রাঙা পিসিমা আজ বাড়ি ফিরবেন সকাল দশটা দশের রাণাঘাট লোকাল, কম পক্ষে এক ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে না বের হলে হাওড়া স্টেশান পৌঁছানো সম্ভব নয়, তার ওপর যদি জ্যাম থাকে তো কথাই নেই।ঘড়িতে নটা পিসিমা হাঁক পাড়লেন 'কই রে কেষ্ট আমার জুতোটা কোথায়?',কেষ্ট এ বাড়ির বহু দিনের কাজের লোক,কিন্তু জুতো কোথায়! গোটা বাড়ি খুঁজেও জুতোর সন্ধান না পেয়ে অগত্যা রাঙা পিসি ভাইপো শ্যামা ওরোফে শ্যামাপ্রসাদের বাথরুমে যাওয়ার হাওয়াই চটিটি পড়ে রাগে গজরাতে গজরাতে রওনা হলেন বাড়ির পথে।
এদিকে ভাইপো শ্যামা যথারীতি তার ক্লাস শেষ করে ল্যাবে ছাত্র-ছাত্রী দের নিয়ে পরীক্ষায় ব্যাস্ত,তবুও ব্যাস্ততার মাঝেও চিন্তা করছেন রাঙা পিসি এখনও ফোন করল না কেন, ঠিকঠাক পৌঁছালো তো? ক্লাস শেষ, স্টুডেন্টরা সবাই চলে গেছে, এবার শ্যামা বাবু ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হলেন। কিন্তু একি!তাঁর জুতো কথায়? এ তো একটা লেডিস জুতো!কি সর্বনাশ অ্যাঁ , এখন তিনি কি করবেন?সবাই চলে গেছে, কোন ছাত্রী নিজের জুতোর বদলে তার জুতোটি পরে চলে গেল, তিনি কি করে জানবেন? উহ্ কি বেয়াক্কেলে মেয়ে রে বাবা স্যারের জুতো পরে বাড়ি যাওয়ার আগে একবারও ভাবলি না, উহ্! এখন একজন পুরুষ মানুষ হয়ে কিভাবে তিনি এই লেডিস জুতো পরে সূদূর কলকাতায় পাড়ি দেবেন, ছিঃ ছিঃ, লোকে কি ভাববে?
অগত্যা উপায় না দেখে সেই অজানা জুতো চোরের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন! হেঁটে চলেছেন প্লাটফ্রম ধরে অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গে।
ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল, ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে রাঙা পিসির কর্কশ কন্ঠ ভেসে এল 'তোদের আক্কেল জ্ঞান কবে হবে বলতো আমার জুতো জোড়া কোথায় রেখেছিস্ অ্যাঁ, শেষে কিনা হাওয়াই চটি পরে আমায় বাড়ি অসতে হল!'
আমতা- আমতা করতে করেত শ্যামা বাবু নিজের পায়ের দিকে তাকালেন,ততক্ষণে বোধহয় আক্কেল ও জ্ঞান দুটি বস্তু যে কি তিনি হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন।
----------------------
দেবশ্রী সরকার বিশ্বাস
আরামবাগ, হুগলী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন