google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re স্মৃতিকথা -- তরুণ প্রামানিক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

স্মৃতিকথা -- তরুণ প্রামানিক

           স্মৃতির অন্তরালে

                        
কয়েক দিনের নাছোড় বৃষ্টিটা সন্ধ্যার দিকে একটু বিরাম দিতেই গলি থেকে রাজপথ জন প্লাবনে ভেসে গেল অলস নিম্নচাপের ভ্রূকুটিকে কাঁচকলা দেখিয়ে স্নো আর পাউডারে সুসজ্জিত হয়ে মা কালিকা দরশনের ব্যস্ততা সহসা গতি পেলো পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মতোই হঠাৎ চলে আসা সুযোগটাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ জয়ের এন্ডলেস উদগ্র উল্লাসে ফেটে পরলো আম আদমি থেকে ইন্টেলেক্চুয়াল বঙ্গ জনতা আমি বেরসিক ভেতো বাঙালি সারাদিন শুয়ে থেকে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছি আর ছাইপাস ভাবছি তাপমাত্রাটাও একলাফে অনেকটাই কমে এসেছে গায়ের ছেড়া কাঁথা টাকে একটু টেনে ঠিক করতে করতে চোখ গেলো টলোমলো বিভঙ্গে আকাশের প্রান্তে উড়ে চলা একটা টিমটিমে লাল ফানুসের দিকে
সেই কবে কার কথা ছেলেবেলায় কালীপুজো মানে আমাদের কাছে ছিল বাধনহারা উন্মাদনা নিয়ম আর অনুশাসনের বেড়া ডিঙিয়ে হৃদয়ের খুব গোপনে লুক্কায়িত কস্তুরীর অকৃত্তিম সুঘ্রান প্রবল উৎসাহে দুপুর থেকেই মায়ের সাথে হাত লাগাতাম মাটির প্রদীপ তৈরির কাজে আকাশে সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হতেই প্রদীপের আলোকে সেজে উঠতো গোটা বাড়িটা মিশ মিশে অন্ধকারে কেমন যেন মায়াবী হয়ে উঠতো শতছিন্ন দীর্ণ পর্ণকুটির প্রদীপ শিখার আলোকত্তাপ ক্রমে ছড়িয়ে পরত বাড়ির প্রতিটি কোন একটা ভালোলাগার আবেশ ঘোর ধরিয়ে দিতো
অর্ধেক নারকেলের মালাইয়ে একটা পাটকাঠি ঢুকিয়ে নিভুনিভু প্রায় একটা প্রদীপ বসিয়ে তৈরী হতো টার্চ সেই টর্চ হাতে নিয়ে দলবেঁধে ছুটতাম শিশিরে ভেজা ঘাসের আলের উপরদিয়ে নিভন্ত সেই প্রদীপ শিখার আলোকে ভয়াল অমানিশার ঘোর কালো অন্ধকার চিড়ে দাপাদাপি করতাম গ্রাম থেকে গ্রামে দূরে জঙ্গলের মাথায় মাথায় মিটমিট করে জ্বলা জোনাকরা আমাদের সঙ্গ দিতো হেমন্তের বিদায়বেলায় পথ ঘাট মাঠ ভারী হয়ে থাকতো সাদা কুয়াশায় দালান বাড়ির ছাদের চিলেকোঠা থেকে পেঁচারা ডেকে উঠতো বারবার নিকষ অন্ধকারে পথে ভ্রম হতো অন্ধকার আকাশের গভীর স্পর্শ করতে যাওয়া লাল শিখার আলোক বল দেখে বিস্ময়ে আঁতকে উঠেছিলাম সেদিন পরে জেনেছিলাম মিত্তিরদের বাগান বাড়ির ছাদ থেকে ছাড়া হয়েছিল ওটা সেই প্রথম ফানুসের সাথে সখ্যতা পাড়ার বুড়ো বটতলার মন্দির থেকে চাল কলার নৈবেদ্য আর ভোগের খিচুড়ি খেয়ে বাবার হাত ধরে বাড়িতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেত তখন কচি ধানের ক্ষেতে
সাদা কুয়াশা দুধের সরের মতো হওয়ায় ভাসত
পর দিন সন্ধ্যা থেকে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে থাকতো বৃদ্ধ ঢাকি থেকে থেকে  ঢাকে বোল তুলতো 'ঠাকুর থাকবে কত ক্ষণ , ঠাকুর যাবে বিসর্জন ' একটা নির্দিষ্ট সময়ে দেবীবরণ কার্য সমাপান্তে ঢাক ,ঢোল ,কাঁসর এর বাদ্যি, হ্যাজাকের আলো সহযোগে শোভাযাত্রা বেড়াত গ্রামের মেঠো পথ  ধরে আমরা ছোটরা দুহাত জড়ো করে প্রণামের ভঙ্গিতে ঠাকুরের সাথে সাথে হাটতাম ধুনুচি থেকে অবাধ্য ধোয়া টা এসে চোখে জ্বালা ধরিয়ে যেত বার বার কনুই দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে মায়ের মায়াময় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম মনে মনে বলতাম আবার এসো মা  বিসর্জনের শেষে নিস্তব্ধতার পাহাড় গ্রাস করতো গোটা গ্রামকে ঢাকের আওয়াজ ক্রমশ মিলিয়ে যেত হেমন্তের বিষণ্ণ বাতাসে বুড়ো বটের ফাঁকা মণ্ডপে একলা প্রদীপ শিখার বিষন্নতা দুমড়ে মুচড়ে দিতো বুকের পাঁজর গুলোকে
আজ হঠাৎই সেই মুছে যাওয়া শৈশব স্মৃতি মোচড় দিয়ে উঠলো একলা হয়ে যাওয়া নদীতে মাঝির উচাটন ভাটিয়ালির মতো মনে হয় হঠাৎ করে অনেকটাই বড় হয়ে গেছি কত শত চন্দ্রভূক অমাবস্যা কেটে গেছে এরপর এক এক করে জীবন এগিয়েছে তার ছন্দে ঝলমলে আলোক রোশনাই আজ চোখ ধাঁধিয়ে যায়,পাতলা হয়েছে অন্ধকারবারোয়ারি সার্বভৌম পুজোয় আজ থিমের আসা যাওয়া  কিন্তু জীবন থেকে পুরোপুরি  হারিয়ে গেছে সেই নির্ভেজাল ভালোলাগার প্রাণের স্পন্দন মুছে গেছে  হিমেল কুয়াশা মাখা শিউলি কুড়ানো মায়াবী ভোর সর্বগ্রাসী শূন্যতা আর একাকিত্ব নিয়ে স্মৃতির অন্তরালে শুধু চুপটি করে একধারে একলা রয়ে যায় প্রাচীন বটের নিচে ছেতলা ধরা মন্ডপ আর আমার ফেলে আসা অবুঝ শৈশব