আমি বসেছিলাম,-বাড়ির অনতি দূরে ঝিলের ধারে পশ্চিম মুখী হয়ে -দিগন্তে অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে।অপরূপ সে দৃশ্য পট,বর্ণনাতীত মেঘমালার রঙের খেলা দেখতে দেখতে মন চলে গেছে সে কোন স্বপ্ন সায়রে স্বপ্ন ভেলায় ভাসতে ভাসতে।ঝিলের জলেও পড়েছে সেই রঙের প্রতিফলন।পদ্মবনে ভোমরা মৌমাছিরা মধু গুঞ্জরণে ভরিয়ে তুলছে সারাক্ষণ।তারাও সন্ধ্যারাগে রঞ্জিত।পদ্মবনেও পড়েছে সূর্যাস্তের রাঙা আলো। বর্ণময় অস্তরাগের সে রাঙা আলোয় ঝিলের জল ও টলটল করছে।অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বহু পুরোণো এক শিবালয় মন্দির।মন্দির চত্বরে একটি মা গাভী ডাকছে তার শিশুটিকে হাম্বা হাম্বা রবে।তার একটু দূরে একটি কৃষ্ণবর্ণ মার্জার নয়ন মুদে বসে আছে।মন্দিরে সানাই এর সুরে শঙ্খ ঘন্টা বাজছে।আমার মনের ভিতরে অপরূপ সে রাগিনী যেন আলাপ ধরেছে পূরবী রাগে। আমার চারপাশটা যেন স্বপ্নাচ্ছন্ন পরিবেশে বেষ্টিত। আমি তন্ময় হয়ে বসেছিলাম। ভাবছিলাম -কী সুন্দর এই পৃথিবী!
হঠাৎ আমি চমকে উঠলাম যেন কোনো কিছুর সাড়া পেয়ে।দেখি-আমাদের ভোলা কুকুর টি।কখন যে সে আমার সঙ্গ নিয়েছে বুঝতে পারিনি।কিছু দূরে এক শেয়াল দম্পতি হুক্কা হুয়া রবে চেঁচিয়ে উঠলো।আাঁধারের আভাস পেয়ে পেচক দম্পতিও রব ধরেছে তাদের ভাষায়।ক্লান্ত কাকের দল ও সাদা বকের দল সারিবদ্ধভাবে আকাশের গা বেয়ে উড়ে যাচ্ছে যে যার বাসায়।পশ্চিম দিগন্তে তাকিয়ে দেখলাম - আলোর সে সমারোহ নেই।অস্তমিত রবির সে বর্ণচ্ছটা দিকচক্রবাল রেখায় মৃয়মান।বুঝলাম- আঁধার নামছে এক পা এক পা করে পৃথিবীর বুকে। হঠাৎ কোনো কিছুর সাড়া পেয়ে যেন ভোলাটা ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।আমিও অনুভব করলাম যেন তৃতীয় কোনো কিছুর আগমন। আমি বললাম -কে?কেউ যেন পুরুষ কণ্ঠে বলল- আমি।বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো।বললাম-কে তুমি?তোমায় দেখতে পাচ্ছি না কেন?তেমনি পুরুষ কণ্ঠে বললো-আমি প্রীতম।তোমার গত জন্মের প্রেমিক।তুমি একা বসে আছো দেখে এলাম গল্প করতে।নিমেষে পূর্ব জন্ম এসে আমার মনে নাড়া দিয়ে গেল।
আমি বললাম -তুমি পাশে এসে বসো প্রীতম।আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?ও বললো-আমি তো এখন অশরীরী আত্মা তাই দেখতে পাওনি।আমি ভাবলাম -তাইতো,কিন্তু কেন?সে বললো-আমি তো এখনো মানব জন্ম পাইনি সে আরও বললো-জন্মান্তরে তোমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রইল।প্রীতমের সেই অশরীরী আত্মা আমার পাশটিতে বসে আছে,কথা বলছে-কেমন যেন আশ্চর্য মনে হল!ভোলাটা খালি ঘোঁৎ ঘোঁৎ করছে তখন থেকে।ওর মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে ও চুপ করে গেল। আর সে ঘেউ ঘেউ করেনা।প্রীতম আমাকে পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে -সে নাকি আমার আগের জন্মের প্রেমিক ছিল।কিন্তু সে প্রেমের পরিণতি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।প্রীতম কোনো এক সম্ভ্রান্ত ও অর্থ শালী পরিবারের শিক্ষিত সন্তান ছিল। আর আমি নাকি খুব দরিদ্র পরিবারের শিক্ষিতা সুন্দরী কন্যা ছিলাম।প্রীতমের পরিবার আমাকে মেনে নিতে পারেনি।প্রীতমের অন্যত্র বিবাহের ব্যবস্থা চলছে এমনি সময়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে প্রীতম মারা যায়। আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কের সেখানেই ইতি হয়। সেই থেকে সে আর মনুষ্য জন্ম পায়নি।যদি কখনো সে আবার মনুষ্য জন্ম পায়,তখন সেই অপূর্ণ ইচ্ছা সে পূরণ করবে।ভাবলাম- আমার তো কিছু মনে নেই!সত্যি কি না কে জানে!সে বললো -বেশ ঠিক আছে - আগামীকাল সকালে তার প্রমাণ স্বরূপ কিছু দেখতে পাবে।পরেরদিন খুব ভোরে উঠে দেখি-একটি সতেজ সুন্দর বসরাই লাল গোলাপ আমার ঘরের জানালার কার্ণিশে রাখা আছে। অবাক লাগলো-গোলাপ আমি ভালোবাসি-ও জানলো কেমন করে!বিশ্বাস করলাম।
--------------------:--------------------
শেফালি সর
জনাদাঁড়ি
গোপীনাথপুর
পূর্ব মেদিনীপুর
৭২১৬৩৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন