কবিতা ✴ অঞ্জন দাস মহাপাত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Monday, November 18, 2019

কবিতা ✴ অঞ্জন দাস মহাপাত্র



  অকৃতজ্ঞ


বীরেন বাবুর নিথর নিস্প্রাণ দেহটা বাড়ির  বাইরে আনা হলো,
হ্যাঁ !আশি বছরের বীরেন বাগচি গত রাতেই মারা গেছেন।
বাড়ির উঠোনে মস্ত কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় তাঁকে সোয়ানো হলো;
তাঁর প্রাণহীন চোক্ষু অপলকে চেয়ে আছে কৃষ্ণচূড়ার শাখায়। 

বীরেন বাগচি স্কুল মাস্টার ছিলেন, তিনি অনাথ নন!
এক দিন সব ছিল তাঁর, স্ত্রী পুত্র____
শত অভাবেও সুখের সাজানো সংসার ছিল ।
দু'চোখে অনেক স্বপ্ন জমিয়ে ছিলেন তিনি,
একমাত্র ছেলে শেখর'কে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে।

তাইতো তিনি সারা জীবনের সঞ্চয় খুইয়ে ডাক্তারি পড়তে__
ছেলেকে পাঠিয়ে ছিলেন বিদেশে।
শেখর বিদেশে লেখাপড়া করে আজ মস্ত বড় ডাক্তার।
বিয়ে করে সংসার পেতে সে আজ বিদেশের স্থায়ী বাসিন্দা।

প্রথম প্রথম  টেলিফোন করতো, "বাবা মা ভালো আছো তো?"
সে আর ফেরেনি দেশে! গত দশ বছরে কোনো ফোন আসেনি!
বীরেন বাবুর স্ত্রী ক্যান্সারে মারা যান আজ থেকে পাঁচ বছর আগে।
মাতৃ বিয়োগের সংবাদ পাঠানো হয়েছিল; তবুও সে আসেনি !

শেখর যেদিন জন্ম হলো,সেদিন বীরেন বাবু মনের আনন্দে 
একটি কৃষ্ণচূড়ার চারা গাছ পুঁতে ছিলেন বাড়ির উঠোনে...
আর বড় মুখ করে বলেছিলেন- "কৃষ্ণ শেখরের ছায়াই হবে
আমাদের শেষ সম্বল"।

বীরেন বাবুর ছাত্র ছাত্রীরা দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে
অশ্রুসজল চোখে, তাদের প্রীয় মাস্টার মশাইকে শেষ বারের মতো
দেখবার জন্য, তাঁকে শেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর জন্য।
সবাই এসেছে বীরেন বাবুর শেষ দিনে;  আসেনি শুধু শেখর!

দক্ষিণ হাওয়ার আলতো হিল্লোলে রাশি রাশি কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ফুল
ঝরে পড়লো বীরেন বাবুর বুকে শেষ বারের মতো জানালো কৃতজ্ঞতা।


==========================

অঞ্জন দাস মহাপাত্র
গ্রাম---দীঘা পুকুর ✴ পোস্ট-- খাকুড়দা
জেলো---পশ্চিম মেদিনীপুর
মোঃ-9064037996
হয়াট্সঅ্যপ নং--7047052411