ব্ল্যাক ফরেষ্ট- আলোর উৎসমুখ থেকে সরে যাওয়া কৃষ্ণবিন্দু, নিওনের ছায়া
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
" যে দেশ আমাদের নয় মায়ার টানে সেখানে গড়িনি আমরা নিজেদের বসত " ম্যাজিক
রিয়েলিজমের সেই ভূখন্ড সেই মানচিত্রে উপর দাঁড়িয়ে কবি তুষ্টি ভট্টাচার্য
খুজেচলেছেন দেশকালের সীমারেখা অতিক্রম করে এক আবহমানের ঠিকানা। তুষ্টি
খুব সহজ সাবলীল ভঙ্গিমায় কবিতা লেখেন ফলে তাঁর কবিতার ভেতর
দুষ্প্রবেশ্যতার কোন অভিযোগ আনা যায় না। ছোট ছোট শব্দ সাজিয়ে কবিতার
ঘরবাড়ি গড়ে তোলেন সহজেই অথচ তাঁর স্থাপত্যে কোথাও জরাজীর্ণতার বিন্দু
মাত্র আচড় কামড় নেই। জীবনের গভীর গভীরতর উপলব্ধির নির্যাস উপুড় করে
দিয়েছেন সরল ও ঋজু বক্তব্যে।এই দেওয়ালেই বুকে হেঁটে উঠে পড়েছি একদিন
পেটের মধ্যে অচেনা গলায় কেউ ডেকে উঠেছে -" টিক টিক টিক
আর লেজ খসে গেছে অতর্কিতে।
ব্ল্যাক ফরেষ্ট। নয় ফর্মার এই কাব্যগ্রন্থ ব্ল্যাক ফরেষ্ট , দেওয়ালের
গল্প , মারমেড এবং ব্ল্যাক ম্যাজিক এই চার পর্বে বিভক্ত। চারটি পর্বের
মধ্যে সুক্ষ্ণ বিভেদরেখা রয়েছে যা যেকোন মগ্ন পাঠকের নজরে আসবেই ।কবি
নিজেও অবশ্য পৃথক করেছেন পর্ব থেকে পর্বান্তরের পথ। প্রথম পর্বে রয়েছে
সৃষ্টির রহস্য এবং জীবন সংকেতের এক আশ্চর্য জগত। কীভাবে প্রাণের বার্তা
ধারণ আছে এই মহাবিশ্ব ।কৃষ্ণগহ্বর থেকে সেই মহাজাগতিক পথ যেন জীবনেরই
ধারাবাহিক অন্বেষণ। দ্বিতীয় পর্বে এসেছে দেওয়াল অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতা।
তৃতীয় পর্বে জীবনের পরিব্যপ্ত অনুভব এবং সামগ্রিক মহাবিশ্ব থেকে বিযুক্ত
ব্যক্তিমানসের অন্তর্জগতের জটিল আবর্ত।চতুর্থ পর্বে
যাদুবাস্তবতারপরমাশ্চর্য যাত্রাপথ।
উদাহরণ দিয়ে বললে এই কথাগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠবে
১ ওর বইয়ের প্রচ্ছদে ছিল এক মহিলার দু-পা ফাঁক করা ছবি
যে কোন অন্তর্বাস পরেনি
ফলে তার যোনিদ্বার দেখা যাচ্ছিল ( ব্ল্যাক ফরেষ্ট ৮)
২
সে এক কাচের দেওয়াল
বরফের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ( দেওয়ালের গল্প ১)
৩
মারমেড , মারমেড তুমি কলঙ্ক চেনো নি
কুঁড়ি স্তন থেকে জন্ম নেওয়া ফুল তুমি
নারীর স্তনে দুধের ভান্ডার রেখেছ
......
......
নারীটি ভরন্ত বেশি
পড়ন্ত যৌবন খুলে রেখেছে ফ্রকের ফ্রিলে
বালার মকরমুখ থেকে জন্মেছিল যে
সে আর কেউ না, তুমিই মারমেড , মারমেড (মারমেড ৩)
৪
তবুও সুর থেকে গেছে
আজন্মের তৃষ্ণারই রূপে
মনে ধরে রেখেছে চাতক শরীর।
অলৌকিক এই বৃষ্টিদিন এভাবেই রাত হয়ে যায়।(ব্ল্যাক ম্যাজিক ১১)
জীবন রহস্যের ছায়া সেই আদি সৃষ্টিবিন্দু মহাজাগতিক" শরীরের থলে থেকে
আমাকে বের করো" ঝড়ের ড্রয়ার খুলে এভাবেই তুষ্টি দেখেছেন আজন্ম তৃষ্ণার
রেশ যেখানে জন্মের পিপাসা নিয়ে অনন্ত গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছে পরিপ্লাবিত
কালপ্রবাহ। এই সময়ের উপাদান হিসেবেই বস্তুর অবস্থান চিহ্নিত হয়ে আছে
শূন্যের ভেতর অন্ধকারের ভেতর।
"রোদ পোহানোর ছলে বৃষ্টিতে ভিজেছো কখনও ? " অজুহাত সাজিয়ে এভাবেই হয়তো
আমরা শৃঙ্খলিত করেছি আমাদের চলাচল আমাদের কর্মপদ্ধতির যাবতীয় সারণী।
তাই " জলের নীচে চাঁদের ছায়া নেমে এলে " আমরা রাত নামে তাকে ডাকি। গভীর
ঘুমের মধ্যে নদী ডেকে ওঠে। তখন " বালিকার জোনাকি খেলা আর নারীর জ্যোৎস্না
স্নান দেখে " চাঁদ হতে ইচ্ছে করে।
==============================================
ব্ল্যাক ফরেষ্ট।।তুষ্টি ভট্টাচার্য।।সৃষ্টিসুখ।।প্রচ্ছদ পার্থপ্রতিম দাস।।৯৯ টাকা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন