গরীব অর্থনীতি --- একটা মূল্যায়ণ
অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি তাঁর বিদেশিনী স্ত্রীর সঙ্গে যুগ্মভাবে এবার ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। আনন্দ সংবাদ। বাঙালি বলে গর্ব হতেই পারে। সাবেকি তত্বভিত্তিক অর্থনীতি বর্জন করে তিনি ও তাঁর স্ত্রী এসথার ডাফল পরীক্ষামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশ্বের দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির ওপর আলোচনা করেন Poor Economics নামক গ্রন্থে। সহজ সাবলীল ভাষায় বইটাতে দারিদ্র্য দশা দারিদ্র্য ফাঁদ ও তার সমাধান সূত্রের ওপর বিশদ আলোচনা হয়েছে। অহেতুক গণিতের ভারে আলোচনাকে ভারাক্রান্ত করে তোলা হয় নি। ফলে অর্থনীতির দুর্বোধ্য তত্ব না জানা পাঠকের কাছেও বইটা সহজবোধ্য। অর্থনীতির বৃহত্তর আঙ্গিক সমাজ বিদ্যার সঙ্গে খুব সহজেই যুক্ত হতে পেরেছে বইটা। বইটার নাম গরিব অর্থনীতি কেন তা জেনে নিয়ে বইটার ওপর একটা আলোচনার চেষ্টা করব। এই প্রসঙ্গে আলোচনার আঁকে বাঁকে আমি বিষয়টাকে কিভাবে বুঝেছি সেটাও রাখব। সুতরাং এটা শুধু বইটার পর্যালোচনা নয় বইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার দুঃসাহস হয়তো ধরা পড়বে। বইয়ে আলোচিত কিছু অংশ আমার কাছে বাহুল্য বলে মনে হয়েছে। সেগুলো আমার আলোচনায় থাকবে না। এত ছোট পরিসরের লেখায় সেটা বাদ দিতেই হয়।
লেখকরা তাঁদের বইএ দারিদ্র ও তার উপশমের পথ খুঁজে পাবার চেষ্টা করেছেন গরিব মানুষের জীবন যাপনের মধ্যেই। আর ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাদের মুখেই তাদের সমস্যার কথা শুনে তার ভিত্তিতে নিজেদের বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছেন। খোঁজার চেষ্টা করেছেন দারিদ্র্য থেকে পরিত্রানের পথ। বড় বড় তত্বকে সামনে রেখে বিমূর্ত কোন পথ ধরে তাঁরা এগোন নি কারণ তা সমস্যার প্রকৃত সমাধান দিতে পারে না বলে তাঁরা মনে করেন। আর তত্বভিত্তিক ব্যাখ্যা গরিব অর্থনীতির দারিদ্র্যের বিষয়টিকে সঠিক প্রেক্ষাপটে বুঝতে পারে না। তত্বগুলো গরিব ও গরিবীর হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না। তাই তাদের বলা সুখদুখের কাহিনী শোনার অপেক্ষায় এই তত্ববিদরা থাকেন না। বরং মনে করা হয় বাজারে গরিব মানুষের তেমন অস্তিত্ব নেই তাই তাদের থেকে অর্থনীতির পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু অভিজিৎবাবুরা মনে করেন দারিদ্র্যকে সঠিক প্রেক্ষাপটে বুঝতে গেলে গরিব মানুষের জীবন ধারা দৈনন্দিন জীবনে তাদের চালচলন বোঝা দরকার। তাদের জীবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট সমস্যা ছোট ছোট প্রয়াসের মাধ্যমে সাফল্যের পথ পেতে পারে। এই প্রসঙ্গে পান্ডিত্য সুলভ নীতি নয় নীতির প্রয়োগের দিকটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গরিবের সমস্যা গরিবের জীবন ধরেই বুঝতে হয়। তত্বের কচকচানি দিয়ে নয়। তাই তাঁরা মনে করেন গরিব অর্থনীতি অনেক মূল্যবান অর্থনীতির কথা বলে। তাই বইটার মুখপত্রে বলা হয়েছে:
"Poor Economics is a book about the very rich eco-
nomics that emerges from understanding the eco-
nomic lives of the poor. It is a book about the kinds
of theories that help us make sense of both what the poor are able to achieve, and where and for what reason they need a push. Each chapter in this book describes a search to discover what these sticking points are, and how they can be overcome. We open with the essential aspects of people's family lives:
what they buy; what they do about their children's
schooling, their own health, or that of their children
or parents; how many children they choose to have; and so on. Then we go on to describe how markets and institutions work for the poor: Can they borrow, save, insure themselves against the risks they face? What do governments do for them, and when do they fail them? Throughout, the book returns to the same basic questions. Are there ways for the poor to improve their lives, and what is preventing them from being able to do these things? Is it more the cost of getting started, or is it easy to get started but harder to continue? What makes it costly? Do people sense the nature of the benefits? If not, what makes it hard for them to learn them?
Poor Economics is ultimately about what the lives
and choices of the poor tell us about how to fight global poverty."
এটার ব্যাখ্যা খুব সহজভাবে উপস্থাপন করলে দাঁড়ায় গরিব মানুষকে কিছু টাকা দিয়ে ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করলেই তার গরিবী হটে না। উল্লেখযোগ্য যে উন্নয়নের অর্থনীতিতে দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণের ওপর অনেক তাত্বিক আলোচনা হয় কিন্তু এই বইএর লেখক ও লেখিকা মনে করেন দারিদ্র্যের সমাধান সূত্র এখনও বার করা যায় নি। তারা এ ব্যাপারে দুটি চূড়ান্ত মতের মধ্যে যেন বিভ্রান্ত।সাচস (Sachs) নামে এক অর্থনীতিবিদ একটা মতের প্রবর্তক যিনি মনে করেন দারিদ্র্য নিবারণে রাষ্ট্রের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গরিব মানুষের ক্ষমতা না থাকায় অনুদানের মাধ্যমে সমাজের ও ব্যক্তির জীবনে একটা উদ্দীপক (stimuli) সৃষ্টি করে দারিদ্র্য দূরীকরণের পথ করে নেওয়া দরকার যা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙতে পারে। এর ফলে গোষ্ঠীস্তরে যেমন উন্নয়ন গতি পায় তেমনি ব্যষ্টি স্তরে গরিব মানুষ দারিদ্র্যের নাগপাশ থেকে মুক্তি পায়। তাই অনুদানের নীতি গ্রহণ করে বিদেশী সাহায্যের মাধ্যমে হলেও দারিদ্র দূরীকরণের নীতি গ্রহণ করা একান্ত দরকার। এর বিপরীতে অর্থনীতিবিদ ইস্টারলি (Easterly) সোচ্চার হন। তাঁর মতে অনুদান ও অনুগ্রহের অর্থনীতি সমাজকে কলুষিত করে। সমাজে দুর্নীতি বাসা বাঁধে। তিনি খোলা বাজারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া মানুষকে নিজ বলে বলিয়ান হতে বলেন। অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতার তীব্র বিরোধিতা করেন। এই পরস্পর বিরোধী মত ও তত্ত্বের কচকচানির মধ্যে না গিয়ে অভিজিত বাবুরা গরিবমানুষের বাস্তব অবস্থা ও তাদের মতামত কি সেটা আত্মস্থ করে নিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা বলেন। তিনি নীতি নির্ধারণে সরকারি হস্তক্ষেপ বা বিদেশি সাহায্যের মধ্যে বিরোধ নিয়ে কোন ছুটমার্গে যেতে চান নি। যেটা ভালো ফল দেবে সেটা গ্রহণ করতে রাজি। এ ব্যাপারে আমার মতবিরোধ আছে সেটা নিয়ে আমি পরে আলোচনায় আসব। তাঁরা উভয় বক্তব্যের মধ্যে কিছু সত্য আছে বলে মনে করেন। এটা যেমন সত্যি যে যেহেতু মানুষের খরচ করার সাধ্য প্রয়োজন অনুযায়ী নেই। তাই রাষ্ট্রের উদ্যোগে অনুদানের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন। কিন্তু এটা প্রয়োজন হলেও যথেষ্ট নয় কারণ ইস্টার যে যুক্তি দেন তার মধ্যেও সত্য আছে বলে লেখকরা মনে করেন। এই এইপরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে অনুদান নির্ভরশীলতা মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তার ভোগের ধরণটা তাকে অনুগ্রহ করে দেওয়া টাকা সবসময় এমনভাবে খরচ করতে উদ্বুদ্ধ করে না যে তার ক্রয় ক্ষমতা সৃষ্টি হলেও তার পুষ্টি শিক্ষা বা বাসস্থানের সমাধান হবে, তার সক্ষমতা বাড়বে বা সে আত্মনির্ভর হবে। এর ফলে অর্থনীতিতে যথা অর্থে উন্নয়নের জোয়ার আসবে না। দেশের দারিদ্র দূর হবে না। যেমন টাকা হাতে এলে দেখা যায় গরিব মানুষ স্মার্ট ফোন বা মদের পেছনে খরচ করে যা তার দারিদ্র দূর করতে পারে না প্রকৃত মাপকাঠিতে, যেটা উল্লেখ করেছি। ব্যষ্টি স্তরে গরিব মানুষের ভোগ সম্পর্কে আচরণ বিধি এই কঠিন সত্যটাকে উপস্থাপন করে। এই অনুসন্ধানে গরিব মানুষের দৈনিক ভোগ ক্রিয়া নিয়ে ব্যবহারিক বিশ্লেষণ গুরুত্ব পেয়েছে যার জন্য গবেষকদের ব্যাপক অনুসন্ধানের কাজ চালাতে হয়েছে গরিব মানুষের মধ্যে। ব্যষ্টি স্তরে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে তাকে অংকের বিশেষ ব্যবহার না করে ভাষায় প্রকাশ করে কার্যকারণ সম্পর্কটা বার করার দরকার হয়েছে। সেখান থেকে গরিবমানুষের ব্যবহারিক আচরণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উনার এই বিশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি বিশেষভাবে প্রসংশিত হয়েছে। ফলে সর্বশ্রেষ্ঠ, নোবেল পুরস্কার, তাঁরা পেয়েছেন। এর আগে অমর্ত সেনও দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উন্নয়নের অর্থনীতিকে সাবেকি ব্যাখ্যা থেকে সরিয়ে আনেন। সেই দিক থেকে দুজনের বিশ্লেষণ পদ্ধতির মধ্যে মিল থাকতে পারে। এই ব্যাখ্যায় গোষ্ঠী অর্থনীতি থেকে ব্যষ্টি অর্থনীতির দিকটা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে যা ব্যষ্টির আচরণ অর্থনীতির সমস্যার মূলে বলে মনে করে। ব্যষ্টির এই আচরণবিধি অস্বীকার করা যায় না। সেই দিক থেকে এই প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে এর সমাধান সূত্রটা আরও বাস্তব ধর্মী হতে পারে বলে দাবি করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা কি হওয়া উচিত সেটা উঠে আসে। সেখানে আমরাও একমত যে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুগ্রহের অর্থনীতি দারিদ্র সমস্যার সমাধান করতে পারে না যদি না গরিব মানুষের ভোগের ধরণটা সহযোগী হয় বা অল্প যা বিনিয়োগ ক্ষমতা তা ঠিকমত প্রবাহিত হতে পারে। যেমন একজন কৃষক যৎসামান্য বিনিয়োগ করে সার কিনতে পারে। কিন্তু ঠিক দামে স্বল্প পরিমান সার এই বাজার ব্যবস্থায় পাওয়া নাও যেতে পারে। তখন সে এই বিনিয়োগ ঘটিয়ে নিজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করার সুযোগ পায় না। বা এমনও হতে পারে বিনিয়োগ করলে উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু চাষি ন্যায্য দাম পায় না। সে তখন উৎপাদনে উৎসাহী হয় না। সে যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যায়। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে বাঁধা পড়ে। এখানেই রাষ্ট্রের ভূমিকা। আর সেটা তৃণমূল স্তরে যেন উপকারে লাগে। উনি আরো দেখিয়েছেন আঞ্চলিক পৌরশাসনের সাহায্যে মানুষের জন্য রাষ্ট্রের খরচটা এমন হওয়া দরকার যাতে তা তার সক্ষমতা আত্মনির্ভরতা বাড়াতে পারে। সেদিক থেকে বলা হয় অনুদান নির্ভর খরচ দারিদ্র দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে। এখানে তিনি আঞ্চলিক সরকারে তথা পৌরশাসনে মেয়েদের ভূমিকার কথা বলেন কারণ মেয়েরা খরচের ধরণটা কেমন হলে ভালো হয় সেটা ভালো বোঝে। আর এখানেই সমাজ তত্বের ব্যবহারিক দিকটা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন।
আমরাও মনে করি কিছু টাকা খরচ করে মানুষের পকেট ভরে দারিদ্র্য সমস্যার সমাধান হয় না। আর ব্যাপারটা অনুগ্রহের নয়। মানুষের নিজেকে নিজের ভালো বুঝতে হয়। সেই ভাবে জীবনযাত্রার ভোগের ধরণ ঠিক করতে হয়। বিকল্পের মধ্যে সঠিক পছন্দের প্রশ্নটা সমাধান করতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল যে অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে কর্পোরেট জগতের স্বার্থ রক্ষা করতে এই ব্যবস্থায় ভোগের ধরণটা ঠিক করা হয় সেটাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর এই কাঠামোতে ব্যাপক বন্টন বৈষম্য থাকে বলে যাদের বেশি পয়সা তাদের ভোগবাদ নিচের স্তরে চুইয়ে পরে। ব্যাপক মিডিয়া প্রচার তাদের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়। এটা রাষ্ট্রযন্ত্র হাতে থাকা কর্পোরেট দুনিয়ার লাভের স্বার্থে দরকার। এই ব্যবস্থায় এটাকে অস্বীকার করা যায় না। এখানেই গোষ্ঠী ব্যবস্থার গুরুত্ব। এখানেই একটা ব্যস্থার সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থের বিরোধ। ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রের ওপর ও ব্যক্তির ওপর প্রভাব ফেলে এমন সংগঠনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। প্রয়োজনে ব্যবস্থাটাকে ভাঙতে হয়। অতীতে প্রগতির স্বার্থে বার বার একটা ব্যবস্থা ভেঙে আরেকটা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এখন যারা ক্ষমতায় সেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সামন্ত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এসেছে। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ বাবুর প্রচেষ্টা কি বলে সেটা জানার প্রয়োজন।
দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণ আলোচনা প্রসঙ্গে দারিদ্র্যের ফাঁদ ধারণার অবতারণা করা হয়েছে। তাঁদের মতে দারিদ্র্যের ফাঁদ বলতে বোঝায়,"There will be a poverty trap whenever the scope for growing income or wealth at a very fast rate is limited for those who have too little to invest, but expands dramatically for those who can invest a bit more. On the other hand, if the potential for fast growth is high among the poor, and then tapers off as one gets richer, there is no poverty trap."
আমরা সাধারণভাবে বুঝি কোন গরীব ব্যক্তির অভাব তাকে এমন কিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আটকে রাখে যাতে সে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে না। একে দারিদ্র্যের ফাঁদ বলা হয়। যেমন গরিব হওয়ায় তার আয় কম তাই খরচ করার ক্ষমতা কম সে খরচ করতে পারে না বলে পুষ্টি শিক্ষা উপযুক্ত আশ্রয় কিছু পায় না। তাই তার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় না, তার দারিদ্র্য তাকে দারিদ্র্যের নাগপাশে বেঁধে রেখে । একে দারিদ্র্যের ফাঁদ বলা হয়। অর্থাৎ দারিদ্র্য আলোচনায় পুষ্টি স্বাস্থ্য আয়ুষ্কাল লিঙ্গ বৈষম্য ও সর্বোপরি আয়ের প্রশ্নটা এসে পড়ে। অমর্ত সেনের মত অনেকের ব্যাখ্যায় এটা আমরা পেয়েছি উন্নয়নের সূচক হিসেবে সে ব্যক্তির উন্নয়ন হোক বা সমষ্টির উন্নয়ন হোক। এর সঙ্গে অমর্তবাবুরা স্বাধিকার, সক্ষমতা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নটা আনেন। দারিদ্র্য দূর করতে পারলে এই মৌলিক অধিকারগুলো মানুষ অর্জন করতে পারে বলে মনে করা হয়। মানুষ তখন মানুষ বলে বিবেচিত হয়। দারিদ্র্য রেখার ওপরে উঠে যায়। দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসে। এই অবস্থায় সমাজে শুরু হয় দারিদ্র্য দূরীকরণের লড়াই। রাষ্ট্রের সহায়তায় এটা করতে পারাটাই কল্যানমুলক রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে মনে করা হয়। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে অভিজিৎবাবুরা তাঁদের লেখায় দেখাবার চেষ্টা করেছেন সরকারের তরফ থেকে একগুচ্ছ খরচ করে লোকের আয় বাড়ালেই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র দূর হয় না ব্যক্তি বা সমাজ কেউ দুষ্ট চক্র ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার পথে পা বাড়াতে পারে না যদি না রাষ্ট্রের সহায়তায় খরচটা ঠিক খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এখানেই ভোগের ধরণ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ন। আমরা ভোগবাদের বিষয়টা উপস্থাপন করি। এই ভোগের ধরণটা জানার জন্য গরিব মানুষের খরচের আচরণ জানার জন্য ব্যাপক অনুসন্ধানের কাজে ব্রতী হয়েছেন গবেষকরা। এর জন্য গরিব মানুষের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তাকে কার্য কারণ সম্পর্ক এর মধ্যে নিয়ে এসেছেন। গণিতের তেমন ব্যবহার না করেই বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। তারপর এ প্রসঙ্গে নীতি স্থির করার প্রশ্নটা আনা হয়েছে।
কোন একটি দিক থেকে দারিদ্র্যের সমস্যাকে তার সামগ্রিকতায় বোঝা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দিক থেকে একে কার্যকারণের প্রেক্ষাপটে বুঝতে পারlলে এর সমাধানের সঠিক নীতি নির্ধারণ সম্ভব।বিভিন্ন অবস্থায় এর চেহারা বিভিন্ন। এর কারণ বহুমুখী।সেই দিকটা বিবেচনা করে কার্যকরণের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ভাবে এদের ভাগ করে অনুচ্ছেদ ধরে ধরে গবেষকরা এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।
খাদ্য ও পুষ্টির অভাবকে দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ বলে সাধারণভাবে মনে করা হলেও আজকের দুনিয়ায় সেভাবে খাদ্যের অভাব দেখা যায় না বলে এই গবেষণায় মনে করা হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে খাদ্যভাবের অভাব সমস্যা হলেও সাধারণভাবে নয় আজের দুনিয়ায়। তবে পুষ্টির অভাব গরিব দেশগুলোতে দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ বলে দেখা যায়। এর ফলে শিশুরা কাজকর্মের জন্য উপযুক্ত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। ভগ্ন দশা শিশুর ভবিষ্যৎ যায় অর্জনের পথে এ এক প্রতিবন্ধক। এর কারণ অপুষ্টি শিশুর শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। ফলে তাকে দারিদ্র্যের নাগপাশে বন্দি থাকতে হয়। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে পড়তে হয় তাকে। গরিব মানুষরা ভোগবাদে তাড়িত হয়ে টিভি মোবাইলের ওপর খরচ করে কিন্তু পুষ্টি পায় না। সুতরাং ভোগের ধরণ পুষ্টির অভাবে দারিদ্রের কারণ হয় বলে সমীক্ষায় ধরা পড়ে। চূড়ান্ত দারিদ্র্যের মানুষের কাছে ভগ্ন স্বাস্থ্য দারিদ্রের কারণ এবং প্রজন্মকাল ধরে দারিদ্রকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। দেখা যায় চূড়ান্ত খারাপ অবস্থায় রোগের কারণে তাদের মত খরচ হলেও স্বল্প খরচে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা তারা করে না বছর ভর। এখানেও সীমিত খরচ কোন খাতে বন্টন করবে সে ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে দুর্বল স্বাস্থ্য তাদের আজীবন সাথী যার জন্য তারা দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে বেরোতে পারে না। গরিবরা শিশুদের পুষ্টি স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আগ্রহী থাকে না বরং তাৎক্ষণিক কি পাওয়া যায় খরচ করে সেভাবে খরচের ধরণ ঠিক করে।ফলে বয়েসকালে ভালো রোজগারের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ধনিদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা থাকে না কারণ তাদের খরচ সীমা অনেক উর্ধে। তারা দুরকম খরচই টানতে পারে।
(চলবে)
Poor Economics---- A review
Mr Abhijit Bannerj, by birth an Indian, nobel Laureate from India in Economics in 2019 jointly with his wife is the author of the book Poor Economics published by ---. It is an experimental based work that seeks the way out of poverty. The purpose of the book is to show a path to poverty eradication projects to be taken to fight it out at micro level that persists for a big size of population particularly in backward countries like India. For the purpose random samples are taken from the poverty stricken poor people of a poor country. Emphasis has been given to collect data that speak of the misery of the poor people at the grassroot. The book has been written in easy language so that a common man may have easy access to the book. Use of abstract mathematics has been avoided. Not unnecessary theoretical debate has been adhered to. Though it is a book of economics, it is more a part of sociology. The livelihood of the poor people has been exposed with ease covering their aspects of life that embrace their health condition, education, family pattern, consumption pattern, exposure to technology that that embrace their poverty stricken life. The tendency to debate over abstract issues of theories related to development economics has been done away with. It is a more pragmatic way of analysing the problems based of hard reality fo life and to find solutions to immediate problems that trap the poverty in what is called every trap.
We will initiate our discussion after an introductory note of why the book is named Poor Economy. It is an economy of the poor or it is itself poor because it can not explain the cause of the poor, the destiny of the poor is not known to the economy. The destitute of the poor cannot be explored to find a solution of their poverty if the focus is of abstract theoretical debate that is the brainchild of intellectuality having no sense for all practical purpose. Our view and opinion with respect to the problems related to poverty and its alleviation projects, policy prescriptions will find its space in our attempt to evaluate the work for which the authors got Nobel Laureate. We find some discussions to be less relevant to be overlooked in our discussion for the want of space in the article.
Authors in their book tried to identify the nature, causes and remedies of the problem of poverty in the very way of living of the concerned people at grassroot. Interview was taken in a very homely environment. The authors are the learners. People open heartedly talked about their lifestyle, their pattern of spending what they chose what not how they react in the market when they are given support to purchase in the market. Analysing the data collected from interview they tried to identify the causes of poverty. Policy follows accordingly.They tried to find out the ways out. According to the authors theoretical discussion of the subject of poverty does not help to identify the problems in correct perspective. The theories fail to touch the heart of the people. Theories do not help to understand the real problems that arise out of daily living of the people. For the purpose poor peopl have to be allowed freely to speak out. It is wrong to presume that they do not understand their problems. It is an underestimation to presume that in the market poor has little access. Their existence is not felt in a big way as they are poor and their purchasing power is insignificant. So they have little to contribute to the aid of the problems of economics.According to the authors the scattered problems have to be known from them and the problems are to be understood in their interconnection. Small efforts to solve the problem may produce effective results rather than the big prescriptions provided by the big theories. The Poor Economics speak of valuable rich things of economic life.Intellectually sound theories do not provide solution. On what their Poor Economics propose to focus can be guessed when it is said in ther book:
"Poor Economics is a book about the very rich eco-
nomics that emerges from understanding the eco-
nomic lives of the poor. It is a book about the kinds
of theories that help us make sense of both what the poor are able to achieve, and where and for what reason they need a push. Each chapter in this book describes a search to discover what these sticking points are, and how they can be overcome. We open with the essential aspects of people's family lives:
what they buy; what they do about their children's
schooling, their own health, or that of their children
or parents; how many children they choose to have; and so on. Then we go on to describe how markets and institutions work for the poor: Can they borrow, save, insure themselves against the risks they face? What do governments do for them, and when do they fail them? Throughout, the book returns to the same basic questions. Are there ways for the poor to improve their lives, and what is preventing them from being able to do these things? Is it more the cost of getting started, or is it easy to get started but harder to continue? What makes it costly? Do people sense the nature of the benefits? If not, what makes it hard for them to learn them?
Poor Economics is ultimately about what the lives
and choices of the poor tell us about how to fight global poverty."
আমরা সাধারণভাবে বুঝি কোন গরীব ব্যক্তির অভাব তাকে এমন কিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আটকে রাখে যাতে সে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে না। একে দারিদ্র্যের ফাঁদ বলা হয়। যেমন গরিব হওয়ায় তার আয় কম তাই খরচ করার ক্ষমতা কম সে খরচ করতে পারে না বলে পুষ্টি শিক্ষা উপযুক্ত আশ্রয় কিছু পায় না। তাই তার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় না, তার দারিদ্র্য তাকে দারিদ্র্যের নাগপাশে বেঁধে রেখে । একে দারিদ্র্যের ফাঁদ বলা হয়। অর্থাৎ দারিদ্র্য আলোচনায় পুষ্টি স্বাস্থ্য আয়ুষ্কাল লিঙ্গ বৈষম্য ও সর্বোপরি আয়ের প্রশ্নটা এসে পড়ে। অমর্ত সেনের মত অনেকের ব্যাখ্যায় এটা আমরা পেয়েছি উন্নয়নের সূচক হিসেবে সে ব্যক্তির উন্নয়ন হোক বা সমষ্টির উন্নয়ন হোক। এর সঙ্গে অমর্তবাবুরা স্বাধিকার, সক্ষমতা ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নটা আনেন। দারিদ্র্য দূর করতে পারলে এই মৌলিক অধিকারগুলো মানুষ অর্জন করতে পারে বলে মনে করা হয়। মানুষ তখন মানুষ বলে বিবেচিত হয়। দারিদ্র্য রেখার ওপরে উঠে যায়। দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসে। এই অবস্থায় সমাজে শুরু হয় দারিদ্র্য দূরীকরণের লড়াই। রাষ্ট্রের সহায়তায় এটা করতে পারাটাই কল্যানমুলক রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে মনে করা হয়। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে অভিজিৎবাবুরা তাঁদের লেখায় দেখাবার চেষ্টা করেছেন সরকারের তরফ থেকে একগুচ্ছ খরচ করে লোকের আয় বাড়ালেই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র দূর হয় না ব্যক্তি বা সমাজ কেউ দুষ্ট চক্র ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার পথে পা বাড়াতে পারে না যদি না রাষ্ট্রের সহায়তায় খরচটা ঠিক খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এখানেই ভোগের ধরণ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ন। আমরা ভোগবাদের বিষয়টা উপস্থাপন করি। এই ভোগের ধরণটা জানার জন্য গরিব মানুষের খরচের আচরণ জানার জন্য ব্যাপক অনুসন্ধানের কাজে ব্রতী হয়েছেন গবেষকরা। এর জন্য গরিব মানুষের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তাকে কার্য কারণ সম্পর্ক এর মধ্যে নিয়ে এসেছেন। গণিতের তেমন ব্যবহার না করেই বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। তারপর এ প্রসঙ্গে নীতি স্থির করার প্রশ্নটা আনা হয়েছে।