google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। তিলাঞ্জলি ।। বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২

অণুগল্প ।। তিলাঞ্জলি ।। বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র

 

তিলাঞ্জলি 

বিশ্বেশ্বর মহাপাত্র

"আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর ;ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ‍্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।
আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।
তাই আনন্দিতা শ‍্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।
আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমন্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ‍্যানবোধিতা।"
 
বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্ঠে মহালয়ার ভোরে বেতার যন্ত্রে মহিষাসুরমর্দিনী সুরু হতেই চৈতালী ধুনচি নিয়ে সারা বাড়ি ধূপ ধুনো দিতে দিতে অনলকে ডেকে বলল -কই রে বাবু এবার উঠে পড় আর কত সময় এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাতে থাকবি।গঙ্গায় যাবি না?
আলস‍্যভরা ঘুম ঘুম চোখে অনল চৈতালীকে বলল-মা তুমি না---!তা গঙ্গায় যাবো কেন?
তুই সব ভুলে গেছিস দেখছি!আজ যে মহালয়া, তোর পিতৃ তর্পনের দিন।আজ একটু তিলাঞ্জলী করে আয় সোনা।
মা তুমি না বড্ড সেকেলে!
আমি বাবাকে সে সময় একটু ঔষুধ কিনে দিতে পারলাম না আর আজ তিলাঞ্জলী!
এটা আমাদের পরম্পরা সোনা।এটাতো দেখেছিস, তোর বাবা যতদিন বেঁচেছিলেন তোর দা-ঠাকুর,পরদা-ঠাকুরের উদ্দেশ্যে তিলাঞ্জলি না করে জলস্পর্শ করতেন না। তিনি বলতেন- আমার অগ্রপুরুষ অর্ঘ্যের আশায় একটি বছরের প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষিত,আমি সন্তান হয়ে কিভাবে তাদের বৈদেহিক আশাভঙ্গ করতে পারি।তাতে যে তাদের পারলৌকিক বন্ধনের মায়া থেকে বৈদেহিক আত্মার শান্তি লাভ হবে না। তাছাড়া আমিতো বিশেষ কিছুই দিচ্ছি না সামান‍্য এক গন্ডুষ গঙ্গার জল।তাতেই যদি পিতৃব‍্য পিতৃব‍্যাদের অখন্ড মোক্ষলাভ হয় আমার কি এতে কিছু যায় আসবে গিন্নি বলেই লোটা নিয়ে বাড়ির থেকে বেরিয়ে পড়ত তুইতো দেখেছিস।আজ যদি সেই মানুষ আমি বেঁচে থাকতে থাকতে সামান্য তিলাঞ্জলি না পায় তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো না কখনও এই বলে রাখলুম সোনা। আর নেহাতই যদি তিলাঞ্জলী করতে না চাস তো সেটা আমার মৃত্যুর পরেই না হয় করিস্।
অনল মায়ের পিড়া পিড়িতে বাবার পারলৌকিক কাজের পর এই প্রথম ধুতি গেঞ্জি পরে গামছা ও একটি লোটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল গঙ্গার উদ্দেশ্যে।
অনল কে তার মা পথে এগিয়ে দিয়ে দোর দিয়ে ঘরের বৈঠকে গিয়ে বসল।অনিন্দ চলে যাওয়ার পর এই প্রথম চৈতালি শোক বিরহ একাকিত্ব শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত হল তাই এ সময় তার চোখের কোন দুটো জলে চিকচিক করে উঠল। অনিন্দর গৃহকর্ত্রী হলেও চৈতালী অনিন্দের মৃত্যুর সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নি বরং প্রায় কপর্দক শূন্য অবস্থায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সংসার আগলেছে।আজ মনের সেই কঠোরতা ভেঙে চুরমার।নারী হৃদয় যে কোমল কর্দম স্বরূপ যা কিনা একটু মায়া মমতার আর্দ্রতায় ভিজে গেলেই হল।তা বোঝা গেল চৈতালীর চোখের কোন দুটি চিকচিক করাতে...
...অনল গঙ্গার ঘাটে পৌঁছে যার পর নাই আশ্চর্য!আগে তর্পণ নিয়ে পত্র পত্রিকা টিভির ছবিতে দেখলেও এমন যে মানুষের ভিড়েতে ভিড় হতে পারে ভাবতেই পারেনি।যাই হোক শেষমেষ সে এই ভিড়কে পাশ কাটিয়ে গঙ্গায় নেমে স্নান করে অগ্রপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ শুরু করে তিলাঞ্জলি দিয়ে বাড়িতে ফিরল।
আজ তিলাঞ্জলি দেওয়ার পর থেকে মনে একটু প্রফুল্লতা বোধ করল অনল। সারাদিন মহালয়ার ছুটির দরুন কোন কাজ ছিল না তাইতো অখণ্ড অবসরে অলসতার জন‍্য রাতে খুব তাড়াতাড়ি খাওয়দাওয়া করে বিছানায় চলে আসে সে । বিছানায় আসা মাত্র কখন চোখটা জুড়িয়েছে মনে নেই।তবে হঠাৎ করে অনলের ঘুমটা আজ ভেঙে গেল অনিন্দ কে সে যেন জীবিত অবস্থায় দেখল তার শোয়ার ঘরের মধ‍্যে। অনল অবাক বিস্ময়ভরে দেখল অনিন্দ তাকে আদর করে চুমু খেয়ে বলল আমি ও আমরা তোর তিলাঞ্জলি পেয়ে মস্ত খুশি।তোর প্রতি আমাদের আশীর্ব্বাদ রইল সুখে থাকিস। বিদায়-
অনল তিলাঞ্জলি পাওয়া বাবার হাসি মুখটা মনে করে বিষ্ময়ে বিভোরগ্রস্ত হয়ে রইল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন