Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

ছোট গল্প ।। চন্দ্রানী দত্ত


ঠিকানা


একটু একটু করে জ্ঞান ফিরতেই   তলপেটের কাটা জায়গাটাতে অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে সুমনার ।কানে আসছে কচি শিশুর কান্না । কেমন যেন ঝাঁকুনি দিয়ে পঞ্চ ইন্দ্রিয় একসঙ্গে সচল হল।চোখ মেলল সুমনা।খাটের পাশে বেবি কটে চোখ গেল। পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সদ্যজাত বাচ্চাটা।কি অপূর্ব  মায়াবী রূপ।এটা তার নিজেরই অংশ!  নার্স বাচ্চাটাকে কোলে তুলে দিল।চোখ মেলে নিজের কাউকে দেখতে পেল না সুমনা।এত বেলা হয়ে গেল অথচ কেউ এলো না হসপিটালে! পাশে থাকা নার্সকে জিঞ্জাসা করতেই  জানতে পারল,  মেয়ে হয়েছে খবরটা পেয়েই বাইরে অপেক্ষারত শ্বশুর বাড়ির সবাই  গম্ভীর মুখে স্থান ত্যাগ করেছে।এমন কি নবজাতকের পিতাও।চমকে উঠল সুমনা সন্দীপ বাড়ির একমাত্র ছেলে তাই বংশের পিলসুজের সলতে তে শিখা জ্বালাতে বংশের ছেলেরই একমাত্র অধিকার।তাই সন্দীপ আর সন্দীপের বাড়ির সবাই ছেলের প্রত্যাশায় ছিল।চেক আপের দিন গুলো তে সন্দীপ বাড়ির লোকের অনুযোগ উপযোগে ডাক্তার বাবুকে অনুরোধ ও করেছিল, আগত শিশুটির লিঙ্গ নিধারনের আগাম কোন আন্দাজ পাওয়া যায় কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে।  কিন্তু ডাক্তার বাবুর কড়া ধমকে এই বিষয়ে আর বেশি কিছু আলোচনা করতে সাহস হয় নি। ডাক্তার বাবু ওকে বলেছিলেন পর পর অনেক গুলো  গর্ভপাতের    পর এটা সুমনার শেষ সুযোগ। কিন্তু তাই বলে ওরা  এত নীচে নেমে যাবে এটা অভাবনীয়। অথচ পাঁচ বছর মেলামেশা করার পরে দুজনের বাড়ির সকলের সম্মতিতেই সন্দীপ সুমনাকে বিয়ে করেছিল। ওদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেই কাটছিল।আর মেয়ে হওয়ার পরেই ওদের এই অদ্ভুত পরিবর্তন! সদ্যোজাত নিস্পাপ শিশুটার মুখ পর্যন্ত দেখার ইচ্ছা কারুর হলো না! সুমনা এটা মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। তার শিক্ষিত সংস্কার মুক্ত অন্তরাত্মা বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। হাসপাতালের  বেডে শুয়ে ও ঠিক করল শ্বশুর বাড়িতে আর নয়। ওর মাকে সেকথা জানাতেই মা ওকে ওই রকম হটকারিতা করা থেকে বিরত থাকতে বললেন। কিন্তু বিগত কদিনের মায়ের বিনিত অনুরোধ উপরোধের পরেও সুমনা তার সিদ্ধান্তে অটল থাকল। ওর মা ছোটবেলা থেকেই বাবা মরা মেয়েটার জেদের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তাই ও যাতে আর কোন বড় অশান্তি না বাঁধাতে পারে এই ভেবে ওর মা ওর এই সিদ্ধান্তে না বলতে পারে না। অবশেষে হাসপাতাল থেকে ছুটির দিনে ওর মা ই এলেন সুমনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে। 
 সুমনা মেয়েকে নিয়ে নীচে গাড়িতে এসে বসে।কি আশ্চর্য কচি বাচ্চাটাও কি করে বুঝে গেছে তার অসহায় অবস্থার কথা।ছোট্টছোট্ট  আঙুলে শক্ত করে ধরে থাকে  মায়ের শাড়ি। সুমনা ও মেয়েকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।ওর মা উপর থেকে সমস্ত টাকা পয়সা মিটিয়ে নীচে এসে গাড়িতে সুমনার পাশে বসেন।ওনার  মুখে নির্ভরতার হাসি। মেয়ের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেন। সুমনাও নিশ্চিন্তে মায়ের কাঁধে মাথা রাখে।কোন রকম ঝগড়া ঝামেলা না করে মিউচুয়াল ডিভোর্সটা দিয়ে দিল সুমনা। কারন শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কোন রকম আলোচনা করতে তার রুচিতে বাঁধল।সন্দীপ আবার বিয়ে করেছে পুত্রের আশায়। সুমনার এখন একমাত্র লক্ষ সকল প্রতিকুলতার পরেও জীবন গতিশীল রাখা।মেয়েকে  নিজের মনের মতো করে মানুষ করা। মেয়েকে  বুকে চেপে ধরে মেয়ের কানে কানে বলে, তুই খাঁটি মানুষ হবি। চারপাশের কোন মলিনতা তোকে স্পর্শ করতে পারবে না। তোর প্রতিটি পদক্ষেপ সমাজকে জানিয়ে দেবে হাজার প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়।  সবাই একদিন বুঝতে পারবে তোকে অবহেলা কতটা অবাস্তব ছিল।

              কেটে গেছে অনেকগুলো বছর  সুমনার চুলে পাক ধরেছে।মেয়ে ঐশীকে মনের মতো করে মানুষ করেছে। ঐশী আজ ডাক্তার,  নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বন্ধু শুভময় কে  বিয়ে করেছে। সেও একজন  ডাক্তার।তারা নিজেদের সম্পর্ককে ভীষণ  সন্মান করে । সমাজের জন্যও অনেক কাজ করে।এর মধ্যে সুমনার মা গত হয়েছেন। মায়ের তিনতলা বাড়িটার পিছন দিকের কিছুটা অংশ ছেড়ে বাকি অংশটা  জুড়ে ওর  ইচ্ছে অনুসারে তৈরি হয়েছে একটা বৃদ্ধাশ্রম। নাম শান্তিধাম। সংসার যাদের অবহেলা করে দূরে ঠেলে দিয়েছে এই রকম কিছু মানুষ এখানে থাকেন। সুমনার মেয়ে ঐশী আর ওর স্বামী শুভ তাদের দেখাশোনা করে। অবশ্যই যত্ন আর সন্মান সহকারে। ছোটবেলা থেকেই ঐশী মায়ের কাছে শিখেছে অবহেলার বদলে অবহেলা নয় শ্রদ্ধা।ঐশী পিতৃহারা এমনটাই বলেছে সুমনা। এর বাইরে আর একটা কথাও উচ্চারণ করেনি কোনদিন। মেয়ের কাছে বাবাকে কোনদিন নীচু দেখাতে চায়নি। ঐশী বড় হয়ে প্রথম প্রথম কৌতূহলী হলেও মায়ের  নির্মোহ নীরবতায়  পরবর্তী কালে আর কোন আগ্রহ দেখায় নি। অন্যদিকে সন্দীপ চাকরী থেকে অবসর নিয়েছে। দু,বছর হল স্ত্রী গত হয়েছে।দুই ছেলে, বিদেশে চাকরী করে। যে যার নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।বাড়িতে একাই থাকে সন্দীপ, কাজের লোক দেখাশোনা করে।প্রতি নিয়ত একাকীত্ব তাকে গ্রাস করে চলেছে। টিভি আর ফেসবুক দেখে কিছুটা সময় কেটে যায়। নিজের ফেসবুক ওয়ালে তেমন কিছু পোষ্ট করেননা। তবে অন্যদের ওয়ালের ছবি দেখেন।মানুষ তাদের পরিবারের ছবি, ছেলেমেয়েদের ছবি, আরো কত রকমের ছবি পোষ্ট করে। এই রকমই একদিন সন্দীপের এক ফেসবুক ফ্রেন্ড শান্তিধামের একটা ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে তাতে ফোন নং আর ঠিকানা দেওয়া থাকে। সেখান থেকেই শান্তিধামে যোগাযোগ করে দু,দিন হল শান্তিধামে এসে উঠেছেন। হঠাৎ বিকাল বেলা তিনতলার ব্যালকনির থেকে সুমনা দেখে ঐশী একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে সামনের লনে হাঁটছে আর হেসে হেসে গল্প করছে। ভদ্রলোকের হাসিটা দেখে ঝাপসা হয়ে আসা স্মৃতি ঝলক দিল।"আশ্চর্য তো, অদ্ভুত মিল!"সুমনা নিজের মনেই বলে উঠল তারপরে  কি মনে করে নীচে নেমে শান্তিধামের অফিস ঘরে গেল। ফাইলে নাম টা দেখলো সন্দীপ চৌধুরী । দুই  ছেলের বাবা অথচ ঠিকানা শান্তিধাম।কি অদ্ভুত ব্যাপার সময় নিজেই যেন তার অতীতের ঘটে যাওয়া অবিচারের  প্রতিশোধ নিল। ধীর পায়ে নিজের ঘরের আরাম চেয়ারে গিয়ে বসল সুমনা। মনটাকে শক্ত করে মায়ের ফোটোর সামনে উঠে দাঁড়াল। আজ  আবার যে মনের জোর চাই।মায়ের মুখের দিকে চেয়ে চোখ দুটো বন্ধ করল।

==============
Chandrani Dutta. 
Kajora Hospital complex D/Type quarter 
Po-kajora Gram 
Dist--paschim Burdhaman 
Pin-713338 
Mobile No.9002237423

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত