google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ব্যক্তিগত গদ্য ।। আমার পুজো ।। অঙ্কিতা পাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২

ব্যক্তিগত গদ্য ।। আমার পুজো ।। অঙ্কিতা পাল

 

আমার পুজো 

অঙ্কিতা পাল

২০১৯ সালে ঠাকুর দেখার ঠিক দুবছর পর ২০২২, অর্থাৎ এবছর আবার ঠাকুর দেখার সৌভাগ্য হলো। কচিকাচাদের আবদার, "এবার ঠাকুর দেখতে চলো "। যাইহোক অষ্টমীর সন্ধ্যেবেলা আমরা একটি টোটো ভাড়া করে মালঞ্চ তে ঠাকুর দেখতে গেলাম। সেখানে একটি পুজো মণ্ডপ আলোকসজ্জা দেখে অভিভূত হলাম। প্যান্ডেলের এবারের থিম - অমরনাথ।আমার কখনো অমরনাথ দর্শন হয়নি, এই প্যান্ডেল দেখা মাত্রই যেন স্বয়ং অমরনাথের পৌঁছে গেলাম সেখানে  শিবের  পেলাম; যেন স্বর্গ দর্শন। এখানকার আলোকসজ্জা ও প্রতিমা  খুবই অসাধারণ। প্যান্ডেলের সামনে একটি কাঠের নির্মিত ষাঁড় দেখতে পেলাম,  খুব সুন্দর দেখতে এটি দেখে মনে হল যেন জীবন্ত বসে আছে।
এবার আসা যাক পরের ব্যান্ডেলের কথা, এটি একটি দুর্ধর্ষ মণ্ডপসজ্জা লিখে বা মুখে বলে একে প্রকাশ করা যায় না। চাক্ষুষ না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না, যাই হোক এর একটুখানি বর্ণনা দেই। সমগ্য প্যান্ডেল টি পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ঝিনুক শামুক ও পুথির কারুকার্য, আবার কোথাও কোথাও প্লাইউডের নকশা করা আছে। খুব সুন্দর প্রতিমা, প্রতিমার গায়ে ও কাঠের মতন রং, মন্দিরের ভেতরে অসুন্দর আলোকসজ্জা। এক কথায় মন্দির এর সাথে মা দুর্গার মূর্তিটি অসাধারণ দারুন মানিয়েছে। এবার তৃতীয় মন্দিরের কথায় আসা যাক, এই মন্দিরটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় সোনার তৈরি অর্থাৎ স্বর্ণমন্দির। এমন কিছু দিয়ে তৈরি না হলেও হলুদ কাপড়ের উপরে এমনভাবে জরি ও চুমকির কাজ করা হয়েছে, আলোর বিচ্ছুরণ এর ফলে এটি স্বর্ণমন্দির বলেই মনে হয়।  এখানকার প্রতিমা খুব বড়ো  এবং একটু অন্যধরনের, সাধারণ ঠাকুর গুলির মায়ের ডান পাশে লক্ষ্মী গণেশের ও মায়ের বাম পাশে  কার্তিক ও স্বরস্বতীর অবস্থান। কিন্তু এরা দুই ভাই অর্থাৎ গণেশ ও কার্তিক এবং দুই বোন লক্ষ্মী ও সরস্বতী পাশাপাশি অবস্থান করছে। প্রতিটি মূর্তি সোনালী ডাকের সাজ দিয়ে তৈরি। এবার চতুর্থ এই প্যান্ডেলটা তেমন কিছু নয় সাদা কাপড়ের উপরে নীল গোলাপ ফুলের কারুকার্য করা। প্রতিমা ও খুব সুন্দরএবং এরা নবদুর্গা  তুলে ধরতে চেয়েছে , মায়ের নাটা রৃপ। এবং ঠাকুরের পিছনে গ্রাম বাংলার চিত্র অঙ্কিত রয়েছে  এবং এর অদিতি প্রতিমায় সাদা ডাকের সাজ। এবার পঞ্চম, এই মণ্ডপসজ্জা খুবই সাধারণ কিন্তু প্রতিমা খুব বৃহৎ এবং সাবেকী ঘরনায় পুজো করা হয়েছে। ষষ্ঠতঃ এ পুজোতেও অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু কাঠের সাঁকো বা ব্রিজ পার হয়ে পুজো দেখতে যেতে হয়, এই কাঠের সাঁকো ব্রিজ টি এমন করে ছোট ছোট টুনি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে যে জলের ওপর লাইটের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। ছোটর ওপরে এই প্যান্ডেলটা এবং আলোকসজ্জা টি খুবি সুন্দর। সপ্তম এটি একটি থিমের পুজো, এই প্যান্ডেল টি সোলা বা থার্মোকলের তৈরি, লাল আলো দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা একে দেখলে মনে হয় যেন একটি জ্বলন্ত  ইটভাটা। একের পর এক থার্মোকলের  ইট দ্বারা নির্মিত। এই প্যান্ডেলটা সামনে একটি থার্মোকলের হর পার্বতীর মূর্তি তৈরি করা আছে।এই প্যান্ডেলের ঠাকুর গুলি তুলনামূলক ছোট ছোট এবং ভিতরে পাটকাঠির অপরূপ কারুকার্য ও নীল বর্নের আলোকে প্রকাশ করা হয়েছে।  
সর্বশেষে সব পূজা পরিক্রমা করে এই  কথায় আসা যায় যে,  আমাদের নিজের পুজো অর্থাৎ   কালিকাপুর  মায়ের আশ্রমের পুজো  আমার কাছে সবচেয়ে অনন্য।
তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় - " বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে।
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই দু চোখ মেলিয়া
ঘর থেকে শুধু দুই পা ফেলিয়া।
একটি ধানের শিষের উপর,
একটি শিশির বিন্দু "। 
 
 আমাদের মায়ের পরনে লাল শাড়ি, গায়ে সুন্দর সোনালী গহনা। টানা টানা চোখ এবং মুখখানি খুব মমতাময়ী।



এবছর আমাদের মায়ের আশমে খুব সুন্দর দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। 
ষষ্ঠীতে পূজা উদ্বোধন করতে এসেছিলেন, মাননীয় সংসদ মিমি চক্রবর্তী। সেদিন আমাদের ক্লাব প্রাঙ্গণেমাননীয় প্রধান সাহেব, মাননীয় ভিডিও সাহেব, থানার বড়বাবু সহ অনেক পুলিশ কর্মচারী ও রাজনীতির বড় বড় নেতাদের নেতৃগণ ও ক্লাবের সদস্য মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন।
সপ্তমীর দিন  সন্ধ্যায় পারা কচিকাঁচাদের নিয়ে একটি নিত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো।
অষ্টমীতে তেমন একটা কোন অনুষ্ঠান ছিল না সেজন্য আমরা বাইরে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ছিলাম।
নবমীর দিন একদল বাউল নৃত্যগীত পরিবেশন করেছিলেন আমাদের এই মঞ্চে।
এবং সবশেষে দশমীর দিন; আমাদের মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী গন। সেদিনটা আমাদের কাছে ফেষ্টিভেল অফ নাইট।
তারপরের দিন বৃহস্পতিবার আমরা আমাকে রেখে দিলাম আমাদের মধ্যে।
শুক্রবার সেই অন্তিম ক্ষণ মায়ের বিসর্জন, মহিলারা মায়ের বরণ ও সিঁদুর খেলার মাধ্যমে ঢাকিরা তাদের ঢাকের বলে মাকে বিদায় জানালেন।
আকাশে বাতাসে তখন বিষাদের সুর।।


=====================


 
অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন