পরিবেশ বিজ্ঞান
দুষণ-বৃশ্চিকের দংশন
[বিঃদ্রঃ আজকের দিনে পরিবেশ একটি বহু আলোচিত বিষয়ের অন্যতম। এটি আলোচনার টেবিলে হাজির করা হয়েছে কারণ এই সত্য আজ আর উপেক্ষা করার বিষয় নয় যে, পৃথিবীর পরিবেশ আজ অত্যন্ত দুষিত হয়েছে আর ক্রমে এই দূষণ বেড়েই চলেছে। ২০১৭ সালে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, পৃথিবীর আয়ু আর বড় জোর একশ বছর। এর মধ্যেই পৃথিবীবাসীকে আর একটি উপযুক্ত বিকল্প গ্রহ বেছে নিতে হবে। এটা সহজ কী সহজ নয় সে প্রশ্নের মীমাংসাও সহজ নয়। তবে তিনি এর মধ্যে যে ইঙ্গিতটি দিয়েছিলেন তা হল এই যে, পৃথিবীর দূষণ অবিলম্বে যদি কমিয়ে না আনা যায় তবে মানুষের সামনে এক সমূহ বিপদ এসে উপস্থিত হবে। অথচ আমরা সেই পরিবেশের ব্যাপারেই কেমন নীরব। একটা উপেক্ষার ভাব নিয়ে পরিবেশ দূষণের ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছি নিয়ত। দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণ সম্পর্কে আমাদের নিত্য সজাগ করাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলি। এমন কী মহামান্য সুপ্রীম কোর্টকে পর্যন্ত এগিয়ে আসতে হয়েছে। তবু এ বিষয়ে আমাদের বিশেষ হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। আজও পরিবেশ-বান্ধব সৌরশক্তির উৎপাদন, প্রচার প্রসার উপেক্ষিত রেখে আমরা জৈব আর খনিজ জ্বালানীগুলিকে ব্যবহার করেই যাচ্ছি। নদীর ঘাটে বিসর্জন হচ্ছে শত শত প্রতিমার। নদীর জলে ফেলে চলেছি নানা রকম দূষিত বর্জ পদার্থ। এর মধ্যেই ভয়াবহ আকার নিয়ে থাবা বিস্তার করে আছে আতশবাজি। দিনের পর দিন তার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এই ভয়াবহ অবস্থার সামনে দাঁড়িয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ করাই হবে আমাদের অগ্রগণ্য বিষয়ের মধ্যে একটি।
এই রচনাটি কিন্তু বাজির উৎপাদন আর তার ব্যবহার শিক্ষার বিষয়ে অবশ্যই নয়। এটি বাজির ক্ষতিকারক বিষয়গুলিকে মানুষের চোখের সামনে আনার ঈষৎ প্রচেষ্টা। কিন্তু সেই বিষয়ের আলোচনায় বাজির বিষয়ে কিছু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। সেই যৎ সামান্য আলোচনাই করা হয়েছে।--লেখক। ]
দিনের বেলায় চোদ্দ শাক ভাত দিয়ে মেখে খেয়েছি। সন্ধ্যেবেলায় চোদ্দ পিদিম সাজিয়ে ভূত চতুর্দশীর ভূত তাড়িয়েছি। এবার পরের দিনের পালা। রাত গভীরে অমা-অন্ধকারে মায়ের পুজো করব। উৎসারিত হবে আলোঃ 'তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ'। অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ ঘটবে।
তাই আমাদের চলবে নিরন্তর আলোর সাধনা। চারিদিক সাজানো হবে আলোর মালায়। দীপে দীপে ছয়লাপ হবে এই দীপাবলীর রাত। শেষ নিয়ে কারোর মাথাব্যথা অতটা না থাকলেও শুরুটা নিয়ে বিস্তর ভাবে। কীভাবে শুরুটাকে এগিয়ে নিয়ে আসা যায় সেই নিয়েই চিন্তা। তাই সন্ধ্যের অনেক আগে থেকেই পুড়তে থাকে বাজি- অর্থাৎ আতশবাজি। শব্দ, গন্ধ আর আলোয় ভরে উঠবে চারিদিক। আকাশে উড়ন তুবড়ি সাঁই করে উড়ে যাবে উড়ানের মত। তীক্ষ্ণ শব্দ করে সাইরেন বাজি জানান দেবে তার অস্তিত্ব। আকাশ সুসজ্জিত হবে বাজির মালায়। বাতাসে
ভাসবে পোড়া বারুদের গন্ধ আর মন্দ্রিত হবে বিকট পটকার শব্দে। একসঙ্গে অনেক পটকার মিলিত কম্পনে কম্পাঙ্ক বৃদ্ধি হবে সাংঘাতিক ভাবে। ক্ষুব্দ বাতাসের সেই প্রবাহ কান আর হৃতপিন্ডে আঘাত করবে সজোরে।
আসা যাক তবে আতশবাজির কথায়। আতশবাজি প্রধাণত দু'রকমের হয়ে থাকে। এক, আলোক-প্রধান অর্থাৎ যা পোড়ে আর আলো উৎপন্ন করে। এই আলো হতে পারে সাদা বা রঙিন। আলো যত তীব্র হয় ততই এ বাজির সাফল্য মানে চোখ তৃপ্তিতে ভরে ওঠে। যেমন ফুলঝুরি, রং মশাল, চরকি, রং দেশলাই, ইলেক্ট্রিক তুবড়ি বা সাধারণ তুবড়ি ইত্যাদি। এগুলির আলোর ঝলকে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
দুই, শব্দ-প্রধান অর্থাৎ যা পোড়ে এবং আলো উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ উৎপাদন করে। শব্দ যত বেশি হয় ততই এ বাজির সাফল্য মানে মন তৃপ্তিতে ভরে ওঠে। এই জাতীয় বাজিকে বলে পটকা যা আলোর থেকে শব্দই বেশি তৈরি করে থাকে। যেমন পটকা (কালিপটকা, ধানিপটকা, ভুঁই পটকা ইত্যাদি), বোমা, দোদমা ইত্যাদি। তিন, যা পোড়ে আর আলো বা শব্দ খুব কম উৎপাদিত করলেও বিশেষ নৈপূণ্য দেখায়। যেমন, চরকি, হাউই, সাপবাজি এইসব।
বাজির উপাদানঃ
মূল উপাদান হল বারুদ। বারুদের আবার মূল উপাদান হল সোরা, গন্ধক আর কাঠকয়লা। তাছাড়াও থাকে বিভিন্ন ধাতু অথবা জৈব বা অজৈব রাসায়নিক। বিভিন্ন বাজি তৈরিতে বিভিন্ন অনুপাতে এগুলি মেশাতে হয়। এগুলি যারা বাজি প্রস্তুত করে তারা জানে আর তাদেরই জানার বিষয়। আগেই বলেছি এটি বাজি তৈরির ক্লাস নয়। বাজির কুফলগুলি নিয়ে আলোচনার ক্লাস।
বাজি কেন ফাটেঃ
একটি পটকায় আগুন ধরান হল। এটি প্রচন্ড শব্দ করে ফেটে গেল। সঙ্গে সঙ্গে উৎপন্ন হল তীব্র আলোর ঝলক। আগেই বলেছি বাজির প্রধান উপাদান সোরা, গন্ধক আর কাঠকয়লা। বাজিতে আগুন দিলে যে গ্যাসগুলি উৎপন্ন হয় তা হলঃ কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি। প্রচন্ড উত্তাপে এই গ্যাসগুলির প্রসারণ হয় অর্থাৎ আয়তনে বৃদ্ধি হয়। কঠিন, তরল আর গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে গ্যাসই সবচেয়ে বেশি আয়তন দখল করে। তাই উত্তাপে তার প্রসারণই সর্বাপেক্ষা অধিক হয়।
এই গ্যাসগুলির প্রসারণে বায়ুমন্ডলীর আশপাশের স্তরগুলি সরে যায় আর ফলে সেই স্তরগুলি একটা আর একটার ঘাড়ে পড়ে গিয়ে কানে প্রচন্ড শব্দের অনুভূতি জাগায়। শুধু তাই নয়, বায়ুস্তরের সেই ধাক্কায় ছিটকে যায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ, কাগজ, দড়ি বা অন্যান্য সামগ্রী। বায়ুহীন স্থানে কোনও বাজি পোড়ালে (যদিও তা সম্ভব নয় কারণ অক্সিজেন না থাকলে দহন সম্ভব নয়) শব্দ হবে না কারণ শব্দ উৎপন্ন হয় কম্পনে কিন্তু তার বিস্তারণ হয় বায়ুমাধ্যম দিয়ে। পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যে খুব কম জায়গায় (৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইলের মধ্যে মাত্র ৩০০ মাইলের মত) বায়ু থাকায় মহাকাশের কোনও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় না পৃথিবী থেকে।
যে কোনও দহনেই আলো উৎপন্ন হয়। বাজি পোড়ানোও একটা দহন সুতরাং আলো সৃষ্টি হবেই। তবে সেই আলোর উজ্জ্বলতা নির্ভর করবে দহনের প্রাবল্য আর প্রকৃতির ওপর। তাই আলোর উজ্জ্বলতা আর তার রং নির্ভর করবে বাজির উপাদানের ওপর।
বাজির ক্ষতিকর প্রভাবঃ
পরিবেশ দূষণঃ
এটি বাজির প্রত্যক্ষ ফল। এই দূষণ প্রধাণত চার প্রকারের হয়। এক, বায়ু-দূষণ। দুই, শব্দ দূষণ। তিন, দৃশ্য-দূষণ। চার, দৃশ্যমানতা হ্রাস। পাঁচ, অপরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি। ছয়, দুর্ঘটনার আশংকা। এই ছয় প্রকারের দূষণই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক।
১। বায়ু-দূষণের কারণ আর নতুন করে বলার কারণ নেই। বাজি পোড়ানো একটি দহন। যে কোনো দহনে উৎপন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস বাতাসে মিশে যাওয়াই দূষণের কারণ। এই দূষণের কারণঃ এক, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড আর নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মত গ্রীন হাউস গ্যাসের প্রভূত উৎপাদনের জন্যে উত্তাপের বৃদ্ধি। আমরা প্রতি বছর দেখছি গরম ক্রমে বেড়েই চলেছে। শীতকালটাকে আজ যেন প্রায় খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। বর্ষাকাল ক্রমে পিছিয়েই যাচ্ছে আর এলোমেলো ভাবে হচ্ছে। যখন তখন ঝড় কালবৈশাখী হচ্ছে। যখন তখন নিম্নচাপে কয়েক দিন ধরে অকালে বর্ষা ঝরছে। ঋতুচক্রের আজ টলমল অবস্থা।
দুই, গ্যাসগুলির উৎপাদনের ফলে বাতাসে অক্সিজেন সংকোচনের জন্যে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি। তিন, বাতাসে কুয়াশা, ধোঁয়াশা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্যে দৃশ্যমানতার হ্রাস অর্থাৎ দেখতে অসুবিধা হওয়া। অনেক সময় উড়োজাহাজের পাইলটদের পর্যন্ত এই অসুবিধায় পড়তে হয়।
২। শব্দ-দূষণঃ
দূষণ শব্দের অর্থ হল বিশুদ্ধ কোনও পদার্থে অন্য এক বা একাধিক ক্ষতিকারক পদার্থ মিশে যাওয়া। যদিও শব্দ কোনও পদার্থ নয় এটি একটি শক্তি, তবুও এটি দূষিত হয়। নিত্য আমরা যা শব্দ শুনি তা হল গাড়িঘোড়ার আওয়াজ, মানুষের কথাবার্তা, কলকারখানার আওয়াজ, পশু-পাখির ডাক ইত্যাদি। এগুলির বেশির ভাগ আমাদের কানের সহনশীল সীমার মধ্যেই থাকে। কিন্তু যদি এমন কোনও বেয়াড়া শব্দ হঠাৎ প্রচুর করে আর অনেকক্ষণ ধরে এসে উপস্থিত হয় তখন তাকে আমরা শব্দ-দূষণ হিসেবে ধরতে পারি। রাস্তায় প্রচুর পরিমাণ গাড়ি বিকট হর্ণ দিতে দিতে গেলে, বহু লোক বেয়াড়া ভাবে চিৎকার করতে করতে গেলে, কোনও বেসুরো গলায় বেশিক্ষণ ধরে কেউ গান গাইলে তা শব্দ-দূষণ হিসেবেই পরিগণিত হয়।
কানের ক্ষতিঃ
আমাদের প্রত্যেকের কানের একটি নির্দিষ্ট সহন মাত্রা আছে। পশ্চিমবঙ্গের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কর্তৃক বাজিকে ৯০ ডেসিবেলে বেঁধে দেওয়া আছে। অন্যত্র আরও অনেক বেশি। ডেসিবেল হল একটি সংখ্যা যা দিয়ে শব্দের প্রাবল্য বোঝা যায়। সম্পূর্ণ নীরবতাকে শূন্য ডেসিবেল ধরে অন্য শব্দ তাঁর তুলনায় কতগুণ বেশি সেই সংখ্যাই প্রকাশিত হয় ডেসিবেলে। সাধারণত একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পটকার শব্দ উৎপাদন ক্ষমতা হল ১৩০ থেকে ১৪০ ডেসিবেল। বন্দুকের গুলিরও তাই। খুব উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাজি একসঙ্গে অনেকগুলো বা একটানা অনেকক্ষণ ধরে ফাটলে কানের ক্ষতি প্রচন্ড ভাবে হতে পারে। এমন কী আসতে পারে স্থায়ী বধিরতাও। অনেক সময় যারা বাজি ফাটায় তাদের নিজেদের কানেও তালা ধরে যায় একটি মাত্র পটকা বা দোদমা ফাটানোর জন্যে। একসঙ্গে অনেক গুলি পটকা ফাটলে বাজিগুলির মোট কম্পাংকের সমান শব্দ উৎপাদিত হয়। কানের ক্ষতি অনেক প্রকারের হতে পারে। সাময়িক বেশ কিছুক্ষণ ধরে কানে তালা ধরে যেতে পারে। দুই কানের চিরকালীন বধিরতা আসতে পারে।
চোখের ক্ষতিঃ
তীব্র আলোর ঝলকানি চোখের ক্ষতি করতে পারে প্রবল ভাবে। চোখের স্নায়ুগুলি অত্যন্ত সূক্ষ্ম আর স্পর্শকাতর। চোখের সামনে উচ্চ কম্পাংকের শব্দ বার বার দেখা দিলে চোখ সাময়িক বা দীর্ঘকালীন অক্ষমতা লাভ করতে পারে।
শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতিঃ
এমনিতেই আমাদের আকাশ ধুলো আর ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ। গ্রামেগঞ্জে তো বটেই শহরেও অনেক বস্তি অঞ্চলে এখনও গ্যাস গিয়ে পৌছোয় নি। রান্নার জন্যে জ্বালা হচ্ছে কাঠ, কয়লা বা কাঠ-কয়লা, গুল ইত্যাদি। শহরাঞ্চলে ঘন ঘন বাড়িঘর হওয়ার ফলে সেই আবদ্ধ জায়গায় আটকে থাকা ক্ষতিকারক গ্যাসগুলি মানুষের শ্বাসকার্যের পক্ষে শুধু অন্তরায় হয়েই দাঁড়ায় তা নয়, শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগেরও শিকার হয়। অর্থাৎ নিত্য-নৈমিত্যই মানুষ একটা শ্বাসরোধী অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার এর সঙ্গে একদিনে একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ বাজি পোড়ানোর ফলে অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
হৃদযন্ত্রের ক্ষতিঃ
উচ্চ শব্দ হৃতপিন্ডের গতিবেশ বাড়িয়ে তোলে। তাই শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে। রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটলে হার্টকে অনেক বেশি কাজ খুব অল্প সময়ে করতে হয়। তাই ক্রমশ সে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। হৃতপিন্ডের নানা অসুখ ছাড়াও দুর্বল হৃতপিন্ডের বা হৃতপিন্ডের অসুস্থতার জন্যে অসুস্থ মানুষের অবস্থা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
মস্তিষ্কের ক্ষতিঃ
তীব্র আর তীক্ষ্ণ শব্দ মানুষের স্বাভাবিক মেজাজকে বিপন্ন করে তাকে খিটখিটে করে তুলতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত, হজমের অসুবিধা আরও অন্যান্য অনেক কিছু। স্মরণশক্তির হ্রাস ঘটতে পারে বা তীব্র মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। মানসিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা আরও অসুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
৩। দৃশ্য-দূষণ ও দৃশ্যমানতার হ্রাসঃ
এই ধুলো আর ধোঁয়ার জন্যে যেমন পরিবেশ দূষিত হয় তেমনই বাড়ে শীতকালে কুয়াশা তৈরির সম্ভাবনা। কুয়াশায় জলের সূক্ষ্ম ফোঁটা গুলি বাতাসের ধূলিকণা আশ্রয় করে ভেসে থাকে। তাই বাতাসে ধুলো বা ধোঁয়ার বৃদ্ধি বাতাসে কুয়াশা সৃষ্টির সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে তোলে। বিভিন্ন কারণে উৎপন্ন ধোঁয়ার সঙ্গেই বাজির কারণে মাত্রাতিরিক্ত ধোঁয়া সৃষ্টি হয়ে বাতাসকে শুধু দূষিতই করে না তাকে করে তোলে প্রায় অস্বচ্ছ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে এই ধুলো আর ধোঁয়া মিশে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয় তা শুধুমাত্র ভূ-পৃষ্ঠের গাড়ি চলাচলেই বাধা সৃষ্টি করে তাই নয়, বাধা সৃষ্টি করে আকাশেও অর্থাৎ উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারের দৃশ্যমানতাও কমিয়ে আনতে পারে। আজ দিল্লির আকাশে যা ঘটে চলেছে আমরা সংবাদ মাধ্যমে তা জানতে পারছি।
অপরিচ্ছন্নতার বৃদ্ধি আর দুর্ঘটনার সম্ভাবনাঃ
বাজির উপাদানগুলির মধ্যে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমাণ কাগজ, সুতো, দড়ি, পিচবোর্ড, ধাতুর গুঁড়ো, পোড়া মাটির খোল (তুবড়ির ক্ষেত্রে), পোড়া বারুদ ইত্যাদি। বাজি পোড়ার বা ফাটার সময় এগুলি চারিদিকে বিক্ষিপ্ত ভাবে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে চারিদিক ভয়ংকর ভাবে অপরিচ্ছন্ন করে তোলে। এই অপরিচ্ছন্ন জিনিসগুলি নালা অর্থাৎ ড্রেনে পড়ে ড্রেন সম্পূর্ণ বা আংশিক বুজিয়ে দিতে পারে। এবং তার ফলেও অবরুদ্ধ নালা থেকে দূষিত গ্যাস বেরিয়ে এসে পরিবেশকে দূষিত করতে পারে আর করে।
প্রতিটি অসাবধানতা দুর্ঘটনাকে ডেকে আনে। তবে কিছু কিছু অসাবধানতা অত্যন্ত দ্রুত আর ব্যপক ভাবে এই সম্ভাবনাকে এনে ফেলে। বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সাবধানতা, সতর্কতা আর বিধি নিষেধ না মেনে চললে ছোট থেকে অনেক বড় অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। ছোট থেকে বড় নানা অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা বাতিল করা যায় না।
মানুষের শুভবুদ্ধিই ভরসাঃ
এককালে শুধুমাত্র দেওয়ালি বা দীপাবলী উৎসবেই বাজি পুড়ত। এখন কিন্তু সব পুজোতেই পোড়ে। আর শুধু পুজো কেন, পোড়ে বিয়ে বা যে কোনও আনন্দানুষ্ঠানে। পোড়ে খেলায় জিতলেও। উপলক্ষ যাই হোক না কেন, মানুষ তার মনের আনন্দ প্রকাশের লক্ষে বাজি-পটকাকে ব্যবহার করে এটাই হল আসল সত্যি। আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ চোখের সামনে একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন। এবং আগামী দিনগুলোতে তা আরও ভয়াবহ ভাবে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠবে। তাই পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি করে সজাগ হতে হবে। বাজি-পটকার ব্যবহার কমাতে হবে। আর একেবারে পরিহার করতে পারলে তার চেয়ে ভাল তো আর কিছু হতে পারে না।
DR. ARUN CHATTOPADHYAY
Mobile 8017413028