অণুগল্প ।। ভালো বাসা ।। চন্দন মিত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Saturday, December 18, 2021

অণুগল্প ।। ভালো বাসা ।। চন্দন মিত্র


 

হঠাৎই চোখে পড়ল, বাড়ির সামনের জবাগাছের ডালে বসে আছে একটি ছোট্ট টুনটুনি। সন্ধ্যার পর বাইরের লাইট জ্বালা থাকে বলে পাতার ফাঁকে বসে থাকা পাখিটি সহজেই চোখে পড়েছে। তারপর থেকে প্রতি রাতে বাড়িতে ঢোকার সময় তাকে দেখিসেই একই গাছের একই ডালে সে আপনমনে বসে থাকে। আহা বেচারা অনাথ টুনটুনি ! বাসা বাঁধার মতো  বয়সটুকুও হয়নি এখনও। দিনের বেলা তাকে দেখা যায় না, শিকারিদের নজর এড়াতে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায় কে জানে ! দিন পনেরো পরে একদিন রাতে বাড়িতে ঢোকার সময় অভ্যস্ত চোখ ধাক্কা খায়, আরে পাখিটা তো নেই। ভালো করে নজর করলাম। না, সত্যিই নেই। তার আগের রাতে বেশ ঝড়বৃষ্টি হয়ে গেছে। ভাবলাম অন্য কোনও গাছে আশ্রয় নিয়েছে অথবা ভালো কোনও বাসার সন্ধান পেয়েছে। পরের রাতে ফেরার সময় জবাগাছটি ঠিক নজর টেনে নেয়কিন্তু সন্ধানী চোখ বাঞ্ছিতকে নাগালে পায় না।

    তিনটি বাড়ির পরেই বড়দির বাড়ি। প্রতি রোববার সকালটা আমার ওই বাড়িতেই কাটে। যথারীতি এই রোববারও গেলাম। ক্লাস ফাইভে পড়া ভাগ্নে বলল জানো মামা, পরশুদিন রাতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ার   একটু পরে কারেন্ট অফ হয়ে যায়। সেইসময় ছোট্ট একটি পাখি আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। তারপর উড়তে উড়তে ফ্যানে গিয়ে ধাক্কা খায়। ফ্যানটি তখনও পুরোপুরি থামেনি। আমি টর্চ জ্বেলে তাকে উদ্ধার করি। আমার হাতে একটু জল খেয়ে সে উঠে দাঁড়ায়। পাখিটা ভালো আছে দেখে খুশি মনে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন সকালবেলা দেখি পাখিটা সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে আঙুল দিয়ে ছুঁলাম সে নড়ে না চড়ে না, যেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনই দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর তাকে হাতে নিয়ে আমি চমকে উঠলাম। দেখলাম আসলে সে একটা পাথরের পাখি। আমি হতভম্ব হয়ে মাকে ডাকলাম। মা আমাকে বকুনি দিয়ে বলল, আমি নাকি কিনে এনে নাটক করছি। ভয়ে ভয়ে বাবাকে আর কিছু বলিনি। আমি পাখিটাকে আলমারিতে অন্যান্য খেলনার সঙ্গে সাজিয়ে রেখেছি। চলো আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।

আমি কৌতূহলের সঙ্গে তার পিছু নিলাম।    


No comments:

Post a Comment