people, and for the people’’ -সরকার জনগণের জন্য।” বঙ্গবন্ধু তা প্রমাণ করেছেন তার প্রজ্ঞা দিয়ে। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা যখন ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ক্ষমতার ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্যতম হত্যাযজ্ঞটি করে তখন সুবহ্ সাদিক মুয়াজ্জিন মসজিদ থেকে মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকছে। কিন্তু সীমারের দোসরা তবুও ফেরেনি কল্যাণের পথে তারা অকল্যাণের পথেই অগ্রসর হয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতের হত্যাযজ্ঞ চলছিল ভোররাত পর্যন্ত আর ১৫ আগস্ট রাতের হত্যাকান্ড ভোররাতে ঠিক আজানের সময়ে। দু’সময়ের হত্যাকান্ডের সময় ভোররাত ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েছে। এরা মুসলমান! এরা কারা? এ ইতিহাস সেদিন বিশ্বকে করেছিল হতবিহবল। বিমূঢ়, স্তব্ধ আর বাঙালি জাতিকে করেছে নেতৃত্বশূন্য, এ স্বাধীন সবুজ প্রিয় স্বদেশকে ঠেলে দিয়েছে একশ বছর পিছনে। পৃথিবীর ঘৃণ্যতম হত্যাযজ্ঞের পরেও বি.এন.পি আর জামায়াত জোটেই বেহেশতের টিকিট সব জমা রয়েছে। এরাই এদেশে মুসলমানের ধ্বজাধারী। প্রতিনিয়ত এ দেশের সহজ সরল মানুষসের সাথে ধর্মের ব্যবসা করছে। পরবর্তী সময়ের ইতিহাস আরো স্পষ্ট ভাবে বাঙালি জাতি অবলোকন করেছে। স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের মসনদচ্যুত আর গণতন্ত্রের সূচনা লগ্নে বিএনপি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তখনও খালেদা জিয়ার জন্মদিনের গল্পটা তৈরী হয়নি। কিন্তু কিছু সময় পরে জামায়াত বন্ধুদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যা কারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং বিদেশে চাকুরী উপহার দিয়ে পূর্নবাসনের কাজও সেরে ফেলেছেন জিয়া পতœী।
আর সে সময় কেবল জন্ম দিনের গল্পটা একটু একটু মাশরুম চাষের মত শ্যাওলা জমে জমে ব্যাঙের ছাতার মত মাশরুমের আকার তৈরী হচ্ছিল। পরবর্তীতে যখন ৯৬ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে তখন খালেদা জিয়ার জন্মের গল্প পুরোদমে প্রস্তুত হয়। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেল বিভিন্ন জায়গায় তার জন্ম তারিখ বিভিন্ন তারিখের উল্লেখে লেখা। নিচের তালিকায় দেখা যাক জন্ম তারিখ গুলো :
১। দিনাজপুর সদর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন, রোল নম্বর ছিলো এফ-৭৯২ ; জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ সাল। ফলাফল অকৃতকার্য।
২। পাসপোর্টের জন্য ১৯৭৮ সারের ১লা এপ্রিলে আবেদন করলে সেখানে জন্ম তারিখ লেখা এপ্রিল, ১৯৪৬ তারিখ ।
৩। মেজর জিয়ার সাথে নিকাহ রেজিস্ট্রারে ৯ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
৪। ভোটার তালিকায় ২০০৮ সালের নভেম্বরে জন্ম তারিখ ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখ লেখা হয়েছে।
কিন্তু অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে ১৫ আগস্ট ২০০৮ সালের ২৯ শে নভেম্বরের ভোটার তালিকার আগে কোথাও উল্লেখ্য নেই। প্রকৃত এবং স্কুল সনদপত্র অনুযায়ী মানুষের দুটো জন্মদিন হতে পারে। ৩টা কারো হয়েছে বলে জানা নাই। তাই বলে ৪টা জন্ম তারিখ! বাঙালী জনতা ভেবে দেখুন, কতটা পরিহাস মূলক তার এ জন্ম দিন তৈরীর গল্প। এ গল্প বিএনপি’র লাইং কারখানায় এমন ডাইসে ফিনিশিং দিয়ে তৈরী হয়েছে যে তার সমস্ত নথিপত্র মিথ্যা হয়ে যায়। তিনি স্কুলের সাথে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন এবং মানুষ জীবনে অনেক আশা-আকাক্সক্ষা আর স্বপ্নবিভোর মনে সংসার সাজায় তাহলে তো সেখানে মেজর জিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। এত বড় প্রতারকেরই সাজে বঙ্গবন্ধুর মত মহান নেতার হত্যার দিনে শোক সন্তপ্ত জাতির সাথে জন্ম দিনের কেক কেটে পরিহাস করা। আর যদি বলি বিএনপির লাইং কারখানায় প্রস্তুতকৃত এ জন্মদিনের উৎসব মানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আনন্দ উল্লাস ? তাহলে বোধ হয় জাতিকে ভাবতে হবে আরো। যারা পনেরই আগস্টের খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল তাদের উপহার উৎসব হিসাবে এ জন্ম উল্লাস ! আরেকটি বিষয় ভাবতে হবে খালেদা নামে কেবল একজনই নয় এ দেশে আরো খালেদা আছে। যে এলাকার স্কুলে পড়েছেন সে ঠিকানায় এ নামে তো অন্য কোন মানুষ সেখানে জন্মাতে পারে। তাহলে পিতৃঅধিকার এবং সম্পদের অধিকারী জিয়াপত্নী
খালেদা নয়! অথবা স্কুল সনদটি অন্য কোন খালেদার ? এমনতো ভাবাই যায় হিন্দি সিরিয়ালের মতো জিয়ার বউ খালেদাকে মেরে গুম করে তিনি জিয়াপত্মী সেজেছেন ! ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত জিয়ার সম্পত্তি সহ ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুতে দেয়া তথ্যও তাহলে মিথ্যা ? এমন ভাবনা তো এসেই যায় মনে জিয়ার স্ত্রীকে গুম করে ব্যবসা বাণিজ্য সহ সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য খালেদা সেজেছেন? অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় আমাদের আম জনতার মনে। জিয়ার আদর্শের ধ্বজাধারী খালেদা জিয়া সত্যি কি কোনদিন ১৯৯৬ বা তার কিছু আগ পর্যন্ত সময়ে আপনার ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন হয়েছিলো ? অথবা আপনার জন্মদিন ১৫ আগস্ট এটি কি আপনি জানতেন ? জবাব আপনাকে একদিন দিতে হবে মিসেস জিয়া। কারণ বাঙালি আপনাকে জাতির পিতার হত্যার দিনে জন্ম উল্লাস করার অধিকার বা অনুমতি দেয়নি ! আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত জন্ম বাষির্কী ফিরে ফিরে আসে মানেই জীবন থেকে জীবন ধারণের সময় কমে যাওয়া, স্বপ্ন দেখার সময় কমে যাওয়া, সবুজ শ্যামল পৃথিবীর আলো দেখার সময় কমে যাওয়া। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত আপনার মত বীরাঙ্গনার সংসারে জোড়াতালি দিয়েছিলেন বাঙালির জাতির পিতা ! আপনার সত্যিই লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনার ছোট ছেলের জন্ম পরিচয় নিয়ে এ বাঙালি সভ্যতা আপনাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেনি ! অথচ এমন অনেক সন্তান নিয়ে অনেক বীরাঙ্গনাই সমাজে নিন্দিত হয়ে জীবন ধারণ করে আছেন। কারণ এ সমাজ নারীকে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে ভূষিত করলেও পাকিস্তানীদের পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন গুলোকে সোজা চোখে মেনে নেয়নি। এদেশে মাথা উঁচু করে রাজাকার, আলবদরা দেশ চষে বেড়িয়েছে আপনার শাসনামলে। বাঙালির গৌরবের পতাকা নিজামীরা দুঃসাহস নিয়ে সরকারী গাড়িতে উড়িয়ে বাঙালির সদর রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে পবিত্র সংসদ ভবনের পবিত্র চেয়ারে বসে চেয়ার নোংরা করেছে। আপনার চোখে পড়েনি এসব! অথচ সে বীর বাঙালির দেশে হানাদার নির্যাতিত মা বোন এখনও সামাজিক গ্লানি থেকে মুক্তি পায়নি ! যুদ্ধের সময়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ হত্যা, হাত-পা বেঁধে গুলি করা, বীভৎস্য ভাবে মানুষ হত্যার তীব্র যন্ত্রণাটি আমাদের বাঙালি সমাজ মেনে নিলেও নেয়নি কেবল নারী লাঞ্ছিত বিষয়টি। অবশ্য আপনি ক্যান্টমেন্টের হাওয়া ঘরে থেকে হয়ত নারীর লাঞ্ছনা অনুধাবন করতে পারেননি! যতই বীরাঙ্গনা উপাধি দিক। আর খেতাবের নামে যতই উদার গণতন্ত্রের কথা বলুক ; এই-ই সত্য। তাই আপনি ভাগ্যবান যে, আপনার সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সবশেষে পারিবারিক মর্যাদার জায়গায় আপনাকে ওই নিগ্রহ যন্ত্রণা বহন করতে হয় না। সে আপনিই এই মহান নেতার হত্যার দিনে আপনার জাতীয়তাবাদী দলের লাইং ফ্যাক্টরীতে তৈরী জন্মদিনের উৎসব বন্ধ করে এ জাতিকে সম্মান করুণ। তাহলে আপনিও এ সম্মানের অংশীদার হবেন। আর জাতীয় এবং আন্তজার্তিক ভাবেও এদেশের রাজনীতির সংস্কৃতি উন্নত হবে। এদেশের জনতা আপনাকে তাদের নেতা হিসাবে আবারও ভাববার সুযোগ পাবে। আগস্ট মাস আমাদের বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে দুঃখ, শোক, হতাশার মাস। আপনার শাসনামলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন বেগম আইভী রহমান, নিরীহ জনতা সহ অনেক রাজনৈতিক নেতা কর্মী। তাই আমরা আগস্টকে নিন্দা জানাই! যে নেতা মেজর জিয়া আর আপনার সংসারকে জোড়াতাড়ি দিয়েছেন তার প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধা জানান অন্তত: আপনার বানানো জন্ম দিনের উৎসব করা বন্ধ করে। বরং বাঙালি ও বিশ্ববাসীর সঙ্গে শোক পালন করুণ। তাহলে এ জাতি আপনাকেও মূল্যায়ণ করবে। নাইবা করলেন জন্মদিনের উৎসব। এ রকম হাজারো মানুষের সেদিন জন্ম হয়েছিল। তারা তো শোকের দিনে জন্ম উৎসব করেনা বরং জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধায় বিনম্র হয়। তাই যদি সত্যিই আপনার ১৫ই আগস্ট জন্ম তারিখ হয় তাহলে বাঙালির সাথে জন্ম উৎসবটি উৎসর্গ করুণ বাংলার প্রিয় নেতাকে। ত্যাগে মানুষ মহৎ হয়। ত্যাগ করতে শিখুন। ত্যাগে আনন্দই পাওয়া যায়। জাতি আপনার কাছে এমন ত্যাগই আশা করে। সামান্যই তো বিসর্জন। মাত্র জন্ম উৎসবের একটি কেক। অথচ যে নেতার অঙ্গুলি হেলনের নির্দেশে
৭১ এ শহীদ হয়েছে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ ! সে নেতার জন্য বেগম জিয়া একটি জন্মোৎসব এমন বড় কিছু কি ? এ দেশে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ প্রতিনিয়ত ভুলে থাকে তাদের জন্ম দিন। ক্যান্টমেন্টের বাড়ির জন্য যে অঝোর ধারায় কেঁদেছেন। যদি এরকম একটি মুহূর্ত এ বাঙালির জন্য কাঁদতেন তাহলে ইতিহাস আপনাকে স্বর্ণোজ্জল পাতাটি উপহার দিতো। ভেবে দেখুন একবার জন্ম উৎসবটি উৎসর্গ করা যায় কি-না। করলে বড় ভালো হতো!
***********************
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন