জৈগন বেওয়ার অসুখ হয়েছে। আত্মীয়রা প্রতিদিনই তাকে দেখতে আসছে। যে যেখানে আত্মীয় আছে। আসার সময় হাতে করে কেউ না কেউ কিছু না কিছু নিয়ে আসছে। কেউ ফল, কেউ বিস্কুট, কেউবা হরলিক্স। কিন্তু জৈগন বেওয়া সে সবের কিচ্ছুটি মুখে করছে না। ফলে তার বিছানার পাশে সব গুলো ডাঁই লেগে আছে। তা দেখে ছেলে পলাশ তার পাশ খানে গিয়ে বসল----মা!
----কে, খোকা!
----হ্যাঁ, মা।
----কী হোলো, বুল!
----তুমি কিছু খাচ্ছ না কেন, মা!
জৈগন বেওয়া বলল----কী কইর্যা খাবু বুল,খাতে যে কুচ্ছুু ভাল্লাগছেনা। এ্যা সবের দিকে ঘুইর্যা তাকাতেও না।
----তাহলে অন্য কিছু খাও!
----অন্য কুছু কী খাবু?
----চিকেন, বিরিয়ানি, কাবাব, কোপ্তা.....
----অসব খালে যে এ্যাকদিনও বাঁচবু না; বদ হজম হইয়্যা প্যাট ফুইল্যা মইর্যা যাবু। প্যাটে অসব সহাবে না।
----তাহলে কী খেতে চাও বল, তুমি যা খেতে চাইবে তাই এনে দিব।
----আমি যা খাতি চাহাব তাই আইন্যা দিবি?
----হ্যাঁ, তুমি শুধু বল।
----সত্যি বুলছিস?
----হ্যাঁ মা, সত্যি বলছি।
----কিন্তু সে জিনিস কি শহরে পাবি? শহরের মানুষ কি সে জিনিস খায়?
----কী জিনিস তুমি বল না, শহরে পাওয়া যাবে না এমন জিনিস নেই। টাকা দিলে সব পাওয়া যাবে। এমনকি বাঘের দুধ পর্যন্তও। এটা তো আর আমাদের পুরনো সেই কাশিমপুর গ্রাম না যে, কিছু পাওয়া যাবে না। যাইহোক, তুমি আর দেরি করোনা মা, চট করে বলে ফেলো!
----বুলছি। তার আগে তুই বুল, এডা কী মাস চলছে? ভাদোর মাস না?
----হ্যাঁ, এটা ভাদ্র মাস চলছে। কিন্তু মাস নিয়ে তুমি কী করবে?
----না মানে, আমি বুলতি চাহাচি যে, ভাদোর মাসে ভাদই ধানের চালের পানি দ্যাওয়া বাসি ভাত কাঁচা পিঁয়াজ আর নুন-মরিচ দিইয়্যা মাইখ্যা খাতে খুব ভাল্লাগে। যা অমৃতের চাইহ্যাও বেশি সুস্বাদু! তাই, আমি তুর কাছে ভাদই ধানের পানি দ্যাওয়া বাসি ভাত খাতে চাহাচি। তুই আইন্যা দিলে আমি প্যাট ভইর্যা খাবু। হ্যাঁ খোকা, আমি প্যাট ভইর্যা খাবু। তুই কি আইন্যা দিতি পারবি?
----কিন্তু মা, তোমার বুকে যে এখন প্রচুর কফ বসে আছে। পানি দেওয়া বাসি ভাত খেলে তুমি বাঁচবে? সঙ্গে সঙ্গে আরও কফ বসে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হয়ে মারা যাবে না? আমি ছেলে হয়ে সেটা পারি কী করে বল! তার চাইতে তুমি আগে ভাল হয়ে ওঠো, তারপর না হয় একদিন খেও। আমি এখন তোমাকে ওসব এনে দিতে পারব না।
জৈগন বেওয়ার মনটা তো খারাপ হলই শুনে, পানি দেওয়া বাসি ভাতের জন্য তার প্রাণটাও লালায়িতা হল।
------------
আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস
গ্রাম+পোস্ট:-সারাংপুর খাসপাড়া,
থানা-ডোমকল,
জেলা-মুর্শিদাবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন