
মিঠা পাতার পান
মিজানের বয়স এখন বারো বছর। মা মরা ছেলেটার ঠিকানা তার নানিমার কাছে। যখন মিজানের বয়স ছয় মাস ছিল তখনই তার মা টা বাপের সাথে বিবাদ করে বিষ খেয়ে মরে। তারপর দুমাস যেতে না যেতেই বাপে আবার বিয়ে করে।একদিন তার বাপ ছোট্ট মিজানকে তার নানিমার কাছে রেখে চলে যায় । ব্যস ! সেই যে গেল আর ফিরেও তাকায়নি তার জন্ম দাতা বাপটা । সেই থেকেই মিজানের বাপ মা সব তার নানিমা। মিজান তাকেই মা বলে ডাকে । নানিমারও বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই।একলা মানুষ। স্বামীটা গত হয়েছে বছর দশেক হলো। ভালো চলাফেরা করতে পারে না। তবুও রাঁধে বাড়ে। ছোটো মিজানকে নিয়েই তার এই সংসার। নানিমার শেষ সময়ের লাঠি মিজান। সেও তার নানিমার খেয়াল রাখে। সময় মতো বাজার করা,জ্বালানি গোছানো, জল তোলা-- সবই করে সে। আর বাজার করতে গেলে মিজান কখনোই তার নানিমার প্রিয় মিঠাপাতার পান আনতে ভুল হয় না। শাকসবজি যায় আনা হোক না কেন মিঠাপাতার পান আনা চাই- ই চায়।সে নিজ হাতে পান সাজিয়ে দেয়। নানিমা সেই পান চিবাতে চিবাতে তার মেয়ের ছোট বেলার কত গল্প শোনায়।মিজান তার নানিমার কোলে মাথা রেখে সেই গল্প শুনে।মিজান বুঝতে পারে গল্প বলতে বলতে নানিমার গলা আটকিয়ে আসে। দুচোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে। মিজান কোল থেকে উঠে চোখের জল মুছে দেয়।সে আদর করে আবার একখানি পান সাজিয়ে দেয়।তখন নানিমার বিমর্ষ চেহারায় হাসির ফোয়ারা ফুটে ওঠে। কিন্তু একদিন সেই হাসির ফোয়ারাও মিজানের জীবন থেকে হারিয়ে গেল। যে স্নেহের আধার তাকে আগলে রেখেছিল এতদিন সেই নানিমাও তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল।মিজান মৃত্যুর অমোঘ নিয়ম অতো বোঝে না। সে জানত না যে মৃত্যু তার আর তার নানিমার মধ্যে এতটা তফাৎ গড়ে দেবে । ঘরের দাওয়ায় বসে থাকে একা মিজান। সে বসে বসে কত কি ভাবে। কেমন যেন শূণ্যতা তার চারপাশে। সে দেখতে পায় পানের বাটায় এখনো গুটিকয় মিঠা পান পড়ে আছে। মিজান ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সে যেন পরিস্কার শুনতে পায় তার নানিমা বলছে ----- "কি রে মিজান, মন খারাপ করে বসে কেন? উঠ, আমায় দুটি মিঠা পাতার পান সাজিয়ে দিবি না। "
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন