নীলকান্ত বড্ড বোকা মানুষ। যার তার সাথে করে ফেলে বোকামি কাণ্ডকলাপ। একদিন তো বৌর উপর রাগ করে ঘরে না ঘুমিয়ে উঠানে ঘুমিয়েই রাত কাটিয়ে দিলো। এই তো দুদিন আগের কথা, রাগ করে বসে আছে। তার বৌ ললিতা এসে বললো, আমার উপর রাগ করো কেন? আমি না তোমার ময়নাপাখি!
ওমনি বোকা নীলকান্ত ক্রুদ্ধ নীলকান্ত হয়ে গেলো। বৌর হাত ধরে উঠানে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে ঘরে যেয়ে ভাত এনে উঠানে ছিটিয়ে বললো, হ্যাঁ, তুই আমার ময়নাপাখি! ভাতগুলো খুটে খুটে খা।
ললিতা বললো, কত স্বামীই তো আদর করে তাদের বৌকে ময়নাপাখি বলে ডাকে!
নীলকান্ত রেগে গেলো আরো, বললো, মানুষ কখনো ময়নাপাখি হয়? একটা পাগলকে বৌ করে ঘরে তুলেছি। মাথায় যদি বাঁশের বাড়ি মারতাম পাগলামী ছুটে যেত।
ললিতা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো স্বামীর এমন আচরণে। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বললো, নাগো, আমি তোমার ময়নাপাখি না, মিছে মিছে বলেছি।
নীলকান্ত রেগে বললো, মিথ্যে কথা কেউ বলে? তাও স্বামীর সাথে! কোন দিনও তো বিদ্যালয়ে যাসনি, বুঝবি কেমনে যে, মিথ্যা বলা মহাপাপ!
পরদিন সকালে নীলকান্ত বললো, ললিতা, কই তুই?
ললিতা ভাবলো কি না কি বলে বসে। তাই দৌঁড়ে স্বামীর সামনে এসে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলো। নীলকান্ত বললো, এভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তুই কি অমেরুদণ্ডী প্রাণী?
ললিতা মিটিমিটি হেসে বললো, তোমাকে দেখলে আমার ভয় লাগে।
নীলকান্ত বীরপুরুষের মত বুক ফুলিয়ে বললো, ভয় লাগে কেন? আমি কি বাঘ, না ভাল্লুক? নাকি বনমানুষ?
ললিতা বললো, তুমি আমার প্রাণভ্রমরা!
নীলকান্ত ক্ষেপে গেলো, বললো, আজ আমাকে ভ্রমরা বানিয়ে দিলি? কালকে তো বলবি আমি মৌমাছি, তারপর বলবি আমি তেলাপোকা, তারপর বলবি ছারপোকা। এই আমাকে পেয়েছিসটা কি?
ললিতা বললো, রেগে যাচ্ছো কেনো? সবাই তার স্বামীকে কত আদরে শব্দে ডাকে!
নীলকান্ত বললো, তা তুই আমাকে কোন কোন আদরে শব্দে ডাকবি ভেবেছিস?
ললিতা লাজুককণ্ঠে বললো, আমি তোমাকে হ্যাঁগো, কইগো, শুনছোগো শব্দে ডাকবো।
নীলকান্ত বললো, তবে পাশের বাড়ির নকুলকে নকুলগো, যুগলকে যুগলগো বলে ডাকবি? বৌ, তোর তো মতলব ভালো না। কি গো গো শুরু করলি, বল তো?
ললিতা বললো, তুমি একটা পাগল। পাগলের মতই তোমার সব কথা।
ললিতা পাশ কেটে চলে গেলো। নীলকান্ত কেঁকিয়ে বললো, স্বামীকে পাগল বানিয়ে দিলি? তোর স্বামী কি ছেঁড়া প্যান্ট, ছেঁড়া শার্ট পরে পথে পথে বকবক করে বেড়ায়?
ললিতা আবার ফিরে এসে বললো, তুমি কি মানুষ হবে না?
নীলকান্ত বললো, কেন আমি মানুষ না? আমার কি চার পা? আমি কি গরু, ছাগল? আমার দুই হাত, দুই পা। আমি মানুষই। তোর চোখ গেছে বৌ!
ললিতা আজ ক্ষেপেছে, ছেড়ে কথা বলছে না, বললো, তোমার মাথা ভর্তি গোবর।
নীলকান্ত বললো, আমার মাথা ভর্তি গোবর, না তোর মাথা ভর্তি গোবর? গোবর জৈব সার। পর্যাপ্ত জৈব সার পেয়ে তোর মাথার চুল বড় হয়েছে। দেখ্ তো আমার মাথার চুল ছোট, অর্থাৎ আমার মাথায় গোবর নেই।
ললিতা বললো, তোমার কথা-বার্তা শুনে আরো নিশ্চিত হলাম তোমার মাথায় গোবরই।
নীলকান্ত মাথাতে হাত বোলাতে থাকলো, গোবর ঠেকলো না। বললো, মাথায় গোবর নেই। মাথায় গোবর কিভাবে লাগবে? তোর চোখ গেছে।
ললিতা বললো, গোবর-গণেশ একটা!
নীলকান্ত ভ্রূ কুঁচকে বললো, গোবর-গণেশটা কে? বিয়ের আগে কি তার সাথে প্রেম করতিস?
ললিতা বিরক্ত হয়ে বললো, কি মুশকিল, লেখাপড়া করে কি কিছুই শেখোনি?
নীলকান্ত বললো, লেখাপড়া না শিখলে সেদিন আমার আর তোর নাম দেয়ালে কি করে লিখেছিলাম? আমি মেট্রিক পাস!
ললিতা বললো, মেট্রিক পরীক্ষায় পাস করে নিশ্চয় ঘোড়ার ডিম পুরস্কার পেয়েছিলে?
নীলকান্ত হেসে বললো, নারে বৌ, ঘোড়ার ডিম পাইনি, পেয়েছিলাম কাচের প্লেট। হাত থেকে ফেলে ভেঙে ফেলেছিলাম।
দাঁত কটকট কামড়ে ললিতা বললো, তোমরা সব মূর্খের দল।
নীলকান্ত চার পাঁচটা শব্দ দ্রুত বানান করে বললো, দেখ বৌ, মূর্খ বলবি না। আমরা তিন ভাই-বোন এবং বাবা সবাই শিক্ষিত। এ বাড়ি মূর্খ থাকলে একমাত্র তুই।
ললিতা বললো, আমি যা পড়েছি তোমার দশ ক্লাস পাস করার চেয়েও ভালো।
ঘর থেকে নীলকান্তের বাবা সূর্যকান্ত বাবু বের হয়ে এলেন। ছেলেকে বোঝালেন, বাবা, বৌকে বকতে নেই। বৌ হলো গলার মালা, বৌ হলো ঘরের অলংকার।
নীলকান্ত আশ্চর্য হয়ে বললো, বাবা, ললিতাকে ঘরে আনার পর ললিতার কথা শুনে তুমিও পাগল হয়ে গিয়েছো। বৌ কখনো গলার মালা, ঘরের অলংকার হতে পারে? তোমাদের পাগলামী সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে যদি পাগলের মত বলতে থাকো, তবে তোমাদের সাথে থাকা আমার দায় হবে।
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, রাগ করিস না, বাবা। ঘরে শিক্ষিত ছেলে থাকলে কত ভুল ধরা পড়ে। আসলেই তো বৌ গলার মালা বা অলংকার হবে কেন? লোক মুখে শুনে শুনে তোর মাকে এসব বলতাম আমি। ছি ছি, কি পাগল ছিলাম আমি!
স্বামী আর শ্বশুরের পাগলামি আচরণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া দেখে ললিতা সেখান থেকে চলে গেলো।
বজ্রকান্ত স্কুলে আছে। বন্ধুদের মাঝে সে খুব অবহেলিত। কিছু বলতে যাচ্ছিলো। মাখন বাঁধা দিয়ে বললো, চুপ থাক, পাগল।
বজ্রকান্ত হেসে বললো, আমি পাগল না, পাগল সেজে থাকি।
মাখন বললো, মানে? পাগল সেজে থাকিস কেন?
বজ্রকান্ত বললো, পাগল সেজে থাকি কারণ পাগলরা ভালো বৌ পায়।
আর এক বন্ধু মরণ বললো, ভালো বৌ পাওয়ার জন্য তোর দেখি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
বজ্রকান্ত বললো, দেখ্ বৌ হলো পরবর্তী জীবনের সঙ্গী৷ যদি ভেবে চিন্তে বিয়ে না করা হয়, দেখে শুনে বিয়ে না করা হয়, আর কপালে যদি পাগল বৌ জোটে তো জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমার দাদা একটা পাগল মেয়ে বিয়ে করে এখন যে কি যন্ত্রণায় আছে বলে বোঝানো যাবে না।
মাখন ভ্রূ কুঁচকে বললো, পাগল বলে কি!
বজ্রকান্ত বিরক্ত প্রকাশ করে বললো, দেখ্ পাগল বলবি না। পাগল গাছের পাতা টাকা ভেবে গণনা করে, আমি কি কখনো গাছের পাতা টাকা ভেবে গণনা করেছি? পাগল তো পথে পথে ঘোরে, আমি কি পথে পথে ঘুরি? তোদের সাথে থাকি।
মরণ বললো, তবে স্যারেরা তোকে পাগল বলেন কেন? স্যারেরা কি মিথ্যা বলেন?
বজ্রকান্ত বললো, স্যারেরা তো আমাকে আদর করে পাগল বলেন। আমার মা আমাকে পাগল বলতো, বাবা পাগল বলে, তাই বলে পাগল? শোন্, কাজ পাগল, পড়া পাগল, খাওয়া পাগল এরা কেউ পাগল না, সবাই ভালো।
মাখন মরণের দিকে তাকিয়ে বললো, বজ্র পাগল হলে কি হবে, কথা জানে। আসলে বজ্র তুই কেমন পাগল বলতো? এত পাগলামি করিস আবার এত জ্ঞানের কথা কিভাবে বলিস?
বজ্রকান্ত খুশী হয়ে বললো, পাগলের ভাব নিই। তোরা কে কি ধারণা পোষণ করিস তাই দেখি।
মাখন আর মরণ পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকালো। দেখে বজ্রকান্ত বললো, আমার একটু বুঝতে দেরি হয়, আর বুঝে ফেললে তা আর ভুলি না। তাই বলে তোরা যে আমাকে পাগল বলিস এটি কি ঠিক?
মাখন আর মরণ বজ্রকান্তের এমন প্রশ্নের উত্তর না দিতে পেরে চুপ হয়ে থাকলো।
স্কুল থেকে বাড়ি এসে বজ্রকান্ত খেলতে চলে গেলো। কিন্তু তাকে কেউ খেলতে নিলো না। মাঝে মাঝে নিলেও ব্যাট করতে দেয় না। তাতেও তার সমস্যা নেই। হঠাৎ তার কাকাত ভাই কমলাকান্ত উচ্চ স্বরে বললো, জোরে জোরে মার, আর মাত্র দশটা বল আছে।
শুনে বজ্রকান্ত বললো, এই পাগল, জোরে জোরে মারবে কেন? বলছিসই দশটা বল আছে, যদি বল ফেঁটে যায়? আর দশটা বল কই? বল তো একটাই!
কমলাকান্ত বজ্রকান্তের কথার প্রেক্ষিতে বললো, কাকে পাগল বললি? তোর তো সাহস কম না! তোকে না বলেছি ছয় বার বল ছুঁড়লে এক অভার হয়!
তারপর কেঁকিয়ে বললো, সুশান্ত, নয় বল আছে। এক অভার তিন বল। বিশ রান লাগবে।
শুনে বজ্রকান্ত বললো, ও! ওভার কম, বল বেশি!
কমলাকান্ত এবার গরম দিয়ে বললো, চুপ থাক বদ্ধপাগল। বোকারাম, তোর বুদ্ধি কবে হবে?
বজ্রকান্ত বললো, সবাই নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে, আর অন্যকে ভাবে পাগল। বুঝতে দেরি বা বলতে ভুল করে যারা তাদের নিমেষেই পাগল বলা পাগলদেরই কাজ।
সম্প্রতি নীলকান্তের পাগলামি বেড়ে গেছে। ললিতা বাবার কাছে গেলো, বাবা, দিনরাত আপনার ছেলে আমার সাথে ঝগড়া করে।
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয় না, হয় সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি। এটা হয় এক প্রকার অভিমান থেকে। অভিমান ভালেবাসার অন্য নাম, বৌমা। আমিও তোমার শ্বাশুড়ির সাথে কত মান-অভিমান করতাম।
ললিতা শ্বশুরের ভণিতায় রেগে গিয়ে বললো, আমি কি আপনার কাছে ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি, মান-অভিমান, ভালোবাসার সংগা জানতে এসেছি?
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, এই যে তুমি যেভাবে কথা বলছো এটাকে বলে রাগ। রাজা-বাদশা, আমজনতা, ফকির সবাই কোন না কোন কারণে রাগ করে। এই দেখো না, মাঝে মাঝে আমিও রাগ করে বাড়ি ভাত না খেয়ে অন্যের বাড়ি ভাত খাই। তোমার শ্বাশুড়ির সাথে একবার রাগ করে তো আমি মাথায় তিন মাস তেলই মাখিনি। চার মাস স্নানই করিনি।
ললিতা এসব কথা শুনে বিরক্ত প্রকাশ করে বললো, খুব চমৎকার কাজ করতেন। আপনার ছেলেকে সাবধান করে দেবেন।
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, কেন? ছেলেটা কি পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে জোর কদমে হাটে? আহা, ছেলেটা আঁছাড় খেয়ে তো ব্যথা পাবে! নীলকান্ত কাদা দেখলেই গায়ে মাখে। আচ্ছা, সাবধান করে দেবো, এবার খুশী?
ললিতা কোমরে হাত বেঁধে বললো, আপনি ও আপনার ছেলে বড্ড বেশি বোঝেন।
সূর্যকান্ত খুশী হয়ে বললেন, ছেলেটা বড্ড বেশি বোঝে, অল্প অল্প পড়েই তো পরীক্ষায় পাস করেছে ও। কত ছেলেই দিন-রাত পড়ে পড়ে আস্ত আস্ত ডিম পেত। আমার নীলকান্ত কখনো ডিম পায়নি।
ললিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, বুঝেছি যেমন ছেলে তেমন বাবা।
সূর্যকান্ত বললেন, হ্যাঁ বৌমা, ছেলেটা আমার মতই হয়েছে। তোমার শ্বাশুড়ি তো তোমার স্বামীকে সহ্যই করতে পারতো না, তোমার স্বামী তোমার শ্বশুরের মত হয়েছে বলে। তোমার শ্বাশুড়ি কি বলতো জানো? বলতো, দুই গাধার পাল্লায় পড়েছি।
ললিতা আর কথা না বাড়িয়ে নিজ ঘরে চলে গেলো। আর ভাবলো, পাগলগুলোকে সে নিজেই শাসন করবে।
পরের দিনের ঘটনা। বজ্রকান্ত দেখলো তার বৌদি তার দাদাকে গরম দিয়ে বলছে, তোমার সাথে আমার কথা বলার সময় নেই। ভাত-তরকারি রান্না করতে হবে।
তা শুনে বজ্রকান্ত বললো, বৌদি, ভাত-তরকারি রান্না করবে কেন? আজ তো সরকারি ছুটি!
ললিতা ততোধিক ক্ষেপে বললো, এক পাগলকে না থামাতে থামাতে আর এক পাগল এসে জুটলো। তোমরা সামনে থেকে যাও তো।
বজ্রকান্ত বললো, বৌদি, আজ কি আপনার মন খারাপ? ছুটির দিনে তো সবার মন ভালো থাকে।
ললিতা বললো, স্কুল ছুটি থাকলে তো তুমি, তোমার বোন বিজলী আমায় পেয়ে বসো। তোমাদের পাগলামি আমার আর ভাল লাগে না। যত সব পাগলের দল।
বজ্রকান্ত বললো, বৌদি, আমরা পাগল কে বলেছে? রজনীকান্ত কাকু আমার বাবাকে বলেন বুদ্ধিজীবী, দাদাকে বলেন বুদ্ধিবিদ আর আমাকে বলেন বুদ্ধিবান। গোপীকান্ত কাকু বলেন আমরা এক ক্লাস এক ক্লাস করে পাস করবো আর আমাদের বুদ্ধি আরো বাড়বে।
ললিতা অতিষ্ঠ হয়ে গেলো। তার মধ্যে আবার বিজলী এলো। এসেই বললো, বৌদি, দাদার বইয়ে দেখলাম পটল তোলা মানে মারা যাওয়া। মানুষ পটল তুলতে গেলে কি মারা যায়?
ললিতা এত বিরক্ত হলো একথা শুনে তা দেখে বিজলী ভয় পেয়ে বললো, বড়দা, বড়দা, বৌদি এমন করছে কেন? বৌদির মাথার উপর কি ভূত ভর করলো? ভূত ভর করলে তো এবার উল্টা-পাল্টা বকবেন।
ললিতা দুই হাতে কান ঢেকে কান্না করতে করতে বললো, হে ঈশ্বর, কোন্ পরিবারে আমি এলাম? এদের সাথে থাকবো কি করে? আমাকেও পাগল করে দাও।
নীলকান্ত বললো, কি মেয়ে বিয়ে করলাম, সবাইকে পাগল বলে, এখন নিজেও পাগল হতে চাচ্ছে! হে ঈশ্বর, তুমি আমার কপালে এমন পাগল বৌ লিখে রেখেছিলে?
একথা শুনে ললিতা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো। নীলকান্ত আর বজ্রকান্তকে চুপ থাকতে বলে বিজলীকে বললো, বিজলী, বলো তো কে আগে বিয়ে করেছিলো তোমার মা, না তোমার বাবা?
বিজলী নিমেষেই উত্তর দিলো, আমার মা আগে বিয়ে করেছিলো।
ললিতার মুখে হাসি ফুঁটলো। তারপর বললো, কেন?
বিজলীর সরল উত্তর, বারে, বাবা আগে বিয়ে করলে তো বাবা আগে মারা যেত। মা আগে বিয়ে করেছে বলেই তো মা মারা গেছে।
ললিতা হাসতে গিয়েও হাসলো না, বললো, আচ্ছা, তুমি বড়, না তোমার দাদা বড়?
বিজলী বললো, আমি বড়।
ললিতা এবার হাসি থামাতে পারলো না। বললো, কেনো তুমি বড়?
বিজলী বললো, আমি বড় কারণ আমার দাঁত পড়েছে। দাদা বড় হলে তো দাদারও দাঁত পড়তো।
এবার ললিতা নীলকান্তের দিকে তাকিয়ে বললো, কি বুঝলে? এবার বলো পাগল কে?
আর কথা না বাড়িয়ে ললিতা ঘরের মধ্যে চলে গেলো। তিন ভাই-বোন একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো। বজ্রকান্ত বললো, বিজলী কি সুন্দর করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলো। তাও বৌদি রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। আচ্ছা, বৌদি কি কিছু বোঝে না?
নীলকান্ত বললো, আমাদের তিন ভাই-বোনের উচিত তোদের বৌদিকে পড়ানো। বইয়ের প্রতিটি পাতা তাকে মুখস্ত করাতে হবে। পড়াশোনা তো করেনি, বুঝবে আর কি?
বজ্রকান্ত বললো, বৌদিকে পড়ানোর দায়িত্বটা তুমি নাও। তুমি তো বেশি পাস। আমি আর বিজলী যখন বৌদির কাছে পড়তে যাবো তখন বুদ্ধি খাটিয়ে বলবো, বৌদি তুমি সমস্ত বই আজ পড়ো তো!
বিজলী বললো, ঠিক দাদা, বৌদি যদি আমাদের বই সব পড়ে তবে তার বুদ্ধি বাড়বে। বুদ্ধিহীন বৌদি যদি ঘরে থাকে আমাদেরও বুদ্ধিহীন করে ছাড়বে।
পরের দিনের ঘটনা। ঘরে নীলকান্ত ঘুমাচ্ছে। বাইরে বসে ললিতা মনে মনে ভাবলো, এ সংসারে টিকে থাকতে হলে শক্ত হতে হবে। শক্তভাবে পাগলদের শাসন করতে হবে।
দুপদাপ পা ফেলে ললিতা ঘরে এলো। দেখে নীলকান্ত বললো, ঘোড়ার মত দৌঁড়ে ঘরে আসসিস কেন? আগে তো বিড়ালের মত মিনমিন পায়ে হাটতিস।
ললিতা বললো, দিনভর ঘুমাচ্ছ কেন? দিনভর ঘুমায় এক অলস, দুই চোর।
নীলকান্ত লাফ মেরে উঠে বললো, ও আমি অলস? চোর? তাহলে তুই তো অলসের বৌ, চোরের বৌ। এবার থেকে আমি তোকে এভাবে ডাকবো, ও অলসের বৌ, আমার কি খাওয়ার সময় হলো? ও চোরের বৌ, আমার কি ঘুমানোর সময় হলো?
ললিতা বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, তোমার কি বয়স হবে না?
নীলকান্ত রেগে বললো, আমার যদি বয়স না হতো তোর বাবা তোকে আমার সাথে বিয়ে দিতেন?
ললিতা বললো, এভাবে যে অপক্ব কথা বলো, তোমার কি বুদ্ধি হবে না?
নীলকান্ত বললো, আমার যদি বুদ্ধিই না হবে তো কোনো কিছু মাথায় বহনের সময় মালকাচা মারি কেন? কাদার মধ্য দিয়ে হাটার সময় জুতা খুলে বগলে নিই কেন? নিশ্চয় বুদ্ধি আছে তাই!
ললিতা বিরক্ত হয়ে বললো, কথা কি একটু ভেবে বলবে? কথা বলা কি শিখবে না?
নীলকান্ত ক্ষেপে গেলো, বললো, কি? আমি কথা বলতে পারি না? নতুন করে কথা বলা শিখতে হবে? পাগল বৌ বলে কি! এক বছর বয়স যখন তখন কথা বলা শিখেছি। গ্রামের সবাই আমাকে পাকারাম বলতো।
ললিতা আঙুল উচিয়ে বললো, নিশ্চয় তিন বছর বয়স যখন তখন ছাগলের বাচ্চার মত লাফঝাপ দিতে?
নীলকান্ত হেসে বললো, ঠিক ধরেছিস বৌ, তবে ছাগলের বাচ্চার মত লাফাতাম না, ব্যাঙের মত লাফাতাম। গ্রামজুড়ে সুনাম ছিলো। কিছুদিন গ্রামের মানুষ আমাকে নীলকান্ত না ডেকে ব্যাঙকান্ত ডাকতো।
একটি বই হাতে করে দাদা বৌদির ঘরে এলো বিজলী। আর বললো, বৌদি, আজ আমাকে পড়াবে না?
ললিতা কটাক্ষ করে বললো, তোমার দাদার কাছে পড়ো। তোমার দাদার মত মেধাবী দশ গ্রামে নেই।
নীলকান্ত হেসে বললো, বৌ ঠিক বলেছিস। আমার মত মেধাবী খুব কম ছাত্রই ছিলো। না পড়ে পরীক্ষা দিতাম, তাও পাস করতাম। আমি যে পাস করতে পারি আমার মা বিশ্বাসই করতো না। তারপর স্যারকে বাড়ি ডেকে আনতাম, স্যারের মুখ থেকে শোনার পরই মা বিশ্বাস করতো আমি পাস করেছি।
ললিতা নাকে হেসে বললো, বুঝেছি তোমার কি গুণ ছিলো! এবার বোনকে পড়াও। তাকেও তোমার মত মেধাবী বানাও।
নীলকান্ত বিজলীকে পড়াতে লাগলো। পাশে বজ্রকান্তও এসে বসলো। নীলকান্ত দুই ভাই-বোনের উদ্দেশ্যে বললো, আমি মাত্র এক ঘণ্টা পরীক্ষা দিতাম। কি দরকার তিন ঘণ্টা বসে বসে লেখার? পাগলরাই তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেয়!
একথা শুনে ললিতা বললো, তুমি ছোট ভাই-বোনদের এসব কি শিখাচ্ছো? তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টায় কখনো কি দেয়া যায়? পাস করলেই হবে? ভাল ফলাফল করতে হবে না?
নীলকান্ত বললো, ভাল ফলাফল করে কি হবে? আমার বন্ধু শ্রীকান্ত এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত হয়ে দোকানে দোকানে চানাচুর ভাজা বিক্রি করে। সংসার চালাতে পারবে না বলে আজো বিয়েই করতে পারেনি। বেশি ক্লাস পড়ে ওতো পাগলই হয়ে গেছে। আর আমি মাত্র মেট্রিক পাস করে বাবার ব্যবসায় বড় করছি। আমি বেশি ক্লাস পড়িনি ঐ পাগল হওয়ার ভয়ে।
শুনে বজ্রকান্ত বললো, দাদা, তবে আমিও বেশি ক্লাস পড়বো না, আমিও যদি পাগল হয়ে যাই?
নীলকান্ত বললো, বেশি পড়লে পাগল হতে হয় এ নজির প্রচুর আছে। আমি তোদের বেশি পড়াবো না। খাবি, খেলবি, ঘুমাবি।
হা করে কথাগুলো শুনছিলো বিজলী। এবার সে বললো, স্যারেরা তো বলেন পড়ালেখা করলে জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়ে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে পড়াশোনা করলে মাথায় গণ্ডগোল বাঁধে। এই যে, পটল তোলা মানে মারা যাওয়া কেন হবে? বাবা তো প্রতিদিন পটল তোলে।
নীলকান্ত বললো, স্যারেরা পড়তে পড়তে সব পাগল হয়ে গেছেন। দেখিস তো চোখে চশমা। বেশি পড়লে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। স্যারেদের মাথায় চুল নেই। বেশি পড়লে মাথার চুলও পড়ে যাবে। স্যারেরা একা একা হাটেন, একা একা হাসেন, একা একা বকেন। এক এক স্যার এক এক রকমের পাগল।
এসব কথা শুনে ললিতা কেঁকিয়ে সবাইকে থামালো, বললো, স্যারেদের নিয়ে এসব কি বাজে কথা বলছো? স্যারেরা গুণীজন, পূজনীয়।
তারপর ললিতা নিজ মনে গুণগুণ করে বলতে থাকলো, হে ঈশ্বর, কোন্ ঘরে এনে আমাকে ফেললে? বাড়িশুদ্ধ মানুষগুলো অদ্ভুত চিন্তার।
নীলকান্ত বৌর দিকে তাকিয়ে বললো, বৌ, গুণগুণ করে কথা বলছিস কেন? পাগল হয়ে গেলি না তো? এই বৌ? পাগল তো মনে মনে কথা বলে!
ললিতা আর সহ্য করতে পারলো না। ক্রুদ্ধকণ্ঠে বললো, যাও, বাইরে যাও। সবাই বাইরে যাও। আর তুমি, রাত দশটার আগে ঘরে ফিরলে পা ভেঙে দেবো।
নীলকান্ত মন খারাপ করে রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে। সামনে তার এক দাদা পিংকুর সাথে দেখা। নীলকান্ত পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো। পিংকু ডেকে বললো, মন খারাপ কেন?
নীলকান্ত বিমর্ষ চেয়ে বললো, বৌ বকেছে। মনকে বুঝ দিতে পারছি না। বাবা বকলে মেনে নিতাম। বৌ বকেছে। কাউকে বলতেও লজ্জা লাগছে।
পিংকু নীলকান্তদের পরিবার সম্বন্ধে জানে। তাই মজাচ্ছলেই বললো, বৌয়ের গরম খেয়েছিস, তুই একটা কাপুরুষ। পাগল না হলে কেউ বৌয়ের গরম খায়? বৌ যদি একবার পেয়ে বসে তোকে কিন্তু নাচিয়ে ছাড়বে।
নীলকান্ত আশ্চর্য হয়ে বললো, বৌ সত্যি আমাকে নাচাতে পারবে? অন্যের নাচ দেখলে না আমার নাচতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু নাচতে পারি না। বৌ যদি আমাকে নাচাতে পারে সে তো হবে আমার পরম পাওয়া।
পিংকু ভাবলো, হায়রে রামছাগল, বোকাচণ্ডী!
তারপর মুখে বললো, আমি বলতে চাচ্ছি বৌকে প্রশ্রয় দিলে বৌ কিন্তু তোর মাথায় উঠে নাচবে।
নীলকান্ত আবারও আশ্চর্য হয়ে বললো, আমার বৌ আমার মাথায় উঠে নাচবে? তবে তো খুব মজা হবে। গ্রামের মানুষ দেখতে আসবে। আর আমার বৌ তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যাবে।
পিংকু বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ওরে নাদান, আমি বলতে চাচ্ছি বৌকে প্রশ্রয় দিলে বৌ তোর মাথায় কাঁঠাল রেখে কাঁঠাল ভেঙে খাবে।
পূর্বাপেক্ষা নীলকান্ত আশ্চর্য হয়ে বললো, তাই? বৌ তো কাঁঠাল খেতে চায় না। প্রশ্রয় না হয় বেশি বেশিই দিবো, গাছের কাঁঠাল নষ্ট করে লাভ কি! আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাক, তবুও তার কাঁঠাল খাওয়ার রুচি ফিরুক।
পিংকু এত বিরক্ত হলো উত্তর শুনে, বললো, বৌকে এত প্রশ্রয় দিলে, বানর হবে। তারপর মাথায় উঠে নাচবে।
নীলকান্তের চোখে মুখে হাসি, বললো, তাই? বৌ বানর হবে? প্রশ্রয় দিলেই বানর হবে? বাহ! বাহ! আমি তবে তো যাদুকর হবোরে!
পিংকু আর কথা বাড়ালো না। সে তার রাস্তা ধরে চলে গেলো। নীলকান্তও তার রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো। পথে শ্বশুর লক্ষ্মীরাম বাবুর সাথে দেখা হলো। লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, মন খারাপ করে কোথায় যাচ্ছো?
নীলকান্ত বললো, জানি না। আপনার মেয়ে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
লক্ষ্মীরাম বাবু ভাবলেন, যাক মেয়েটা তবে শ্বশুরবাড়িতে নিজের অবস্থান শক্ত করেছে। প্রথম প্রথম বোকাদের পাল্লায় পড়ে খুব অত্যাচারিত হয়েছে।
আর মুখে বললেন, চলো বাড়ি, তোমাদের বাড়িই যাচ্ছি।
নীলকান্ত বললো, রাত দশটার আগে বাড়ি গেলে ললিতা আমার পা ভেঙে দেবে। পা ভেঙে দিলে আমি হাটবো কি করে? হাটার জন্য তো পা দুটো অত্যন্ত জরুরি!
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, ললিতা কিছু বলবে না। এই দেখো, তোমার জন্য লাঠি লজেন্স এনেছি।
শ্বশুরের পিছন পিছন নীলকান্ত হাটতে লাগলো। লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, কাজ কর্ম করছো তো? বাবার ব্যবসায়টা কি দেখছো?
নীলকান্ত বললো, দেখি, আবার দেখিও না। বাবা কাজ করতে দেয় না। হাত পা কেটে যাবে তাই।
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, হাত পায়ের খুব যত্ন নিচ্ছো মনে হয়?
নীলকান্ত বললো, হ্যাঁ, স্নানের সময় হাত পায়ে বারবার সাবান দিই। আর দিনে চার পাঁচ বার স্নান করি। ছোটবেলার অভ্যাস বাদ দিতে পারি না। স্নানের সময় ডুবোডুবি খেলি। চোখ দুটো লাল করে বাড়ি ফিরি। ললিতা তা দেখে খুশীও হয় না।
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, তোমার কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
নীলকান্ত খুব খুশি হয়ে আহ্লাদে গদগদকণ্ঠে বললো, আমাকে একটি লাঠি লজেন্স দেন! খুব লোভ লাগছে। ছোটবেলা থেকেই আমি লাঠি লজেন্সটা খুব পছন্দ করি।
লক্ষ্মীরাম বাবু একটা লাঠি লজেন্স দিলেন আর ভাবলেন, কার ঘরে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, ঈশ্বর!
তারপর দুইজন হাটতে লাগলো। হঠাৎ শ্বশুর বাবার হাত ধরে বসলো। লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, হাত ধরছো কেন? তুমি কি শিশু? না, আমার বন্ধু?
নীলকান্ত হাত ছাড়লো না। বললো, সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। আমার ভয় করছে। আমি কখনো সন্ধ্যের পর ঘর থেকে বের হই না।
লক্ষ্মীরাম বাবু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন, বাচ্চাদের মত কথা বলো কেন? চলো।
নীলকান্ত শান্ত হয়ে হাটতে লাগলো। সামনে যে ব্যক্তিই আসছে তাকেই বলছে, ইনি আমার শ্বশুর!
বিরক্তি প্রকাশ করে লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, তোমার কি বাবা জ্ঞান-বুদ্ধি হবে না?
এবার নীলকান্ত বিরক্ত হয়ে বললো, বাবা, আমার পর্যাপ্ত জ্ঞান-বুদ্ধি আছে। বেশি বেশি পেয়াজ খাই। পেয়াজ খেলে বুদ্ধি বাড়ে। আপনিও খাবেন। আমার অনেক বুদ্ধি, অনেক।
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, তুমি হলে বুদ্ধির ঢেঁকি।
নীলকান্ত হেসে বললো, আমার স্যারেরাও আমাকে বুদ্ধির ঢেঁকি বলতেন। আপনিও আমাকে বুদ্ধির ঢেঁকি বললেন। সত্যিই আমি ভাগ্যবান যে বুদ্ধির ঢেঁকি হতে পেরেছি। কজন বুদ্ধির ঢেঁকি হতে পারে?
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, তুমি বুদ্ধির সাগর-মহাসাগর!
শুনে নীলকান্ত নিজ মনে খুশি হয়ে হাসলো। লক্ষ্মীরাম বাবু চুপ হয়ে গেলেন। বদ্ধ পাগলের সাথে আর তিনি কথা বলতে চাইলেন না।
ওরা বাড়ি এসে পৌঁছালো। ভয়ে নীলকান্ত ঘরে গেলো না। বাবকে দেখে ললিতা খুব খুশী। বাবার প্রশ্ন, নীলকান্তের তো বোকামি এখন মাত্রাছাড়া।
ললিতা বললো, মাঝে মাঝে ভালো হয়, তখন আবার আমাকে শাসন করে। এর চেয়ে এই যে বোকামি করছে এই ভালো। আমি এখন শাসন করি।
সূর্যকান্ত বাবু এলেন। লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, কেমন আছেন বেয়াই? খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে!
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, না বেয়াই। তেমন কিছু না। নকুলদের পাগলা গরুটা তাড়া করেছিলো। কিছু করতে পারেনি। এড়েগরুর গুতা খেয়ে তাই কিছু হয়নি, আর এতো গাইগরু! তাও পাগলা! বেয়াই, আমি ছোট বেলায় খুব গাছে চড়তাম। মানুষ আমাকে গেছো বানর বলে ক্ষেপাতো।
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, তা এখন আর গাছে চড়েন না কেন?
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, বয়স হয়েছে। এখন গাছে উঠলে তো মানুষ বুড়ো বানর বলবে। আর ছেলে দুটোকেও গাছে উঠতে মানা করে দিয়েছি। নীলকান্ত তো গাছে উঠলে নাচানাচি শুরু করে দেয়।
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, তবে এখন কি করেন? সময় কাটে কি করে?
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, এই নীলকান্তকে শিক্ষা দিচ্ছি কিভাবে ব্যবসায় করতে হবে। কিন্তু ছেলেটা কথা শোনে না। ওর মত করে কাজ করে। একদম ছেলেটা বাবার মত হয়েছে। কারো মতামতকে পাত্তা দেয় না। নিজে যা বোঝে তাই করে। একবার আপনার বেয়াইন বলেছিলো চুল কলপ করতে, আমি তা না করে টাক হয়ে এসে তাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। যতদিন মাথায় চুল উঠেনি ততদিন সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিতো আর বলতো, তোমার টাকের সাইজটা ভালো।
ঘরে এত কি গল্প হচ্ছে তা শুনতে নীলকান্ত ঘরে ঢুকলো। লক্ষ্মীরাম বাবু তাকে বসতে বলে বললেন, কাঁধে যখন জোয়াল উঠে তখন দুষ্ট এড়েগরুও সোজা হয়ে যায়। তোমার কাঁধে সংসার, তোমার কাঁধে বৌ আছে। তুমি ভালো হবে কবে?
নীলকান্ত আশ্চর্য হয়ে বললো, আমার বৌ আমার কাঁধে কখনোই ছিলো না। আমার কাঁধে তিনটা তিল আর দুটো কাটা দাগ আছে। যদি বলেন তবে বৌকে কাঁধে করে গ্রাম ঘুরিয়ে আনতে পারি। কি বৌ, কাঁধে উঠবি? আমি আমার বাবার কাঁধে চড়ে আলিফ লায়লা দেখতাম। তাই না বাবা?
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, হ্যাঁ খোকা। তোকে কাঁধে না নিলে কেদে কেদে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলতিস।
ললিতা বললো, দেখেছো বাবা, কেমন ঘরে আমায় বিয়ে দিয়েছো? কারো কথার কোন তালগোল নেই।
নীলকান্ত বললো, পাকা ঘরেই তো তোর বাবা তোকে বিয়ে দিয়েছেন। কেমন ঘরে বিয়ে দিয়েছে এসব বলছিস কেন? বাবাকে চোখ গরম দিচ্ছিস কেন, বৌ? তোর চোখে আগুন। একটু জল ছিটিয়ে চোখের আগুন নিভিয়ে ফেল।
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, কথার লাগাম টানো। পাঁচজনের সংসার। বাবার ব্যবসায়ে মন দাও। কাজ না করলে তো না খেয়ে থাকতে হবে।
নীলকান্ত বললো, তিনটে কাজ তো ঠিক মতই করছি। খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, পায়খানা করছি।
ললিতা বললো, বুঝতে পারছো বাবা, কোন সুখে আছি! এখানে থাকলে এসব শুনতে শুনতে পাগল হয়ে যাবো।
নীলকান্ত বললো, কখনোই পাগল হবি না। আমরা সবাই মিলে তোকে অনেক সুখে রাখবো। শত চেষ্টা করলেও তুই পাগল হবি না। শত চেষ্টা করে হলেও তোকে পাগল হতে দেবো না। কি বলো, বাবা?
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, হ্যাঁ খোকা, আমার একটা মাত্র বৌমা। পাগল হয়ে গেলে স্বামী-শ্বশুরকে তো জ্বালাতন করে ছাড়বে। বেল্টুর বৌ পাগল হয়ে গেলে তার সামনে যে যেত তাকেই বলতো, আসো তোমার ঘাড় মটকাবো। একবার তো আমার ঘাড় মটকিয়ে বলেছিলো, এবার এলে খুন করবো। সেই থেকে পাগলের পিছে আমি আর ঘুরি না। আর পাগল যদি ঘরেই তুমি হও বৌমা, আমাদের তবে তো ঘর ছাড়তে হবে।
বজ্রকান্ত ও বিজলীও ঘরে এলো। বাড়ি আত্মীয় এসেছেন। ওদেরও খুব আনন্দ লাগছে। বিজলী তো ললিতার বাবার শার্ট টান দিয়ে দিয়ে দৌঁড় মারছে আর বলছে, ধরো দেখি, ধরো দেখি।
বজ্রকান্ত লাঠি লজেন্স দেখতে পেয়ে নিয়ে লোভ দেখিয়ে খেতে লাগলো। নীলকান্ত বললো, লাঠি লজেন্স খাবি খা, লোভ দেখিয়ে খাচ্ছিস কেন? তোরা জানিস না, অন্যের খাওয়া দেখলে আমার ক্ষুধা লাগে।
বিজলীও একটি লাঠি লজেন্স গালে দিয়ে বললো, ওরে দাদা, কি মিষ্টি। তোর শ্বশুরবাড়ির লাঠি লজেন্সও মিষ্টি, লাঠিও মিষ্টি। লজেন্স ফুরালে লাঠিও চিবিয়ে খাবো।
নীলকান্ত বললো, না, লাঠি খাসনে। পাগলেরা লাঠি খায়। লজেন্স খেয়ে লাঠি আমাকে দিবি। আমি লাঠি দিয়ে কান চুলকাবো।
ললিতা এসব কাণ্ড দেখে ধমক দিয়ে বললো, চুপ করো পাগলের দল। যেখানে যে কাঁচামালের প্রাপ্যতা সহজ সেখানে সেই কারখানা গড়ে তোলা হয়। এ বাড়ি পাগলের সংখ্যা এত বেড়েছে, এ বাড়িতেই একটা পাগলাগারদ দরকার।
বজ্রকান্ত এ কথা শুনে রেগে বললো, দেখো বৌদি, আমরা পাগলের মত দেখতে না যে পাগল হবো। ঘর থেকে তো বের হও না, রাস্তার মোড়ে একটা পাগল আছে। ছেঁড়া জামা প্যান্ট। চুল জটা ধরা। শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আমরা কি কেউ ঐ পাগলের মত যে পাগল বলবে?
বিজলীও রেগে বললো, হ্যাঁ বৌদি, আমরা কেউ পাগল না। আমাদের কি এখনো পাগল হওয়ার বয়স হয়েছে?
নীলকান্ত বললো, পাগল হলে বাবা হতে পারে বাবার তো বেশ বয়স হয়েছে, তাই নারে বিজলী?
একথা শুনে নীলকান্তের উপর ক্ষেপে গেলো সূর্যকান্ত বাবু। বললেন, এই আমার বয়স আর কত হয়েছে! তোরা বড় হয়েছিস বলে ভাবিস না আমার বয়স বেশি। আমি অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলাম।
ললিতা বাবা ছেলে মেয়ের কাণ্ডকলাপে ক্ষেপে গিয়ে বললো, এই তোমরা কি শুরু করলে? যাও, সবাই বাইরে যাও। যত রকমের গল্প আর ঝগড়া বাইরে যেয়ে করো। যাও। আমি আমার বাবার সাথে একটু কথা বলবো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা চলে গেলো। লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, কি করবো বল, মা। কপালের দোষ দিয়ে কি লাভ? সব সময় এদের হাতে কাজ দিয়ে রাখবি, কাজ করলে দেখিস পাগলামি কম করবে।
ললিতা বললো, তবে বাবা, এরা কেউ আমাকে অশ্রদ্ধা করে না। সহ্য হয় না, কিন্তু ছাড়তেও চাই না।
পরের দিন মেয়েকে রেখে লক্ষ্মীরাম বাবু চলে যাবেন। ললিতা কেদে কেদে বললো, বাবা, মাঝে মাঝে আসবে। আমার মন টেকে না।
সূর্যকান্ত বাবু শুনে বললেন, কি বলো বৌমা, এখানে মন টেকে না মানে? আমরা তোমাকে কত আদর-যত্নে রাখি। এত আদর-যত্ন পাওয়ার পরও কেউ পাগলের মত কথা বলে? পাগল বৌমা আমার।
নীলকান্ত বললো, ঠিক বলেছো বাবা, পাগল কি সুখ বোঝে? সাজানো ভাত ফেলে দেয়, ফেলা ভাত কুড়িয়ে খায়। সব পেয়েও যারা সুখ পায় না তারা এক নম্বর পাগল।
ললিতা রেগে বললো, খবরদার পাগল বলবে না, তোমরা পাগল, গোষ্ঠীশুদ্ধ পাগল। বলি এক, বোঝে আর এক, করে আর এক।
সূর্যকান্ত বাবু বললেন, পাগল জানে না সে যে পাগল। গোষ্ঠীশুদ্ধ মানুষকে যে পাগল বলে, পাগল তো সেই। বৌমা, চিন্তা করো না, আমরা তোমার চিকিৎসা করাবো। আমরা সবাই মিলে ঠিক এক মাসের মধ্যে তোমাকে সুস্থ করে তুলবো।
ললিতা একথা শুনে বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে বললো, বুঝেছো বাবা, এই এক মাসের মধ্যে আমাকে বদ্ধ পাগল বানিয়ে ছাড়বে। ঘর-বাইর কোথাও টিকতে পারবো না। বাবা, আমাকে এদের থেকে উদ্ধার করো, আমাকে সাথে নিয়ে যাও।
শুনে সূর্যকান্ত বাবু বললেন, বৌমা, তুমি কেবল বৌমা না। আমার মেয়েও। তুমি যে একটা পাগল, না জানিয়ে তোমার বাবা তোমাকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তো তোমার বাবাকে দোষারোপ করছি না। তোমার চিকিৎসার ভার তো আমি নিচ্ছি। তাও চলে যাবে কেন?
একথা শুনে ললিতার বাবা বললেন, চুপ করুন বেয়াই। আমার সুস্থ সুন্দর মেয়েটাকে আপনারা পাগল বানিয়ে ছাড়ছেন। চিকিৎসা আপনারা নেন। আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো।
বিজলী একথা শুনে কেঁদে কেঁদে বললো, না, আমার বৌদি যাবে না। বৌদি পাগল হয়েছে তাই কি হয়েছে? আমাদের বৌদি। আমরা সবাই যত্ন করে তাকে সুস্থ করে তুলবোই।
বজ্রকান্তও সুর মিলিয়ে বললো, হ্যাঁ বৌদি, তুমি যাবে না। আমরা তোমার এখন আপন। আমাদের সাথে থাকলেই তুমি দ্রুত সুস্থ হবে। আমরা সব সময় তোমার সাথে সাথে, পাশে পাশে থাকবো। তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।
ছোট দুই দেবর ননদের কথা শুনে ললিতা নিজ কান নিজ দুই হাতে ঢেকে নিলো, আর বললো, বাবা, এরা আমাকে পাগল না করে ছাড়বে না। আমাকে রেখে যেও না। তুমি আমাকে সাথে না নিলে আমি ঘর ছেড়ে পালাবো। এসব বদ্ধ-পাগলদের থেকে বাঁচতে হলে আমাকে পালানো ছাড়া পথ থাকবে না।
একথা শুনে রেগে সূর্যকান্ত বাবু বললেন, বেয়াই, আপনার মেয়ে কি সব বলছে শুনছেন? আপনি গেলে মনে হয় আরো বেশি পাগলামি করবে। আপনার মেয়ের এমন পাগলামি কথাতে আমরা রাগ করি না। আপনার মেয়ে মানে আমার মেয়েই। আপনার মেয়েকে আমরা ভালো বানিয়ে ফেলবো। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান।
ললিতা বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। লক্ষ্মীকান্ত বাবু বললেন, বেয়াই, মেয়েকে রেখে গেলে শান্তি পাবো না। ললিতাকে সাথে নিয়ে যাবো আমি।
একথা শুনে নীলকান্ত কান্না জুড়ে দিলো। ললিতা মুখ তুলে বললো, দেখো বাবা, কেমন নাদান স্বামী আমার!
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, মা, আমার বোঝা শেষ। তোকে এখান থেকে আমি একেবারেই নিয়ে যাবো।
নীলকান্ত বললো, বাবা, ললিতাকে নিয়ে যাবেন না, আপনাদের বাসা গ্রামে। আমরা শহরে থাকি। ললিতার পাগলামি মাত্রাছাড়া হলে আমরাই দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারবো।
একথা শুনে লক্ষ্মীরাম বাবু মেয়েকে বললেন, মা, গুছিয়ে নে। আমার বোঝা শেষ। তোকে এরা পাগল বানিয়ে তবেই ক্ষান্ত দেবে।
ললিতা গুছিয়ে নিলো। বাড়ির সবাই বাঁধা দিলো। সকল বাঁধা ছিন্ন করে ওরা রাস্তায় বের হয়ে পড়লো। বাড়ির সবাই ললিতার পিছু নিলে ললিতার মায়া লাগলো। বাবাকে বললো, বাবা, পিছনে তাকিয়ে দেখো, এরা সবাই আমার জন্য কত আকুল! এরা অনেক ভালোবাসে আমাকে!
লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, আসলেই এরা অনেক ভালোবাসে তোকে। কি করবি এখন?
ললিতা বললো, বাবা, আমি না হয় এদের সাথে থেকে যাই! এদের মানিয়ে নিতে শেখার চেষ্টা করি! আমার জন্য পাগল পরিবারের সবাই যেহেতু পাগল, আমিও না হয় পাগল পরিবারের একজন পাগল হয়ে থেকে যাই এদের সাথে!
ললিতার কথায় বাবা খুশি হলেন। পিছন থেকে সবাই এসে অনুরোধ করতে থাকলে লক্ষ্মীরাম বাবু বললেন, আপনারা সবাই মিলে আমার পাগল মেয়েটাকে সুস্থ করতে পারবেন আমার বিশ্বাস। ওকে আপনাদের মাঝেই রেখে গেলাম।
একথা শুনেই নীলকান্ত খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠলো। ললিতা তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। বাবাকে বিদায় দিয়ে সবার সাথে ললিতা বাড়িতে ফিরছে। বিজলী বললো, বৌদি, তুমি রাগবে কম। ভেবে ভেবে কথা বলবে। জোরে কথা বলবে না। আর একা থাকবে না। আমাদের সাথে সব সময় থাকবে। দেখবে চিকিৎসা ছাড়া তোমার মাথা ঠিক হয়ে যাবে।
একথা শুনে ললিতার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলেই নিজেকে সামলে নিলো। বজ্রকান্ত বললো, বৌদি, হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেলে মাথায় জল ঢালবে, যখন বুঝতে পারবে পাগলামির পেত্নী মাথায় ভর করছে আমাদের দ্রুত খবর দেবে। আমরা তোমাকে ঘরে বন্দি করে রাখবো। আমাদের বৌদি পথে পথে ঘুরে পাগলামি করে বেড়াবে আমরা মানতেই পারবো না।
ললিতা এবারও নিজেকে সামলে নিলো। প্রতিউত্তর করলে সমস্যা বাড়বে ভেবে নিজেকে সংযত করতে থাকলো সে। সূর্যকান্ত বাবু বললেন, কত ছোট তোরা, অথচ কত সুন্দর করে বললি তোদের বৌদির জীবন বাঁচানোর জন্য। বৌমা, আমরা সবাই তোমাকে কত ভালোবাসি একবার দেখো। তোমার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে আমি জমি বেচে দেবো। তুমি কখনোই ভাববে না যে তুমি একা। আমরা সবাই আছি। তুমি আমাদের বাঁধা দেবে না। যেদিনই বুঝবো তোমার পাগলামি সীমা ছাড়া, আমরা সেদিনই তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
ললিতা দাঁত কামড়ে নিজেকে সংযত করলো। সর্বশেষে নীলকান্ত বললো, ছোটবেলা থেকেই মানুষ আমাদের পাগল বলে। বিশেষ করে আমাকে বেশিই পাগল বলে। অথচ আমাকে পাগল বলার মানে আজো পাইনি। যখন ঘরের মানুষ তুই আমাকে পাগল বলা শুরু করেছিলি তখন থেকে আমার খুব খারাপ লাগত। আজ প্রমাণিত হলো আমি পাগল ছিলাম না। কিন্তু বিশ্বাস কর বৌ, তুই যে এত এত আমাকে পাগল বলেছিস আমার রাগ হলেও আজ থেকে আমার আর রাগ হবে না। তোর মাথায় এত গণ্ডগোল আছে আমরা তো আর জানতাম না।
ললিতা আগুনদৃষ্টে নীলকান্তের দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার জন্য চুপ থাকা শ্রেয় সে বুঝে গেছে।
ওদিন রাতের ঘটনা। নীলকান্ত বেশি কথা বলছে না। ললিতা অবাক হচ্ছে। ললিতা বললো, আজ কথা কম বলছো যে!
নীলকান্ত বললো, কথা কম বলছি তোকে ভেবে বৌ, যদি কথা শুনে তোর মাথা গরম হয়ে উঠে!
ললিতা নীলকান্তের কথা শুনে হাসে। নীলকান্ত বললো, আজ তুই চলে গেলে আমি একা থাকতাম কি করে!
ললিতা নীলকান্তের একেবারে কাছে এসে আদরে কণ্ঠে বললো, আমরা লালন-পালন করবো, আদর-যত্নে বড় করবো, চলো একটা বাচ্চা নিই।
নীলকান্ত উৎসুকের সাথে বললো, কিসের বাচ্চা? হাসের, না মুরগির?
ললিতা রেগে গিয়ে বললো, রামছাগল!
নীলকান্ত বললো, ও রামছাগলের বাচ্চা নিবি? আচ্ছা, কালকেই বাজার থেকে এনে দেবো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন