অ্যান ওড টু দ্য সিটি অব জয়
শান্তনু চ্যাটার্জি
প্রিয়তমা,
তোমায় নিয়ে একটি কবিতা লিখেছি। ওরা বলেছে ভালো লাগলে "মেটাক্যাফ হল" এর দেওয়ালে বড়ো করে বাঁধিয়ে রাখবে। দেখা হলে শোনাবো তোমায়। তুমি কেমন আছো? কেমন আছে তোমার নিউ মার্কেট, হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া, ট্রাম লাইন গুলো? শুনেছি তোমার ভারি বিপদ!! অনেক মানুষ নাকি ছেড়ে গেছে তোমায়... আরো অনেকে যাবে। অনেক ঝড় নাকি তুমি বুক পেতে নিয়েছো, কিন্তু মাথা নোয়াওনি। আমি জানি তোমার দৃঢ় প্রত্যয়, অসম্ভব জেদ, তুমি হেরে যেতে পারো না। আমি এও জানি, তোমার ভীষণ একা লাগে ইদানিং। চপল ষোড়শীকে কি আর গৃহবন্দি করে বেশি দিন রাখা যায়!! আমাদের আবার দেখা হবে তোমার পাঁচমাথার মোড়ে, কিংবা ধরো কচি ঘাসের উপর ময়দানে, আমরা সেদিন পায় পায় বল খেলবো, সট করবো সোজা পরীর দিকে। কি বলো? খেলবে তো। এই! এই! আমি কিন্তু আবার তোমার প্রেমে পড়বো নতুন করে, মুগ্ধ চোখে দেখবো অনাবৃত সেই পুরোনো তুমিকে। সময় করে বেড়িয়ে পড়বো তোমার সাথে, দরাদরি করে কানের দুল কিনবো বিধান সরণীতে, ভালো হ্যান্ডলুম কিনবো বাসন্তীদেবীকে পিছনে ফেলে। বেথুন থেকে একটু এগিয়ে হেদুয়ার ক্রসিংটায় লাল মুখ নিয়ে আবারো ফ্যালফ্যাল করে ক্যাবলার মতো চেয়ে থাকবো তোমার দিকে ,নেপথ্যে শাল পাতায় দেওয়া টক-ঝাল ফুচকা গুলো যখন আমায় দেখে মজা করবে; তুমি ঠিক তখনই কুলপি ওয়ালা সেজে সিমলার দিক থেকে "অ্যাই কুলপি হবে, মটকা কুলপিইইইই" সুর করে আসবে তো? তুমি হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেবে বলো আবার? রোকো! বলে টানা রিস্কায় চেপে, প্রাচীন পাঁজর ঘেঁষে আহিরীটোলা ঘাটে বসে আমায় সঙ্গ দেবে তো? চায়ের ভাড় ছুড়ে গঙ্গায় ফেলতে গেলে ধমক দিয়ে শাসন করবে বলো? আমি অভিমানী মুখ নিয়ে বসে থাকলে স্টারের টিকিট এনে বলবে তো...কি কাকা!! মুখ লটকে কেনো? চলো টুক করে মেরে দি নুন শো টা। কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়ায় পচা গরমের দুপুরে প্যারামাউন্ট এর শীতল স্পর্শ দেবে তো ঠোঁটে-গলায়। নতুন বইয়ের গন্ধ শুকে আবার বলবে... "আহহ ! বড্ড প্রিয়"। আমরা আবার বসবো কফি হাউসে, তোমার ব্যোমকেশ আর আমার প্রদোষ মিত্র নিয়ে ডিবেট চলবে টানা দু ঘন্টা। তারপর আচমকাই তুমি আমার হাত থেকে সিগারেট টা কেড়ে নিয়ে বলবে অনেক হয়ছে,আর নয়...কাকাবাবু বেস্ট। ব্যস্ দুজনেরই দম ফাটা হাসি...পাশের টেবিলের বর্ষীয়ান ভদ্রলোকটি বলে উঠবে, পাগল নাকি! এই অনেক দেরি হয়ে গেল বলে তাড়াতাড়ি উঠে বেরোতে যাবো অমনি ঝমঝমিয়ে নামবে বৃষ্টি, দুজনে কোনো রকমে একটা ছাতায় আধ ভিজে অবস্থায় গিয়ে পড়বো প্রেসিডেনসির সামনে টায়। হলুদ ট্যাক্সিতে উঠে বারবার পিছন ঘুরে তাকিয়ে ঝাপসা কাঁচের ভেতর থেকে দেখবো তোমায়, তুমি দাঁড়িয়ে ভিজেই চলেছো। পরদিন সাত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বো কলেজে, শিয়ালদায় দেখা হবে আমাদের । কি কাল ভিজলে, জ্বর আসেনি তো? হেসে বলবে...'আমার অভ্যাস আছে'। যখন হেঁটে কোলে মার্কেট ক্রস করছি অমনি বলে উঠবে... কী এবার তো ফাইনাল ইয়ার, শেক্সপিয়ার সরণী তে সিভি ড্রপ করতে শুরু করো নাকি। ক্যান্টিনে বসে চাউটা মুখে পুড়তে যাব আর অমনি মাথায় চাটি মেরে আবার মনে করিয়ে দিয়ে বলবে, 'ইস্ কালকের বৃষ্টিতে না জানি কত বস্তিতে জল দাঁড়িয়ে গেছিল, ওরা কিছু খাইনি বোধহয়, একবার দেখে আসি'। অমনি ছুট্টে বেরিয়ে পড়ব তোমার পিছে পিছে । পথশিশুর কান্নায় ভেজা রাজপথ দেখে যখন মুষড়ে পড়েছি, তুমি কাঁধ টা শক্ত করে চেপে ধরে বলবে, 'আমি আছি তো '। ইডেনসে গাঙ্গুলীকে দেখে আবার আমরা গর্বিত হব। ব্রিগেডের স্লোগানে সোচ্চার হব তোমার সাথে । উত্তরের গলিতে ঘুরে হাত ধরে প্রেমালাপ করব,সাক্ষী থাকবে আদিম কাঠামো গুলো। কোনো এক বসন্তের বিকেলে আকাদেমিতে থিয়েটার দেখে নন্দনে বসে আড্ডা দেবো,গল্প বলা টি শার্টে আঁকা থাকবে তোমার কীর্তির কথা, কিনবো দু একটা। রে থেকে ঋত্বিক হয়ে সৃজিত কেউ বাদ পড়বেনা আড্ডায় সেদিন। মা উড়ালের পথ ধরে বাইক ছুটিয়ে দেখবো তুমি কেমন এগিয়ে চলেছো অনবরত বিরামহীন। বিশ্ববাংলায় ডিনারে যাবো একসাথে। জোড়াসাঁকোয় রং খলবো সামনের বছর , মহালয়ার ভোরে স্নান সেরে হেডফোনে বীরেন্দ্র বাবুর তালে তালে লেন্স বন্দি করব কুমারটলির চক্ষুদান পর্ব; তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো। পঁচিশে বৈশাখে, কবিগুরুর মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে একসাথে প্রাণ খুলে "আগুনের পরশমণি" গাইবো, বারোই জানুয়ারি অংশ নেব যুব মিছিলে, তেইশের সকালে কদম্ কদম্ বাড়িয়ে বীর সুভাষ কে দেখতে যাবো এলগিন রোডের বাসায় , ছাব্বিশে আমাদের দেখা হবে রেড রোডে। সেরে ওঠো প্রিয়...
এখনো রিভার ক্রজে গঙ্গা দেখা বাকি , প্রিন্সেপ ঘাটে সেলফি তোলা বাকি, ইকো পার্কে অনুপমের কনসার্ট দেখা বাকি একসাথে; প্লিজ সেরে ওঠো। অনেক স্বপ্ন তোমায় ঘিরে। অনেক অনেক। মেট্রো করে ভিড় ঠেলে অফিস যাওয়া বাকি, দুগ্গা পুজোয় একসাথে অঞ্জলি দেওয়া বাকি, দক্ষিণেশ্বরে বারোটা শিব মন্দিরে জল ঢালা বাকি, বেলুড়ে সন্ধ্যারতি দেখা বাকি তোমার সাথে, তোমাকে অ্যানিভারসারিতে সিক্স বালিগঞ্জ প্লেসে সারপ্রাইজ দেওয়া বাকি। বছরের একদম শেষ সপ্তাহে, নিউ ইয়ারস ইভে যখন তুমি শীতে কাঁপছো তখন তোমায় জড়িয়ে ধরে পার্কস্ট্রীটের আলোয় দাঁড়িয়ে গিটারে একটা দারুণ প্রগরেশন তুলে "ভালোবাসি" বলা বাকি....
এই মহামারী কাটিয়ে ওঠো, ওঠতেই হবে তোমাকে তিলোত্তমা।
ভালো থেকো,
প্রাণের শহর কলকাতা ।
ইতি,
তোমার প্রেমিক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন