লোকটা
বাপ্পান লোকটাকে রোজ দেখে।জাগুলির চৌরাস্তার মোড়ে প্রায় একইভাবে। তাপ্পি মারা জামা, ও আধময়লা লুঙ্গি পরে ,পুরনো একটা রিক্সার সিটে বসে , রাস্তাদিয়ে যাওয়া লোকজনের দিকে তাকিয়ে আছে ও মাঝে মধ্যেই রিক্সার হ্যান্ডেলে ঝোলানো অস্পষ্ট একটা ছবি দেখে প্রণাম করছে। যুগের নিরিখে যা অত্যন্ত বেমানান আর বেমানান বলেই লোকটার দাঁড়াবার কোনো নির্দিষ্ট জায়গাও নেই। টোটো, ছোটো ,ই -রিক্সার দয়া দাক্ষিনে যেদিন যেখানে ফাঁকা জায়গা পায়,সেইখানেই এই তল্লাটের একমাত্র রিক্সাওয়ালা তার রিক্সা স্ট্যান্ড করে এবং অধীর আগ্রহে প্যাসেঞ্জার এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে,অপেক্ষা করতেই থাকে।দৈবাৎ একটা,দুটো প্যাসেঞ্জার জুটে গেলে,লোকটার দেহভঙ্গিমাই যেন পাল্টে যায়-তবে তা হাতেগোনা মাত্র দু-একটা দিনের জন্য ।অন্তত বাপ্পান তাই দেখেছে।
লোকটার প্রতি কেমন যেন মায়ায় বাপ্পান তার সাথে আলাপ করে।" আচ্ছা কাকা ,তুমি এখনও এই বয়সে রিক্সা টান কেন ? তোমার কি খুব অভাব? তোমার পরিবার কি তোমায় দেখে না ? যদি তাই হয় তো আমায় বলো,আমি আমার বন্ধু বান্ধব,বা কাউন্সিলর এর সাথে একটু কথা বলি।" কথা গুলো শুনেই লোকটা তাড়াহুড়ো করে রিক্সা থেকে নেমে বাপ্পান এর হাত দুটো জড়িয়ে ধরে-করুণাময়ের কাছে বাপ্পানের মঙ্গল কামনা করে বলে "বাবা অভাব আমার আছে।পরিবারও আছে,তারা সবাই আমার খেয়ালও রাখে। তাই আমার আর কিছু চাই না গো। তবে বলি এই রিক্সা আমার বাবার স্মৃতি ,সেই পনেরো বছর বয়সে বাবার কাছেই হাতেখড়ি ,তারপর জীবনের এতগুলো বছর ভালো মন্দে এই রিক্সাই তো আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে।একে আমি কি করে ছেড়ে থাকি বলো ? একে ছেড়ে দিলে তো আমার বাবা কষ্ট পাবেন ।তাই যত দিন শরীরে দেয় রিক্সা আমি টেনেই যাবো।"
লোকটা ধরা গলায় কথা গুলো বলে যাচ্ছিল।বাপ্পান লক্ষ করে রিক্সার হ্যান্ডেলে বাঁধা পুরানো ছবিটা যেন আজ একটু বেশিই উজ্জ্বল লাগছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন