।।নৌকা।।
পত্তনের সেই আদি অব্দ থেকে
বায়ু যেদিন প্রথম জলকে ছুয়েছে
হয়ত সেদিন নয়ত তার কিছুমাত্র পরে
কোন এক স্বর্গীয় পরমাত্মার
দেবাস্ত্রের ঠাকঠুক শব্দে
গড়ে উঠেছিল একটি কাঁঠালি রঙের নৌকা।
ছিপছিপে সূচালো প্রান্ত
মেদহীন দোহারা মধ্যদেশ
আর পরমাত্মার নিজ হাতে আঁকা
কেমন অদ্ভুত শৈলীর
আদিম রঙের কয়েকটি ফিটফাট নকশা।
হঠাৎ পরমাত্মার কী এক কাজ পড়ে গেলো
শেষ টানটা না দিয়েই
সেই যে গেলেন স্বর্গে
তারপর কত যুগ কত শতাব্দী কেটে গেছে
পরমাত্মা আর ফিরে আসেনি।
তার পরে আরও অনেক বছর কেটে গেছে...
সেই চকচকে কাঁঠালি রঙ
ঠোকর খেতে খেতে
বড্ড বেশি ফ্যাকাসে হয়ে গেছে,
নকশাগুলোকে গ্রাস করেছে
সবুজ রঙের এক একটা বেয়ারা শ্যাওলা।
পরমাত্মা তবুও আসেনি।
তার বদলে একদিন এলো
একটা শ্যামা রঙের ছোট্ট মেয়ে
নীল ফড়িঙের মত দুরন্ত
আর গেরুয়াধারী প্রজাপতির মত হাসিখুসি।
সে যেতে চাইলো দূরে দূরে কোথাও
এই সভ্যতার অলিগলি ছেড়ে
জলসীমার শেষ প্রান্তের ওই পল্লীতে।
এপারে তখন ভাঁটা
জোয়ার আসতে বেশ খানিকটা দেরি,
কোথা থেকে জানি
একটা লিকলিকে ছিপ কঞ্চির বেত নিয়ে
ছুটে এলো মেয়েটির বাবা
ভয় পেয়ে মেয়েটি সেই যে চলে গেলো
আর সে আসেনি।
কাঁঠালি রঙের নৌকাটি
অযত্নে আর অবহেলায় তেমনটাই থেকে গেছে
ধুঁকে ধুঁকে দিন গুনছে শেষ মুহূর্তের।
কে জানে
হাস্নাহেনার গন্ধ মেশা চাঁদের আলোয়
হয়ত মনে মনে সে আজও প্রত্যাশা করে
পরমেশ্বর কিংবা মেয়েটির।
====================
হারুন অর রশীদ
মোবাঃ ০১৭৫২২৮৪৭১৪