একগুচ্ছ ছড়া ।। মেশকাতুন নাহার
মজার সময়
গ্রীষ্ম কালে মামার বাড়ি
ছুটি পেয়ে যাই,
লিচু কাঁঠাল আম আনারস
মজা করে খাই।
নানির হাতের পিঠা দেখলে
জিভে আসে জল,
নানান স্বাদের খাবার খেতে
বসি বেঁধে দল।
মামা মামী খেয়াল রাখেন
বকা দেয় না কেউ,
পাখির মতো উড়ে বেড়াই
মনে সুখের ঢেউ।
লেখাপড়া করতে হয় না
খুশিতে রয় মন,
খেলাধুলা গল্প আড্ডায়
কাটে সারাক্ষণ।
নানা নানি দোয়া করেন
অনেক হবে নাম,
জ্ঞানার্জনে মানুষ হবে
ধরায় পাবে দাম।
খোকার বায়না
খোকন সোনা বায়না ধরে
ডিম খাবে সে রোজ,
মোরগ পোলাও দিয়ে করবে
প্রতিদিনের ভোজ।
চেহারা তাঁর মলিন হলো
থালায় দেখে ডাল,
বললো কেঁদে আজকে খাবার
হয়েছে খুব ঝাল।
অবুঝ খোকা বুঝে কি আর
খাদ্যদ্রব্যের দাম!
জিদ ধরে সে দিতেই হবে
দুধ,কলা,আর আম।
ছোট্ট মনের আবদার শুনে
ঝরে মায়ের জল,
মর্মপীড়ায় ডেকে বলে
বাবা খেতে চল।
শরতের আহবান
শরৎ বাবু বলছে ডেকে
যাবে আমার সাথে?
শিউলি ফুল মালা গেঁথে
দেব তোমার হাতে।
শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে
হাঁটবো দুজন মিলে,
শাপলা হাসে চেয়ে দেখ
দুপুর বেলা ঝিলে।
ইচ্ছে করে মেঘের দেশে
দেই দুজনে পাড়ি,
নীল আকাশটা ছুঁয়ে দেখব
চড়ে হাওয়াই গাড়ি।
নদীর তীরে ফুলে ফুলে
কাশবন গেছে ভরে,
আসমানি রং শাড়ি পরে
থাকবে হাতটা ধরে।
মাঝে মাঝে উড়ে যাবে
শালিক ময়না টিয়ে,
সুখের তরী বাইবো রানি
শুধু তোমায় নিয়ে।
প্রভাতবেলা
পুব আকাশে রাঙা সূর্য
পাখি উঠে ডেকে,
ভোর হয়েছে খুকী এবার
ওঠো নিন্দ্রা থেকে।
শুরু করো দিনটা তোমার
প্রার্থনা পাঠ দিয়ে,
সারাবেলা ভালো কাটুক
হাসি খুশি নিয়ে।
দুয়ার খুলে বাহির পানে
দেখো কেমন লাগে,
ফুলে ফুলে ভরে গেছে
বাড়ির চত্বর বাগে।
ফুল পাখিরা ডাকছে তোমায়
মিষ্টি গানের সুরে,
কৃষক কাজে নামলো মাঠে
চেয়ে দেখো দূরে।
প্রকৃতির রূপ দেখে তুমি
অনেক কিছু শিখবে,
প্রভাত বেলা ভ্রমণ করে
গল্প একটা লিখবে।
সর্বভোজী খাদক
মহাজন যে মহা খাদক
দিনে রাতে খায়,
তা সত্ত্বেও পেট ভরে না
আরও খেতে চায়।
আজকে মোরগ কালকে ইলিশ
বোয়াল মাছের পেট,
অনলাইনে সে অর্ডার দেয় যে
মধুর করে চ্যাট।
অভিজাত ফ্ল্যাট চিত্রাকর্ষক
মণিপুরী নাচ,
সাথে লাগে তন্দুরি চিকেন
দেশীয় স্বাদের ধাঁচ।
জবাই করে শ্রী হরিণী
রসনা করতে ভোগ,
মজার মাংস ছিঁড়ে খায় সে
চাটনি করে যোগ।
সর্বভোজী চিবায় হাড্ডি
খাওয়ার বড়োই লোভ,
প্রয়োজনের বেশি খেয়ে
উদর জানায় ক্ষোভ।
খেতে খেতে অবশেষে
খাদকের নাই হুঁশ,
বোমার মতো একদিন হায় তাঁর
পেটটা হলো ঠুস।
রঙ তামাশায় আর কত কাল
খেয়ে যাবি বল?
ভগ্ন হৃদয় নিয়ে জাতি
ফেলে চোখের জল।
শোষণ করে রক্ত চুষে
ভক্ষণ করে রূপ,
মধু লুটে চেটেপুটে
কানুন তবুও চুপ।
কাল্পনিক স্বপ্ন
ইচ্ছে করে রকেট যানে
আকাশ দেবো পাড়ি
স্যাটেলাইট ক্যামেরা দিয়ে
দেখবো মজা ভারি।
চাঁদ সূর্য গ্রহে বেড়াবো
উল্কা বেগে ঘুরে
পৃথিবী থেকে মানুষগুলো
মরবে জ্বলে পুড়ে।
স্বপ্ন দেখি মঙ্গলেতে
বানাবো এক বাড়ি
মহাশূন্যে ভেসে বেড়াতে
কিনবো নব গাড়ি।
ধরণী জুড়ে সব আমাকে
অবাক হবে দেখে
আমি তখন মনের সুখে
হাসবো খুশি মেখে।
স্বার্থপর দুনিয়া ছেড়ে
চাঁদে গাইবো গান
স্বাধীন ভাবে উড়বো চষে
জুড়িয়ে যাবে প্রাণ।
============
মেশকাতুন নাহার
প্রভাষক সমাজকর্ম
কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ,
কচুয়া, চাঁদপুর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন