হাঁদারাম
বাস স্ট্যান্ডে সৌকতের হাতটা ধরে কোনার দিকে দাঁড়িয়ে ছিল শ্রীরূপা। ঝমঝম বৃষ্টির মাঝে পুরো বাস স্ট্যান্ড ভরা লোক। কোনো মতে মাথা গুঁজে কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। বাস কম। যেগুলো আসছে অন্য রুটের। সৌকতের চোখে মুখে চিন্তা, নিজের নয়, শ্রীর জন্য। এতটা দূর যেতে হবে অথচ.....
শ্রী সেই ব্যাপারে কোনও মাথা ব্যাথা দেখাচ্ছে না। সৌকতের বাড়ি ঘুরে আসার সামনে এই সব ফালতু ম্যাটার। এতক্ষনে একটা বাস। সৌকত হাঁ হাঁ করে উঠল, চল চল, আসছে। ফাঁকা আছে। তুই লাকি শ্রী। আমি তো ভেবেছিলাম গাদাগাদি ভিড় হবে, কি করে যাবি!
'ছাই লাকি।নেক্সট বাসে যাই। এখুনি চলে আসবে।'
"পাগলামি করিস না। নেক্সট কখন আসবে, আসবে কিনা তারও ঠিক নেই। থেকে কি করবি তুই?"
"আর একটু থাকি না। রোজ কি তোর বাড়ি আসব? রোজ কি সি অফ করতে আসতে পারবি? তোকে ছেড়ে যেতে মন যায়না কোনো দিন।"
"আচ্ছা বিয়েটা তো হোক। বাড়িতে বলি আগে। সবে পাওয়া চাকরি। তোর বাবা তাড়া করবে জুতো নিয়ে। আর পাগলামি করিস না। চল..."
বাসে তুলে দিয়ে সৌকতের শান্তি।" পৌঁছে ফোন করিস।"
স্যাঁতেস্যাঁতে ভেজা ছাতাটা মেলে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় সৌকত।
শ্রীর বাড়ি পৌঁছাতে কম সে কম এক ঘণ্টা। বৃষ্টির জন্য জ্যাম থাকলে তো আর কথাই নেই। ছাতাটা কোনো মতে মেলে রেখেই রুমে চলে যায়।
এই রুমে শ্রী আজ প্রথম বার এলো। সৌকতের জন্মদিনের বাহনায় মাকে পটিয়ে কয়েকজনের দলে সাহস করে এইবার শ্রীকেও ডেকেছিল সে। শ্রী জন্ম বাচাল, ডাকাবুকো। সেই কত কালের প্রেম। তখন কলেজে। শ্রীকে সামনে বলার সাহস পায়নি কোনো দিন। চুপিচুপি চিঠি লিখে লুকিয়ে শ্রীর বইয়ের মধ্যে রেখে দিত সৌকত। একে ওকে দিয়ে খোঁজ নিয়েও চিঠিগুলোর খবর বা তাদের জন্য শ্রীর রিঅ্যাকশনের আন্দাজ করতে পারেনি সে। সেদিন কলেজ সোশালে শ্রী একটা লাল শাড়ি পরেছিল। ভাষ্যপাঠে তুখোড় সৌকত বুলি হারিয়ে ফেলেছিল। সেদিনই তো ফাংশন শেষে শ্রী দুম করে হাত ধরে সৌকতকে টেনে নিয়ে বলে, 'তুই আমাকে ভালোবাসিস? মিথ্যে বললে মেরে ফেলব।'
হকচকিয়ে গেছিল সৌকত। কি সব হচ্ছে তার সাথে!
হঠাৎ কেন!
'কি রে বল? চুপ করে আছিস কেন হাঁদারাম?'
`না মানে আমি.... `
কথা শেষ হবার আগেই জড়িয়ে ধরেছিল শ্রী। 'না বললে এখানেই খুন হয়ে যাবি কিন্তু...'
না বলার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। হাতে স্বর্গ পেয়েছিল সৌকত। নিজের ভরসায় তার এই জন্মে বলা হত কিনা কে জানে! সেই থেকে একসাথে এতদিন।তবে শ্রী একবারের জন্য সেই চিঠির কথা মুখেও আনেনি। হয়তো পাত্তা দেয়নি, কিংবা পায়নি তাও হতে পারে।মাথা ঘামায় না সৌকত। কিন্তু সাহস করে বাড়িতে বলেই উঠতে পারল না সৌকত এতদিনও। শ্রী বারবার বলে, 'তুই কবে বলবি সেই ভরসায় থাকলে, আমার বিয়ে হবে, আর তুই চান্না মেরেয়া গাইবি।' তার আগেই বলবে সৌকত। কোনো মতেই সে শ্রীকে হারাতে নারাজ। ফোন কেন করছে না পাগলিটা! ফোনে শ্রীর নাম্বার ডায়াল দিল এবার। লাগছে না।আউট অফ রিচ। চেষ্টার পর চেষ্টা। প্রায় এক ঘণ্টা। কোনো লাভ নেই। যান্ত্রিক শব্দে একই কথা বলছে বারবার।তবে কি রাস্তায় কিছু একটা! এবার সে বেরিয়েই পড়ব মাকে কিছু একটা বলে।ফোন পকেটে পুরে ছাতাটা ভাঁজ করে বেরাতে যাবে, অমনি ফোন রিং করে। আননোন। যাই হোক, তুলে কিছুই বলতে হয়না, ধমকে ওঠে শ্রী।'কার সাথে ব্যস্ত তুই?'
'নিজের ফোন অন কর বুঝে যাবি, এতো লেট?'
'জ্যাম ছিল, ফোন বন্ধ, বাবার থেকে করছি।'
'কত টেনশনে ছিলাম জানিস? আমি এখুনি বেরিয়েছি, তোদের বাড়ি যাব আজই সব বলব। আর হ্যাঁ,তোর বইয়ে আগে অনেক চিঠি রেখেছি আমি, তুই পাস নি, সে আলাদা কথা।তোকে তো বলাই হয়নি। '
'আমি জানতাম। তোর ডায়েরি থেকে লেখা মিলিয়ে দেখেছি হাঁদারাম। শুধুই কি গলা জড়িয়ে ভালোবাসি বলতে গেছিলাম! '
' আমাকে তো বলিস নি, তুই জানিস! '
' তুই আমাকে বলেছিস চিঠি গুলো তোর? শাস্তি, বুঝলি। আর আজ নয়, কাল আয় বাড়ি, একটু স্মার্ট হয়ে, হাঁদারাম হয়ে নয়।'
=========================
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন